Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রোজার সংস্কারসমূহ

| প্রকাশের সময় : ২২ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

এ কে এম ফজলুর রহমান মুনশী : শান্তিময় ইসলাম রোজার দু:খ-কষ্টকে যে পরিমাণ কম করে দিয়েছে এবং রোজা পালনের প্রক্রিয়ার মাঝে যে সকল নমনীয়তার অবকাশ রেখেছে তা খুবই প্রণিধানযোগ্য। নিম্নে সে সকল সংস্কারের বিশ্লেষণ উপস্থাপন করা হল।
এক : সর্বপ্রথম সংস্কার হচ্ছে এই যে, ইসলাম পূর্ব যুগে যে সকল ইলহামী ও গায়রে ইলহামী ধর্মমত প্রচলিত ছিল এগুলোর অধিকাংশই অনুসারীদের একটি বিশেষ জামাআতের উপর রোজার ফরজিয়তকে আরোপ করেছিল। যেমন হিন্দু ধর্মের অনুসারীদের মাঝে অব্রাহ্ম¥ণদের উপর রোজা রাখা জরুরি ছিল না। পার্শিয়ান ধর্মানুসারে নেতা এবং সভাষদদের উপরই রোজা ফরজ ছিল। অন্যান্যদের উপর রোজা ফরজ ছিল না। গ্রীক ধর্মে শুধু মহিলাদের উপর রোজা ফরজ ছিল। পুরুষদের উপর রোজা ফরজ ছিল না। এক্ষেত্রে স্বভাবত:ই প্রশ্ন করা যেতে পারে যে, তাদের ধর্ম অনুসারে রোজা যদি কোন উত্তম জিনিসই হয়ে থাকে তাহলে সকল শ্রেণীর অনুসারীদের উপর তা সমভাবে ফরজ ছিল না কেন? ইসলামের দৃষ্টিতে রোজার ফরজিয়াতের ক্ষেত্রে নেতা, মহিলা, পুরুষ ইত্যাদির মাঝে কোনরকম পার্থক্য ও বিভেদ নাই। ইসলাম সকল অনুসারীদেরকে আমভাবে রোজার ফরজকে মেনে নিতে বাধ্য করেছে। এর মাঝে কোন শ্রেণীবিশেষকে চিহ্নিত বা নির্দিষ্ট করেনি। পবিত্র কুরআনে সুুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করা হয়েছে, “তোমাদের মাঝে যে ব্যক্তি এই মাসে উপস্থিত হবে সে মাসভর রোজা পালন করবে।” (সূরা বাকারাহ :” রুকু-২৩) এখানে লক্ষ্য করলে অবশ্যই দেখা যাবে যে, যে বা যারা এই মাসে উপস্থিত থাকবে, তার উপরই রোজা রাখা ফরজ। এক্ষেত্রে শ্রেণী বিশেষের তারতম্যের কোন অবকাশ নেই।
দুই : ইসলাম ছাড়া পৃথিবীর অন্যান্য ধর্মগুলোতে সাল গণনার মানদন্ড হিসেবে সৌর বছরকে প্রাধান্য দেয়া হয়। এতে করে সৌর বছর অনুপাতে রোজার যে সকল তারিখ যে সব মৌসুমে নির্ধারণ করা হয়েছে সেগুলোর মাঝে পরিবর্তনের কোনই সুযোগ নেই। এই নিরিখে যদি গ্রীষ্মকালে অথবা শীতকালে রোজার দিন নির্ধারিত হয় কিংবা ছোট-বড় দিনসমূহে রোজা অনুষ্ঠিত হয় তাহলে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল অনুসারে কোন কোন অংশে রোজা হবে কষ্ট ও বেদনার পরিচায়ক এবং কোন কোন অংশে তা খুবই আরামের বস্তুু। কিন্তু ইসলাম রোজার তারিখ সমূহ চান্দ্র বছরের হিসাব অনুসারে নির্ধারণ করেছে। যদিও ঋতু পরিক্রমায় দিন ছোট কিংবা বড় হোক এর মাঝে কোন তারতম্য রাখা হয়নি তাই পৃথিবী জোড়া ইসলামে রোজার মাসের রোজা যে কোন মৌসুমে আসুক না কেন রোজা একান্ত বেদনাকর বস্তু হিসেবে চিরস্থায়ীরূপে উপস্থিত হবে না। মৌসুম যেহেতু পরিবর্তনশীল সেহেতু বেদনার ভার এককভাবে কোন অঞ্চল বিশেষের উপর সব সময় স্থির থাকবে না; বরং এর মাঝেও পরিবর্তন হবে।
