পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে খুনের ঘটনা। স্বামীর হাতে স্ত্রী, স্ত্রীর হাতে স্বামী, সন্তানের হাত মা-বাবা, ভাইয়ের হাতে ভাই এবং মা-বাবার হাতে খুন হচ্ছে সন্তান। প্রায় প্রতি দিনই দেশের কোথাও না কোথাও ঘটছে লোমহর্ষক হত্যাকা-। রাজধানীসহ সারা দেশে গত দুই মাসে ৫৭৮ জন খুন হয়েছেন। শুধু পুলিশ সদর দপ্তরের হিসাবেই এ ভয়াবহ তথ্য পাওয়া গেছে। তবে বিভিন্ন সূত্রমতে এ সংখ্যা আরো বেশি।
অপরাধ বিশ্লেষকদের মতে, নৈতিক শিক্ষাবোধের অভাবের পাশাপাশি বিবেক, মূল্যবোধ অবক্ষয়, তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার, অপসংস্কৃতি আগ্রাসন, বেকারত্ব, হতাশা, পারিবারিক কলহ, মাদক, যৌতুক, পরকীয়া প্রেম, দাম্পত্য সমস্যা, ঋণগ্রস্ত, জমি ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করেই অধিকাংশ খুনের ঘটনা ঘটছে। নৃশংস হত্যাকা-ের শিকার হচ্ছে শিশুসহ নারী-পুরুষ।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রমতে, রাজধানীর বনশ্রীতে দুই শিশু খুন এবং হবিগঞ্জে ৪ শিশু ছাড়াও গত জানুয়ারিতে ঢাকা রেঞ্জে ৮১ জন ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকা রেঞ্জে ৯৩ জন খুন হয়েছেন। চট্টগাম রেঞ্জে জানুয়ারিতে ৫১ জন এবং ফেব্রুয়ারিতে ৫৩ জান খুন হয়েছেন। সারা দেশে এ দুই মাসে ৫৭৮ জন খুনের শিকার হয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক বলেন, সমাজে অপরাধ থাকবেই। তবে পুলিশ অপরাধ দমনে সাধ্যমত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, কয়েকটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। তবে পুলিশ খুব দ্রুতই এসব খুনের ক্লু বের করেছে এবং খুনিদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অপরাধ করলে কোনো ছাড় নেই। এ ক্ষেত্রে পুলিশও ছাড় পাচ্ছে না। অপরাধে জড়িত হওয়ার কারণে আমরা ইতোমধ্যে বেশ কিছু পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিয়েছি।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান বলেন, বর্তমানে মোবাইল, ইন্টারনেট, টেলিভিশন চ্যানেলের সহজলভ্যতা খুন বা অপরাধ বাড়ার জন্য অন্যতম কারণ। এগুলোর বিকৃত দিকগুলো মানুষের মধ্যে প্রভাব তৈরি করছে। এগুলোর সহজলভ্যতা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তিনি বলেন, যে ধরনের রাজনৈতিক ও সামাজিক সংস্কৃতি বিরাজমান সেখানে খুনের ঘটনা বেশি ঘটাই স্বাভাবিক। ঐতিহ্যগত সংস্কৃতিও এক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি করছে। আমাদের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোও এক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সক্ষম নয়।
অধ্যাপক জিয়া রহমান বলেন, খুনের মতো ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য গণমাধ্যমের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আদালতকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। যদি এসব প্রতিষ্ঠান তার যথাযথ ভূমিকা পালন করে তবেই তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
গতকাল চট্টগ্রাম মহানগরী পুলিশ কমিশনার আবদুল জলিল ম-ল ইনকিলাবকে বলেন, আমাদের সমাজের যে পারিবারিক বন্ধন ছিল তা মারাত্মকভাবে শিথিল হচ্ছে। মানুষ এখন আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে। সব সময় নিজের সুখ ও সুযোগ-সুবিধার কথাই ভাবে। ফলে স্বামী স্ত্রীর কথা ভাবেন না, স্ত্রী স্বামীর কথা ভাবেন না, সন্তান মা-বাবার কথা ভাবে না। এছাড়া আমাদের সংস্কৃতির বাইরে গিয়ে পাশ্চাত্যের যে অপসংস্কৃতি আমদানি করা হচ্ছে, তা দিন দিন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। অবিশ্বাস, পরকীয়া, মূল্যবোধের অবক্ষয় মানুষের প্রতি মানুষের মায়ামমতা কমিয়ে দিচ্ছে। এসব কারণেই খুনের ঘটনা ঘটছে। কমিশনার জলিল বলেন, চট্টগ্রামে বেশ কয়েকটা আলোচিত হত্যাকা- হয়েছে সত্য। কিন্তু পুলিশ এসব হত্যাকা-ের রহস্য উদঘাটন করেছে। অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। তিনি বলেন, সমাজে অপরাধ থাকবেই। তবে পুলিশ যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করছে। এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ কমিশনার আবদুল জলিল বলেন, চট্টগ্রামে খুনখারাবি বেড়েছে, এ কথা সঠিক নয়। কয়েকটি হত্যাকা- হয়েছে। এগুলো পরকীয়া ও পারিবারিক কলহ-বিবাদের জের। আমরা সাথে সাথে অপরাধীদের গ্রেফতার করেছি।
সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করছেন, ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা এবং মূল্যবোধের অভাবে পারিবারিক বন্ধন ক্রমে দুর্বল হয়ে পড়ছে। পাশাপাশি সামাজিক অস্থিরতার কারণে জীবনে বাড়ছে হতাশা, বিষণœতা। ফলে সমাজে অপরাধ বেড়েই চলেছে।
