দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
প্রশ্ন : গর্ভাবস্থায় সিয়াম সাধনা কিভাবে করবে?
উত্তর : গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে বমি বমি ভাব, মাথা ঘোরানো, খাবারে অরুচি ইত্যাদি কারণে অনেকে খেতে পারেন না। খেতে না পারা এবং বারবার বমির কারণে অনেকের ওজন কমে যাওয়ারও আশঙ্কা থাকে। তাই ওই তিন মাসে রোজা রাখাটা গর্ভবতীর পক্ষে সম্ভব নাও হতে পারে। গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে গর্ভস্থ সন্তানের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তৈরির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। তাই এ সময় মায়ের পুষ্টি ও গর্ভস্থ শিশুকে গøুকোজসহ অন্যান্য পুষ্টির নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে।
গর্ভাবস্থার মাঝের তিন মাসে গর্ভবতী মায়েরা একটু ভাল বোধ করেন। এ সময় সাধারণত বমি হয় না এবং খেতেও কোনও অসুবিধা থাকে না। আর ওই সময় অন্য কোনও অসুস্থতা না থাকলে গর্ভবতী ইচ্ছা করলে রোজা রাখতে পারেন। তবে অবশ্যই আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। শেষের তিন মাসে গর্ভস্থ শিশুসহ জরায়ুর উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে আবার গর্ভবতী মায়ের কষ্ট একটু বেড়ে যেতে পারে। নিঃশ্বাস ছোট ও ঘন ঘন হয়, আবার হজম হতে দেরি হয়, গলা-বুক জ্বালাপোড়া বেড়ে যায় এবং স্বাভাবিক নড়াচড়া ধীর হয়ে আসে। কিন্তু গর্ভবতী মা যদি অস্বস্তি বোধ না করেন এবং খাওয়া দাওয়া করতে পারেন, কোনও প্রকার পানিশূন্যতা সৃষ্টি না হয়, তবে ইচ্ছা করলে রোজা রাখতে পারবেন। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে অন্যান্য অসুখ-বিসুখের ক্ষেত্রে যেমন রোজা রাখায় শিথিলতা রয়েছে, তেমনি গর্ভাবস্থার বেলায়ও রয়েছে। যদি কোনও গর্ভবতী মা অসুস্থতার জন্য রোজা রাখতে না পারেন অথবা রোজা রাখার পর যদি অসুস্থ বোধ করেন, শরীরে কাঁপুনি অনুভূত হয় বা শরীর নিস্তেজ হয়ে আসে অথবা বমি করে ফেলেন এবং রোজা রাখার মতো অবস্থা না থাকে, তা হলে তিনি রোজা ছেড়ে দিতে পারেন। শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার ছয় সপ্তাহ পর থেকে ভাঙতি রোজা রাখতে পারবেন।
সেহরি : স্বাভাবিক মানুষের খাবার তালিকা অনুযায়ী খাবেন, তবে ক্যালোরি ও আঁশযুক্ত খাবারের দিকে বেশি খেয়াল রাখতে হবে। পানিশূন্যতা ও শরীরে লবণের পরিমাণ কমে যাওয়ার প্রবণতা এড়াতে পানি ও তরল খাবার বেশি গ্রহণ করতে হবে। আবার, যাদের বুকজ্বলা বা গ্যাসের সমস্যা আছে তাদের সেহরির সময় যে খাবারে গ্যাস হয় বা বুকজ্বালা করে ওই খাবারগুলো এড়িয়ে চলতে হবে। অবশ্যই যে কোনও ফল, যেমন-আম, কলা ইত্যাদি সেহরির মেনুতে রাখবেন। ফল ও আঁশযুক্ত খাবার ধীরগতিতে পরিপাক হয়ে বলে ক্ষুধা কম লাগবে।
ইফতার : ইফতারে খেজুর, ফলের রস, চিড়া-দই-ফল খেতে পারেন। এতে করে রক্তে সুগারের মাত্রা ঠিক থাকবে। দুধ, লসসি, মাঠা ইত্যাদিও ভাল। দুধ ও দুধের তৈরি এসব খাবার রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়ার প্রবণতা কমায়। এছাড়া তাজা ফল বা সব্জির স্যালাড, স্যুপ ইত্যাদিও খাওয়া যেতে পারে। ইফতারের পর অল্প করে খাবার গ্রহণ করুন কিন্তু বারবার খান। মাছ, মাংস, নানা জাতের ডাল ইত্যাদি আমিষ খাবারের সঙ্গে সব্জির সুষম সমন্বয়ে রাতের খাবার খেতে হবে। ঢেকিছাঁটা লাল চালের ভাত, লাল আটার রুটি খাওয়া ভাল। গুরুপাক, অতিরিক্ত তেল-ঝাল-মশলাযুক্ত খাবার বিশেষ করে পেঁয়াজ, বেগুন ইত্যাদি পরিহার করবেন। ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। সেহরি না খেয়ে রোজা রাখবেন না।
উত্তর দিচ্ছেন : আফতাব চৌধুরী
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।