পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চট্টগ্রামে ঈদের শানদার মেজবান শোডাউনে সরগরম ভোট রাজনীতি শীর্ষ দুই নেত্রীর নির্দেশেই তারা এলাকায় : ‘বদ্দা, খেয়াল রাইকখুন’
শফিউল আলম : জাতীয় নির্বাচন এখনও দূরে। তবুও যেন কাছেই। অন্তত চট্টগ্রামের নেতা-মন্ত্রী-এমপি এমনকি উঠতি নেতাদের এবারের পবিত্র ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে চলমান নজরকাড়া তৎপরতা দেখে ‘ভুলে’ মনে হবে নির্বাচন বুঝি দরজায় কড়া নাড়ছে! সবখানে ‘নির্বাচন’ ‘নির্বাচন’ আলোচনা, ভাবসাব এবং হাওয়া বয়ে চলেছে। আগামী নির্বাচনে নেতারা দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করা এবং নিজ নিজ এলাকায় জনসমর্থনের ভিত ‘পাক্কা’ করতে রীতিমতো ‘আদা-জল খেয়ে’ মাঠে নেমেছেন। দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বর্তমান ও সাবেক এমপি, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, প্রথম ও মাঝারি সারির নেতানেত্রী, সিটি মেয়র থেকে শুরু করে তাদের সমর্থিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর, পেশাজীবী নেতা, উপজেলা ও ইউপি চেয়ারম্যানরা ঈদুল ফিতরকে ঘিরে ভোটের মাঠে আগাম সরব। যার যার নির্বাচনী এলাকার মানুষজন, দলীয় তৃণমূল নেতা-কর্মী, সমর্থকদের দাওয়াত করে নেতারা শানদার মেজবানে আপ্যায়িত করছেন। গরু জবাই করে ঝাল ও কালো-ভুনা গোশতের ‘মেজ্জান’ (মেজবান) চাটগাঁর বহু পুরনো ঐতিহ্য ও রীতি। তবে সেসব মেজবান খানাপিনার মধ্যেই সীমিত নেই। দিনমান সামাজিক মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে ভোটের এপিঠ-ওপিঠ নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনায়। আর হিসাব-নিকাশ চলছে এলাকাবাসীর মাঝে। এ নিয়ে সাবেক ও বর্তমান এমপি-মন্ত্রী-নেতাদের যার যার বলয়ের তৃণমূল নেতা-কর্মীরা আরও বেশি তৎপর, বেড়েছে কদর। চট্টগ্রামে ঈদকেন্দ্রিক ভোটের শোডাউনগুলো সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করে স্পষ্টতই এ ক্ষেত্রে (অর্থাৎ নির্বাচনমুখী ব্যাপক ঈদ-শোডাউন আয়োজনে ও জনসমাবেশে) আওয়ামী লীগ-বিএনপি সমানে সমান। আবহাওয়া ভালো থাকায় আপ্যায়ন ডাকে সাড়াও মিলছে নেতাদের আশাতীত। আগামীতে মনোনয়ন ও ভোট প্রত্যাশী নেতা-এমপিরা খানাপিনার মিলনমেলায় সবার সাথে হাত ও বুক মিলিয়ে হাসিমুখে আর্জি জানাচ্ছেন, ‘বদ্দা, আঁর মিক্কা এক্কানা খেয়াল রাইক্খুন, দোয়া গইজ্জুন! (ভাইজান, আমার দিকে একটু খেয়াল রাখবেন, দোয়া করবেন’।
দুই নেত্রীর নির্দেশেই এলাকায়
গত রোববার ঈদের (শাওয়াল মাস) চাঁদ দেখা যাওয়ার পর খুশীর সেই ‘চান্দরাত’ থেকে শুরু হওয়া নেতাদের ঈদ আয়োজন সোমবার ঈদের দিন, দ্বিতীয় দিন (মঙ্গলবার) তুঙ্গে উঠে। গতকাল বুধবারও কোথাও কোথাও তা অব্যাহত থাকে। জানা যায়, আগামীকালও (শুক্রবার) রয়েছে কোনো কোনো নেতার আয়োজন। এভাবে একেকটি এলাকায় চলছে ভিন্ন ধরনের শোডাউন। তবে চট্টগ্রামের কয়েকজন মন্ত্রী-এমপি-নেতার সঙ্গে আলাপচারিতায় তারা কেউই সরাসরি একথা স্বীকার করতে চাননি আগামীর ভোটের মাঠ ঝালাই করার টার্গেটেই ঈদ মেজবানে তারা তৎপর কিনা। তারা ইনকিলাব প্রতিনিধিকে বলেছেন, ‘সুখে-দুঃখে নিজের এলাকাবাসীর পাশে আছি। এটা সামাজিক দায়িত্ব মনে করি’। অবশ্য আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতা-এমপি জানান, দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নেতাদের আগেই নির্দেশ দিয়ে রেখেছেন, তারা যাতে ঈদে এলাকাবাসীর সাথেই থাকেন। সরকারের জনকল্যামুখী ও উন্নয়ন-অগ্রগতি তুলে ধরেন। অপরদিকে বিএনপির নেতা, সাবেক মন্ত্রীদের কয়েকজন জানিয়েছেন, এবার ঈদে ও রমজানে নিজেদের এলাকাবাসী বিশেষ করে দুঃখ-দুর্দশাগ্রস্তদের সঙ্গে কাটানোর জন্য দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন। নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার, আগামীতে সুষ্ঠু নির্বাচনের গুরুত্ব এবং ভিশন ২০৩০ রূপকল্পÑ এই তিনটি বিষয়ে মাঠে-ময়দানে জনমত জোরদারের জন্য হাইকমান্ডের নির্দেশের আলোকে নেতা-কর্মীরা তৎপর আছেন বলে জানান নেতারা।