তিন যে পর্যন্ত বিশ্বের অন্যান্য ইসলামী ধর্মগুলোর কিতাবাদি পাঠ করার সুযোগ হয়েছে সেগুলোতে আমি রোজার আবশ্যকতা এবং রোজার হুকুম সংক্রান্ত বিষয়াবলীর মাঝে ব্যক্তি বিশেষের প্রাধান্য ও অপ্রাধান্যতার কোন নমুনা আমি দেখতে পাইনি। বিশেষত: তৌরাত কিতাবে এর কোন উল্লেখই পাওয়া যায় না বরং সেখানে এই নির্দেশ বলবৎ আছে যে, যদি কোন ব্যক্তি রোজা না রাখে তাহলে তাকে হত্যা করা হবে অথবা নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হবে। এ কথারও উল্লেখ আছে যে, ইহুদী ছাড়া অন্যান্য পরদেশী লোক যদি ইহুদিদের সাথে বসবাস করে তাহলে তার উপরও রোজা অপরিহার্য (আহ্বান কান্ড : ১৬-১৯)
কিন্তুু কুরআনুল কারীম প্রাকৃতিক নিয়ম-নীতির প্রতিষ্ঠা বিধান কল্পে সকল শ্রেণীর দু:স্থ ও অপারগ লোকদেরকে রোজার হুকুম থেকে রেহাই দান করেছে। তাই দেখা যায় যে, নাবালগ বাচ্চাদের উপর রোজা ফরজ নয়। অনুরূপভাবে গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী মহিলারা পরবর্তী সময়ে রোজার কাযা আদায় করতে পারে। একই সাথে বৃদ্ধ, রোগী এবং মুসাািফরদেরকও রেহাই দেয়া হয়েছে। দুর্বল ব্যক্তি যারা স্বভাবত:ই রোজা রাখতে পারে না। তাদেরকেও রেহাই দেয়া হয়েছে। রুগ্ন ব্যক্তি, মুসাফির ব্যক্তি কিংবা উপস্থিত অসহায়ত্বের নিপতিত ব্যক্তিগণ তাদের এই অসুবিধাসমূহ দূর হয়ে গেলে সমপরিমাণ দিনের রোজা অন্য সময় কাযা করতে পারবে। কিন্তু যারা সার্বক্ষণিক রুগ্ন এবং অসহায় তারা রোজার পরিবর্তে একজন মিসকীনকে দুবেলা আহার করাবে। এই দিক-নির্দেশনা আল-কুরআনের বাণীতেও বিঘোষিত হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে, “যদি তোমাদের মাঝে কেউ অসুস্থ হয়ে কিংবা মুসাফির হয় তাহলে সে রমজান মাসের পর অন্যান্য দিনগুলোতে রোজা পালন করবে এবং যে সকল লোক অতিকষ্টে রোজা রাখতে সক্ষম তারা রোজার পরিবর্তে একজন মিসকীনকে (দুই বেলা) আহার প্রদান করবে। (সূরা বাকারাহ : রুকু-২৩) তিরমিজী শরীফে হযরত আনাস (রা:) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সা:) ইরশাদ করেছেন, “আল্লাহ পাক হামেলা এবং দুগ্ধদানকারী মহিলাদের রোজা রেহাই করে দিয়েছেন।” অর্থাৎ তারা উপস্থিত অসুবিধাসমূহ দূরীভূত হওয়ার পর রোজার কাযা আদায় করতে পারবে।
