Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাহানারা আরজু

| প্রকাশের সময় : ২৪ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্পর্ধিত শব্দাবলী

না- আমার তেমন কিছু সম্বল নেই-
ক্ষমতা নেই সুদৃঢ় পদক্ষেপে ওই প্রশস্ত রাজপথে হেঁটে যাবার-
না- আমার কথা বলার সজ্জিত কোনো মঞ্চও নেই,
হাততালি দেবার ভক্তবৃন্দ নেই-
নন্দিত পুষ্পস্তবকে আচ্ছাদিত হব না কখনো;
আমার নেই শ্বেতমর্মর খচিত রাজপ্রাসাদ,
নেই হীরা মণি মাণিক্যের ছড়াছড়ি-
অঙ্গুলি নির্দেশে ছুটে আসবে না কোনো সেপাই সান্ত্রী লোক লস্কর-
ক্ষোভ নেই এতটুকু তাতে,
আমার যা আছে, অফুরন্ত সে ভাÐারÑ
আমার বুকের ওঠা-নামায়, ধমনীর শিরায় শিরায়
আছে কিছু শব্দাবলীÑ রিম ঝিম, রক্তদোলায় সে ধ্বনি
সৃজনের নূপুর হয়ে বাজে প্রতিক্ষণÑ
প্রতিদিনের রোদ-বৃষ্টি-ঝড়ে যার ক্ষয় নেই,
সে শব্দাবলী কুসুম সম্ভারে আমি এক চির বসন্তের
বাগান গড়ে নিতে পারি, যেখানে নিত্য ফুল শাখাতে
দোল খায় গানের পাখি, হলুদ-নীল-সোনালি পাখায়Ñ
চৌদিকে রঙিন প্রজাপতিরা ওড়ে, নীল ময়ূরীর পাখায়
শাওনের দোলা, আকাশের সাদা ভেলায় মুক্ত বলাকার সারি;
আমার সে শব্দমালা নিয়ে আসে হৈমন্তী সোনা ঝরা কৃষানের
স্বপ্নÑ সফল মাঠ, অভুক্ত শিশুর জঠরে অফুরন্ত ক্ষুধার
সাদা ভাত, পৃথিবীর সব দুঃখ মুছে দিয়ে নিয়ে আসে এক
সোনালি সূর্যের সকাল এবং চাঁদের প্লাবনে ঢেউ-ভাঙা রূপালি আকাশ!
আমার শব্দাবলী মেঘের মিনার ছুঁয়ে ছুঁয়ে উড়ে যায়
অনন্তকালের যাত্রায় নির্ভীক ডানায় উড্ডীনÑ
আমার লাগে না কোনো নভোযান অথবা ছাড়পত্র,
কোনো কাঁটাতারের শাণিত শাসন নেই আমার সীমানায়Ñ

নির্মল হালদার
শূন্য বোতল

এসো মেঘ এসো তোমাকে খাই, আমার ভেতরটা জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে
পেটে নেই পানীয় পদার্থ, কারু ওষ্ঠে মধু নেই অঞ্জলিতে পাব
মদের দোকান থেকে উড়ে গ্যাছে মদ কী প্রয়োজন বাবা
আমার বিরুদ্ধে শূন্য বোতল
বোতলের মধ্যে হাহাকার, হাসি, কেন বাবা আমাকে কেন
হাহাকারে ফেলা, কী অপরাধ করেছি আমি, কোন অপরাধে
তোমাদের ছলাকলা এবং আমার সম্মুখে ভালো মানুষ কেন
সে তো ব্রেখট জানেন, অজীতেশ জানেন, আমি ভালোমন্দের মানুষ
পানে বসি, মদ্যপানে মৃত মায়ের দুঃখ ভুলে যাই
মহাজনের কাছে পড়ে আছে সাতবিঘা জমি

সায়ীদ আবুবকর
হৃদয়ে সমুদ্র
হৃদয়ে সমুদ্র নাচে, যেন কোনো ফণা তোলা সাপ
বাতাসে দোলায় মাথা আর ক্রোধে করে ফোস ফোস;
যত দূর চোখ যায়, দেখি দুষ্ট দুরাচার-পাপ
মানুষের মহাদেশে দেখাতেছে তীব্র দুঃসাহস।
তাই দেখে ফেটে পড়ে হৃদয় আমার অস্বস্তিতে:
কবির কী কাজ শুধু, দেখবে আর চুষবে আঙুল?
কারো ঠাঁই অট্টালিকা আর কেউ থাকবে বস্তিতে,
মানুষকে মেরে যাবে শাসকের আইনের শূল;
মানুষের কলজে ভেঙে কত আর উঠবে টাওয়ার
নমরুদের, সাদ্দাদের! মানুষের রক্তগঙ্গা চুষে
এক চক্ষু দজ্জাল ও নিশ্চক্ষু পশুর পাওয়ার
সভ্যতার শস্যক্ষেতে কত আর উঠবে বলো ফুঁসে!
আমি কবি বজ্রকণ্ঠ, দেখতে পারি না মুখবুজে
দুষ্টের দাপট আর নিরীহের এ হেন দুর্দশা;
আমার কবিতা তাই মারণাস্ত্র আনে খুঁজে খুঁজে,
উত্তাল সমুদ্র এসে এ-হৃদয়ে করে ওঠা-বসা।

