পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশেষ সংবাদদাতা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ইসলাম ধর্মই নারীর মর্যাদা সমুন্নত রেখেছে। ধর্মের নামে নারীর অগ্রযাত্রা থামিয়ে রাখার কোনো সুযোগ নেই। ইসলামে নারীর ক্ষমতায়নের গৌরবের ইতিহাস রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কূপম-ূকতার নামে নারীকে পেছনে ঠেলে রাখা চলবে না। আল্লাহ’র রাসুল মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে প্রথম ইসলাম গ্রহণকারীও একজন নারী। তিনি ব্যবসা করতেন, এমনকি রাসুল মুহাম্মদ (সা.)-এর সাথে জিহাদের ময়দানেও গিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল মঙ্গলবার সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০১৬-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীদেরকে নিজেদের কর্ম, মর্যাদা ও আত্মবিশ্বাসের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুযোগ করে দিয়েছি। সেই সুযোগ আমাদের বোনদের কাজে লাগাতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের কারো মুখাপেক্ষী হলে চলবে না। নিজেদের ভাগ্য নিজেদেরই গড়তে হবে, নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে, আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলতে হবে। তবেই মর্যাদা পাওয়া যাবে। কেঁদে কেঁদে ফিরলে মর্যাদা কেউ হাতে তুলে দেবে না, বরং করুণা করবে। আর করুণা নিয়ে মেয়েরা বাঁচতে পারে না।
আমরা সরকার পরিচালনা করে বিগত বছরগুলোতে নারাীদের ক্ষমতায়নে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন করেছি এবং তাদের কর্মের সুযোগ সৃষ্টি করেছি। কাজেই নিজের মর্যাদাটা নিজের কর্মের মধ্য দিয়ে এবং আত্মবিশ্বাসের মাধ্যমে নিজেকেই অর্জন করতে হবে,’ বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন ইউএন ওমেন ইন বাংলাদেশ-এর দেশীয় প্রতিনিধি ক্রিস্টিন হান্টার। নারী ও শিশু মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসিমা বেগম অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব ড. সুরাইয়া বেগমসহ মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দপ্তর এবং অধিদপ্তরের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, কূটনৈতিক মিশনের সদস্য ও আন্তর্জাতিক সহযোগী সংগঠনের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় তো বটেই, বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের থেকেও এগিয়ে আছে। এ প্রসঙ্গে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, অনেক পরাশক্তি যারা সারাবিশ্বে মোড়লগিরি করে বেড়ায় তারাও এখন পর্যন্ত কোনো নারী সরকারপ্রধান নির্বাচন করেনি, এমনকি নারীদের ভোটাধিকারও দেয় অনেক দেরিতে। নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ পার্শ্ববর্তী ভারত-পকিস্তানের চেয়েও এগিয়ে বলে প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, সব ক্ষেত্রে নারীরা সুচারুভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে তারা পুুরুষের চেয়েও এগিয়ে। সবচেয়ে বড় বিষয় নারীরা দুর্নীতিতে যুক্ত নেই।
নারীদের উন্নয়নে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছি বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারি চাকরিতে মহিলাদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ, পুরুষ উদ্যোক্তাদের চেয়ে নারী উদ্যোক্তাদের ৫-৬ শতাংশ কম সুদে ঋণ সুবিধা প্রদান, ল্যাকটেটিং মাদার ও গর্ভবতী মায়েদের জন্য ভাতা চালু, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা ভাতা প্রদান, সচিবালয়সহ বিভিন্ন জায়গায় ডে কেয়ার সেন্টার চালু, স্বামী পরিত্যক্তা, নির্যাতিতা নারীদের জন্য ভাতার ব্যবস্থা, নারীদের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন, নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে যৌতুক নিরোধ আইন সংশোধন করে যুগোপযোগী করা, বিভাগীয় পর্যায়ে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার স্থাপন, নারীদের আইনি সুবিধা প্রদানের উদ্যোগ, পৃথক ডায়াবেটিস হাসপাতাল নির্মাণ এবং হিজড়াদের তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের সংসদ নেতা, বিরোধীদলীয় নেতা, সংসদের উপনেতা নারী এবং স্পিকারও নারী। এরকম দৃষ্টান্ত পৃথিবীতে নজিরবিহীন। বর্তমান সংসদে সরাসরি ভোটে নির্বাচিত ২০ জন নারী সংসদ সদস্য রয়েছেন। সংরক্ষিত নারী আসনের সংখ্যা ৩০ থেকে ৫০ জনে উন্নীত করা হয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য স্থানীয় সরকারের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে, যেমন Ñ ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনে ৩০ শতাংশ আসন নারীর জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। উপজেলা পরিষদে নির্বাচিত মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যানের পদ সৃষ্টি, ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত আসনে নির্বাচিত পাঁচজন নারী সদস্যকে উপজেলা পরিষদে অন্তর্ভুক্তকরণ এবং বিভিন্ন কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে তাদের দায়িত্ব পালনের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী তিন বাহিনীতে নারীদের নিয়োগ, বিমানের পাইলট পদে নারীর দায়িত্ব পালন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে কন্টিনজেন্ট প্রধান হিসেবে নারী সদস্যের দায়িত্ব পালনের বিষয়টি উল্লেখ করেন। পাশাপাশি আদালতে নারী জজ, এসপি, ডিসি প্রভৃতি পদে বর্তমান সরকারের নারীদের পদায়ন করাসহ বাংলাদেশের জন্য সাফ গেমস সাঁতার ও ভারোত্তোলনে দুই নারীর স্বর্ণজয়ের প্রসঙ্গও উত্থাপন করেন।