গত কয়েক মাসের হত্যাকা- পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, স্বামী খুন করছেন স্ত্রীকে, স্ত্রী স্বামীকে, বাবা-মা খুন করছেন সন্তানকে, সন্তানের হাতে খুন হচ্ছে বাবা-মা, ভাইয়ের হাতের ভাই, আত্মীয়ের হাতে খুন হচ্ছেন আত্মীয়। অর্থাৎ পারিবারিক বিরোধে খুনের সংখ্যা বেড়ে গেছে।
গত মঙ্গলবার নগরীর কোতোয়ালি থানার ফিরিঙ্গিবাজার এয়াকুব নগর এলাকায় দু’জন খুন হয়েছেন। তারা হলেন আসমা বেগম (২৫) ও তার খালু মাকসুদুর রহমান (৩৫)। পরকীয়ার পাশাপাশি পূর্বশত্রুতার জের ধরে আসমার স্বামী দু’জনকে খুন করেন বলে পুলিশের ধারণা।
একই দিন রাঙ্গুনিয়ায় কুপিয়ে মো. উকিল আহমেদ (৬০) নামে একজনকে খুন করেছে দুর্বৃত্তরা। এছাড়া তার ছেলে মো. ইসমাইলকে (১৩) কুপিয়ে একটি পা বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। ২৫ ফেব্রুয়ারি ফটিকছড়ি উপজেলার সুন্দরপুর গ্রামে নিখোঁজের একদিন পর হালদা নদী থেকে মুহাম্মদ শাহ আলম প্রকাশ মুন্সী মিয়া (৫৫) নামে এক ব্যক্তির মৃতদেহ উদ্ধার করেছে এলাকাবাসী। ২৪ ফেব্রুয়ারি সীতাকু- উপজেলায় চোর সন্দেহে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে। নিহত যুবকের নাম মাশরাফি (২৫)। তার বাড়ি ভোলার লালমোহনের চরলক্ষ্মীতে।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি মোহাম্মদ মহসিন (৫৫) নামে লাইটারেজ জাহাজের এক ক্যাপ্টেন খুনের ঘটনায় একমাত্র আসামি আরিফুল ইসলামকে (১৯) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি জানিয়েছেন, মহসিনকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে তার শরীর দশ টুকরা করে নদীতে ফেলে দেয়া হয়েছে। পুলিশ আরিফুলের বরাত দিয়ে বলেছিল, আরিফুলের মায়ের সঙ্গে মহসিনের অবৈধ সম্পর্ক ছিল।
৬ ফেব্রুয়ারি সাতকানিয়ায় মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে ঝগড়ার জেরে গুলিতে বাবা ও ছেলে নিহত হয়েছেন। ২৯ জানুয়ারি উখিয়ায় সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে খুন হয়েছেন উখিয়া কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহিন (২২)। বাঁশখালীতে বাড়ির সীমানা নিয়ে বিরোধে মারামারিতে আহতের চারদিন পর মারা গেছে মুন্সী মিয়া (৩২) নামে এক যুবক। ২৩ জানুয়ারি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। ১৬ জানুয়ারি নগরীর বাকলিয়া থানার শাহ আমানত সেতু এলাকায় দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে রিমন দেব (২০) নামে এক কলেজছাত্র নিহত হয়েছেন। ১২ জানুয়ারি টাকা ভাগাভাগি নিয়ে ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যদের মধ্যে ছুরিকাঘাতে মামুন ওরফে প্রকাশ (২২) নামে এক ছিনতাইকারী নিহত হয়েছেন। ৫ জানুয়ারি প্রতিশোধ নিতে গিয়ে নগরীর বায়েজিদ এলাকায় এক শিশুকে খুন করেছে এক নারী। শিশুটির নাম আজিম হোসেন (১২)। সে স্থানীয় শেরশাহ স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র ছিল। চকরিয়ায় সামাজিক বনায়নের জায়গা দখলের ভাগ নিয়ে সৃষ্ট দ্বন্দ্বে কলেজছাত্রকে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে। তার নাম মোরশেদ আলী (২৫)। তিনি চকরিয়া কলেজের বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের মাহমুদনগর পাহাড়তলী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। একই দিন সকালে লামায় বিয়ের ১৫ দিনের মাথায় প্রতিবেশীর হামলায় নির্মমভাবে খুন হয়েছেন আবদুর শুক্কুর (২৫) নামে অপর এক যুবক। নিজের মোবাইল চুরির ঘটনার প্রতিবাদ করায় প্রতিবেশী মা-মেয়ে তিনজন মিলে পিটিয়ে হত্যা করে ওই যুবককে।
মানবাধিকার সংগঠনের নেতা নুর খান বলেন, আইনের দুর্বলতা, আইনের শাসনের অভাব, বিচারে দীর্ঘসূত্রতার কারণেও অপরাধ বাড়ছে। দ্রুত সময়ে খুনের বিচার হলে খুনের ঘটনা কমে যাবে। এছাড়া অপরাধীদের সাজা নিশ্চিত করতে হলে মামলার সঠিক তদন্ত করতে হবে।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও বিশিষ্ট মনোরোগ চিকিৎসক ডা. ওয়াজিউল আলম চৌধুরী এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, দিন দিন খুনের ঘটনা বেড়েই চলছে। তুচ্ছাতিতুচ্ছ কারণে খুনের ঘটনা ঘটছে। প্রযুক্তির সহজলভ্যতা ও পাশ্চাত্য সংস্কৃতির নেতিবাচক প্রভাবও এক্ষেত্রে নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। তিনি বলেন, যত দ্রুত সম্ভব মানুষে মানুষে সামাজিক, রাজনৈতিক বন্ধন সুদৃঢ় করতে পারলে খুনের মতো ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।