দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
অধ্যাপক শেখ মো. কামাল উদ্দিন : তাঁর উল্লেখযোগ্য ছাত্রগণ হলেন: আড়াইবাড়ী ইসলামিয়া সাঈদীয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা গোলাম সারোয়ার সাঈদী পীর সাহেব, আড়াইবাড়ী দরবার শরীফ; খুলনা সিদ্দিকীয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মদ ইদ্রিস; হাজীগঞ্জ কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা ড. মুহাম্মদ হিফজুর রহমান; মুহাদ্দিছ মাওলানা আবু নছর আশরাফী; নিশ্চিন্তপুর কামিল মাদরাসার মুহাদ্দিছ হযরম মাওলানা নুরুজ্জামান; ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের চেয়ারম্যান মাওলানা মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ; সোনাকান্দা দরবার শরীফের পীর মাওলানা মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান; ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের স্টাডিজ বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসার আবদুল বাকী; খুলনা সরকারি কামিল মাদরাসার মুফাসসির মাওলানা মো. যাকারিয়া; কক্সবাজার হাশেমিয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ হযরত মাওলানা মহিব্বুল্লাহ প্রমুখ।
তিনি ২বার পবিত্র হজ¦ব্রত পালন করেন। একবার তার সহধর্মীনী নূরজাহান বেগমকে নিয়ে হজ¦ পালন করেন। এছাড়াও তার স্ত্রী নূরজাহান বেগম, দ্বিতীয় ছেলে মাওলানা মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ ও নাতনী তাহিয়া ওমরা পালন করেছেন।
আড়াইবাড়ী ইসলামিয়া সাঈদীয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ, আড়াইবাড়ী দরবার শরীফের পীর আল্লামা হযরত মাওলানা মুহাম্মদ গোলাম হাক্কানী (র.) আড়াইবাড়ী মাদরাসাকে দরসে নিজামী থেকে ১৯৫৭ সালে দাখিল, ১৯৬৬ সালে আলিম ও ১৯৭৭ সালে ফাযিল স্তরে উন্নীত করেন। পরবর্তীতে কামিল মানে উন্নীত করার উদ্যোগ নিলেন। তৎকালীন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক মো. নিজাম উদ্দিন ৮ এপ্রিল ১৯৮৬ সালে কামিল স্তরে মাদরাসাটিকে উদ্বোধন করেন। এ আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া তখনও কামিলের তেমন কোন অগ্রগতি হয় নাই। একদা পীর সাহেব হুজুর (র.) আড়াইবাড়ী ইসলামিয়া সাঈদীয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ, স্বীয় পুত্র হযরত মাওলানা মো. গোলাম সারোয়ার সাঈদীকে বললেন; ধামতী কামিল মাদরাসার মুহাদ্দিস হযরত মাওলানা এ কে এম হাশেম সাহেবের সাথে পরামর্শ করে এ বিষয়ে অগ্রসর হওয়ার জন্য। তিনি আমাকে (লেখক) নিয়ে মাওলানা এ কে এম হাশেম সাহেব (র.) এর নিকট গেলে তিনি অত্যন্ত আগ্রহ ভরে কতিপয় দিক নির্দেশনা প্রদান করলেন। যা আমাদের চলার পথকে সুগম করেছিল। তিনি পরবর্তীতে তাঁর আওলাদকে আড়াইবাড়ী ইসলামিয়া সাঈদীয়া কামিল মাদরাসায় অধ্যয়নের জন্য প্রেরণ করেন।
