পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নারায়ণগঞ্জ থেকে মোঃ হাফিজুর রহমান মিন্টু/তরিকুল ইসলাম নয়ন : আদমজী ইপিজেড শ্রমিক ইউনিয়ন গঠনের অজুহাতে বিশ্বের বৃহত্তম পাটকল ধ্বংসকারী আদমজী জুট মিলস শ্রমিক ইউনিয়নের প্রেতাত্মারা মালিক-শ্রমিকের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানকে অশান্ত করতে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে বলে ইপিজেডের একটি সূত্র জানিয়েছে। সূত্রটি জানিয়েছে, ষড়যন্ত্রকারীরা ইপিজেড অভ্যন্তরে প্রবেশে কতিপয় সরকারদলীয় সন্ত্রাসীকে নিয়ে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে চলেছে। সম্প্রতি আদমজী রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) অভ্যন্তরে তালিকাভুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হোসেন কনস্ট্রাকশনের কর্মকর্তাদের নারায়ণগঞ্জ ৪ আসনের এমপির নাম ভাঙিয়ে হুমকি দিয়েছে কতিপয় ছাত্রলীগ নামধারী নেতাকর্মী। এ ঘটনার জন্য ইপিজেড কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগও দিয়েছে উক্ত প্রতিষ্ঠান। হোসেন কনস্ট্রাকশনের ব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, তারা দীর্ঘদিন ধরে বেপজার বিভিন্ন নির্মাণকাজের সাথে জড়িত রয়েছেন। ছাত্রলীগ নামধারী এই নেতাকর্মীরা বিভিন্ন ধরনের সুবিধা আদায়ে প্রতিষ্ঠানের মালিক-কর্মচারীদের একের পর এক হুমকি প্রদর্শন করে আসছে। ইপিজেডের অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, সিদ্দিরগঞ্জের কদমতলী উত্তর পাড়ার মৃত মোসলেম উদ্দীনের ছেলে রমজান হীরা, একই এলাকার কাদির মোল্লার ছেলে মামুন, নতুন বাজার এলাকার আবু তাহেরের ছেলে আরমান কতিপয় সন্ত্রাসী নিয়ে আদমজী ইপিজেডর বিভিন্ন শিল্প-প্রতিষ্ঠানে গিয়ে জোরপূর্বক তাদের বিভিন্ন মালামাল ক্রয়-বিক্রয়, ঝুট, খাবার সরবরাহ, শ্রমিক নিয়োগসহ বিভিন্ন কর্মকা-ে হস্তক্ষেপ করে আসছে। এদের এই সমস্ত কর্মকা-ে ইপিজেড অভ্যন্তরের শিল্প-কলকারখানার মালিক, কর্মকর্তা, শ্রমিক ও তালিকাভুক্ত ঠিকাদারগণ শঙ্কার মধ্যে তাদের কর্মকা- পরিচালনা করছেন।
ক্রমাগত লোকসানের কারণে প্রতিষ্ঠার ৫২ বছরের মাথায় ২০০২ সালের ৩০ জুন বন্ধ করে দেয়া হয় এশিয়ার বৃহত্তম পাটকল আদমজী। এখন সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে আদমজীর নামেই, আদমজী রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল। ২০০৬ সালের ৬ মার্চ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। সেই থেকে পথ চলা এই ইপিজেডের, একে একে গড়ে উঠছে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগের শিল্প প্রতিষ্ঠান। ইতিমধ্যেই ৪৬ হাজারের বেশী মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। আশপাশের মানুষের জীবনেও সচ্ছলতা আসতে শুরু হয়েছে এই ইপিজেডকে কেন্দ্র করে। তবে ছোট খাট নানা সমস্যাও রয়েছে সেখানে। এই ইপিজেডে বিদ্যমান সকল প্লটে শিল্প স্থাপন হলে প্রায় লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। আদমজী পাট কলে বছরের পর বছর এই লোকসানের মূলে ছিলো কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও মিলের শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দের বিভিন্ন দাবি আদায়ের নামে মিল অভ্যন্তরের তা-ব লীলা। আদমজী পাট কল বন্ধের সাথে সাথে ঐ সমস্ত অর্থলোভী কুচক্রান্তকারী শ্রমিক নেতারা গা-ঢাকা দিলেও আদমজী ইপিজেড প্রতিষ্ঠার পর সম্প্রতি দেশের ইপিজেড গুলিতে শ্রমিক ইউনিয়ন গঠনে সরকারী ঘোষনার পর থেকে এ দেশের গড়ে উঠা শিল্প কল-কারখানা ধ্বংসের পরিকল্পনাকারী দেশি-বিদেশি শক্তির কাঁধে পুনরায় ভর করতে শুরু করেছে বিশ্বের বৃহত্তম পাটকল ধ্বংশকারী প্রেতআতœারা। এরা শুধুমাত্র নিজেদের সুখ-শান্তির জন্য পুনরায় মেতে উঠেছে সুন্দর পরিবেশে গড়ে উঠা শান্ত আদমজী ইপিজেডকে অশান্ত করার ষড়যন্ত্রে। ইতোমধ্যে এই ষড়যন্ত্রকারীদের ইন্ধনে শ্রমিক অসন্তোষের মুখে লোকসানের কারনে বন্ধ হয়ে গেছে ২টি কারখানা।
