দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
\ মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান \
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
জাকাত ইসলামের অন্যতম মৌলিক আর্থিক একটি ইবাদত। জাকাত আদায় করলে সম্পদ পরিশুদ্ধ এবং বরকতময় হয়। জাকাত ধনীদের সম্পদে গরিবদের অধিকার। এজন্য জাকাত দানকারীদের নিজ দায়িত্বে জাকাতের সম্পদ জাকাত গ্রহীতাদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। আল্লাহ্্্্ বলেন, ‘এবং তাদের (ধনীদের) ধনসম্পদে রয়েছে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতদের অধিকার।’ (সুরা আয-যারিয়াত : ১৯)।
এটি ১ বছরে একবার আদায়যোগ্য ইবাদত হলেও সাধারণত তা রমজান মাসেই আদায় করা হয়। আর সেটিই যৌক্তিক। কারণ প্রথমত, রমজান সহানুভূতির মাস। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘রমজান মানুষের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশের মাস।’ (সহিহ ইবন খুযায়মা : ১৮৮৭)। কাজেই রমজানে জাকাত আদায় করলে জাকাতের মাধ্যমে সহানুভূতি প্রকাশ করা যায়। দ্বিতীয়ত, রমজানের কারণে বেশি মাত্রায় নেকি পাওয়া যায়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘রমজান মাসে যে একটি নফল আদায় করল, সে যেন অন্য মাসে একটি ফরজ আদায় করল। আর যে এ মাসে একটি ফরজ আদায় করল, সে যেন অন্য মাসে সত্তরটি ফরজ আদায় করল।’ (শুয়াবুল ঈমান : ৩৬০৯)। তৃতীয়ত, জাকাত আরবি বর্ষ হিসেবে আদায় করতে হয়। আর সাধারণত রমজান ছাড়া অন্য আরবি মাসের হিসাব-কিতাব অতটা জানা থাকে না। কাজেই তাত্তি¡কভাবে রমজানের সঙ্গে জাকাতের সম্পর্ক না থাকলেও ব্যবহারিক সম্পর্ক যথেষ্ট রয়েছে। আল্লাহ্্্্ বলেন, ‘তোমরা নামাজ কায়েম কর ও জাকাত আদায় কর।’ (সুরা বাকারা : ১১০)। ‘দুর্ভোগ মুশরিকদের জন্য, যারা জাকাত দেয় না এবং আখিরাতে বিশ্বাস করে না।’ (সুরা হা-মিম আস সাজদা : ৬-৭)। আল্লাহ্্্্ বলেন, ‘তাদের সম্পদ থেকে সাদাকা (জাকাত) গ্রহণ করুন। এরপর আপনি তাদের পবিত্র করবেন এবং পরিশোধিত করবেন।’ (সুরা তাওবা : ১০৩)। জাকাতের নিসাব হলো, সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা ৮৭ দশমিক ৪৫ গ্রাম বা সাড়ে ৫২ ভরি রৌপ্য বা ৬১২ দশমিক ১৫ গ্রাম (আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ১ ভরি = ১১ দশমিক ৬৬ গ্রাম বা ১ তোলা। দ্র. উইকিপিডিয়া) বা সমমূল্যের ক্যাশ টাকা, যে কোনো সময় ভাঙানো যায়, এমন বন্ড বা সঞ্চয়পত্র অথবা সমমূল্যের ব্যবসার পণ্য থাকলে জাকাত আদায় করতে হবে। অবশ্য এ পরিমাণ সম্পদ ১ বছর স্থায়ী হতে হবে।
বর্তমান বাজারে ১ ভরি রৌপ্যের পাইকারি দর হলো ৬০০ টাকা। সে হিসেবে জাকাতের নিসাব দাঁড়ায় ৩১,৫০০ (একত্রিশ হাজার পাঁচশত) টাকা। এমন অর্থের অধিকারী সবাই জাকাত আদায় করলে দেশের অর্থনীতি অন্যরকম হতে পারত; ধনী ও গরিবের মধ্যে ব্যাপক বৈষম্য সৃষ্টি হতো না। পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষায় ধনী ও গরিব আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। তার অর্থ এই নয় যে, একজন সম্পদের পাহাড় গড়বে, আর অন্যজন খাবারের জন্য কুকুরের সঙ্গে লড়াই করবে। একজন গ্রামে ও শহরে প্রাসাদ নির্মাণ করার পর বিদেশের মাটিতে সেকেন্ড হোমের হিসাব মেলাবে, আর অন্যজন রাস্তার পাশে ঝুপরিতে রাত কাটাবে। বরং পৃথিবীর সব মানুষের মৌলিক প্রয়োজন মেটানোর জন্য যা দরকার, আল্লাহ তা সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ্্্্ বলেন, ‘আমি প্রত্যেক বস্তুকে পরিমিতরূপে সৃষ্টি করেছি।’ (সুরা আল কামার : ৪৯)। সুষম বণ্টনের অভাবে ধনী ও গরিবের মধ্যে এমন বৈষম্য সৃষ্টি হয়। জাকাত এ বৈষম্য দূর করে সুষম বণ্টনের মাধ্যমে সামঞ্জস্যপূর্ণ অর্থব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।