স্বতন্ত্র উৎসব ঈদ
এল ঈদুল ফিতর, এল ঈদ ঈদ ঈদসারা বছর যে ঈদের আশায় ছিল নাক’ নিদ। হ্যাঁ, সুদীর্ঘ
ড. মুহাম্মদ সিদ্দিক : গণমাধ্যমে (মাস মিডিয়া) হলো এমন একটা উপাদান ও প্রযুক্তি যার সাহায্যে আমজনতার কাছে পৌঁছানো যায়। এর সাধারণ প্লাটফরমগুলো হলো- পত্র-পত্রিকা, ম্যাগাজিন, রেডিও, টেলিভিশন, ফোন, মোবাইল যোগাযোগ, আইপড়, বিজ্ঞাপনী সংস্থা, সিডি প্লেয়ার, টেপ রেকর্ডার, কাসেট প্লেয়ার, ইন্টারনেট, ফিল্ম থিয়েটার ধারনকৃত সংগীত এমনকি গ্রন্থ, প্রকাশনী সংস্থা ইত্যাদি। এগুলো আধুনিক সভ্যতা সংস্কৃতির উৎপন্ন পণ্য বিশেষ। যদিও গণমাধ্যম শব্দাবলী ১৯২০ এর দিকে ব্যবহার শুরু হয়, এই ব্যবস্থা কোন না কোনভাবে সভ্যতার ঊষা লগ্ন থেকে রয়েছে। প্রথম বই নাকিচীনে ৮৬৩ সালে ছাপা হয়। সত্তর শতকে ইংল্যান্ডে পত্র-পত্রিকা প্রকাশ শুরু হয়।
গণমাধ্যমের শক্তি দিন দিন বেড়েছে। এখন এটা রাজনীতিবিদ, এমনকি সামরিক প্রপাগান্ডিস্টদের হাতেও ব্যবহৃত হচ্ছে। এটা এখন ছবির মত সার্জনের হাতে সুব্যবহার, আর দুষ্টের হাতে খুনির হাতিয়ারের মত। বর্তমান যুগে পাশ্চত্য তথা ইহুদীগোষ্ঠী এই গণমাধ্যমকে হাতিয়ার হিসাবেই ব্যবহার করছে। কোন নীতি নৈতিকতাই মানছে না। যথেচ্ছা ব্যবহার হচ্ছে মুসলমান তথা আরব ইরানীদের বিরুদ্ধে।
ইহুদীদের প্রচার কৌশল
ইহুদী জায়নিষ্ট প্রচার প্রপাগান্ডা খুবই শাণিত। তবে তারা প্রচার মাধ্যমকে এমনভাবে ব্যবহার করে যাতে তাদের উদ্দেশ্য সিদ্ধ হয় এবং তাদের বিরোধীদের হয় ভরাডুবি। তারা শিল্প সাহিত্যকে ব্যবহার করে গোষ্ঠীস্বার্থে। অন্যান্য তৎপরতার সঙ্গে সাহিত্যকেও ব্যবহার করে জায়নিষ্ট প্রপাগান্ডায়। জনগণের মনকে বিভ্রান্ত করতে ইহুদী কমিউনিটিভিত্তিক নাটক লভেল চলচ্চিত্র ও অন্যান্য শিল্প-সংস্কৃতি তৈরী করে এরা। এই ধরনের শিল্প-সংস্কৃতি তৈরী করে এরা। এধরনের শিল্প-সংস্কৃতি উদ্দেশ্যমূলকভাবে একটা প্রপাগান্ডা সৃষ্টি করে। এগুলোতে ব্যবহার করা হয় শঠতা, প্রতারণা। নতুন পরিস্থিতিকে প্রমাণিত করতে পুরানো ঘটনাবলীকে ব্যবহার করা হয়, যা নতুন পরিস্থিতির ব্যাখ্যায় একেবারে মাত্রাত্রিক। ১৮৩২ সালে ইংল্যান্ডের বেনজামিন ডিজরেলী একটা উপন্যাস লিখলেন নাম “ডেভিড আলরয়” যার প্রভাব ইউরোপ ব্যাপী বিস্তৃত হল। ডিজরেলী তার উদ্দেশ্যমূলক উপন্যাসের জন্য যার শতকের আধা ঐতিহাসিক ইহুদী পটভ‚মি ব্যবহার করেন। ঐ উপন্যাসটিতে দেখানো হল যে, শীঘ্রই ইহুদীর দুনিয়ার নেতৃত্ব হাতে নিবে। ডিজরেলী ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত হয়ে যান। ইহুদী নেতৃত্ব চলে এল ইংল্যান্ডে।