স্বাধীনতার পরেই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এদেশে নারীর ক্ষমতায়নের সূচনা করেন। বঙ্গবন্ধু নারী-পুরুষের সমান অধিকারে বিশ্বাস করতেন। জাতীয় জীবনের সকল ক্ষেত্রে নারীর সমানাধিকারের বিষয়টি তিনি সংবিধানের ১৯ এবং ২৮ অনুচ্ছেদে নিশ্চিত করেছেন। জাতির পিতা মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত মা-বোনদের ‘বীরাঙ্গনা’ খেতাব এবং রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান, স্বাধীনতা যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের পুনর্বাসন ও ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে ১৯৭২ সালে ‘নারী পুনর্বাসন বোর্ড’ গঠন করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিতা মা-বোনেরা বিভিন্ন রোগ-অসুখে ভুগছিল। বিদেশ থেকে ডাক্তার এনে বঙ্গবন্ধু তাদের চিকিৎসা করান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার মা একাত্তরের সেসব নারীদের পরিচর্যা করেছিলেন। তারা সুস্থ হওয়ার পর পরিচয় দিতে চাইত না। তাদের অনেককেই পরিবারে আর গ্রহণ করা হয়নি। বিয়ের সময় বাবার নামের সমস্যা হতোÑজাতির পিতা বলেছিলেন, ‘লিখে দাও বাবার নাম শেখ মুজিবুর রহমান। বাড়ি ৩২ নম্বর, ধানমন্ডি।’
তিনি বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি। পরমুখাপেক্ষী হয়ে আমরা বাঁচতে চাই না। আমাদের ভাগ্য আমরা নিজেরাই গড়ে তুলব। এজন্য প্রয়োজন নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা। নারীকে জাতীয় উন্নয়নের মূল¯্রােতে অন্তর্ভুক্ত করতে পারলেই আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তুলতে পারব। বাংলাদেশ হবে বিশ্বের বুকে একটি সমৃদ্ধিশালী, শান্তিপূর্ণ দেশ।
তিনি বলেন, আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গঠনের যে কর্মকা- বাস্তবায়ন করছিÑএসব কাজে পুরুষের পাশপাশি নারী সমাজও সমানতালে দায়িত্ব পালন করছে। ধর্মের দোহাই দিয়ে এবং নানা অজুহাত দেখিয়ে নারীদের আর পেছনে ফেলে রাখা যাবে না। আমরা স্বাধীন। আমরা উন্নতি করতেই চাই। উন্নয়নের জন্য সবার সমান অবদান রাখা দরকার। অধিকার-মর্যাদায় নারী-পুরুষ সমান সমান, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান বিশ্বে ৭০ ভাগ মানুষ হচ্ছেন মহিলা ও নারীশিশু। অনেক দেশেই নারীরা পুরুষের সমান কঠিন কাজ ও দুর্যোগপূর্ণ কাজে অংশ নিচ্ছেন, কিন্তু তারা উপযুক্ত মজুরি পান না। আমরা আমাদের নারী সমাজের কাজের মূল্যায়ন করছি এবং প্রকৃত মজুরি প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।
সংসারকে সুখী করতে মেয়েদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বোনদের বলব, সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে, এই কথাটা মনে রাখতে হবে। একটা সংসারকে সুন্দর করে রাখতে মেয়েদের অনেক দায়িত্ব থাকে, সে দায়িত্ব তারা নিশ্চয়ই পালন করবে। কথায় তো আছে, যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সমাজে মেয়েরা তো খুব বেশি নির্যাতন করে না, নির্যাতিত হয়। কিন্তু এর ব্যতিক্রমও রয়েছে। সমাজে পুরুষরাও নারীর কাছে নির্যাতনের শিকার হয়। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে হয়তো সেদিন আসতে পারে, দেখা যাবে আমাদের হয়তো ওরকম আইনও (পুরুষ নির্যাতন প্রতিরোধ আইন) করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, একটা মজার কথা বলি, পার্লামেন্টে আমি প্রশ্নোত্তর পর্বে উত্তর দিয়ে থাকি। সেখানে একজন সংসদ সদস্য আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ভবিষ্যতে পুরুষ নির্যাতন প্রতিরোধ আইন করা হবে কিনা? তিনি বলেন, আমি আর কী বলব Ñ ওনাকে বললাম, আপনার যে এত কষ্ট তা তো জানতাম না। আপনি বলেন, আমরা দেখব, কীভাবে আপনার সমস্যা সমাধান করা যায়। গত বছর জাতীয় সংসদের এক অধিবেশনে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হাজি মোহাম্মদ সেলিম পুরুষ নির্যাতন প্রতিরোধ আইন করার দাবি জানান।
হাজি সেলিম বলেছিলেন, বর্তমানে দেশে শুধু নারী নির্যাতন প্রতিরোধে আইন থাকলেও সমাজে বহু পুরুষ নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নারীও হয় ভয়ংকর। আমি চাই-পুরুষ নির্যাতনের বিষয়ে একটা আইন হোক। তিনি আরো বলেছিলেন, আমি বহু আগে থেকে বিচার-সালিশ করি। স্বামী-স্ত্রীর বিচার করতে করতে আমি দেখেছি, ২০টা বিচার এলে এর মধ্যে ১৫টি নারীর। স্বামীকে উচিতশিক্ষা দিতে গিয়ে তারা থানায় যায়, তা করতে গিয়ে শ্বশুর-শাশুড়ি, দেবর, ননদ, ভাশুর সবাইকে নারী নির্যাতনের মামলা দেয়। আর পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে হানা দেয়, সবাই বাড়ি ছাড়ে। ওই বাড়ি তছনছ হয়ে যায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।