আদমজী ইপিজেড সূত্রে জানা গেছে, ১০ বছর আগে যাত্রা শুর” হলেও আদমজী ইপিজেডের সকল প্লটে এখনও শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেনি। বর্তমানে আদমজী ইপিজেডে পোশাক, গার্মেন্ট, টেক্সটাইল, জুয়েলারী, পলি ব্যাগ, চামড়া জাত পণ্য, তার বা ক্যাবল, সু-(জুতা) সহ বিভিন্ন পণ্যের ৪৮টি প্রতিষ্ঠান উৎপাদনে রয়েছে। আরো ১১টি প্রতিষ্ঠান তাদের অবকাঠামো তৈরির কাজ করছে। বর্তমানে সেখানে ৪৬ হাজার ১৬৫ জন শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তা কাজ করছেন। ইপিজেডের প্রতিষ্ঠানগুলোকে কেন্দ্র করে আরো প্রায় ১৫ হাজার লোক নানা রকম ব্যবসায় জড়িত রয়েছে এ এলাকায়। আদমজী ইপিজেড সম্পুর্ণ চালু হলে প্রায় লক্ষাধিক শ্রমিক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীর কর্মসংস্থান হবে। সেই সাথে আরো প্রায় ৫০ হাজার লোক নানা রকম ব্যবসার সাথে স¤পৃক্ত হয়ে পড়বে ইপিজেডের প্রতিষ্ঠানগুলোকে কেন্দ্র করে। বেপজার তথ্য অনুযায়ী ২০১৪-২০১৫ অর্থ বছর পর্যন্ত আদমজী ইপিজেডে ৬১টি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করেছেন। এর মধ্যে ৪৩ টি বিদেশী এবং ১৮টি বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এতে মোট বিনিয়োগ করা হয় ১২৯২ দশমিক ৭৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যার যাত্রা শুরু হয়েছিল মাত্র ৪ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের মধ্য দিয়ে। গত অর্থ বছরে ১ হাজার ৬৮৮ দশমিক ২৮ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানী করা হয়েছে। ওই পর্যন্ত মোট রপ্তানী করা হয়েছে ৪ হাজার ৯৬৫ দশমিক ৮৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য। যার যাত্রা শুরু হয়েছিল মাত্র শূন্য দশমিক ২৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানীর মাধ্যমে।
এইপিজেডের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের লোকজনের সাথে কথা বলে জানাগেছে, অন্যান্য ইপিজেডের তুলনায় আদমজী ইপিজেডে শ্রমিক অসন্তোষ কম। তারপরও আন্দোলনের মুখে লোকসানে পড়ে দুটি পোশাক কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। জুট ব্যবসাসহ নানাহ ব্যবসার নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীনদের বিভিন্ন পক্ষের প্রভাব বিস্তারের শিল্প প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টদের মাঝে মধ্যে অস্বস্থিতে থাকতে হয়। ইপিজেডের কাস্টম গেইটে সেখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হয়রাণীর স্বীকার হচ্ছেন অনেক ব্যবসায়ী। তবে এব্যাপারে মুখ খুলে বলতে চাননা কেউ, নাজানি কখন কাকে ঐ সমস্ত সন্ত্রসীদের রক্ত চক্ষুর নজরে পড়তে হয়। ইপিজেডে এখনও ট্রেড ইউনিয়ন গড়ে ওঠেনি। তবে শ্রমিক প্রতিনিধি নির্বাচনে মালিক ও বেপজার উদ্যোগ তেমন কাজে লাগেনি। আদমজী ইপিজেডে সম্প্রতি সন্ত্রাসীদের আশা যাওয়া ও তাদের হুমকি-ধমকি, সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কারণে দুটি পোষাক শিল্প বন্ধ হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে ইপিজেডের জিএম এর সাথে মোবাইল ফনে আলাপকালে এই প্রতিদেককে বলেন দুটি পোষাক কারখানা বন্ধের ব্যপারে আমি কিছু জানি না, অন্যদিকে কিছু কিছু ঘটনা তো মাঝে মধ্যে ঘটেই থাকে তবে সামগ্রিকভাবে ইপিজেডের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ ও শিল্প পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
