পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চালের মূল্যবৃদ্ধি ও সঙ্কটে পিষ্ট জনজীবন। সংকটের জন্য দায়ী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতা ও অদূরদর্শিতা। গোডাউনে মজুদ কমে গেলেও বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। অথচ সরকারের চোখের সামনেই চাল নিয়ে চালবাজি চালিয়েই যাচ্ছে ‘রক্তচোষারা’। চালের সংকট ও মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সারাদেশ থেকে আমাদের প্রতিনিধি মিজানুর রহমান তোতা, নাছিম উল আলম, মহসিন রাজু, আইয়ুব আলী, মুহাম্মদ আবু মুসা ও আবদুল হামিদের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে রিপোর্ট লিখেছেন হাসান সোহেল।
২০১৬ সালের জুন মাসে খুচরা বাজারে গরীবের প্রধান শষ্য মোটা চাল কেজিপ্রতি বিক্রি হতো ৩০ টাকা। বছর ঘুরতেই সেই মোটা চালের মূল্য হয়েছে ৫০ টাকা। এটা সরকারি প্রতিষ্ঠান টিসিবির হিসেব। সংস্থাটির হিসেব মতে, এক বছরে মোটা চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা। যা মোট মূল্যের ৪২ দশমিক ১৯ শতাংশ।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, গত ৫ মাসে দাম বেশি বেড়েছে। বিশ্লেষকরা দাবি করছেন- সরকারের ভুল নীতির কারণে চালের মজুদ কমে গেছে। হাওরে হঠাৎ বন্যায় ধানের ক্ষতিসহ নানাবিধ কারণে ধান উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তারপরও মজুদ ঠিক রাখতে কার্যকর পদক্ষেপের বদলে খাদ্যমন্ত্রীর দাবি- চালের সমস্যা নেই; সবকিছু ঠিকঠাক চলছে। কৃষিমন্ত্রী দাবি করেছেন, চালের মূল্য বৃদ্ধি পেলেও মানুষ অখুশি নয়; কারণ তাদের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
অথচ প্রকৃত চিত্র ভিন্ন। মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে; সংকট রয়েছে মজুদ নিয়ে। দায়িত্বশীলদের এই ব্যর্থতা অদূরদর্শিতায় সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ীরা চালের মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে। গোডাউনে মজুদ কমে গেলেও বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। অথচ অসাধু ব্যবসায়ীরা চালবাজী চালিয়েই যাচ্ছে।
ইনকিলাবের মাঠ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা জানান, সারাদেশে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে চালের দাম। উর্ধ্বমূখীতে মোটা চাল অতীতের সব রেকর্ড ভেঙ্গে ফেলেছে। বাজারে মোটা চালই এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজিতে। সরু চালের কেজি ৬০ টাকা ছাড়িয়েছে।
দাম বাড়ায় হাঁসফাঁস অবস্থা নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণি এবং স্বল্প আয়ের মানুষের। গত কয়েক মাসে অন্য চালের তুলনায় মোটা চালের দাম আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় অসুবিধায় পড়েছেন তারা। তাই সামনের দিনগুলির জন্যও হতাশাজনক সংবাদ দিয়েছেন ব্যবসায়ি ও সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, হাওরাঞ্চলসহ সারাদেশের বিভিন্ন এলাকায় বন্যার পানিতে ফসলের ক্ষতির প্রভাব পড়েছে চালের বাজারে। একই সঙ্গে মজুদ কমে যাওয়ায় বাড়ছে দাম। যদিও খাদ্য অধিদপ্তর থেকে বার বার বলা হচ্ছিল যথেষ্ট মজুদ রয়েছে। হাওরে যে পরিমান ফসল নষ্ট হয়েছে তাতে চালের বাজারে তেমন প্রভাব পড়বে না। পরিস্থিতি সামাল দিতে সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে ভিন্ন। আর এখন খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম চালের দাম বৃদ্ধির জন্য বিএনপিপন্থী ব্যবসায়ীদের দায়ী করেছেন।
