পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঢাকা-চট্টগ্রাম ঢাকা-টাঙ্গাইল ঢাকা-ময়মনসিংহ ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ভয়াবহ যানজট : দেরিতে চলা ট্রেনে উপচে পড়া ভিড় : পদে পদে সীমাহীন ভোগান্তি
নূরুল ইসলাম : মহাসড়কে ভয়াবহ যানজট। লঞ্চ ও ট্রেনে উপচে পড়া ভিড়। পথে সীমাহীন ভোগান্তি-বিড়ম্বনা। তারপরেও নাড়ির টানে ছুটছে মানুষ। প্রিয়জনের সাথে ঈদ উদযাপনের জন্য গতকাল বুধবার থেকে শুরু হয়েছে ঘরে ফেরা। ভোগান্তির শুরু বেশ কয়েক দিন আগে থেকেই। এ কারনেই এবারের ঈদে ঘরে ফেরাকে অনেকে দুঃস্বপ্নের সাথে তুলনা করতে দ্বিধা করেন নি। আজও অব্যাহত থাকবে ঘরমুখি মানুষের ঢল। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির অভিযোগ, ঈদে যাত্রাপথে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য চলছে। এটিসহ নানা হয়রানির শিকার হচ্ছে ঘরমুখো মানুষ।
আগামী ২৬ জুন পবিত্র ঈদুল ফিতরকে টার্গেট করে ঢাকা ছাড়ছে মানুষ। প্রিয়জনের সাথে ঈদ উদযাপনের মাধ্যমে আনন্দকে ভাগাভাগি করতে নাড়ির টানে ছুটছে মানুষ। এই ছুটে চলা অনেকটাই আনন্দের হতো যদি যাত্রাপথে কোন ভোগান্তি না থাকতো। ঈদকে কেন্দ্র করে ঘরে ফেরার ভোগান্তি অতীতেও ছিল। কিন্তু এবার সব রেকর্ডকে ছাড়িয়ে যাওয়ার উপক্রম। এবার দেশের সবগুলো মহাসড়কে যানজট লেগে আছে রমজানের শুরু থেকেই। বিশেষ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভয়াবহ যানজট ঈদযাত্রার ভোগান্তি কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। গতকাল থেকে শুরু হয়েছে ট্রেনযোগে ঈদযাত্রা। মঙ্গলবার যান্ত্রিক গোলযোগের কারনে ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয় ঘটে। যার রেশ গতকালও ছিল। দেরিতে চলাচল করা ট্রেনে ছিল উপচে পরা ভিড়। যাত্রীদের অভিযোগ, বহু কষ্ট করে ট্রেনের টিকিট কিনেও তারা স্বস্তিতে ভ্রমণ করতে পারছেন না। কারন প্রতিটি ট্রেনেই বাড়তি ( স্ট্যান্ডিং) যাত্রী তোলা হয়েছে। তাদের চাপে আসনধারী যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। রেলওয়ে সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার কন্ট্রোলরুমের প্যানেল বোর্ডের সমস্যার কারণে সিডিউলের কিছুটা বিপর্যয় ঘটেছিল। গতকাল তা অনেকটাই সহনীয় পর্যায়ে চলে এসেছে।
অন্যদিকে, দেশের প্রায় সবগুলো মহাসড়কে ভয়াবহ যানজটে আটকা পড়েছে লাখ লাখ মানুষ। যাত্রাপথে এসব মানুষের ভোগান্তি অতীতের সকল রেকর্ডকেও ছাড়িয়ে যাওয়ার উপক্রম। প্রশাসনও পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, যানজট নিরসনে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হচ্ছে। মহাসড়কের যানজটপ্রবণ স্পটগুলোতে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের অবস্থা বেহাল। ভাঙাচোরা মহাসড়কে আবার চার লেনের কাজও চলছিল। মঙ্গলবার থেকে সেই কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তারপরেও যানজটের অবস্থার উন্নতি হয়নি। এ মহাসড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে তাকছে যানবাহন। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেও গতকাল ভয়াবহ যানজট ছিল। বিশেষ করে কাঁচপুর সেতু এবং মেঘনা ও গোমতী সেতুর দুই পাড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানবাহন আটকে থাকছে। ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে এবার নতুন করে যানজট ভয়াবহ রুপ নিয়েছে। সব মিলে ভুক্তভোগিদের কাছে এবারে স্বপ্নের ঈদযাত্রা দুঃস্বপ্নের মতোই। নদীপথে ভ্রমণের জন্য গতকাল সদরঘাটেও ছিল যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়।