পেছনে ফেরা
তৎকালীন পাকিস্তানের ২২ পরিবারের অন্যতম ধনাঢ্য আদমজী পরিবারের তিন ভাই ওয়াহেদ আদমজী ওরফে দাউদ আদমজী, জাকারীয়া আদমজী ও গুল মোহাম্মদ যৌথভাবে ১৯৫০ সালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে ২৯৪ দশমিক ৮৮ একর জমি নিয়ে আদমজী জুট মিলস নির্মাণ করেন। ১৯৫১ সালের ১২ ডিসেম্বর ১৭০০ হেসিয়ান ও ১০০০ সেকিং লুম দিয়ে এই মিলের উৎপাদন শুরু হয়। তখন প্রায় ৫ কোটি টাকা বিনিয়োগে প্রতিষ্ঠিত আদমজী জুটমিলে প্রতিদিন গড়ে ২৮৮ টন পাটের চট উৎপাদন করা হতো। তখন মিলে ৩ হাজার ৩০০টি তাঁতকল বসানো হয়। ওই সময় মিলের উৎপাদন থেকে প্রতি বছর প্রায় ৬০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় হতো। আদমজীর চটের ব্যাগ ও বস্তার একটি অংশ অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা হতো। ৪ নাম্বার মিলে তৈরী উন্নত মানের ব্রডলুম, জিও নামে পাটজাত পন্য পুরোটাই বিদেশে রপ্তানি হতো। ৫ নং মিলে (এবিসি) তৈরী হতো লেমিনেটেড পলি ব্যাগ। ৬ নং মিলটি ছিল ওয়ার্কশপ। শুরুতে প্রায় ১০০ টন পাটজাত পন্য উৎপাদন হলেও ধীরে ধীরে তা বেড়ে আড়াই শ’ টনে উন্নীত হয়। মিলটি বন্ধের সময় ২৪ হাজার ৯১৬ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিক চাকরি করতেন। স্বাধীনতার বছর কয়েক পর থেকে তথাকথিত শ্রমিক আন্দোলনের নামে একাধিক গোষ্ঠি মিলের লুটপাটকে কেন্দ্র করে সংঘাত-সংঘর্ষের সূত্রপাত করে। একের পর এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে অজ্ঞাত সংখ্যক মানুষের জীবন যায়। এসব কারণে মিলটি লোকসান গুনতে গুনতে বন্ধের উপক্রম হয়। ৪ দলীয় জোট সরকার চরম ঝুঁকি থাকা সত্বেও ২০০২ সালে মিলটি বন্ধ ঘোষনা করে শ্রমিকদের সকল পাওনা পরিশোধ করে দেয়। পরবর্তীতে সেখানে ইপিজেড প্রতিষ্ঠা করা হয়।
আদমজী’র মোট ২৯৪ দশমিক ৮৮ একর জমির মধ্যে ইপিজেডের জন্য বরাদ্ধ করা হয় ২৭৫ দশমিক ৩৮ একর ভুমি। আটকেপড়া পাকিস্তানীদের বসবাসের জন্য আদমজী ইপিজেডের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে ১১ একর ভূমি দিয়ে নির্মাণ করা হয় বিহারীদের আবাসন প্রকল্প। আবাসন প্রকল্পে বিহারীদের ১ হাজার ৪২০টি পরিবারের জন্য সমপরিমাণ ঘর নির্মাণ করে সেখানে তাদের বসবাস করার ব্যবস্থা করা হয়। র্যাব-১১এর সদর দপ্তরের জন্য ৭ একর এবং আদমজীর মেইন গেইটের দক্ষিণ পাশে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ও একটি পুলিশ ফাঁড়ির জন্য দেড় একর জায়গা বরাদ্ধ দেয়া হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ আদমজী বন্ধ করার পরও ইপিজেড নির্মাণের সময় পর্যন্ত স্থানীয় একাধিক সিন্ডিকেট মিলের যন্ত্রাংশ, লোহা, তামা ও মূল্যবান বৈদ্যুতিক তারসহ কয়েকশ’ কোটি টাকার মালামাল চুরি করে নিয়ে যায়। কিন্তু এর হোতাদের কোন বিচার হয়নি। সন্ত্রাস ও লোকসানের অজুহাতে মিল বন্ধ হলেও সন্ত্রাসী ও দুর্নীতিবাজদের শাস্তি দেয়া হয়নি অদ্যাবধি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।