পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : পাহাড় ধ্বসে বিধ্বস্ত জনপদ ও মাটিচাপায় হতাহতদের পাশে দাঁড়াতে রাঙ্গামাটির যাওয়ার সময় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়ীবহরে হামলার ঘটনায় ধিক্কার জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। গতকাল রোববার বিকালে এক বিবৃতি তিনি এধরণের ন্যাক্কারজনক ও কাপুরুষোচিত হামলায় ধিক্কার এবং নিন্দা জানান। তিনি বলেন, বৃহত্তর চট্টগ্রামে যেসব এলাকায় পাহাড় ধ্বসে মানববিধ্বংসী মহাবিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে সেসমস্ত এলাকায় দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল-বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ সমন্বয়ে গঠিত টিমকে ঢুকতে না দিয়ে নেতৃবৃন্দের গাড়ীবহরে হামলা, উপদ্রæত এলাকায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারের ব্যর্থতা ঢাকারই কৌশল।
খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপি মহাসচিবের নেতৃত্বে দলের কেন্দ্রীয় টিম রাঙ্গামাটি যাওয়ার পথে রাঙ্গুনিয়ায় ইসাখালী নামক স্থানে আওয়ামী সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা নেতৃবৃন্দের গাড়ী বহরের ওপর বর্বরোচিত হামলা চালায়। হামলায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, তাঁর সফরসঙ্গী বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মেজর জেনারেল (অব:) রুহুল আলম চৌধুরী, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) মাহবুবের রহমান শামীম, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা: মীর ফাওয়াজ হোসেন শুভ, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বকরসহ প্রায় ১৫ জন আহত হয়েছেন।
বিবৃতিতে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, রাঙ্গুনিয়ায় আওয়ামী সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র হামলায় বিএনপি মহাসচিবসহ বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দের গাড়ীবহরে হামলা ও শারীরিকভাবে আক্রমণ করে আহত করার যে নজীর সৃষ্টি করা হলো তা গণতন্ত্রের শেষ চিহ্নটুকু মুছে ফেলতে সরকারের একটি দুর্বিনীত উদ্যোগ। এই ঘটনা বর্তমান বিনা ভোটের সরকারের আরেকটি হিংসাশ্রয়ী অসুস্থ রাজনীতিরই বহি:প্রকাশ। আওয়ামী লীগ গুন্ডামীকেই আশ্রয় করেছে টিকে থাকার অবলম্বন হিসেবে। তাই শান্তি, স্বস্তি ও জননিরাপত্তাকে বিসর্জন দিয়ে নৈরাজ্যকেই বেছে নিয়েছে।
তিনি বলেন, এভাবে ভয়ভীতি, শঙ্কা ও আতঙ্কের পরিবেশ বজায় রেখে গণপ্রতিবাদকে চাপা দিয়ে রাখাটাই হচ্ছে তাদের মূল লক্ষ্য। সরকার ভক্ষকের ভূমিকা গ্রহণ করার জন্যই বাংলাদেশে মানুষের জীবন-জীবিকা এখন ভয়ংকর নিরাপত্তাহীনতায় বিপন্ন। জনসমর্থনহীন ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতেই অপরাধ ও অপরাধীদের সহযোগী হিসেবে বেছে নিয়েছে এই সরকার। তাই জনসমাজে সন্ত্রাসীদের শাসনই সর্বত্র বিরাজমান।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বলেন, চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, কক্সবাজার, মৌলভীবাজারে পাহাড় ধ্বসে অসংখ্য মানুষের মৃত্যুতে ঐ এলাকাগুলোর বিপন্ন মানুষগুলো এখন শোকে-দু:খে ¤্রয়িমান। হাজারও আহত মানুষের আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। বিশুদ্ধ পানি, খাবার ও চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত সহযোগিতা না থাকায় অসংখ্য মানুষ অভুক্ত ও অসুস্থতায় মানবেতর জীবন-যাপন করছে। বিদ্যূৎ ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকার কারনে এলাকাগুলোয় ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে। উপদ্রæত এলাকায় অসহায় মানুষের পাশে না দাঁড়িয়ে সরকার প্রধান বিদেশ সফরেই সময় কাটিয়েছেন। দুর্গত এলাকার অসহায় বিপর্যস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর বিষয়টি নিয়ে ভ্রæক্ষেপহীন থেকেছেন সরকার প্রধান।
বিএনপি প্রধান বলেন, বাংলাদেশের জনগণকেই আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় দুশমন মনে করে। সেজন্য বারবার প্রাকৃতিক দুর্যোগে দুর্ভোগে নিপতিত মানুষের পাশে আওয়ামী সরকার কোন সময়ই দাঁড়ায়নি। এরা জনগণের বিপদে ও কষ্টে আনন্দ লাভ করে। পাহাড় ধ্বসে উপদ্রæত এলাকায় সরকারের তাচ্ছিল্যপূর্ণ ব্যবস্থাপনায় দেশব্যাপী ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে যে ধিক্কার উঠেছে সেখান থেকে জনগণের চোখ অন্যত্র সরিয়ে দেয়ার জন্যই বিএনপি মহাসচিবের গাড়ীবহরে হামলা করা হয়েছে। আওয়ামী পান্ডাদের দিয়ে বিএনপির গাড়ীবহরে আক্রমণ সরকারের পতনের আগে শেষ মরণকামড়। তবে বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর সকল অপকর্মের হিসেব নিতে জনগণ অপেক্ষা করছে। আর এই অপেক্ষা বেশী দীর্ঘ হবে না।