ভুক্তভোগিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উত্তরাঞ্চল, দক্ষিণাঞ্চল ও চট্টগ্রামমুখী ঘরমুখো যাত্রীদের এবার বেশি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে ফেরি পারাপারে সমস্যার কারণে দুই পারে গতকাল দিনভর যানবাহনের দীর্ঘ সারি ছিল। উত্তরাঞ্চলগামী যানবাহনগুলো ঢাকা থেকে বেরিয়ে গাজীপুর ও টাঙ্গাইলে যানজটে আটকে পড়ে। ঢাকামুখী বাসগুলোকে দীর্ঘ জটে পড়ার পর ঢাকায় ঢুকতে অতিরিক্ত ৫ থেকে ৭ ঘণ্টা লেগেছে। এতে একই বাসে যারা ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চল যাবেন তাদের অপেক্ষার পালা শুরু হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর ও মেঘনা ও গোমতী সেতুর মুখ থেকে পেছনের দিকে ২০ থেকে ৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটে হাজার হাজার গাড়ি আকটা পড়ে। এতে করে এই দুই সেতু পার হতেই সময় লেগেছে তিন থেকে চার ঘণ্টা। আবার ঢাকা থেকে বের হতে সময় লেগেছে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির কারণ যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা থেকে কুতুবখালি পর্যন্ত রাস্তা। দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাটি সংস্কারের নামে গর্ত করে রাখায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
স্থবির ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক
আমাদের স্থানীয় সংবাদদাতারা জানান, ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে অতিরিক্ত পণ্য, যাত্রী ও যানবাহনের চাপ এবং এলোপাথাড়ি যানবাহন চলাচলের কারণে গতকাল স্থবির হয়ে পড়েছিল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন অংশ। হাইওয়ে পুলিশের দাবি, মহাসড়কে যানজট স্থায়ী ছিল না। থেমে থেমে চলেছে যানবাহন। ভুক্তভোগিরা জানান, কাঁচপুর ব্রিজ থেকে শুরু করে মহাসড়কের সানারপাড়, মুগদাপাড়া, ভবের চর, গজারিয়া, মেঘনা ও দাউদকান্দি গোমতী সেতুর উভয় প্রান্তে যাত্রীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থেকে নাকাল অবস্থার সৃষ্টি হয়। ঢাকা থেকে কুমিল্লায় যাতায়াতের ২ ঘণ্টার সময়ের পরিবর্তে ৯-১০ ঘণ্টা সময় লাগছে বলে যাত্রী ও পরিবহন চালকরা জানিয়েছেন। তাদের মতে, গতকাল বুধবার ভোর থেকে মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে যানজট আরও প্রকট আকার ধারণ করে। কাঁচপুর, মেঘনা ও দাউদকান্দি গোমতী সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচলের চাপ বেড়ে যাওয়ায় হাইওয়ে পুলিশ চাপ সামলাতে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করেও পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেয়েছে। অন্যদিকে, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কেও ছিল অন্যান্য দিনের মতোই ভয়াবহ যানজট। উত্তরাঞ্চলগামী একজন যাত্রঅ জানান, ঢাকা থেকে হানিফ পরিবহনের এক বাসে দুপুরে রওনা করে সন্ধ্যায় তিনি টাঙ্গাইল পার হতে পারেন নি।