১৮৭৪-১৮৭৬ সালে জায়নিষ্ট লেখিকা জর্জ ইলিয়ট (আসলে তিনি মেনি এ্যান্ড নান্নী বিৃটিশ মহিলা) লিখলেন- “ডেনিয়েল ডিরোনডা” নামে উপন্যাস ডিজরেলীর উপন্যাসের প্রভাবে। এই উপন্যাসে উদ্দেশ্যমূলক তিনি প্রপাগান্ডা চালান ইহুদীদের জন্য ফিলিস্তিন পেতে। এই উপন্যাস হিব্রæ ও ইডিস ভাষায় তরজমা করা হল। ইডিস ভাষা ইহুদীদের তৈরী করা ইউরোপে এল তাদের হাতে। জার্মানীর রাইনল্যান্ড এলাকা ও উভয় ফ্রান্সে এই ভাষা সৃষ্টিকরণ ইহুদীরা। যাতে হিব্রু, আরামেইক রোমানস্ ও জার্মান শব্দাবলী ব্যবহার করা হল। এটা জার্মান উপভাষা নয় একটা স্বতন্ত্র ইহুদীভাষায় পরিণত হল। প্রচার প্রপাগান্ডাকে ইহুদীরা এই কৃত্রিম ভাষা ব্যবহার করল, জর্জ ইলিয়টের এই উপন্যাস অনূদিত হয়ে জায়নিস্ট বাইবেল হয়ে পরিচিতি লাভ করে।
জায়নিস্টদের এই সব লেখা তাদের স্বপ্ন নীল নদ থেকেই ইউফ্রেটিস নদী পর্যন্ত এবং আরও মুসলিম এলাকা দখলের নীলনকশা প্রকাশ করে। এই গোষ্ঠীয় আর একজন বিশিষ্ট ঔপন্যাসিক হলেন স্যামুয়েল ইউসেফ আগনন। তার উপন্যাস “টাহিলাতে” লেখা হয়েছে এই প্রপাগান্ডা যে জেরুজালেমের সীমানা দামাস্কাস ও তার চার পাশ পর্যন্ত বিস্তৃত হোক। তাঁর আর এক উপন্যাস “দি হার্ট অব সি”তে লেবাননের সুর ও সেইদা এলাকাকে ইসরাইলের সীমারেখার ভিতর দেখানো হয়েছে। এই অতি বিপ্লবী ইহুদী জায়নিস্ট এই সব যোগ্যতার জন্য ১৯৬৬ সালে সাহিত্যের জন্য নোবেল পুরস্কার প্রাপ্ত হলেন। এদিকে বহু আগে লর্ড বায়রনের “হিব্রæ সংগ্স বইয়ে ইহুদী স্তূতি পাওয়া হয়েছিল।
উপসংহার:
এক সমীক্ষক সঠিক লেখেন পাশ্চাত্যে গণমাধ্যম সম্পর্কে, নৈতিক সংকটের প্রতিফলত হচ্ছে সংবাদপত্রে। এর প্রভাব পড়ছে সার্বিকভাবে মিডিয়ায়। বিবিসি, সিএনএন-এর অন্যান্য অনুষ্ঠান (যা অনেক ক্ষেত্রে অশ্লীল) বাদ দিয়ে যদি শুধু প্রতি ঘন্টায় পরিবেশিত সংবাদের দিকে তাকাই তাহলে দেখবো তারা সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে খুবই পক্ষপাতিত্ব করে। বিশেষ করে ইস্যুটি যদি মুসলিম বিশ্বের বা তৃতীয় বিশ্বের হয় তাহলে তাদের নিরপেক্ষতা ও সততা এক্ষেত্রে থাকে না বললেই চলে। আফগানিস্তান, ইরাক, প্যালেস্টাইনের ব্যাপারে তারা নিরপেক্ষ থাকে না। এসব মিডিয়া তাদের জন্মলগ্ন থেকে এ ইস্যুগুলোতে একদেশের নীতি অনুসরণ করে যাচ্ছে। দি ইকোনোমিস্ট, টাইমস এবং নিউজ উইক। এ তিনটি পত্রিকাই মানের দিক থেকে ভালো ও তথ্য সমৃদ্ধ পত্রিকা। সাধারণ লোক বুঝতেই পারবে না যে এর ভেতরে কী ধরনের