তিনি বলেছেন, ‘কিছু অসাধু ব্যবসায়ী, কিছু মজুদদার এবং বিএনপি ঘরানার ব্যবসায়ীরা’ চালের দাম বাড়িয়েছেন। সংকটের কোনো প্রশ্ন ওঠে না। খাদ্যমন্ত্রী জানান, সরকারের পক্ষ থেকে চালকল মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে পরিস্থিতি সামাল দিতে এবং দাম কমাতে তাদের চাপও দেয়া হয়েছে। তবে সরকার পরিস্থিতি সামাল দিতে মূলত নির্ভর করছে আমদানির ওপর। চালের মূল্যবৃদ্ধি একটি কৃত্রিম সংকট উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ‘বাজারে চালের অভাব নেই, দেশে পর্যাপ্ত চাল রয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যমতে, স্বাধীনতার পর ২০০৭ এবং ২০০৮ সালে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের আমলে মোটা চালের কেজি ৪০ টাকা এবং সরু চাল ৫৬ টাকায় উঠেছিল। এদিকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের চাল-গমের দামবিষয়ক প্রতিবেদন অনুযায়ী, মোটা চালের দাম বিশ্বে এখন বাংলাদেশেই সবচেয়ে বেশি। এরপরই আছে পাকিস্তান, যা বাংলাদেশের চেয়ে ১০ টাকা কম। বর্তমানে বিশ্বে সবচেয়ে সস্তায় চাল বিক্রি করছে ভিয়েতনাম। সেখানে চালের দাম গড়ে প্রতি কেজি ৩৩ টাকা ৬২ পয়সা। প্রতিবেশী দেশ ভারতে প্রতি কেজি চালের দাম ৩৪ টাকা ৪৩ পয়সা, থাইল্যান্ডে ৩৭ টাকা ৮১ পয়সা ও পাকিস্তানে ৩৮ টাকা ৫৪ পয়সা। সরকারি হিসাবেই দেশে প্রতি কেজি চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৮ টাকায়। চালের এই দরও দেশের মধ্যে নতুন রেকর্ড। এছাড়া বাজারে নতুন বোরো চাল এলেও পুরনো চালের মতো এই চালের দামও চড়া। যদিও আশা করা হয়েছিল নতুন মৌসুমের ধান উঠলে বাজারে চালের দাম কমবে। অপরদিকে কম দামে চাল দেয়া ছিল সরকারের অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি। কিন্তু ঘটলো উল্টো। আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (ইফপ্রির) ২০১৫ সালের জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশের মানুষের গড়ে খাদ্যশক্তির (ক্যালরি) ৬৫ শতাংশ আসে চাল বা ভাত থেকে। আর প্রতিদিন তারা খাবারের পেছনে যে অর্থ ব্যয় করে, তার ২৭ শতাংশ যায় চাল কিনতে। সংস্থাটির পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, দাম বাড়লে গরিব মানুষ ভাত খাওয়া কমিয়ে দেয়।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চালের দামটা বেশি বেড়েছে গত ৫ মাসে। প্রতি মাসেই সব ধরনের চালে কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ২ থেকে ৩ টাকা করে। দাম বাড়তে বাড়তে তা এখন সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার এবং টিসিবির পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত জানুয়ারিতে মোটা চালের (স্বর্ণা এবং পারিজা) কেজি ছিল ৪০ টাকা। ফেব্রæয়ারিতে তা বেড়ে হয় ৪২ টাকা। এরপর মার্চে ৪৪ টাকা, এপ্রিলে ৪৬ টাকা এবং মে মাসে এসে হয় ৪৭ থেকে ৪৮ টাকা। আর জুন মাসে সেটি ৫০ টাকা ছাড়িয়েছে। অথচ গত বছরের জুনেও এক কেজি মোটা চাল ৩০ থেকে ৩২ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। টিসিবির তথ্যমতে, গত এক বছরে দেশের বাজারে মোটা চালের দাম বেড়েছে ৪২ দশমিক ১৯ শতাংশ।