 

জাহাঙ্গীর ফিরোজ
হেরেমের প্রজাপতি

পাতার ওপরে বসে ধীরে ধীরে আস্ত পাতাটি
উদরে চালান ক›রে ঘুমিয়ে পড়লে
একটি জীবন থেকে আরেকটি জীবনে উড্ডীন
ফুলে ফুলে তোমার বিহার;
গত জন্মের প্রথম ক্ষুধার সাথে দ্বিতীয় ক্ষুধার জড়াজড়ি;
তবুও প্রথম জন্মের স্মৃতি নেই
বিস্মৃতি লিখেছে নিয়তি
প্রজাপতি আর তুঁতভূত পোকার নিবাস থেকে
ফিরে এসে তিনজন ভ্রমণ বিলাসী
সিল্করুট নিয়ে কথা বলে:
কার্পাস, কাপাসিয়া, মোঘল হেরেম
এইসব নিয়ে জাবর কাটার ফাঁকে
দেশলাই থেকে যেন জাদুবলে মসলিন শাড়ি
বের ক›রে নারীকে দেখিয়ে বলে কামাতুর
কাঁচুলিবিহীন মসলিন শাড়িতে তোমাকে কেমন দেখাতো?
মুহূর্তে জিনস আর টিশার্টটি হাওয়ায় মিলিয়ে গেলে
হেরেমের প্রজাপতি পড়ন্ত বিকেলে পাখা মেলে।

 

ফাহিম ফিরোজ
লাভঘাট

এই ঘাটে, যারাই দেহের গল্প করে তদের মরণ দীঘির জলে অথচ আমরা কখনো মরি না; উভয় আত্মার রচিত গোপন
উপন্যাস দেবতারা আড়াল সিন্দুকে আটকে রেখেছে কোন্
বেয়াদব রে ওখানে? ভুলে গেছে এই পাড়ের অতীত?
তাইতো গল্পের তরল আগুন ধারা নিজেদের অজান্তেই
সিঁড়ি বেয়ে ফোটায় ফোটায় নাব্যদেশ ছুয়
কেঁদে উঠে অমনি প্রাচীন সরোবর; আমরা এখনো
প্রজাপতি হয়ে সকলের অগোচরে এখানেই উড়ি-ঘুড়ি, কিছু
অর্ঘ্য ভাসিয়ে, ছড়িয়ে দেইÑ পুষ্প নয় ওইগুলোÑ দু’জনের
শুদ্ধতম ফুসফুস; কোনো গেরস্থের বউ চুপিচুপি দেখে ছিল
সেই দিন। দাদী মারে, দ্যাখো দ্যাখো কষ্ট পাচ্ছে আজ
সেই সব পাখিকুল, যারা একদিন বিকেলে খুউব
আমাদের ডানা ভাঙ্গার শব্দ শুনিয়ে ছিল। প্রসার ঘটিয়ে ছিলো
মেঘের ভেতর। তরতাজা জল পেয়ে তাই শত বুকের ঘুমন্ত চারা
এখন কেমন চারদিকে বিকশিত গোলাপ-শেফালি নামে
ছুঁয়া খুব ভাগ্যের ব্যাপার। ওগুলোই প্রেম।
অন্যেরা মরছে প্রতিদিন, যারাই দেহের
গল্প করে ওইখানে...। সূর্য থাকে যখন পাড়ের সীমানায়।


শাশ্বত হাসান
এক গøাস জল
আমাকে এক গøাস কালোচ্ছ¡ল জল দাও অন্ধকার হবো।
অভিমানগুলো লুকাবো, জ্বিভ শুঁকিয়ে যাবে আর্দ্রতার শরীরে এভাবেই শেষ হবে গান।
আমাকে একরাশ কালো সুন্দর দাও
আঁধারের সুন্দর হবো। সম্মানে অসম্মানে দেখবে
কালো কৃষকের বলিদান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন