Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

দুই মন্ত্রীর বক্তব্য সরকারের নয় : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ৮ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে নিয়ে সরকারের দুই মন্ত্রীর বক্তব্যে চরমভাবে ক্ষুদ্ধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে জানতে হবে, বুঝতে হবে, কোথায় কি বক্তব্য দিতে হবে। সুযোগ পেলেই যা খুশি বলবেন এবং যে কানো সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানে গিয়ে কথা বলছেন, এটা ঠিক নয়। যদি কেউ এ ধরনের বক্তব্য দিতে চান, তাহলে রাস্তায় গিয়ে দেন। প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে দুই মন্ত্রীর বক্তব্য সরকারের নয় বলে মন্ত্রিসভায় জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
মন্ত্রিসভায় উপস্থিত একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী দুই মন্ত্রীর বক্তব্য ‘ডিসওন’ করেছেন।  নির্ধারিত আলোচ্যসূচি শেষে দুই মন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই। প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিদ্বয়ের নাম উল্লেখ করেননি। যে দুই মন্ত্রীকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেছেন, এ সময় ওই দুই মন্ত্রীই সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরো বলেন, একটি সংগঠনের অনুষ্ঠানে গিয়ে দুজন মন্ত্রী যে ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন, এতে মনে হয় যেন ওই সংগঠনটি সরকারের কোনো সংগঠন এবং এই বক্তব্য যেন সরকারের বক্তব্য। তিনি বৈঠকে স্পষ্ট করেন, মন্ত্রীদের এ ধরনের বক্তব্যে তিনি বিব্রত হয়েছেন, তার সরকারও বিব্রত।
গত শনিবার একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির এক অনুষ্ঠানে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম প্রধান বিচারপতিকে বাদ দিয়ে মানবতা বিরোধী অপরাধী মীর কাশেম আলীর আপিলের পুনঃশুনানি করার দাবি জানান। তিনি এই মামলার শুনানি নিয়ে প্রধান বিচারপতির বিভিন্ন বক্তব্যের সমালোচনাও করেন। অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ দাবি করেন।
গাজিপুর থেকে ২০ মিনিটে ঢাকা :
গাজীপুর থেকে ঢাকা দ্রুত সময়ে যাতায়াতের জন্য পৃথক দুটি লেনে বাস রেপিড ট্রানজিট (বিআরটি) নামে আলাদা বাস যাওয়া আসা করবে। এতে গাজীপুর থেকে ঢাকার বিমানবন্দর পর্যন্ত ২০ মিনিটে যাওয়া আসা সম্ভব হবে। এ লক্ষ্যে বাস রেপিড ট্রানজিট (বিআরটি) আইন, ২০১৬ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছেন মন্ত্রিসভা। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ আইনের খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়। এ আইনে এ সংক্রান্ত অপরাধের জন্য বিভিন্ন ধরনের জেল জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের জানান, ঢাকা মহানগরীর সঙ্গে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের জনসাধারণের যাতায়াত নির্বিঘœ, দ্রুত ও আরামদায়ক করাই এই আইনের উদ্দেশ্য। গাজীপুর থেকে ২০ মিনিটে বিআরটি বাস চলে আসবে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত। ছয় লেনের রাস্তায় দু’টি লেন দিয়ে শুধু বিআরটি বাস চলবে, অন্য কোনো যানবাহন চলবে না। দুই পাশে দু’টি লেন থাকবে।
আইনের খসড়ায় জেল-জরিমানা এবং দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ প্রদান ছাড়াও মোবাইল কোর্ট পরিচালনার বিধান রাখা হয়েছে। খসড়ায় ৫৩টি ধারা ও ১০টি অধ্যায় রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব বলেন, নবম অধ্যায়ে বিভিন্ন অপরাধের জন্য শাস্তির বিধান রয়েছে। একটি ধারায় মোবাইল কোর্টের এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে। লাইসেন্স ছাড়া বিআরটি নির্মাণ ও পরিচালনার জন্য অনধিক ১০ বছর কারাদ- এবং অনধিক ৫০ লাখ টাকা অর্থদ- অথবা উভয় দ-। অনুমোদন ব্যতিরেকে লাইসেন্স হস্তান্তর করলে ১০ বছর জেল বা ৫০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে খসড়ায়।