শুধু মোটা চালের দামই বাড়েনি। মোটা চালের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সরু চালের দামও। বাজারে সবচেয়ে ভালো মানের মিনিকেট চালের কেজি এখন ৬৫ টাকায় ঠেকেছে, যা জানুয়ারিতে ছিল ৫৬ টাকা। অর্থাৎ গত পাঁচ মাসে উন্নতমানের মিনিকেট চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা। প্রতি মাসেই কেজিপ্রতি বেড়েছে ২ থেকে ৩ টাকা করে।
টিসিবির তথ্য বলছে, গত বছরের এই সময় উন্নতমানের মিনিকেট ও নাজিরশাইল চালের কেজি ছিল গড়ে ৪৮ থেকে ৫২ টাকা। এছাড়া এখন বাজারে সাধারণ মানের মিনিকেটের কেজি ৫৬-৬০ টাকা, যা গত জানুয়ারিতে ছিল ৪৮ থেকে ৫০ টাকা। আর টিসিবির তথ্যমতে, সাধারণ মানের মিনিকেটের দাম গত বছরের এই সময়ে ছিল ৪৪ থেকে ৪৮ টাকা। এক বছরে বেড়েছে ১৫ শতাংশের বেশি।
মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ বেশি খায় বিআর-২৮ এবং পাইজম। এই দুই প্রকারের চালেরও দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক। বাজারে এখন প্রতি কেজি বিআর-২৮-এর কেজি ৫২ থেকে ৫৬ টাকা। আর পাইজম চালের কেজি ৫০ থেকে ৫৪ টাকা। অথচ জানুয়ারিতেও এই দুই প্রকার চালের দাম ছিল ৪৬ থেকে ৪৮ টাকা। আর গত বছরের এই সময় দাম ছিল ৪০ থেকে ৪২ টাকা। এক বছরে মাঝারি মানের এ চালে দাম বেড়েছে ১৯ দশমিক ৫১ শতাংশ।
রাজধানী ও সারাদেশের বাজারগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অন্যান্য সপ্তাহের মতো এ সপ্তাহেও চালের দাম বেড়েছে। পাইকারি বাজারে দাম বাড়ার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। এতে চাপ বাড়ছে ভোক্তাপর্যায়ে। বাজার মনিটরিংয়ের অভাবে চালের বাজারে এই অস্থিরতা বলে মনে করছেন ক্রেতা এবং সংশ্লিষ্টরা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলারের দাম বাড়ার কারণে আমদানি করেও পরিস্থিতির তেমন উন্নতি করা সম্ভব নয়। রাজধানীর বাজার ঘুরে দেখা গেলো চালের তীব্র সংকট। মজুদও প্রায় শেষের দিকে।
স¤প্রতি ডলারের দর বাড়ায় আমদানি করা চালে বাজার নিয়ন্ত্রণ আদৌ সম্ভব কিনা তা নিয়ে সংশয় পাইকারি চাল ব্যবসায়ী সমিতির। অপরদিকে চাল আমদানিতে উচ্চ শুল্ক আরোপ করায় তা কমাতেও একটি চক্র কাজ করছে।
চালের পাইকারী ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চালের দাম বৃদ্ধিতে তারা বন্যাকে দায়ী করছেন। তাদের বক্তব্য উত্তরাঞ্চলে বন্যার কারণে ঢাকার বাজারে চালের সরবরাহ কমে গেছে। যার প্রভাব পড়েছে দামের ওপর। যদিও চালের বাজারে অস্থিরতা চলছে এ বছরের শুরু থেকেই। দুই দফায় দাম বৃদ্ধির পর খাদ্য মন্ত্রণালয় চালকল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসে জানায়, বৈশাখে নতুন ধান আসার আগ পর্যন্ত তারা আর চালের দাম বাড়াবেন না। কিন্তু সপ্তাহ যেতে না যেতেই বিভিন্ন ধরনের চালে কেজিপ্রতি ২/৩ টাকা করে বাড়িয়ে দেওয়া হয়। রাজধানীর বাদামতলী বাবুবাজার চাল আড়তদার সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জানান, সামনে সঙ্কট দেখা দিতে পারে এই আশঙ্কায় দাম বাড়ানো হচ্ছে।