তথ্য বিভ্রান্তি ঢুকে আছে। একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তিই বুঝতে পারবেন কিভাবে এগুলোতে তথ্য বিকৃতি করা হচ্ছে। অবাক হবে মাঝে মধ্যে আবার সবচেয়ে খ্যাত ইকোনোমিস্ট পত্রিকাটি যখনই তৃতীয় বিশ্ব বা মুসলিম ইস্যু আসে তখন আর জাস্টিস করতে পারে না বা সততা দেখতে ব্যর্থ হয়। ঐ একই ব্যাপারে তাদের কাছেও উত্তর কোরিয়া শয়তান, ইসরাইল আণবিক অস্ত্র বানালেও শয়তান নয়।
ইকোনোমিস্টকে অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে ইরাক যুদ্ধ সমর্থন করতে দেখা গেছে। দুর্বল শক্তি ইরাক একটি সবল শক্তির প্রেসারের সম্মুখীন। ইরাক সব সময় তার উপর হামলার আতঙ্কের সম্মুখীন। সে অবস্থায় একোনোমিস্টের মতো একটি পত্রিকা তার এডিটোরিয়ালে একবার নয় দশবারেরও বেশি আমেরিকাকে উস্কিয়েছে। তারা বলেছেন, যুদ্ধ করতে হবে, যুদ্ধ করবই সমাধান, যুদ্ধ ছাড়া এ ইস্যুর সমাধান নেই। আফগানিস্তানের ব্যাপারেও পত্রিকাটি উসকানি দিয়েছে।
তিনি দেশের মিডিয়া সম্পর্কে বলেন, এখানকার এডিটোরিয়াল পলিসি আমি খুব একটা ফেয়ার পাই না। সংবাদের ক্ষেত্রে এখানে ঘটনাকে খুব বেশি ফলাও করে বা কম করে দেখানোর অভিযোগে কম বেশি প্রায় সব পত্রিকা জড়িত। আমি বুঝি না এটি কী করে ফেয়ার রিপোর্টিং হয়? তারা কি করে দাবি করবে যে তাদের পত্রিকা সৎ ও নিরপেক্ষ? আবার অন্যদিকে সংবাদপত্রগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ইসলামিস্টদের তারা বলবে সাম্প্রদায়িক, সন্ত্রাসী, সাম্প্রদায়িক টাইটেন দিয়ে একটিকে তারা বিশেষভাবে একবার করতে থাকবে। এ সমস্ত রিপোর্টিং রাজনৈতিকভাবে রঞ্জিত এবং আইডিওলজিক্যালি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তাদের ভাষায় কোনো হিন্দু বা বৌদ্ধ সাম্প্রদায়িকতা নেই। কোনো একদিন পত্রিকা হাতে নিলে দেখা যাবে কিভাবে এখানে রিপোর্টিং খুব পক্ষপাতমূলক ও এক বেশে হচ্ছে। আমার মনে হয়, সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণের সবচেয়ে বড় দিক হতে হবে নিজের মত ও পথের ঊর্ধ্বে উঠে সততা দেখানো। যেমন, আল্লাতায়ালা কুরআনে বলেছেন, তুমি সত্যের পথে সাক্ষী হও তা যদি তোমার নিজের বিরুদ্ধেও হয়, তোমার আত্মীয়-স্বজনের বিরুদ্ধেও হয়, তোমার বাবা-মায়ের বিরুদ্ধেও হয়। (সূরা নিসা: ১৩৫)। এযে নীতিমালার কথা আল্লাহ কুরআনে বলেছেন তাই সংবাদপত্রের ক্ষেত্রে ভিত্তি হওয়া উচিত।
লেখক: ইতিহাসবিদ, গবেষক ও প্রবন্ধকার।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।