দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্্শী
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
৩। একমাত্র রোজাই আমীর, গরীব ও পেটপুরে আহারকারীদের বলে দেয় যে, অভুক্ত অবস্থার মাঝে কি যাতনা আছে, এবং ক্ষুৎপিপাসার মাঝে কি বেদনা আছে। এর ফলে সে স্বীয় গরীব ও উপোষ ও দুর্দশাগ্রস্ত ভাইদের দু:খ কষ্ট ও বেদনার কথা উপলব্ধি করতে পারে এবং এ কথাও বুঝতে পারে যে, মাত্র কয়েকটি লোকমার দ্বারা তাদের দু:খ-কষ্টকে দূর করা কত বড় পুণ্যের কাজ। যে ব্যক্তি নিজে ক্ষুধার্ত নয়, ক্ষুধা সম্পর্কে, যে ব্যক্তি পিপাসার্ত নয়, সে পিপাসার বেদনা ও কষ্ট সম্বন্ধে অনুমান করতে পারবে না। হাফেজ ইবনে কাইয়্যুম বলেছেন, অন্তর জ্বালা বুঝতে হলে অন্তরে দাগ পড়া খুবই জরুরি। রোজা এই আত্মত্যাগ, উৎসর্গ, দয়া এবং সমবেদনার অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করে। স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর হাল এই ছিল যে, কতিপয় সাহাবী বলেছেন, “রমজান মাসে রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর দানশীলতা, বদান্যতা প্রবহমান বাতাসের রূপ ধারণ করত।” (সহীহ বুখারী : বাদউল অহী অধ্যায়) এরই প্রভাব এবং প্রতিক্রিয়ার ফলে আজও এই মাসে মুসলমানগণ গরীবদেরকে সাহায্য ও আর্থিক দান খয়রাত দ্বারা তাদের ক্ষুন্নিবৃত্তি নিবারণে এগিয়ে আসেন।
৪। মানুষ যতই প্রাচুর্যে প্রতিপালিত হোক না কেন, ধন ও দৌলতের আধিক্য তার মাঝে যতই থাকুক না কেন, তবুও কালের পরিবর্তন এবং জিন্দেগীর টানা পোড়েন তাকে দৈহিক শ্রম ও বেদনা সহ্য করতে এবং যাতনা সহ্য করতে বাধ্য করে তোলে। জিহাদের প্রতিটি ময়দানে ক্ষুধা-পিপাসা সম্বরণ করা, ধৈর্য ও সহিষ্ণুতাকে অবলম্বন করা একান্ত দরকার হয়ে পড়ে। এ কারণেই মুসলমান মুজাহিদ সৈনিক যুদ্ধের ময়দানে ক্ষুধা, পিপাসার যাতনাকে যেভাবে সহাস্য আননে বরণ করে নেয়, তা অন্য কাহারও পক্ষে সম্ভব নয়। মূলত : রোজা হচ্ছে বাধ্যতামূলক সামরিক ট্রেনিং, যা প্রত্যেক মুসলমানকে এক মাস করানো হয়। যেন সে সকল প্রকার দু:খ-কষ্ট বরণ করে নেয়ার জন্য সর্বদাই প্রস্তুত থাকে এবং দুনিয়ার দু:খ-কষ্ট, চেষ্টা-তদবীর, পরিশ্রম ও ক্লান্তিকে অতি সহজে মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়। এ কারণে রোজাকে আল-কুরআনে কখনো ধৈর্য শব্দের দ্বারাও বিশেষিত করা হয়েছে। যেন এর দ্বারা রোজার প্রকৃত হাকিকত প্রকাশ পায়।