তিনি বিএনপি মহাসচিবের গাড়ীবহরে বর্বরোচিত হামলা চালিয়ে নেতৃবৃন্দকে আহত করার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। এবং অবিলম্বে হামলাকারী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানান।
হামলার পরিণাম শুভ হবে না
চট্টগ্রামে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়িবহরে হামলার পরিণাম শুভ হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। গতকাল রোববার এক টুইট বার্তায় তিনি বলেছেন, এটি গণতন্ত্রের ওপর হামলা।
খালেদা জিয়া তার টুইট বার্তায় বলেন, বিএনপি মহাসচিবের ওপর ন্যাক্কারজনক হামলার নিন্দা জানাবার ভাষা নেই। তিনি বলেন, এ হামলা গণতন্ত্র, রাজনীতি, নাগরিক অধিকার ও পরমতসহিষ্ণুতার ওপর হামলা। এর পরিণাম শুভ হবে না।
জাপার ইফতার মাহফিলে খালেদা জিয়া
ঈদের পরই নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা দেয়া হবে
এদিকে, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ওপর হামলাকারীদের দ্রæত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতায় রেখে নির্বাচন হলে সেই নির্বাচনে কেউ অংশগ্রহণ করবে না। ঈদের পরেই সহায়ক সরকারের রূপ রেখা দেয়া হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটা নির্বাচন হতে হবে। আওয়ামী লীগের অধীনে, হাসিনার অধীনে এদেশে কোন নির্বাচন হবে না।
গতকাল রোববার গুলশান-১ এ ইমান্যুয়েলস কনভেনশন সেন্টারে ২০ দলীয় জোট শরীক জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) এক ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ দাবি জানান। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সম্মানে দলটি এ ইফতার মাহফিল আয়োজন করে।
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, চট্টগ্রামে যে ঘটনাটি ঘটল তা থেকে প্রমাণ হয় দেশে যত সন্ত্রাসী ঘটনা, বিশৃঙ্খলা ঘটছে তার সবই করছে আওয়ামী লীগ। আমাদের লোকেরা ত্রাণ দিতে গেছে সেখানেও হামলা করা হচ্ছে। এই যদি হয় দেশের অবস্থা যে বিএনপির লোকজন কোথাও গেলে আক্রমণ করতে হবে। তাহলে বুঝতেই পারছেন এ সরকার ক্ষমতায় থাকলে সাধারণ মানুষের কি হবে?
সরকারের প্রতি প্রশ্ন রেখে খালেদা জিয়া বলেন, মহাসচিবের ওপর হামলার পর কতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অবিলম্বে তাদের গ্রেফতার এবং শাস্তি দিতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের লোকজন কিছু না করলেও মিথ্যা মামলা দিয়ে ধরে নিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। যারা এই ঘটনায় জড়িত তাদের ধরতে হবে, জেলে পুরতে হবে। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
তিনি বলেন, মহাসচিবের ওপর হামলার ঘটনায় আবারও প্রমাণিত হলো যে, দেশে অবশ্যই নির্বাচন হতে হবে। আমরা নির্বাচন চাই। বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। এই ভয়ে আওয়ামী লীগ ভিত হয়ে গেছে। বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে আওয়ামী লীগের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। সেজন্য আওয়ামী লীগ জেনে শুনেই বিএনপি এবং ২০ দলীয় জোট যেন নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে সে জন্য তারা এ ধরনের হামলা করছে। বিভিন্ন জায়গায় দলের নেতাকর্মীদের ইফতার মাহফিল পর্যন্ত করতে দেয়নি।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে তার গুন্ডা বাহিনী থাকবে। তাবেদার ইলেকশন কমিশন তাবেদারি করে যে কোনো উপায়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে চাইবে। সেই জন্য আওয়ামী লীগকে ক্ষমতার বাইরে রেখে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের মাধ্যমে নির্বাচন হতে হবে। তারা বুঝুক যে আওয়ামী লীগের সমর্থক কতটুকু। পায়ের নিচে কতটুকু মাটি আছে সেটা পরিষ্কার হতে হবে। আওয়ামী লীগকে বুঝতে হবে তারা যা করছে সবই করছে গায়ের জোরে।
চালের দাম নিয়ে তিনি বলেন, এই সন্ত্রাসীদের হাতে দেশে মানুষ জিম্মি হয়ে গেছে। তথাকথিত আওয়ামী লীগ সরকার গ্যাস, খাজনা এবং ভ্যাট বসিয়ে মানুষকে শেষ করে দিয়েছে। তার উপর চালের দাম প্রতিনিয়ত বাড়ছে। সর্বকালের সর্বাধিক চালের দাম বাংলাদেশে এখন। সব কিছুই দেশে এখন সর্বাধিক।
আওয়ামী লীগ থেকে দেশের মানুষকে সাবধান হতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, দেশের মানুষকে বলবো এই আওয়ামী লীগ থেকে সাবধান হন। দেশ, নিজেকে, নিজের পরিবারকে এদের হাত থেকে বাঁচান। প্রয়োজনে রাজপথে অবস্থান নিতে হবে নিজেদের।
সংগঠনের চেয়ারম্যান ড. টি আই এম ফজলে রাব্বি চৌধুরীর সভাপতিত্বে এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, এনডিপি চেয়ারম্যান গোলাম মোর্তজা, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সভাপতি অধ্যাপিকা রেহানা, এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, সংগঠনের মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া প্রমুখ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।