অনুমোদনহীন বিআরটি বাস টিকিট বিক্রয় বা পাস বিক্রি বা জাল করলে ১০ বছরের কারাদ- ও ৫০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়। আর কর্মচারী কর্তৃক করলে দুই বছরের কারাদ- ও অনধিক পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা হবে। খসড়ায় বিশেষ মানবিক বিষয় অ্যাড্রেস করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, দুর্ঘটনাজণিত কারণে ক্ষতিপূরণ প্রদান করার বিধান রাখা হয়েছে।
বিআরটি পরিচালনাকালে দুর্ঘটনার ফলে কোনো ব্যক্তি আঘাতপ্রাপ্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত হন বা আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মারা গেলে ক্ষেত্রমতে তার পরিবারকে বিধি-ধারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে।
বিআরটি পরিচালনাকালে দুর্ঘটনায় আঘাতপ্রাপ্ত হলে আহত ব্যক্তি বা কর্মচারীকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিশ্চিতসহ নিকটস্থ হাসপাতালে প্রেরণের ব্যবস্থাও করতে হবে। আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তির চিকিৎসা প্রদান, যদি নিজ উদ্যোগে চিকিৎসা গ্রহণ করে তাহলে লাইসেন্স গ্রহীতাকে খরচ প্রদান করতে হবে।
বিআরটি যাত্রীদের জন্য বাধ্যতামূলকভাবে বীমা প্রদান করতে হবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব বলেন, বিআরটি পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রত্যেক লাইসেন্স গ্রহীতাকে বাধ্যতামূলকভাবে বাস ও যাত্রীদের জন্য বীমা করতে হবে। আর কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে লাইসেন্স গ্রহীতার কাছে ক্ষতিপূরণ দাবির ৯০ দিনের মধ্যে পরিশোধ করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ভাড়া নির্ধারণের সময় সরকার কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেবেন এবং সরকার তা অনুমোদন দেবেন বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব। তিনি বলেন, নির্বাহী পরিচালকের নেতৃত্বে ভাড়া নির্ধারণের জন্য সাত সদস্যের কমিটি গঠনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, কমিটি ভাড়া যাচাই-বাছাই করবে। যাত্রী পরিবহন সংক্রান্ত তথ্য এবং ভাড়া ওয়েবসাইট ও বহুল প্রকাশিত জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশ করতে হবে। বিআরটি’র প্রতিটি কোচে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধী, মহিলা, শিশুদের জন্য আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে খসড়ায়। বিআরটি’র কর্তৃপক্ষ হিসেবে ঢাকা এলাকার জন্য থাকবে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। ডিটিসিএ’র নির্বাহী পরিচালক বিআরটি’র নির্বাহী পরিচালক হিসেবে কাজ করবেন। বিশ্বের অন্যান্য দেশেও বিআরটি সিস্টেম আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গ্রেটার ঢাকা সাস্টেইনেবল আরবান প্রজেক্ট’ নামে প্রকল্পের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে।
মন্ত্রী পরিষদ সচিব বলেন, মন্ত্রিসভায় সুপ্রিম কোর্ট জাজেজ (রিমিউনেরেশন এন্ড প্রিভিলেজ) আইনের খসড়াও অনুমোদন দেওয়া হয়। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা সার্কুলারের মাধ্যমে উৎসব ভাতা পেতেন। এ ছাড়া বৈশাখী ভাতাও সার্কুলারের মাধ্যমে দিতে হতো। এখন আইনের মাধ্যমে এ দুটো বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এ ছাড়া মন্ত্রিসভায়  বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কারিগরি সহায়তা সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য একটি খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ খসড়া অনুযায়ী, ভারতের কাছ থেকে পরমাণু নিউক্লিয়ার এনার্জি বিষয়ে কারিগরি সহায়তা বিশেষ করে জ্ঞান ও প্রযুক্তিগত সহায়তা নেওয়া যাবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দুই মন্ত্রীর বক্তব্য সরকারের নয় : প্রধানমন্ত্রী
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