৫। যেভাবে অধিক ক্ষুৎ পিপাসার তাড়না মানুষকে দুর্বল ও দেহকে অসার করে তোলে, তেমনি এর চেয়েও বেশী পরিমাণে মানুষকে বিভিন্ন রোগ ও বিমারীতে নিমগ্ন করে তাদের মাত্রাতিরিক্ত পানাহার। চিকিৎসা বিজ্ঞানের অভিজ্ঞতা ও প্রত্যক্ষ দর্শনের দ্বারা প্রতিপন্ন করা যায় যে, অধিকাংশ সময়ে ক্ষুৎ-পিপাসা তাদের স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য খুবই উপকারী। তাছাড়া কোন কোন রোগের ওষুধ হচ্ছে উপোষ করা। ডাক্তারী শাস্ত্র মতে সপ্তাহে কম সে কম এক ওয়াক্ত পানাহার বন্ধ রাখা উচিত। ইসলামে সাপ্তাহিক মসনুন ও মুস্তাহাব রোজার ব্যবস্থাও আছে। কিন্তু একই সাথে বছরে একবার দৈহিক ফুজলা বা ক্ষতিকর বস্তুসমূহ নিষ্প্রভ ও হাল্কা করার জন্য আবশ্যিকভাবে রোজা রাখা খুবই উপকারী। যে সকল মুসলমান রোজা রাখেন, তাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাই সাক্ষ্য দিবে যে রোজা কত রোগের প্রতিশেধক হিসেবে কাজ করে এবং কি পরিমাণ রোগ-বালাই দূর করে দেয়। তবে এ ক্ষেত্রে শর্ত হলো রোজাদার নিজে পানাহারের ক্ষেত্রে মধ্যম পন্থাকে পরিহার করবে না। যদি তাই হয়, তাহলে এই সংযম ও অভুক্ত থাকাই তার দৈহিক রোগসমূহের প্রতিশেধক হিসেবে কাজ করবে।
৬। মানুষ যদি নিজের দিন-রাতের কর্ম-ব্যস্ততা ও কর্মকাÐের উপর চিন্তা করে, তাহলে বুঝতে পারবে যে, এর একটা বিরাট অংশ খাওয়া-দাওয়া, পানাহার ও এসবের আয়োজন এন্তেজামে ব্যয় হয়ে যাচ্ছে। যদি মানুষ এক ওয়াক্তের খানাপিনা কম করে দেয় তাহলে সময়ের একটি অংশ বেঁচে যাবে। এই সময়টি আল্লাহর ইবাদত ও মাখলুকের সেবায় ব্যয় করতে পারবে। যদি এমনটি সব সময় সম্ভব না হয়, তাহলে কমসেকম এক মাস বা একবার অপ্রয়োজনীয় আবশ্যকতাকে কম করে এই সৌভাগ্য অর্জন করতে পারে।
৭। মানুষের দেমাগী ও রূহানী একাগ্রতা এবং পবিত্রতার জন্য উপযুক্ত উপোষ খুবই উত্তম দাওয়াই। যখন মানুষের পাকস্থলী বদ হজম এবং গোলযোগপূর্ণ বায়ু হতে খালি হবে, এমনকি মন ও মস্তিষ্ক পেটের পীড়ার ছোবল হতে মুক্ত ও পবিত্র হবে, তখন আত্মিক একাগ্রতা ও একনিষ্ঠতা হাসিল করা খুবই সহজ হয়ে উঠবে। বড় বড় জ্ঞানী ও বিজ্ঞানীদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা এই হাকীকতের সত্য-সাক্ষী হিসেবে সর্বযুগেই প্রতিষ্ঠিত আছে।
৮। রোজা বহু গুনাহের কাজ হতে মানুষকে মাহফুজ ও নিরাপদ রাখে। তাছাড়া রোজা অনেক গুনাহের কাফফারাও বটে। সুতরাং উল্লেখিত আলোচনাসমূহের মাঝে যেখানে রোজা এবং খয়রাতের অভিন্নতা এবং পরস্পর বদল হওয়ার কথার উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলো থেকেও একথা সুস্পষ্ট বুঝা যায় যে, রোজা ভুল-ত্রæটি এবং গুনাহসমূহের কাফফারা। বরং তৌরাত কিতাবে একে নির্দিষ্ট কাফফারা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। (আহŸার : ১৬-৩০ হতে ২৪ পর্যন্ত ও ২৩-২৭) তাছাড়া ইসলামী অনুশাসনের বহু স্থানে একে কাফফারা হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে। যদি কেউ শপথ গ্রহণ করে তা ভঙ্গ করার অপরাধ করে, তাহলে এই গুনাহ হতে নিস্তার লাভের উপায় হচ্ছে এই যে, দশজন মিসকীনকে আহার করাবে। যদি এর সামর্থ্য না থাকে তাহলে, “তিন দিনের রোজা পালন করবে, এটা তোমাদের শপথ সমূহের কাফফারা, সুতরাং তোমরা শপথ করার পর, তার হেফাজত করো।” (সূরা মায়িদাহ : রুকু-১২)