আমি (লেখক) আমার শ^শুর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার সোনারগাঁও জিলানীয়া আলিম মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ, তালতলা দরবার শরীফের পীর, বিশিষ্ট আলেম, খাড়েরা মৌলভী বাড়ীর অধিবাসী, আল্লামা এ কে এম হাশেম (র.) এর বিশিষ্ট ছাত্র হযরত মাওলানা মুহাম্মদ ফজলুল হক সাহেব থেকে শুনেছি; আল্লাহভীরু মাওলানা এ কে এম হাশেম সর্বদা ইবাদতে মশগুল থাকতেন। তাহাজ্জুদ নামায প্রায় নিয়মিত আদায় করতেন। তিনি সাদাসিধা জীবন যাপনে অভ্যস্থ ছিলেন। খুব পরিপাটি সুশৃংখলভাবে চলতে পছন্দ করতেন। আল্লাহর ভয়ে সদা ক্রন্দনরত থাকতেন। আফসোস করতেন, না জানি কোন ভুলের কারণে আল্লাহর দরবারে আটকা পড়ে যান। সদা হাস্যোজ¦ল চেহারায় এ বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন আন্তরিকতার সহিত শিক্ষার্থীদের পাঠদান করতেন। ইসলামী অনুশাসন মেনে চলার জন্য সকলকে বারবার তাগিদ দিতেন।
সুলতানপুর বাজারে তাঁর পিতার নামে ফতেহাবাদ জুনাব আলী মার্কেট প্রতিষ্ঠিত হয়। এতে তিনি ফতেহাবাদ পাঞ্জেগানা মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। তাতে ক্ষুদে শিশুদের কুরআন শিক্ষার জন্য মক্তব পরিচালিত হয়ে আসছে। তিনি বহু বিরল ও গুরুত্বপূর্ণ কিতাবাদি সংগ্রহ করে একটি সমৃদ্ধ লাইব্ররী প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে তাঁর বড় ছেলে মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ হাশেমী এগুলোর তত্ত¡াবধানে রয়েছেন। তিনি একটি বই লিখেছেন। বইটি ছাপানো হয় নাই। এর পান্ডুলিপি সংরক্ষিত আছে।
তিনি অবসর গ্রহণের পর তার নিজ বাড়ির সুলতানপুর ফাযিল মাদরাসার গভর্নিং বডির সভাপতি মনোনীত হন। ইন্তেকালের পূর্ব পর্যন্ত এ মাদরাসার পরিচালনা পর্ষদে থেকে মাদরাসাটির খেদমত করে যান। মাদরাসার বর্তমান অধ্যক্ষ হযরত মাওলানা কবির আহমাদ তাঁর প্রসঙ্গে বলেন; উস্তাজুল আসাতেজা মরহুম মাওলানা এ কে এম হাশেম সাহেব (র.) এর পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত সুলতানপুর ফাযিল (ডিগ্রী) মাদরাসার অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে প্রায় এক যুগের সান্নিধ্যে বহু নছিহত, বক্তব্য ও আলোচনা শুনেছি। তন্মধ্যে আমার স্মৃতিচারণে একটি উক্তি উল্লেখ করতে চাই, তিনি বলতেন ‘‘মাদরাসা ও ছাত্র-ছাত্রীর তত্ত¡াবধানে যে চেষ্টা করছি তা ইখলাছের সাথে করার তাওফিক কামনায় মহান আল্লাহ তা’য়ালার কবুলিয়াতে পরপারে নাজাতের দোয়া চাই।”
মরহুম মুহাদ্দিস সাহেবেরে বড় সাহেবজাদা থেকে একটি ঘটনা জানা যায়। ধামতী গ্রামের পশ্চিমপাড়ার জনাব মো. সুরুজ মিয়া প্রতিনিয়ত তাঁর সাথে যোগাযোগ রাখতেন। তার সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিলো। তাকে একবার কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার উপজেলার সুলতানপুর ফাযিল মাদরাসায় একটি কাজের জন্য দায়িত্ব দিয়েছিলেন। ঐ কাজ ভালোভাবে পালন না করে রাতের বেলায় তাঁর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন। এতে তিনি একটু কষ্ট পেয়েছেন। মাওলানা সাহেবের মনের দুঃখ দুর করার জন্য ওই রাতেই সুলতানপুরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন। সেখানে যেতে গোমতী নদী পাড় হতে হয়। তৎকালে নদীর উপর কোন ব্রীজ ছিলো না। লোকজন নৌকা যোগে পারাপার হতেন। সুরুজ মিয়া ভীষণ চিন্তাযুক্ত হয়ে পড়লেন। তখন রাত বাজে প্রায় ১১টা। কিংকর্তব্যবিমুঢ় সুরুজ মিয়া আল্লাহর উপর ভরসা করে নদীর পানিতে ঝাপ দিয়ে নদী পাড় হতে লাগলেন। সাঁতার কেটে নদী পাড় হলেন। পরে পায়ে হেঁটে মাদরাসায় পেীঁছলেন। তার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে