Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন শুরু ঈদের পর

হাওর বাঁধ ভাঙার ঘটনায় মন্ত্রীর কাছে তদন্ত প্রতিবেদন হস্তান্তর

| প্রকাশের সময় : ২৪ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম


স্টাফ রিপোর্টার : অসময়ে বাঁধ ভেঙে শতাধিক হাওর ফসল তলিয়ে যাওয়ার ঘটনায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, ঠিকাদার এবং প্রকল্প পরিচালকসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। এসব কর্মকতাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা চেয়ে তদন্ত প্রতিবেদন পানি সম্পাদ মন্ত্রীে কাছে দেয়া হয়েছে। হাওরের বাধ ফসল তলিয়ে যাওয়ার ঘটনায় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে গঠিত তদন্ত কমিটির ১৯ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন পানিসম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছ।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী  জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অ্যাকশন শুরু হয়ে গেছে। মন্ত্রণালয় থেকেও যে পদক্ষেপ নেয়ার কথা, তাও নেয়া হবে। এ বিষয়ে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। আমরাও হাওরবাসীর ব্যথায় ব্যথিত। ঈদের পরে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পানি সম্পদ মন্ত্রীকে দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়, একজন প্রকল্প পরিচালকের অধীনে ৬টি জেলা পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা। এ বিষয়ে বলা হয়, সুনামগঞ্জসহ ৬ জেলার হাওর অধ্যুষিত অঞ্চলে বর্তমানে তিনটি প্রশাসনিক বিভাগের (সিলেট, ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগ) অন্তর্ভুক্ত। একটি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় একজন প্রকল্প পরিচালকের অধীনে যে কার্যক্রম পানি উন্নয়ন বোর্ড নিয়েছে, তা সঠিক হয়নি বলে বাস্তবে প্রমাণ মিলেছে। বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ছোট ছোট প্রকল্প নিলে সুফল বেশি পাওয়া যাবে। সর্বোপরি হাওর অঞ্চলকে একটি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বন্যা প্রতিরোধসহ উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ করা অপরিহার্য। এক্ষেত্রে পার্বত্য জেলাগুলোর জন্য যেমন পার্বত্য উন্নয়ন বোর্ড আছে, তেমনি কার্যক্রম গ্রহণ হাওর এলাকায় জরুরি। হাওর ও জলাভূমি অধিদফতরের কার্যপরিধির মধ্যে এ ধরনের উন্নয়ন কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত নয়। হাওর এলাকায় বাঁধ নির্মাণ, সংস্কার, মেরামত ইত্যাদি কার্যক্রম ঠিকাদার বা পিআইসির লাভজনক কার্যক্রমের বাইরে এসে সেবামূলক কাজের মাধ্যমে এটি সম্পাদনের বিষয়টি বিবেচনাযোগ্য। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজের বেশির ভাগ বাস্তবায়নে সম্পৃক্ত নির্বাহী প্রকৌশলী, উপ-সহকারী প্রকৌশলী বা এসওরা। কিন্তু এই বিস্তীর্ণ অঞ্চলে কাজের গুণগতমান ও কার্যক্রমের মনিটরিং ছিল না বললেই চলে। মাঠপর্যায়ের কার্যক্রমের ধীরগতিরোধ করা বা যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে তা তত্ত¡াবধানের দায়িত্ব নির্বাহী প্রকৌশলী, তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী কিংবা প্রধান প্রকৌশলী বা প্রকল্প পরিচালক কেউ করেননি। বিশেষ করে ক্যারিডওভার (এক বছরে কাজ শেষ করতে না পারলে ঠিকাদারকে দ্বিতীয় বছর সুযোগ দেয়া) কাজ হাওর এলাকার জন্য মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি কোনো বিধিসম্মত পদক্ষেপও নয়। এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। এই দায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাঠপর্যায়ের স্থানীয় কর্মকর্তারা ও প্রকল্প পরিচালক (সাময়িকভাবে বরখাস্ত আবদুল হাই) এড়িয়ে যেতে পারেন না। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় যে তিনজন প্রকৌশলীকে (আবদুল হাই, নুরুল ইসলাম সরকার ও আফসার উদ্দিন) সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে, তা সময়োচিত পদক্ষেপ বলে ভুক্তভোগীরা আমলে নিয়েছেন। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদাররাও এই ধীরগতি বা গাফিলতি বা কাজ না করার জন্য দায়ী। নীতিমালা অনুসরণ করে পিআইসি কমিটি গঠন করা হয় তা বাস্তবায়ন নিরিখে সংশোধযোগ্য।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অসময়ে হাওর অঞ্চলের কৃষকের ফসলহানি পানি উন্নয়ন বোর্ডের সুনামকে ব্যাপকভাবে ক্ষুন্ন করেছে। এই ঠিকাদার প্রক্রিয়াকে নিবিড়ভাবে পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। হাওর এলাকায় ফসল রক্ষার কাজ স্থানের সঙ্গে সময়ের সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। সম্পূর্ণ কাজকে ভিন্নভাবে ও বিজ্ঞানভিত্তিক দৃষ্টিতে বিবেচনার দাবি রাখে। স্থানীয় জনগণ ঠিকাদারি প্রথার পুরো বাতিল চেয়েছেন, যা প্রাধানযোগ্য। স্থানীয় জনগণ উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে ও জেলা প্রশাসনের তত্ত¡াবধানে কাজটি সম্পাদিত হোক, এমন দাবি করেছে, যা বিবেচ্য।
তদন্ত প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বর্তমানে যে বোরো ফসলের চাষ হয় তা পরিপক্ব হতে দীর্ঘ সময়  নেয়। তাতে আগাম বন্যা বা ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবসময়ই থাকে। এই জুয়া খেলা  থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে প্রকৃতির বিরুদ্ধে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে এককভাবে দায়িত্ব দিলে কাঙ্গিক্ষত ফল আসবে না। সে জন্য টেকসই বীজের উদ্ভাবন প্রয়োজন। এ বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিতে পারে। তবে তাতে সময়ের দরকার হবে। এটি প্রধানযোগ্য যে, কৃষকদের স্থানীয় জাতের বা ট্রাডিশনাল জাতের বোরো ফসলে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টায় লাভ নেই। কারণ, এতে যে ফসল হয় তাতে খরচ উঠবে না। বিকল্প ফসলের ব্যবহারের জন্য সুনির্দিষ্ট গবেষণা অপরিহার্য।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঈদ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