Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সীমাহীন ভোগান্তি

ঈদ যাত্রা শুরুর আগেই ঢাকার সড়ক ও মহাসড়কে যানজট

| প্রকাশের সময় : ১৯ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নূরুল ইসলাম : ঈদে ঘরমুখি যাত্রীদের ভাবনার কারন এখন মহাসড়কের যানজট। রাজধানী থেকে শুরু হয়ে এ যানজট থমকে আছে জাতীয় মহাসড়কগুলোতে। এতে করে ঢাকা থেকে ছেড়ে গিয়ে আবার ঢাকায় ফিরতে একটা বাসের সময় লাগছে ২৪ ঘণ্টারও বেশি। তাতে মাথায় হাত বাস মালিকদের। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল এবারের ঘরমুখি যাত্রীদের ভোগান্তির প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে যানজটের জন্য তিনি মহাসড়ককে দায়ী না করে মানুষের মানসিকতাকে দায়ী করেছেন।
সারাদেশের সড়ক-মহাসড়কের বেহাল অবস্থা। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ঈদের আগেই ভাডাচোরা সড়ক-মহাসড়ক মেরামত করার কথা বললেও কার্যত মেরামাতের নামে জোড়াতালির কাজ হয়েছে। কিছু কিছু অংশে এখনও কাজ চলছে। সব মিলে এবার ঈদের ১৫দিন আগে থেকেই ভোগান্তি শুরু হয়ে গেছে। সামনের দিনগুলোতে অপেক্ষা করছে আরও ভয়াবহ অবস্থা।
সর্বশেষ খবর অনুযায়ী গতকালও কোনো কোনো মহাসড়কে ২০/২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট ছিল। ঈদকে কেন্দ্র করে বাড়তি যাত্রীর চাপ বাড়ার আগেই এ যানজট স্বাভাবিকভাবেই মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। এ কারনে অনেকেই সময় শেষ জেনেও  ছুটছেন কমলাপুর রেল স্টেশনে। শেষ চেষ্টা হিসাবে ট্রেনের টিকিট পাওয়া যায় কি না তা দেখছেন।
সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় এবারের ঈদ যাত্রায় দেশের ১৪টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে যানজটের আশঙ্কা করছে। এসব পয়েন্টে যানজট নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়ার কথা। কিন্তু তার আগেই গুরুত্বহীন এলাকাগুলোতেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকছে শত শত যানবাহন। মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,  ঈদে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয় মহাসড়কসহ ৪টি এলাকায়। এগুলো হলো, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক, জয়দেবপুর চৌরাস্তা, বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব স্টেশন ও আশুলিয়া। এ ছাড়া ঢাকার অদূরে আরও ১০টি পয়েন্টে যানজট সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। এগুলো হলো, আশুলিয়ার জিরাবো বাজার, ফ্যান্টাসি কিংডমের সামনে, সাভার বাইপাইল মোড়, গাজীপুরের চন্দ্রা মোড়, কোনাবাড়ি, কালিয়াকৈর, নবীনগর, কাঁচপুর, ভুলতা ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা-গোমতী সেতুর দুই প্রান্ত। কিন্তু বাস্তবে এসব পয়েন্ট ছাড়াও আরও কিছু কিছু পয়েন্টে ভয়াবহ যানজটে আটকে থাকছে যানবাহন। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা যাত্রাবাড়ী থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত ৮ লেনের মহাসড়ক। সায়েদাবাদ বাস স্ট্যান্ড থেকে ছেড়ে একটি বাস কাঁচপুর পর্যন্ত  যেতে সময় লাগছে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা। এর মধ্যে  যাত্রাবাড়ী হানিফ ফ্লাইওভারের নীচ দিয়ে চলতে গিয়ে আধা কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিতে এক ঘণ্টার বেশি সময় লাগছে। পরিবহন মালিকদের অভিযোগ, হানিফ ফ্লাইওভারের নীচের রাস্তাটি বহু আগেই সংস্কারের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করা হলেও  সঠিক সময়ে কাজ হয়নি। বরং ঠিকাদার রাস্তা সংস্কারের নামে বড় বড় গর্ত করে রেখেছে। এতে করে ওই রাস্তা দিয়ে আর যানবাহন চলাচল করার মতো অবস্থা নেই। ভুক্তভোগিদের মতে, ঈদকে সামনে রেখে এটা করা মোটেও উচিত হয়নি। ঈদে যাত্রীদের চাপ বাড়লে অবস্থা আরও ভয়াবহ হবে। তখন সায়েদাবাদ থেকে চট্টগ্রাম বা কুমিল্লামুখী বাস কাঁচপুর সেতু পার হতে সময় লাগবে ৪/৫ ঘণ্টা। এরপর মেঘনা ও গোমতী সেতু পার হতে লেগে যাবে আরও দ্বিগুণ সময়। অন্যদিকে, মহাখালী টার্মিনাল থেকেও বাস ছেড়ে উত্তরা পার হতে সময় লাগছে ২ ঘণ্টা। এরপর গাজীপুর অংশে চন্দ্রা পর্যন্ত গেলেই সব যানবাহন যানজটে আটকে থাকছে। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গত এক মাস ধরেই দীর্ঘ যানজট হচ্ছে। অন্যদিকে, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কেরও বেহাল দশা। এ মহাসড়কের গাউসিয়া অংশে ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজের জন্য দীর্ঘ যানজট লেগেই আছে দ’ুসপ্তাহ ধরে। গাবতলী টার্মিনালে থেকে বাসগুলো নির্বিঘেœ ছেড়ে যেতে পারলেও সব বাস আটকে থাকছে গাজীপুরের চন্দ্রা গিয়ে। এসব কারনে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেতে যেখানে চার ঘণ্টা সময় লাগার কথা সেখানে লাগছে ১২ ঘণ্টা। ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে যেতে ১২/১৪ ঘণ্টা সময় লাগছে। ঈদ যাত্রা শুরু হলে দ্বিগুণ বা তিনগুণ সময় লেগে যেতে পারে। তাতে মানুষের ভোগান্তির সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে খোদ বাস মালিকদের ধারণা। মহাখালী টার্মিনালের এক বাস মালিক বলেন, আমাদের গাড়িগুলো ফিরতে ফিরতে ২৪ ঘণ্টা সময় এখনই লাগছে। আগামী সপ্তাহে তো সেগুলো দুদিনেও ফিরতে পারবে না। তখন যাত্রীদের অবস্থা কি দাঁড়াবে?



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