Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ২৭ জুন ২০২৪, ১৩ আষাঢ় ১৪৩১, ২০ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

রাক্কার পতনের পর আইএস-উত্তর সিরিয়ায় সহিংসতা আরো বাড়বে

| প্রকাশের সময় : ২২ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম


দি গার্ডিয়ান : সিরিয়ায় ফোরাত নদীর তীরে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) রাজধানী রাক্কা পুনর্দখলের অভিযান বিশে^র অন্যতম বিপজ্জনক যুদ্ধক্ষেত্রে এক নতুন ও বিধ্বংসী পর্যায়ের সূচনা করেছে। আইএসের স্বঘোষিত রাজধানী রাক্কা দখল হবে অংশত প্রতীকী ঘটনা।
একদিকে সন্ত্রাসের এক উৎসমুখের অবসান হবে,অন্যদিকটি হবে আংশিক বস্তুগতঃ রাক্কা আইএসের কর্মকান্ড সম্পর্কে তথ্যের এক বিরাট ভান্ডার হবে। যা স্পষ্ট তা হচ্ছে আইএস বিতাড়িত হওয়ার সাথে সাথে তাদের নিয়ন্ত্রণ মুক্ত স্থান দখলের প্রতিযোগিতা শুরু হবে। বিভিন্ন বাহিনীর মধ্যে রাক্কা নিয়ে টানাহেঁচড়ার অর্থ হচ্ছে সঠিক বিচার  যেন বাধাগ্রস্ত না হয় সে জন্য ভূমিতে বা আকাশে ট্রিগার হ্যাপি সৈন্যরা যাতে অসহিষ্ণু হয়ে না পড়ে সেজন্য তাদের নজরে রাখা। সিরিয়া হচ্ছে সিরীয় সরকার ও সশস্ত্র সরকার বিরোধী গ্রæপগুলো, আঞ্চলিক শক্তিসমূহ, রাশিয়া এবং পাশ্চাত্যের মধ্যকার যুদ্ধক্ষেত্র। এ যুদ্ধ এখন ছয় বছরে পড়েছে, তা হচ্ছে এক বহুমুখী ও পরিবর্তনশীল যুদ্ধ যা গোটা দেশটিকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। বিভিন্ন শক্তির বোড়ে হিসেবে কাজ করা গ্রæপগুলোর মধ্যকার লড়াইয়ে সম্ভবত সবচেয়ে উদ্বেগজনক হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার জোট সমর্থিত বিভিন্ন বাহিনী এবং আসাদ সরকারের সমর্থনে ইরান সমর্থিত গ্রæপগুলোর মধ্যে লড়াই যাদের শক্তিশালী মিত্র হচ্ছে রাশিয়া।
লক্ষণ  দেখা যাচ্ছে যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ৫ মাসের শাসনকালে যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য খেলোয়াড়দের মধ্যে প্রকাশ্য সংঘর্ষের ঝুঁকি দিন দিন বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক সিরিয়ার সরকারী বাহিনীর একটি জঙ্গি বিমান ভূপাতিত করার জবাবে রাশিয়া সোমবার ঘোষণা করে যে সিরিয়ার যুদ্ধে এই প্রথমবারের মত ফোরাত নদীর পশ্চিমে উড়ালরত জোটবাহিনীর কোনো বিমান বা ড্রোনকে তারা লক্ষ্যবস্তু হিসেবে বিবেচনা করবে। পেন্টাগন কর্মকর্তারা বলেন, তারা যেটা করেছেন তা আত্মরক্ষার জন্য করেছেন। আসাদ বাহিনী রাক্কা অভিমুখে অগ্রসরমান মার্কিন সমর্থিত সিরীয় ও কুর্দি যোদ্ধাদের আক্রমণ করার পর তা ঘটেছে। ধাপ্পা হোক আর না হোক, রাশিয়ার হুঁশিয়ারি ইতোমধ্যে সৃষ্ট উত্তেজনাকর পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটিয়েছে। ২০ জুনের খবরে বলা হয়, বাল্টিক সাগরে একটি রুশ জঙ্গি বিমান একটি মার্কিন জঙ্গি বিমানের ৫ ফুটের মধ্যে চলে আসে। আরেকটি নজিরবিহীন ও সমভাবে উদ্বেগজনক ঘটনা হল ইরানি পার্লামেন্ট ও আয়াতুল্লাহ খোমেনির মাজারে বোমা