চার : ইসলাম ছাড়া বিশ্বের অন্যান্য ধর্মগুলোতে রোজার জন্য নির্ধারিত দিনগুলো ছিল খুবই অসামঞ্জস্যপূর্ণ ও অবিবেচিত প্রসূত। কোন কোন ধর্মে এক এক নাগাড়ে চল্লিশ দিন পর্যন্ত পানাহার বর্জন করে রোজা রাখার রীতি ছিল। আবার কোন কোন ধর্মে গোশত-রুটি ছাড়া রোজার দিনে ফল-ফলারি ভক্ষণ করার অনুমতি ছিল। কিন্তুু ইসলাম এই উভয় অবস্থার মধ্যম পন্থাকে এখতিয়ার করেছে। কেননা, রোজার সময়ে যদিও ইসলাম রোজাদারকে পানাহার থেকে বিরত রেখেছে, কিন্তু একমাস মুদ্দদের মাঝে শুধু দিনের বেলা সূর্য উদয় হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহারকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এতে রোজার পরিমাণ দাঁড়ায় কয়েক ঘণ্টা মাত্র।
পাঁচ : জৈন ধর্ম মতে এক একটা রোজা হয় সাত দিন পর্যন্ত। তাছাড়া আরবের খ্রীস্টান পাদ্রীরা এক নাগাড়ে কয়েক দিন পর্যন্ত রোজা রাখত। ইহুদীদের নিকট একটি রোজা ছিল পূর্ণ ২৪ ঘণ্টার, কিন্তু পবিত্র ইসলামে রোজার স্থিতিকাল হচ্ছে সূর্যোদয় হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত। আল-কুরআনে সুস্পষ্টভাবে ঘোষনা করা হয়েছে, “তোমরা রোজাকে রাতের আগমন পর্যন্ত দীর্ঘায়িত কর।” (সূরা বাকারাহ : রুকু-২৬) এতে বুঝা যায় যে, ইলসামের রোজা রাতের সহিত সম্পর্কিত নয়। তা শুধু কেবল দিনের সাথেই সীমাবদ্ধ।
ছয় : ইহুদীদের নিকট এই প্রথা চালু ছিল যে, তারা যখন রোজা খুলত তখন এক সাথে পানাহার করে নিত। রোজা খোলার সময় যেটুকুন পানাহার তারা করত এরপর আর কোন কিছু ভক্ষণ করতে পারত না, অর্থাৎ ইফতারের পর হতেই তাদের দ্বিতীয় রোজা শুরু হয়ে যেত। আরবে এই রেওয়াজ ছিল যে, শয্যা গ্রহণ করার পূর্বে যা কিছু ইচ্ছা খেতে পারত। শয্যা গ্রহণ করার পর খানা-পিনা নিষিদ্ধ ছিল। ইসলামের প্রাথমিক সময়েও এই নিয়মই চালু ছিল। একবার রমজানের সময় কোন এক সাহাবীর গৃহে তখনও সন্ধ্যার আহার্য প্রস্তুত করা হয়নি। তার স্ত্রী আহার রান্না করছি”ল! উক্ত সাহাবী খানা পাক হওয়ার অপেক্ষায় বসে থেকে ঘুমিয়ে পড়লেন। রান্না-বান্না শেষ হওয়ার পর তার স্ত্রী ভোগ্যসামগ্রী নিয়ে হাজির হল। তিনি ছিলেন ঘুমন্ত ও শর্যাগ্রহণকারী। তাই তার পক্ষে আহার্য গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। এভাবে না খেয়েই তিনি পরদিন রোজা রাখলেন। কিন্তুু পরদিন তিনি বেহুঁশ হয়ে পড়লেন। এর প্রেক্ষিতে আল-কুরআনের এই আয়াত অবতীর্ণ হয়। ইরশাদ হচ্ছে, “তোমরা ঐ সময় পর্যন্ত পানাহার কর যতক্ষণ পর্যন্ত সোবহে কাজের হতে সোবহে সাদেকের শুভ্ররেখা পৃথক হয়ে না যায়।” (সূরা বাকারাহ: রুকু-২৩) এই আয়াতের দ্বারা বুঝা যায় যে, অন্যান্য ধর্মগুলোর যাবতীয় কুসংস্কার পবিত্র ইসলামের সংস্পর্শে এসে দূরীভূত হয়ে গেছে।