প্রথম দিনে ট্রেনে উপচে পরা ভিড়
এদিকে, রাজধানী থেকে রেলপথে বাড়ি ফেরার চিত্রও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। গতকাল সকাল থেকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ঘরমুখো মানুষের ঢল দেখা গেছে। প্রতিটি ট্রেনেই গাদাগাদি করে ফিরছে মানুষ। বগিতে ছাড়াও ট্রেনের ছাদে গাদাগাদি করে উঠেছে যাত্রীরা। যাত্রীদের অভিযোগ, প্রতিটি ট্রেনে বাড়তি যাত্রী তোলা হয়েছে। এতে করে ট্রেনে ভ্রমণের আনন্দ অনেকটাই ¤øান হয়ে গেছে। বাড়তি যাত্রীরা ট্রেনে উঠতে গিয়ে কোনো নিয়ম কানুন মানে না। তারা প্রথম বা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কোচের লাফ দিয়ে উঠে পড়ছে। এতে করে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত শ্রেণির যাত্রীরা খুবই বিরক্ত। গতকাল দিনাজপুরগামী একজন যাত্রী বলেন, আমরা বহু টাকা খরচ করে সারারাত লাইনে দাঁড়িয়ে এসির টিকিট কেটেছি পরিবার পরিজন নিয়ে একটু আরাম করে যাওয়ার জন্য। কিন্তু এসি কোচে স্ট্যান্ডিং যাত্রী তুলে আমাদেরকে চরম ভোগান্তিতে ফেলে দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে অভিযোগ করার পরেও কোনো লাভ হয়নি।
নদীপথে স্পেশাল সার্ভিস
বিআইডবিøউটিসি সূত্রে জানা গেছে, এ বছর ঈদে ঢাকা বরিশাল রুটে ভায়া ও দিবা সার্ভিস মিলিয়ে ২৫টি লঞ্চ চলাচল করবে। ঘরে ফেরার জন্য ঢাকা থেকে আজ ২২ জুন থেকে স্পেশাল যাত্রা শুরু হয়ে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত চলবে। স্পেশাল যাত্রায় থাকা ১৫টি লঞ্চ যাত্রী পরিবহনে ডবল সার্ভিসে অংশ নেবে। একইভাবে ২৮ জুন থেকে বরিশাল নদীবন্দর থেকে রাজধানীগামী লঞ্চের স্পেশাল সার্ভিস শুরু হয়ে এক সপ্তাহ পর্যন্ত চলবে।
নানা হয়রানির শিকার
ঈদে যাত্রাপথে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য চলছে। এটিসহ নানা হয়রানির শিকার হচ্ছে ঘরমুখো মানুষ। এ অভিযোগ বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির। গতকাল বিকেলে রাজধানীর পুরানা পল্টনের মুক্তি ভবনে ‘ঈদ যাত্রায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য ও যাত্রী হয়রানি বন্ধের’ দাবিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ জানানো হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, টিকিট অব্যবস্থাপনা, সড়ক অব্যবস্থাপনাসহ ঈদ যাত্রার নানাক্ষেত্রে গলদ থাকায় যাত্রীরা পদে পদে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। তিনি বলেন, ভাড়া নৈরাজ্য প্রতিরোধে বিআরটিএ ও বিআইডবিøউটিএ-এর পক্ষ থেকে মালিক-শ্রমিকদের নিয়ে প্রতি বছরের মতো গতানুগতিক পদ্ধতিতে ভিজিল্যান্স টিম বা মনিটরিং কমিটি গঠন করা হলেও প্রকৃতপক্ষে কোথাও তাদের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। দুর্ভোগের শিকার যাত্রীরা রাস্তায় আহাজারি করলেও কারও সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকা যাত্রীরা রাস্তায় ইফতার বা সেহরি করতে পারছেন না। এসব দুর্ভোগের শিকার যাত্রীদের পাশে দাঁড়াতে স্থানীয় সব রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের আহ্বান জানিয়েছে যাত্রী স্বার্থ সংরক্ষণকারী সংগঠনটি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।