অনুরূপভাবে হজের সময় যদি শিকার করার দরুন কুরবানী দিতে সক্ষম না হয় এবং কয়েকজন মিসকীনকে আহার করানোও সম্ভব না হয়, তাহলে “এর সমপরিমাণ রোজা রাখবে, যেন তার অপরাধের শাস্তিভোগ করতে পারে, এতে করে আল্লাহ তার পূর্বকৃত অপরাধ ক্ষমা করে দেবেন।” (সূরা মায়িদাহ : রুকু-১৩) একইভাবে কোন জিম্মী ব্যক্তি যদি মুসলমানদের হাতে ভুলক্রমে নিহত হয়, তাহলে এর রক্ত শোধ হিসেবে একজন মুসলমান গোলাম আযাদ করতে হবে। আর যদি গোলাম আযাদ করার সামর্থ্য না থাকে তাহলে, “এই অপরাধ আল্লাহর নিকট হতে ক্ষমা লাভের প্রত্যাশায় ক্রমাগত দু’মাস রোজা রাখবে।” (সূরা নিসা: রুকু-১৩) এর দ্বারা বুঝা যায় যে, রোজা বহু গুনাহের কাফফারাও বটে।
৯। এই হাকীকতকে অন্য এক দৃষ্টিকোণ থেকে অবলোকন করলে রোজার পৃথক বৈশিষ্টসমূহ সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে। রোজার ক্ষুৎ-পিপাসা আমাদের উত্তপ্ত উত্তেজনা সৃষ্টিকারী শক্তিকে নিষ্প্রভ ও নিস্তেজ করে তোলে। কিছুটা সময়ের জন্য আমরা শান্ত ও বিন¤্র থাকতে পারি। এমনকি খানা-পিনার ব্যস্ততা হতে আমরা বিমুক্ত থাকতে পারি। অন্যান্য কঠোর পরিশ্রমের কাজ থেকে আমরা বিরত থাকি। দিল ও দেমাগ, পরিপূর্ণ পাকস্থলীর ক্ষতিকর অপবিত্র বস্তুরাজির প্রভাব হতে মুক্ত থাকে। আমাদের আভ্যন্তরীণ আশা-আকাঙ্খার মাঝে শান্তি, নিরাপত্তা ও নমনীয়তা প্রকাশ পায়। এই অবসর মুর্হূতগুলো, শক্তির এই ভারসাম্যতা দিল ও দেমাগের এই প্রশান্ত অবস্থা, উৎসাহ ও উদ্দীপনায় স্থিরতা, আমাদের চিন্তা-ভাবনা, নিজের কাজ-কর্মের হিসাব ও কাজ-কমেরল প্রতি দৃষ্টি এবং কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনা ও লজ্জা ইত্যাদি আল্লাহর সামনে কৃতকর্মের হিসাব দেয়ার ভয় ও শঙ্কা সৃষ্টির জন্য খুবই উপযোগী। তাছাড়া গুনাহ থেকে তাওবাহ করা এবং লজ্জা ও শান্তির অনুভূতি ও সহজাত প্রবৃত্তির সৃষ্টিতে অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এতে করে আমাদের নেক আমলের আন্তরিক শক্তি উজ্জিবীত হয়ে উঠে। আমরা পুণ্য কর্মের প্রতি আগ্রহী হয়ে পড়ি। এ কারণেই রমজান মাস সর্বাংশে এবাদত-বন্দেগী ও পুণ্যকর্মের জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এ মাসে রয়েছে তারাবীর নামাজ, এ মাসে রয়েছে এ’তেকাফের ব্যবস্থা এবং এ মাসে যাকাত দান করাও মুস্তাহাব। তাছাড়া দান-খয়রাত করাও খুবই উত্তম। হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) বলেছেন, “রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর দানশীলতার যদিও সীমা-পরিসীমা ছিল না, তবুও তা’ রমজান মাসে প্রবল বাতাস অপেক্ষাও প্রবলতর হয়ে উঠত। (সহীহ বুখারী : ১ম খ: অহী অধ্যায়)