সাত : অন্ধকার যুগে এই দিস্তর বিদ্যমান ছিল যে, রোজার দিনে এমনকি রাতেও মিয়া এবং বিবি উভয়েই পৃথক পৃথক অবস্থান করত। যেহেতু এই পৃথক থাকা ছিল অস্বাভাবিক এবং সহজাত প্রকৃতির বিরোধী। তাই অধিকাংশ মানুষ বাধ্যহয়ে নফসানী খেয়ানতের পাল্লায় পড়ে যেত। এজন্য পবিত্র ইসলাম শুধু কেবল রোজার হালত পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞাকে বলবৎ রেখেছে এবং রাতে উভয়ের মেলা-মেশাকে বৈধ বলে ঘোষণা করেছে। আল-কুরআনে ঘোষণা করা হয়েছে, “রোজার মাসে রাতের বেলা স্ত্রী সান্নিধ্যে গমন করাকে তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে। তারা তোমাদের শোভা এবং তোমরাও তাদের শোভা বা ভূষণ। আল্লাহ জানতেন যে, তোমরা স্বীয় নফসের দ্বারা খেয়ানত করে চলেছ। তাই তিনি তা ক্ষমা করে দিয়েছেন। সুতরাং এখন থেকে স্ত্রীদের সংস্পর্শে গমন কর এবং আল্লাহ তোমাদের জন্য যা বরাদ্দ রেখেছেন তা অনুসন্ধান কর।” (সূরা বাকারাহ : রুকু-২৩)
আট : ভুল চুক এবং খাতাও নেছিয়ান ইসলামের দৃষ্টিতে ক্ষমার যোগ্য। এ কারণে যদি ভুলক্রমে রোজাদার কোন কিছু পানাহার করে বসে অথবা ভুলক্রমে এমন কোন কাজ করে বসে যা রোজার খেলাপ-এর দ্বারা তার রোজা ভঙ্গ হবে না। হাদীস শরীফে হযরত আবু হুরাইরা (রা:) বর্ণনা করেছেন, যদি কেউ ভুলক্রমে আহার করে, অথবা পান করে তাহলে এর দ্বারা রোজা নষ্ট হবে না। কেননা, এগুলোও ছিল আল্লাহর দেয়া রিযিক। অপর এক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা:) ঘোষণা করেছেন, যদি কেউ বমি করে অথবা মুঘন্ত অবস্থায় গোসল ফরজ হয়ে যায় তাহলে এতে তার রোজা ভঙ্গ হবে না। (আবু দাউদ) বমি হওয়ার বেশ কয়েকটি ছুুরতের কথা হানাফী মাযহাবের কিতাবসমূহে উক্ত হয়েছে। এগুলোর মাঝে কোন কোন ছুরুতে রোজা ভঙ্গ হয়ে যায় এবং কোন কোন ছুরুতে রোজা ভঙ্গ হয় না।
নয় : অনুরূপভাবে ঐ সকল কর্মকান্ড যা রোজার জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু এ সকল যদি অনিচ্ছাকৃতভাবে সংঘটিত হয় কিংবা ইচ্ছার বিরুদ্ধে নিজে নিজেই ঘটে যায় তাহলে এর দ্বারা রোজা নষ্ট হবে না। রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, “যদি কেউ বমি করে কিংবা শয়নকালের গোসল ফরজ হয় তাহলে রোজা নষ্ট হবে না।” (আবু দাউদ)
দশ : ইহুদীদের মাঝে প্রচলিত অধিকাংশ রোজা ছিল বিপদাপদের স্মৃতি এবং বেদনার আলামতস্বরূপ। এ জন্য তারা রোজা রাখাবস্থায় সৌন্দর্য বৃদ্ধির কোন বস্তু ব্যবহার করত না এবং নিজেদের মাঝে দুশ্চিন্তাগ্রস্ততার ছুরুত প্রকট করে তুলত। হযরত ঈসা (আ:) নিজেই বলেছেন, “অত”পর তোমরা রোজা রাখবে তখন স্মৃতির নিদর্শনস্বরূপ নিজেদের মুখমন্ডলকে উদাস করে তুল না। কেননা, এর দ্বারা চেহারা পরিবর্তিত হয়ে যায় এবং মানুষের মাঝে ধরা পড়ে যাও যে, তোমরা রোজাদার। আমি সত্য কথাই বলছি যে, রোজাদার