‘মহাতৎপরতা’র টার্গেট
কার্যত নিজের দলীয় সমর্থন একই সাথে জনসমর্থনের টার্গেট রেখে তারা এগুচ্ছেন। নেতাদের নানামুখী ‘মহাতৎপরতা’য় বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে সরগরম রয়েছে ভোট রাজনীতি। প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ আর বিএনপির নেতাদের ঘরে ঘরে ঈদ উপলক্ষে শানদার খানাপিনার আয়োজন তাই জানান দিচ্ছে। শুধুই ঘরবাড়িতে সীমিত ছিল না। ঈদের দ্বিতীয় দিন (মঙ্গলবার) কমিউনিটি সেন্টারগুলো ভাড়া করে ঈদ আপ্যায়ন এবং কোলাকুলি, কুশল বিনিময়ে ব্যস্ত সময় পার করেন নেতারা। সেসব আয়োজনে দাওয়াত পেয়ে ছুটে আসেন দল ও জোটের তৃণমূল নেতা-কর্মী, সমর্থক, পেশাজীবী ও অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠনের কর্মীরা। মনোনয়ন লড়াইয়ের আশাবাদ জোরালো রেখে নেতারা স্থানীয় লোকজন, দলীয় কর্মীদের হাসিমুখে আদর-আপ্যায়নে যেন ‘আপনজন’ হয়ে উঠেন।
ঈদ শোডাউনের আপ্যায়নে চাটগাঁইয়া মেজবান ছাড়াও পরোটা, কিমা, কোরমা-পোলাও, জর্দাভাত, সেমাই, ফিরনি-পায়েস, চা-কফি, ফল-ফলারিসহ ছিল কতকিছু। ঈদসহ দু’দিনে নেতা-মন্ত্রীদের বাড়িঘরে তো বটেই, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সাবেক ও বর্তমান নেতা-মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, এমপি নিজেদের এলাকাবাসী, কর্মী-সমর্থকদের আপ্যায়ন এবং নির্বাচনমুখী কথাবার্তা, খোশগল্প করে দিনভর সময় কাটান স্থানীয় কমিউনিটি সেন্টারগুলোতে। এলাকাওয়ারি প্রভাবশালী সর্দার-মাতবর গোছের ব্যক্তিরাও শামিল হন। তাছাড়া অনেক এলাকার পাড়ায় সম্ভাব্য এমপি প্রার্থী বা দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ছবিসহ ‘ঈদ শুভেচ্ছা’ ডিজিটাল পোস্টার ও ব্যানার সাঁটানো হয়েছে।
ঈদ উপলক্ষে চট্টগ্রাম নহানগরী ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে পরিবার-পরিজনের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করতে ছুটে গেছেন অন্তত ৩০ লাখ মানুষ। তাছাড়া রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নিজ এলাকায় গেছেন আরও সমসংখ্যক। ঈদে নাড়ির টানে ‘মায়ের কোলে’ ছুটে এসেছেন, এখনো আসছেন চট্টগ্রাম ছেড়ে বহির্বিশ্বে বিশেষত মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে থাকা অগণিত প্রবাসী। তাদেরকে টার্গেটে রেখে বর্তমান ও সাবেক নেতা-মন্ত্রীদের ভোট রাজনীতিমুখী ঈদ আয়োজন ও আপ্যায়ন তুঙ্গে। অকাতরে বড়সড় বাজেট নিয়ে নেমেছেন নেতা-মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা ঈদ শোডাউনে। একেক এলাকায় একেকজন প্রতিপক্ষকে টেক্কা দিয়ে চলছে ঈদ রাজনীতি। আর প্রত্যন্ত গ্রামেগঞ্জে পাড়া-মহল্লায় ছড়িয়ে পড়েছে ঈদ আনন্দের সাথে নির্বাচনমুখী রাজনীতির জোয়ারের ঢেউ। যা এ মুহূর্তে ‘টক অব দ্য চিটাগাং’।
নেতা-মন্ত্রী-এমপিদের তৎপরতা