যশোরে নতুন ধানের ভরা মৌসুমে চালের মূল্য অস্বাভাবিক হওয়ার নজীর খুবই কম। এবার মূল্যবৃদ্ধিতে রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষের মোটা চাল প্রসেসিং প্রতিকেজি ৪৫টাকা পর্যন্ত উঠেছে। বিনা প্রসেসিং মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪২টাকা কেজি দরে। সরু চালের মূল্যও বৃদ্ধি পেয়েছে। যশোর বড় বাজারের চাল ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম জানালেন, তিনি প্রায় ২৫ বছর ধরে চাল ব্যবসা করছেন কিন্তু চাল ওঠার ভরা মৌসুমে এভাবে মূল্যবৃদ্ধির ঘটনা দেখেনি। তবে একবার বন্যার সময় সর্বোচ্চ ৩৫টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। বারীনগরের চাতাল মালিক আমিন উদ্দীন জানালেন, চালের মূল্য এতটা বৃদ্ধি অযৌক্তিক। কুষ্টিয়া ও নওয়াপাড়াসহ দক্ষিণ-পশ্চিমের কয়েকটি অটো রাইস মিলের কয়েকজন মালিকের বক্তব্য, ‘আমরা চাল তৈরী করি, যখন ধান যে মূল্যে ক্রয় করি সেই হিসাবে চালের মূল্য ধরা হয়। এবার ধানের দাম বেশী তাই চালের দামও বেশী। বাড়ানো কমানোর ব্যাপারে আমাদের কোন হাত নেই। এটি পাইকারী ও খুচরা ব্যবসায়ীদের ব্যাপার। পাইকারী ও খুচরা ব্যবসায়ীরা একে অপরের দোষারোপ করে মূল্যবৃদ্ধির ক্ষেত্রে। খাদ্য অধিদপ্তরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, সরকারী খাদ্যগুদামে চাল সংকট রয়েছে। এর বড় কারণ কোন কোন এমপি’র নামে কাবিখাসহ ঢালাওভাবে প্রকল্পের পর প্রকল্পের জন্য চাল বরাদ্দ। আবার ডিও লেটারে বেহিসেবি চাল উত্তোলন ও বিক্রি। তদন্ত করলেই সব বের হবে। এছাড়া বাজার মনিটরিং দুর্বলতা, সরবরাহ কম, মজুতদার, মুনাফালোভী ও সিন্ডিকেট কারসজিমূল্যবৃদ্ধির কারণ। অভিযোগ, চালের মুল্য অস্বাভাবিক হওয়ার সুনির্দ্দিষ্ট কারণও এখন পর্যন্ত অনুসন্ধান করা হয়নি সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, চালের দর আপাতত কমার কোন লক্ষণ নেই। বরং উর্ধ্বমূখী।
এদিকে দেশের দক্ষিনাঞ্চলে (বরিশাল) চালের অগ্নিমূল্যে নিম্নবিত্ত থেকে নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষ কষ্টে দিনতিপাত করছে। সরকারীভাবে বাজারে চালের সরবারহ প্রায় শূণ্যের কোঠায় নেমে আসার কারনেই পুরো বাজার ধীরে ধীরে ব্যাবসায়ীদের খেয়াল খুশির কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। চাল ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের মতে, সরকারী পর্যায়ে চালের সন্তোষজনক মজুদ গড়ে না তোলা এবং এ বিষয়ে গুরুত্ব না দেয়ায় চালের বর্তমান সংকটসহ মূল্য পরিস্থিতি জনগনের নাগালের বাইরে চলে যাওয়ার অন্যতম কারন বলে মনে করছেন। যদিও সদ্য সমাপ্ত রবি মওশুমে দক্ষিনাঞ্চলে বোরা ধান-চাল ক্রয় অভিযানও ব্যার্থ হয়েছে। চালের মজুদ চলে গেছে স্থানীয় ফড়িয়াসহ উত্তর ও উত্তরÑপশ্চিমাঞ্চলের চালকল মালিকদের কাছে। সরকার বিদেশ থেকে খাদ্য সংগ্রহের যে বিলম্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, সে চালও বরিশাল সিএসডি সহ দক্ষিনাঞ্চলের এলএসডি গুদামগুলোতে কবে নাগাদ পৌছবে তা বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল মহল। গতকালের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বরিশাল সিএসডি সহ বিভাগের দক্ষিনাঞ্চলের ৬টি জেলায় ৮৩ হাজার টন ধারন ক্ষমতার গুদামগুলোতে চালের সর্বমোট মজুদ আছে মাত্র ১৬ হাজার টনের মত। গুদামগুলোর প্রকৃত ধারন ক্ষমতা ১ লাখ ৯ হাজার টন হলেও দীর্ঘদিনের পুরনো এসব গুদামের অনেকগুলোই নষ্ট ও খাদ্য শষ্য মজুদের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় বর্তমানে ধারণ ক্ষমতা ৮৩ হাজার টনে হ্রাস পেয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া গত কয়েক মাস ধরেই সারা দেশের মত দক্ষিনাঞ্চলেও চালের দর গত বছরের প্রায় দেড়গুণ বৃদ্ধির বিষয়টিকে কিছুটা মনুষ্য সৃষ্ট ও কিছুটা খাদ্য বিভাগের উদাশীনতা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহল।
বোরো মৌসুমে এ বছর বগুড়ায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি উৎপাদন হয়েছে। কিন্তু খাদ্য বিভাগের সংগ্রহ অত্যন্ত কম হওয়ায় বেড়েছে চালের দাম। কৃষি বিভাগের মনিটরিং শাখায় যোগাযোগ করলে দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা মহসিন আলী জানান, বগুড়ায় এবার ১লাখ ৯০ হাজার ১শ’৮ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্র ধরা হয়েছিল। অথচ বগুড়া জেলা খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মাঈনউদ্দিন জানান, চলতি বোরো মওশুমে জেলায় ৬২ হাজার মে. টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সংগৃহিত হয়েছে মাত্র ৬ হাজার ২শ’ মে. টন মাত্র । খাদ্য বিভাগ সূত্রে আরো জানা যায়, বগুড়ার ২২টি এলএসডি এবং একটি সিএসডি গোডাউনের ধারণ ক্ষমতা ১ লাখ ৩৩ হাজার মে. টন হলেও বগুড়ায় বর্তমানে ধান/চাল/গমের মজুদ মাত্র ১৮ হাজার ৮ শ মে. টন। যা উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বগুড়া জেলার নন্দীগ্রাম, শেরপুর ও মোকামতলার চালের পাইকারী আড়ত ও মোকাম গুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অন্যান্য বছরের মত চলতি বোরো মওশুমে বোরো ধানের সরবরাহ নেই বললেই চলে। ফলে ভরা বোরো মওশুমেও ধান ও চালের দাম কমার বদলে বাড়তির দিকে রয়েছে। বগুড়ায় এখন চালের সর্বনি¤œ দাম কেজি প্রতি ৪৮ টাকা। খুচরা বিক্রেতারা জানিয়েছে, বগুড়া ও পার্শ্ববর্তী জয়পুরহাট জেলার ৫০ মিল মালিক সিন্ডিকেট ধান চালের বাজার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রন করছে। তারা ব্যাংক থেকে ওডি নিয়ে কোরবানীর দিনে চামড়ার ব্যবসার আদলে নির্দিষ্ট ফড়িয়াদের মাধ্যমে ধান সংগ্রহ করে নিজ নিজ গোডাউনে মজুদ করছে।
চট্টগ্রামে সাম্প্রতিক উপর্যুপরি বৈরী আবহাওয়াকে পুঁজি করে একশ্রেণির ব্যবসায়ী চালের দাম বৃদ্ধির আরও সুযোগ নিয়েছে। নগরীর চালের পাইকারি বাজার পাহাড়তলী, রেয়াজুদ্দিন বাজার, চাক্তাই ঘুরে দেখা গেছে- এক মাসের ব্যবধানে বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) চালের দাম ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকা বেড়েছে। মোটা চালের দাম বেড়েছে কেজি প্রতি তিন থেকে পাঁচ টাকা।