১০। এ সকল কথা সামনে রেখে সহজেই বুঝা যায় যে, রোজা কেবল বাহ্যিক ক্ষুধা-পিপাসার নামই নয় বরং মূলত : তা’দিল এবং রূহের ক্ষুধা ও পিপাসার নাম। মহান আল্লাহপাক রোজার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য স্থল হিসেবে ‘তাকওয়াকে’ নির্ধারিত করেছেন। যদি রোজার দ্বারা এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পরিপূরণ না হয়, তাহলে বলা যাবে যে, সে হয়ত রোজাই রাখেনি। কিংবা হয়ত বলা যাবে যে, দেহের রোজা পালন করা হয়েছে, কিন্তুু রূহের রোজা পালন হয়নি। এই বিশ্লেষণকে রাসূলুল্লাহ (সা:) এভাবে ব্যক্ত করেছেন, “রোজা রেখেও যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও প্রতারণামূলক কাজ পরিত্যাগ না করবে, তাহলে এতে আল্লাহর প্রয়োজনীয়তা মোটেই নেই যে, মানুষ খানা-পিনা পরিহার করবে।” (সহীহ বুখারী : কিতাবুস সাওম, ১ম খ: ২৫৫ পৃ: তিরমিজী : সাওম অধ্যায়, আবু দাউদ : সাওম অধ্যায়, ২২৬ পৃ: ইবনে মাজাহ : ১২২ পৃ:) অপর এক বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, “রোজা ঐ সময় পর্যন্ত ঢালস্বরূপ যতক্ষণ পর্যন্ত এর মাঝে ছিদ্র না কর।” (সুনানে দারমী : ২১৮ পৃ:; মাজমাউল ফাওয়ায়েদ ১৫২ পৃ:) তিনি আরও বলেছেন, “রোজা খারাপ কর্ম হতে বিরত রাখার ঢালস্বরূপ। তবে যে রোজা রাখে তার উচিত কটু কথা না বলা এবং গোস্বা না করা, এমনকি কেউ যদি তার সাথে ঝগড়া ফাসাদের জন্য প্রবৃত্ত হয়, গালি দেয়, তবে সে এ কথাই বলবে যে আমি রোজাদার।” (সহীহ বুখারী : সাওম অধ্যায় ২৫২ পৃ: সহীহ মুসলিম : ১ম খ: ৪২৭ পৃ: মোয়াত্তা ইমাম মালেক সাওম অধ্যায় ৯৭ পৃ: নাসাঈ : ২৫৫ পৃ:) অধিকন্তুু সাহাবিগণ জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! রোজার ঢাল কিসের দ্বারা ছিদ্র হয়ে যায়? তিনি বললেন, মিথ্যা কথা ও গীবতের দ্বারা।” (মাজমাউল ফাওয়ায়েদ : ১৫২ পৃ: মিরাট) সুতরাং কোন কোন আলেম এরই প্রেক্ষিতে এই অভিমত প্রদান করেছেন যে, “রোজা যেমন খানা-পিনার দ্বারা ভঙ্গ হয়ে যায়, তেমনি গুনাহর দ্বারাও ভঙ্গ হয়ে যায়। (ফতহুল বারী : ৪ খ: ১৮৮ পৃ:)
১১। সকল এবাদত-বন্দেগীর মাঝে রোজাকে তাকওয়ার আসল এবং বুনিয়াদ এ জন্যও সাব্যস্ত করা হয়েছে যে, এটা হলো নিশ্চুপ প্রচ্ছন্ন এবাদত। যা রিয়া এবং লোক দেখানো প্রবণতা হতে মুক্ত। যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষ স্বেচ্ছায় তা প্রকাশ না করে, অন্যান্যদের কাছে এর গোপন রহস্য প্রকাশ পায় না। আর এই বস্তুই হচ্ছে সকল এবাদতের মূল আখলাকের বুনিয়াদ।
