Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

একে-৪৭সহ বিপুল অস্ত্র-গুলি সেনাবাহিনীর পোশাক উদ্ধার

লংগদুর গহীন অরণ্যে ইউপিডিএফের আস্তানায় সেনা অভিযান

| প্রকাশের সময় : ৩০ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম


বিশেষ সংবাদদাতা : রাঙামাটির লংগদু উপজেলায় ইউপিডিএফের আস্তানায় অভিযান চালিয়ে একে-৪৭সহ বিপুল পরিমাণ স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি ও সেনা পোশাক উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর ৬টার দিকে উপজেলার গলাছড়ি এলাকা থেকে এসব অস্ত্র ও সেনাবাহিনীর পোশাক উদ্ধার করা হয়। এছাড়াপার্বত্য চট্টগ্রামের অভঞ্চলিক সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) ব্যবহৃত নথি ও চাঁদার রশিদ অভিযানে পাওয়া গেছে ওই আস্তানায়।
আইএসপিআর-এর বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আঞ্চলিক পাহাড়ী সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এর ১৫-১৬ জনের একটা সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল নাশকতামূলক ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকান্ডের উদ্দেশ্যে লংগদুর গোলাছড়ি এলাকায় এক গোপন আস্তানায় অবস্থান করছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল ভোর রাতে অভিযান চালানো হয়। কিন্তু সন্ত্রাসীরা সেনাবাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে নিকটবর্তী কাসালং নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। এ সময় স্থানীয় জনসাধারণের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে সেনাবাহিনী সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করা থেকে বিরত থাকে। পরবর্তীতে ঘটনাস্থল এবং কাসালং নদীতে তল্ল¬াশী চালিয়ে ২টি এ কে-৪৭, ১টি চাইনিজ রাইফেল, ১টি যুগো¯øাভিয়ান রাইফেল, ৪টি ম্যাগাজিন, ১৫১ রাউন্ড গোলাবারুদ, ৪টি গোলাবারুদ রাখার পৌচ,০৮টি এ্যামুনেশন লোডার, বিপুল পরিমান সামরিক পোষাক, ইউপিডিএফ এর নথিপত্র ও চাঁদা আদায়ের রশিদ উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী। তবে এ ঘটনায় সাথে জড়িত কাউকে এখন পর্যন্ত আটক করা সম্ভব হয়নি।
লংগদু থানার ওসি  মোমিনুল ইসলাম জানান, স্থানীয় শুভ চাকমার বাড়ির পশ্চিম পাশে জঙ্গলের ভেতর একটি পাহাড়ি টিলা থেকে ওই অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়। সেনা সূত্র জানায়, লংগদুর গলাছড়ির গহীন অরণ্যের সেই আস্তানা থেকে পালিয়েছে কমপক্ষে ১৫-১৬ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী। সন্ত্রাসীদের অবস্থান নিশ্চিতের পর ওই এলাকায় শুরু হয় সেনা অভিযান। এ সময় পাশের কাসালং নদীতে ঝাঁপ দিয়ে পালিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। পালিয়ে যাওয়া সব সন্ত্রাসী পার্বত্য চট্টগ্রামের অঞ্চলিক সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) সদস্য বলে দাবি করেছে স্থানীয় সেনা সূত্র। পার্বত্য শান্তিচুক্তি প্রত্যাখ্যান করে ১৯৯৭ সালে আত্মপ্রকাশ করে ইউপিডিএফ।
খাগড়াছড়ির সেনা রিজিয়িনের জিটুআই মেজর মো. মুজাহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে গহীণ অরণ্যে সেনাবাহিনী এরই মধ্যে চিরুনি অভিযান শুরু করেছে। তবে সন্ত্রাসীরা অস্ত্রশস্ত্র লুকিয়ে সাধারণ পাহাড়িদের সাথে মিশে যাওয়ায় তাদের চিহ্নিত করা কঠিন। তবুও সাধারণ পাহাড়িরা যেনো হয়রানির শিকার না হয় তা  মাথায় রেখেই সেখানে অভিযান চলছে।
নিরাপত্তা বাহিনী ও স্থানীয়রা জানিয়েছে, সা¤প্রতিক সময়ে পাহাড়ে সংগঠিত দুইটি প্রাকৃতিক দূর্যোগকে কেন্দ্র করে স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তা প্রদানে তাদের পাশে থাকার ছদ্মবেশে নিজেদেরকে জনসাধারনের কাতারে মিশিয়ে আবারো সংগঠিত হতে শুরু করেছে পাহাড়ের সশস্ত্র কর্মকান্ডে লিপ্ত থাকা আঞ্চলিক দলগুলো। দেশে বিদেশে পাহাড়ের উপজাতীয়দের উপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে মর্মে ব্যাপক প্রচারনা চালিয়ে সংগৃহিত অর্থের একটি অংশ বিতরণ করে। এসময় স্থানীয় জনসাধারনের আবেগকে পুজিঁ করে দূর্বল সাংগঠনিক কাঠামোকে শক্তিশালী করার মানসে আঞ্চলিকদলীয় সন্ত্রাসীরা নিজেদেরকে জনগণের কাতারে আবদ্ধ করতে শুরু করে। এসময় তারা স্থানীয়দেরকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের সশস্ত্র কার্যক্রমসহ আবারো চাঁদাবাজির প্রস্তুতি নিতে থাকে। এই ধরনের গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে বুধবার রাতে অভিযানে নামে যৌথবাহিনীর একটি টিম। সূত্র জানায়ন, সা¤প্রতিক সময় নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অব্যাহত অভিযানে সশস্ত্র কর্মকান্ডে লিপ্ত থাকা আঞ্চলিক দলীয় সন্ত্রাসীরা অনেকটা  কোনঠাশা হয়ে পড়ে। এতে করে তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন অনেকগুলো আস্তানা হাতছাড়া হয়ে যায়। তাদের চাঁদা আদায়সহ সশস্ত্র কর্মকান্ড অনেকটা-ই কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছিলো সেনা বাহিনী।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