অভাবনীয় আয়োজনে ও ব্যাপক পরিসরে ‘নির্বাচনমুখী’ তৎপরতায় এবার ঈদে চট্টগ্রামের সিনিয়র নেতারা নিজের এলাকাবাসী, দলীয় নেতা-কর্মীদের ঈদ মেজবান-আপ্যায়নে সময় কাটাচ্ছেন। তাদের মধ্যে- মিরসরাইতে নিজ এলাকাবাসীর সঙ্গে ঈদের আনন্দ ও মিলনমেলায় অতিবাহিত করেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। বন্দরনগরীর চান্দগাঁও বাড়িতে এবং খুলশির বাসায় ঈদ উপলক্ষে এলাকাবাসী, কর্মীদের নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটান প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল ইসলাম বিএসসি। আনোয়ারায় নিজের এলাকার লোকজনের ভিড়ে আনন্দমুখর ঈদ অতিবাহিত হয়েছে এবং প্রতি সপ্তাহেই এলাকায়ই থাকেন বলে ইনকিলাবকে জানান, ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। আন্দরকিল্লা নজির আহমদ চৌধুরী রোডের বাড়িতে নেতা-কর্মী, এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে আপ্যায়নে ও খোশগল্পে মেতেছিলেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন।
নগরীর উত্তর কাট্টলী ও মেহেদীবাগে নিজের বাড়িতে নেতা-কর্মী, সমর্থক, পেশাজীবী ও এলাকাবাসীর মাঝে ঈদ শুভেচ্ছা আর আপ্যায়নে ব্যস্ত দু’দিন কাটান বিএনপির কেন্দ্রীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বাণিজ্য মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। কাজির দেউড়িতে মঙ্গলবার কমিউনিটি সেন্টারে দলীয় কর্মী, সমর্থকদের আপ্যায়নে কাটান দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমান। চশমা হিলের বাড়িতে নেতা-কর্মী, পেশাজীবীদের ভিড়ে নিজ হাতে আপ্যায়নে ব্যস্ত থাকেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি, সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন এবং চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মনির উজ জামান, সিএমপি কমিশনার ইকবাল বাহার, জেলা প্রশাসক মোঃ জিল্লুর রহমান চৌধুরী, জেলা পুলিশ সুপার মোঃ নুরেআলম মিনাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তার সাথে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করতে যান। নিজ এলাকা হাটহাজারী এবং চট্টেশ্বরী রোডের বাড়িতে ঈদ আয়োজনে কাটান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেয়র মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন। বাঁশখালীতে এলাকাবাসীর সাথে ছিলেন দক্ষিণ জেলা সভাপতি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী। বাকলিয়ায় নিজ এলাকাবাসীকে নিয়ে ঈদ উদযাপন এবং একটি কমিউনিটি সেন্টারে আপ্যায়নে ব্যস্ত সময় কাটান বিএনপির চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন। কাট্টলীর মোস্তফা-হাকিম ভবনে এলাকাবাসীকে নিয়ে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করেন সাবেক মেয়র এম মনজুর আলম, নগরের বন্দর-পতেঙ্গা এলাকাবাসীর মাঝে মাহে রমজান এবং ঈদ ব্যস্ততায় অতিবাহিত করেন সাবেক চিটাগাং চেম্বার সভাপতি এমএ লতিফ এমপি। বাঁশখালী ও পাঁচলাইশের বাড়িতে কাটান সাবেক মেয়র জাতীয় পার্টির নেতা মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, মোহরার বাড়িতে ঈদ আয়োজন ছিল সিডিএ চেয়াম্যান আবদুচ ছালামের, এনায়েত বাজারে নিজ এলাকাবাসীকে নিয়ে আপ্যায়ন ও ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বেশ ক’জন নেতা-এমপি এবার মাহে রমজানে চট্টগ্রামে দুর্যোগ ক্ষতিগ্রস্ত ও সমাজের হতদরিদ্র জনগোষ্ঠির মাঝে চাল, ডাল, ইফতারি-সাহরী খাদ্যসামগ্রী, বস্ত্র, নগদ অর্থ, গৃহনির্মাণ সামগ্রী প্রভৃতি বিতরণ করেছেন বিভিন্ন এলাকায়। তবে কঠোর বাস্তবতা হলো, অনেক সাবেক ও বর্তমান এমপি, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-নেতা নিজ এলাকাবাসীর বিশেষত গরিব-দুস্থদের দুঃখ-কষ্ট লাঘবে পাশে দাঁড়ানোরও যেন সময়টুকুও যেন পাননি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।