স্বীয় বিনিময় অবশ্যই পেয়ে গেছে। সুতরাং তোমরা যখন রোজা রাখবে তখন মুখ ধৌত করবে এবং মাথায় তেল ব্যবহার করবে যেন তোমাদের রোজার গোপনীয়তা মানুষের নিকট প্রকাশ না পায়; বরং তা তোমাদের পিতার নিকট গোপনই থেকে যায়। রোজাদার বাইরের দিক থেকে যদিও প্রকাশিত ও সমুপস্থিত। কিন্তু রোজাসুলভ প্রচ্ছন্নতাকে তোমার পিতা অবশ্যই অবলোকন করেন এবং নিশ্চয়ই তিনি তোমাদের এই পুণ্য কর্মের পুরস্কার প্রদান করবেন।” (মথি : ৬-১৬)
ইসলামের দৃষ্টিতে রোজার আসল সৌন্দর্য হচ্ছে এখানেই। রোজা অবস্থায় রোজাদার মাথায় তেল ব্যবহার করা, সুরমা লাগানো, খুশবু ব্যবহার করা ইত্যাদিকে নিষেধ করা হয়নি এবং এর দ্বারা রোজার কোন ক্ষতিও সাধিত হয় না। রোজা অবস্থায় ইসলাম মুখ ধোয়া এবং মিছওয়াক করার তাকীদও প্রদান করেছে। এ জন্য পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্নতা ছাড়াও এই উদ্দেশ্যটিকে বলবৎ রাখা হয়েছে যে, রোজাদার বাহ্যিক পেরেশানী হাল এবং অপরিচ্ছন্ন চলা-ফেলা প্রদর্শন করলে রিয়াকারী হিসেবে পরিগণিত হতে পারে। এ কারণে এ সকল আচরণ পরিহার করে চলতে হবে। আর এটাও বুঝতে দেয়া যাবে না যে, ফরজ রোজা আদায়ের জন্য এবং আল্লাহর নির্দেশ পালনের জন্য খুবই দু:খ-কষ্ট এবং মুছিবত বরদাশত করে চলেছে; বরং রোজাদার থেকে যেন সব সময় হাসি-খুশী ও রেজামন্দিরভাব প্রকাশ পায় সেটাই ইসলামের একমাত্র কাম্য।
এগার : রোজা অন্যান্য এবাদতের মোকাবেলায় বাহ্যত: কিছু না কিছু দু:খ কষ্টের কাজ। এজন্য প্রয়োজন ছিল যে, সাধারণ উম্মতকে এর মাঝে গোড়ামী ও সীমাতিক্রমের পথ হতে বিরত রাখা। স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা:) অধিকাংশ সময় রোজা রাখতেন। মাসের কয়েকটি দিন তিনি রোজার জন্য, নির্দিষ্ট করেছিলেন। সপ্তাহের মাঝেও কয়েক দিন তিনি রোজা রাখতেন। তাছাড়া কখনো কখনো রাত দিন এক নাগাড়ে তিনি রোজা রাখতেন। কখনো কখনো রাত-দিন এক সাথে রোজা পালন করতেন। কিন্তুু রমজানের রোজা ছাড়া বাকী রোজাগুলোকে মুস্তাহাব হিসেবে গণ্য করা হয়। পরবর্তী সময়ে দিনরাত এক সাথে রোজা রাখার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। কতিপয় সাহাবী এর কারণ জিজ্ঞেস করলে রাসূলুল্লাহ (সা:) বললেন, “তোমাদের মাঝে কে আমার তম? আমার প্রতিপালক আমাকে ‘আহ্বান করান, পান করান,” (অর্থাৎ রূহানী খাদ্য)। লোকজন বার বার বিরক্ত করলে তিনি কয়েক দিন যাবত এক নাগাড়ে রোজা রাখতে আরম্ভ করেন। যখন মাস অতিবাহিত হয়ে গেল, তখন আক্ষেপের সুরে বললেন, “যদি মাস শেষ হয়ে না যেত তাহলে রোজা রাখার। সিলসিলাকে আমি আরোও বর্ধিত করতাম।” (সহীহ বুখারী:” ১খ: ২৬৩ পৃ:)



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