মাওলানা সাহেবের নিকট ঘটনার বর্ণনা দিলে তিনি অবাক হলেন এবং তার জন্য খাছ করে আল্লাহর দরবারে দোয়া করলেন। এ রকম অনেক ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতেন। তিনি তাদের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করতেন। জীবন সায়াহ্নে এসে যাদের কথা শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করতেন তারা হলেন, ফতেহাবাদ নিবাসী জনাব মো. সিরাজুল ইসলাম, ধামতী কামিল মাদরাসার হেড মুহাদ্দিস হযরত মাওলানা ওয়াজিউল্লাহ (র.)সহ অনেক মুরুব্বি ও সহপাঠিদেরকে।
অবসরকালে বিভিন্ন দরবারে, প্রতিষ্ঠানে, মজলিসে দ্বীনি আলোচনা করতেন। আল্লাহর ভয়ে সকলকে সদা ক্রন্দনরত থাকার আহŸান করতেন। নিজের ভুল ভ্রান্তি স্মরণ করে আল্লাহর কাছে তাওবা ইস্তেগফার করতেন। চলতে চলতে ক্রমশ শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে অসুস্থ্য হয়ে গেলেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লার পথে রওয়ানা দিলেন। দীর্ঘশ^াস ফেলতে ফেলতে মুখে উচ্চারিত হতে থাকলো লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ। না- আর কোন শব্দ শোনা যাচ্ছেনা। সারাটা শরীর হিম হয়ে যাচ্ছে। কেউ পায়ের তলায় হাত, কেউ-বা হাতের তালুতে হাত, আবার কেউ নুরানী চেহারায় হাত দিতে দিতেই সকলেই সমস্বরে চিৎকার দিয়ে বলতে লাগলেন ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। কেউ বলে বাবা নেই, কেউ বলে দাদা নেই, কেউ বলে ভাই নেই, সকলেই বলে উঠে আমাদের জনমের মত কাঁদিয়ে হুজুর চলে গেছেন আসল ঠিকানায়। ২০১২ সালের জুন মাসের ১৬ তারিখ বেলা দেড়টা ৭০ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
তাঁর মৃত্যু সংবাদ মুহুর্তেই ছড়িয়ে পড়ে দেশ-বিদেশে। দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তাঁর অসংখ্য ছাত্র, ভক্ত, মুরিদ, আলেম-উলামা, সহকর্মী, আত্মীয়-স্বজন দ্রæত আসতে শুরু করেন তাঁর লাশের পাশে। ঘোষণা হলো প্রথম জানাযা নিজ বাড়ী ফতেহাবাদ ও দ্বিতীয় জানাযা হবে কর্মস্থল ধামতী দরবার শরীফে। ওদিকে তাঁর অন্যান্য কর্মস্থল থেকে, আড়াইবাড়ী দরবার শরীফ, সোনাকান্দা দরবার শরীফ, বানিয়াপাড়া দরবার শরীফ, শহীদ নগর দরবার শরীফ, বিভিন্ন মাদরাসা, বিভিন্ন এলাকা থেকে বাস, মাইক্রো, সিএনজিসহ নানা যান বাহনে ও পদব্রজে এসে সমবেত হতে থাকে হাজার হাজার জনতা। মরহুমের বড় ছেলে হযরত মাওলানা এ কে এম মুহিব্বুল্লাহ হাশেমী তাঁর প্রাণের প্রতিষ্ঠান সুলতানপুর ফাযিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা কবির আহমাদকে প্রথম জানাযা আদায়ের জন্য অনুরোধ করলেন। তিনি প্রথম নামাযে জানাযা সুলতানপুর ফাযিল মাদরাসা ময়দানে এবং ধামতী দরবার শরীফের পীর হযরত মাওলানা আবদুল হালিম সাহেবের ইমামতিতে দ্বিতীয় নামাযে জানাযা শেষে তাঁকে ধামতী ইসলামিয়া কামিল মাদরাসার পশ্চিম পাশের্^, ধামতী দরবার শরীফের কবরস্থানে তাঁর শ^শুর ও শাশুরীর কবরের পাশে দাফন করা হয়। পরবর্তীতে তাঁর স্ত্রী মরহুমা নূরজাজান বেগমকে তাঁরই কবরের পাশে দাফন করা হয়। মহান রাব্বুল আলামীন তাঁর জীবনের সকল দ্বীনি খেদমতকে কবুল করে জান্নাতুল ফেরদাউস নসিব করুন। (আমিন)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।