পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মালেক মল্লিক : অবসরে যাচ্ছেন দেশের প্রথম নারী বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা। তিনি দেশের ইতিহাসে প্রথম কোন নারী (মুন্সেফ) সহকারী জজ, জেলা জজ, সুপ্রিম কোর্ট উভয় বিভাগের (হাইকোর্ট ও আপিল) প্রথম নারী বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালের ২০ ডিসেম্বর বিচার বিভাগে যোগদান করে প্রথম নারী বিচারক বিভিন্ন জেলা দায়িত্ব পালন করে পর্যায়েক্রমে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আপির বিভাগের একটি বেঞ্চের নেতৃত্বে দেন। তিনি এখন দেশের ও বিচার বিভাগের ইতিহাসের অংশ। এই বিচারপতির হাতে দেশের গুরুত্বপূণ কতগুলো মামলার রায়ও এসেছে। সুপ্রিম কোর্টের তথ্য মতে, ৭ জুলাই হবে বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানার চাকরির শেষ দিন। তবে ওই দিন শুক্রবার হওয়ায় একদিন আজ (বৃহস্পতিবার) তাঁকে বিদায়ী সংবর্ধনা দেয়া হবে। প্রথা অনুসারে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ও অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের পক্ষ থেকে তাকে সংবর্ধনা দেয়ার কথা রয়েছে। বিচারিক কাজের পাশাপাশি বিচারপতি নাজমুন আরা সুলাতানা বাংলাদেশ ওমেন জাজেস অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। দুই বার ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব ওমেন জাজেসের সেক্রেটারি ছিলেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার সাব্বির ফয়েজ ইনকিলাবকে বলেন, তিনি সুপ্রিম কোর্ট উভয় বিভাগের (আপিল ও হাইকোর্ট) বিভাগের প্রথম নারী বিচারপতি ছিলেন। ৭ জুলাই ওই বিচারপতির মেয়াদ শেষ হচেছ। কিন্তু ওই দিন শুক্রবার হওয়ার বৃহস্পতিবার উনার শেষে কর্মদিবস। আইনজীবী সমিতির ও অ্যাটর্নী জেনারেল অফিসের পক্ষ থেকে বিদায়ী বিচারপতিদেরকে সংবর্ধনা দিয়ে থাকেন।
১৯৫০ সালের ৮ জুলাই মৌলভীবাজারের চৌধুরী আবুল কাশেম মঈনুদ্দীন ও বেগম রশীদা সুলতানা দীন দম্পতির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন নাজমুন আরা সুলতানা। তারা তিন বোন ও দুই ভাই। ভাইবোনের সঙ্গে শৈশব-কৈশোরের সময়টা কেটেছে ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে। ময়মনসিংহের বিদ্যাময়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৫ সালে এসএসসি, ১৯৬৭ সালে মুমিনুন্নেসা উইমেন্স কলেজ থেকে এইচএসসি এবং আনন্দ মোহন কলেজ থেকে ১৯৬৯ সালে বিএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। মাত্র ১১ বছর বয়সে বাবাকে হারান তিনি। বাবার ইচ্ছা ছিল তার সন্তানদের কেউ একজন আইনজীবী হবে। বাবার স্বপ্নপূরণে বিএসসি পাসের পর তিনি মোমেনশাহী ল’ কলেজে ভর্তি হন।
মা রশীদার উৎসাহে বাবার স্বপ্ন পূরণে ১৯৭২ সালে এলএলবি পাস করেন তিনি। ১৯৭২ সালের ময়মনসিংহ জেলা আদালতে আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। স্বাধীন দেশে নারীদের বিচারক হওয়ার বিধান ছিল না। ১৯৭৪ সালে এ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়। পরবর্তীতে তিনি বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৭৫ সালের ২০ ডিসেম্বর মুনসেফ (সহকারী জজ) হন। নিন্ম আদালতে দেশের প্রথম নারী বিচারক হিসেবে নাজমুন খুলনা, নারায়ণগঞ্জ ও টাঙ্গাইলে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮২ সালে সাবজজ হন। কয়েক দফা পদোন্নতির পর ১৯৯১ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জেলা জজ হন। কোনো নারীর জেলা জজ হওয়ার ঘটনা সেটাই ছিল প্রথম। ২০০০ সালের ২৮ মে তিনি হাইকোর্টে অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। এর দুই বছর পর হাইকোর্টে স্থায়ী হন তিনি।
সর্বশেষ ২০১১ সালের ২৩ ফেব্রæয়ারি আপিল বিভাগের প্রথম নারী বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন তিনি। শপথ নেয়ার পর তিনি বলেছিলেন, আমি আমার কাজের স্বীকৃতি পেয়েছি। এই নারী বিচারপতি ফতোয়া অবৈধ, সেনানিবাসে খালেদা জিয়ার বাড়ি অবৈধ ও তত্ত¡াবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিলসহ অনেক উল্লেখযোগ্য রায় দিয়েছেন। দীর্ঘ ক্যারিয়ারের সমাপ্তি ঘটছে কাল ৭ জুলাই। নাজমুন আরা সুলতানার স্বামী কাজী নুরুল হক। তাদের ঘরে দুই ছেলে। বড় ছেলে কাজী সানাউল হক উপল অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন। ছোট ছেলে কাজী এহসানুল হক সূর্য দেশেই কাজ করছেন। হাইকোর্টে তাকে নিয়োগ দিয়েছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদ। বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানাসহ সাতজন বিচারপতি রয়েছেন। তিনি অবসরে গেলে আপিল বিভাগে থাকবেন ছয়জন বিচারপতি। নিয়ম অনুযায়ী হাইকোর্ট থেকে আপিল বিভাগে বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হয়। হাইকোর্টে ছয়জন নারী বিচারপতি রয়েছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।