চালের দামের উর্ধ্বগতি পর্যালোচনা করে জানা যায়, চালের দাম লাগামহীনভাবে বাড়লেও দর সহনীয় রাখতে বা সরবরাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে এখনো পর্যন্ত সংশ্লিষ্টদের কার্যকর কোন উদ্যোগ নেই। এদিকে বেসরকারি আমদানিকারকরা সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার ছাড়া চাল আমদানিতে আগ্রহী নয়। বেসরকারি পর্যায়ে পর্যাপ্ত মজুদ না থাকায় চালের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। আড়তদার ও পাইকারী ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, নওগাঁসহ উত্তরবঙ্গের কিছু মিল মালিক ও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারসাজিতে চালের দাম দফায় দফায় বাড়ছে।
‘বিএনপিপন্থী ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে চালের দাম বাড়ছে’ খাদ্যমন্ত্রীর এ মন্তব্যের প্রেক্ষিতে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেছেন, এ মন্তব্য আসলে সঠিক নয়। এটা মন্ত্রীর রাজনৈতিক বক্তব্য। তবে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ চাল আমদানির উপর দুই মাসের শুল্ককর রেয়াত দেয়ার যে প্রস্তাব করেছেন তাকে স্বাগত জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন, সরকার হাছান মাহমুদের এ প্রস্তাব বাস্তবায়ন করলে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে এবং সাধারণ মানুষের ভোগান্তি অনেকটা লাঘব হবে।
খাদ্যে উদ্বৃত্ত জয়পুরহাট জেলায় বেড়েই চলেছে চালের বাজার। রমজান মাস শুরুর পরও কেজি প্রতি চালের দাম ৩ থেকে ৬ টাকা বেড়েছে। পূর্ব বাজারে চাল কিনতে আসা দিন মজুর হারুন জানান, প্রতি বছর বোরো বা আমন মৌসুমের শুরুতে সাধারণত চালের দাম কম থাকে। এবার উল্টো বোরোর ভরা মৌসুমে চালের দাম বেড়েই চলেছে। মিল মালিক, চাতাল ব্যবসায়ীরা এবং বাংলাদেশ অটো মেজর ও হাসকিং মিল মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক কে এম লায়েক আলী বলেন, ধানের দাম বেশি, সরকারী ভাবে সরবরাহও অপ্রতুল। তাই কৃষক অতিরিক্ত দামের আসায় চাল মজুদ রাখছে। যে কারনে চালের বাজারে অস্তিরতা বেরেই চলেছে। জয়পুরহাট কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক সুধেন্দ্রনাথ রায় জানান, জেলায় এবার ৭২ হাজার ৩১০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে এবং ফলনও হয়েছে ভালো হয়েছে। এ অবস্থায় বাজারে চালের দাম কেন বেড়েই চলছে তা বুঝতে পারছিনা। এদিকে সাতক্ষীরার কলারোয়ায় সরকারের ধান ক্রয় অভিযান ব্যার্থতায় পর্যবসিত হতে চলেছে। গতকাল পর্যন্ত ধান কাটার দেড় মাস পরেও কলারোয়ায় এক দানা ধান ক্রয় সম্ভব হয় নি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সদ্য সমাপ্ত বোরো মৌসুমে কলারোয়ায় ১২ হাজার ৩’শ ৫০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়। এরমধ্যে মাত্র ৭’শ ৫০ হেক্টর জমিতে হাইব্রীড জাতের অর্থাৎ মোটা ধানের আবাদ করা হয়। বাকী ১১ হাজার ৯’শ ৩০ হেক্টর জমিতে বিআির-২৮ ও মিনিকেট জাতীয় চিকন ধানের আবাদ করা হয়। কিন্তু দেশের হাওর অঞ্চলে ধানের ব্যাপক ক্ষতির খবর ছড়িয়ে পড়ায় মুনাফাখোর আড়তদারেরা উৎপাদন মৌসুমের শুরুতে ধান ক্রয় করে গুদামজাত করেছে। এতে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশী দামে ধান ক্রয় করতে হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।