হামলার প্রতিশোধ হিসেবে রোববার সিরিয়ার আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ইরানের ৭টি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ। এ ঘটনাকে ১২দিনে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক ২টি ইরানি সশস্ত্র ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করা ঘটনার পাশে রাখা যেতে পারে। প্রধান খেলোয়াড়দের মধ্যে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আইএস-উত্তর সিরিয়া দেখতে কেমন হবে? কে এখানে প্রাধান্য বিস্তার করবে? এখানে হিসেবে যা আসে তা হচ্ছে সহিংসতা কমবে নয়, বরং আরো বাড়বে।
আসাদ সরকার আশা করছে যে ২০১১ সালে সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহকারী এলাকাগুলো যেগুলোর জনগণের উপর তারা অবর্ণনীয় সহিংসতা চালিয়েছে, রুশ ও ইরানি মদদপুষ্টদের তারা সেসব এলাকা পুনর্দখলে ব্যবহার করতে পারবে। সিরিয়ার যুদ্ধে মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টিতে তাদের ভূমিকার জন্য রাশিয়া ও ইরানকে অবশ্যই দায়ী করতে হবে। সেখানে ২০১১ সাল থেকে প্রায় ৪ লাখ লোক নিহত হয়েছে। আইএসের পর সিরিয়ার ভবিষ্যতের ব্যাপারে সুসমঞ্জস মার্কিন কৌশলের প্রকাশ্যে অনুপস্থিতি উপেক্ষণীয় নয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার জেনারেলদের কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে যাওয়াকেই অগ্রাধিকার দিয়েছেন, সিরিয়ার জনগণকে কোনো রূপকল্প দেননি। মার্কিন বিমান হামলা বেসামরিক লোকদের মধ্যে ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটালেও এই উপেক্ষা দূর করতে পারেনি। যখন সিরিয়ার ব্যাপারে পরিষ্কার কোনো পরিকল্পনা নেই , ট্রাম্প প্রশাসন ইরানের ব্যাপারে অধিকতর আগ্রাসী দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছে এবং আসাদের যুদ্ধের অবসান ঘটাতে ইরানের সাথে রাশিয়ার সামরিক ও কূটনৈতিক সম্পর্কে ভাঙ্গন ধরানোর কথা বিবেচনা করছে।
আঞ্চলিক পুনর্বিন্যাসের আলোকে সিরিয়ার জটিলতা দেখতে হবে। এ সপ্তাহের গোড়ার দিকে ইরানের এক প্রধান মিত্র ইরাকি প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল এবাদি সমঝোতা সৃষ্টির চেষ্টায় সউদি আরব সফরে যান। সউদি আরব ও ইসরাইল বাণিজ্য আলোচনার পরিকল্পনা করছে। আরব বসন্ত আন্দোলনের এক সমর্থক কাতারকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য উপসাগরীয় সুন্নী আরব দেশগুলোর  চেষ্টার মধ্যে  দেখা যাচ্ছে যে তুরস্ক কাতারের সাথে সামরিক মহড়ার জন্য তার সৈন্যদের বিমানে করে কাতারে নেবে বলে জানিয়েছে। এ ধরনের গোলমাল ভুল হিসাব বা দুর্ঘটনাজনিত ঘটনার সুযোগ বৃদ্ধি করে যা ব্যাপক বিপর্যয়ের সৃষ্টি করতে পারে যার প্রভাব নিয়ন্ত্রণর বাইরে চলে যেতে পারে। এখন বিপজ্জনক সময়। সিরিয়ায় সকল পক্ষের স্মার্ট চিন্তা ও ঠান্ডা মাথা জরুরি প্রয়োজন। 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সিরিয়ায়

২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