১২। এই ইখলাস এবং রিয়া বিবর্জিত হওয়ার প্রভাব হচ্ছে এই যে, আল্লাহপাক তার সম্পর্কে বলেছেন, “রোজাদার আমার সন্তুুষ্টির জন্য খানা-পিনা এবং সুস্বাদু বস্তুুসমূহ পরিত্যাগ করেছে এ জন্য, “রোজা আমারই জন্য এবং আমিই এর বিনিময় প্রদান করব।” (সহীহ বুখারী : মুয়াত্তা ইমাম মালেক : সাওম অধ্যায়)
প্রত্যেক কাজের প্রতিফল তিনিই প্রদান করেন, কিন্তুু শুধু কেবল তার শ্রেষ্ঠত্ব ও মহিমাকে প্রকাশ করার জন্য-এর বিনিময়কে তিনি নিজের দিকে আরোপ করেছেন। কোন কোন আলেমের মতে কুরআনুল কারীমের এই আয়াতে-এর প্রতি ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে “ধৈর্যশীলদের বিনিময় অগণিতভাবে পূরণ করা হবে।” (সূরা যুমার) এতটুকু সুস্পষ্ট যে রোজার বেদনা সহ্য করা এক প্রকার ধৈর্য। এ জন্য রোজাদারও ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে অগণিত বিনিময় লাভে সক্ষম হয়।
১৩। রোজা যেহেতু ধৈর্যের একটি শ্রেণী, এবং এতটুকু বলাই সঙ্গত যে, ধৈর্য, সহিষ্ণুতা বরণ করার সহজতর উপায় হচ্ছে রোজা। এ জন্য যাবতীয় সমস্যা সমাধানের জন্য দোয়া ও ধৈর্য ধারণের প্রতি নির্দিষ্টভাবে হেদায়েত করা হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে, “তোমরা সাহায্য কামনা কর, ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে।” (সূরা বাকারাহ : রুকু-৫) দোয়া ও প্রার্থনা করার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা সব সময়ই সম্ভব। কেননা তা হচ্ছে মানুষের ঐচ্ছিক জিনিস। কিন্তুু ধৈর্যের অনুশীলন ঐচ্ছিক জিনিস নয়। কেননা নৈসর্গিক সমস্যাবলী ও বিপদাপদ আপতিত হওয়া মানুষের ঐচ্ছিক বস্তুু নয়। এ জন্য এর শিক্ষা গ্রহণ ও প্রশিক্ষণের ক্ষেত্র হিসেবে শরীয়ত রোজাকে নির্ধারিত করেছে। এ জন্য উপরোক্ত আয়াতের ‘ছবর’ শব্দের অর্থ রোজা করা হয়েছে। (তফসীরে ইবনে জারীর তাবায়ী : ১ম খ: ১৯৯ পৃ: মিশর)
১৪। এ সকল কারণে রোজা ঐ সকল পুণ্যকর্মের অন্তর্ভুক্ত যার বিনিময়ে আল্লাহপাক স্বীয় বান্দাহদের অপরাধ গোপন রাখা, অপরাধ ক্ষমা করা এবং বৃহৎ বিনিময়ের অঙ্গীকার করেছেন। ইরশাদ হচ্ছে, “রোজাদার পুরুষ এবং মহিলা, স্বীয় লজ্জাস্থান হেফাজতকারী পুরুষ এবং মহিলা, আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ এবং মহিলা, তাদের জন্য আল্লাহপাক প্রস্তুুত রেখেছেন ক্ষমা ও বৃহত্তর বিনিময়।” (সূরা আহযাব : রুকু-৫) এতে সুস্পষ্ট প্রকাশ পেয়েছে যে, রোজা যেমন আমাদের বস্তুুভিত্তিক অপরাধসমূহের কাফফারা, অনুরূপভাবে আমাদের রূহানী গোনাহসমূহেরও কাফফারা ও প্রতিশেধক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।