পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অবাধে দখল ও কেটে-খুঁড়ে সাবাড় করছে ভূমিদস্যুরা : চট্টগ্রাম অঞ্চলে শতাধিক পাহাড়ে ১৮ লাখ মানুষের বিপজ্জনক বসবাস : ভূমিকম্পের ঝুঁকি বাড়ছে : টেকসই বসতির কারণে উপজাতীয়রা নিরাপদ : অনন্য নজির পাহাড়-বান্ধব নেপাল : ‘পাহাড়-পর্বত হচ্ছে পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষায় পেরেক’
শফিউল আলম : পাহাড় নেই পাহাড়ের জায়গায়। নেই টিলা। পাহাড়ের উপত্যকাও নেই। একেকটি পাহাড়-টিলা ছয় মাস, এক বছর, কী দুই বছর সময়ের ব্যবধানে ‘সমতল’ হয়ে যাচ্ছে। পবিত্র কোরআনে পাহাড়কে পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষাকারী ‘পেরেক’ হিসেবে বর্ণিত হয়েছে। বিজ্ঞানীদের কাছেও পাহাড় মানে পৃথিবীর ‘পিলারে’র গুরুত্ব। বাংলাদেশে পাহাড় কাটা নিষিদ্ধ। খুব সহজ এই কথাটি আইনে আছে। তবে বাস্তব প্রয়োগের দেখা মিলে না কোথাও। পাহাড়কে ঘিরে অহরহ চলছে দখল-বেদখলের ভয়ানক কানামাছি খেলা। অবাধে কেটে-খুঁড়ে সাবাড় করা হচ্ছে পাহাড়গুলো। এর পেছনে বরারবই বুক ফুলিয়ে তৎপর ভূমিদস্যু চক্র। ওরা থাকে সবসময়ই ধরাছোঁয়ার বাইরে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নির্বিকার। আর এমনিভাবেই দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত বন্দর নগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রতিনিয়ত সবার চোখের সামনেই পাহাড়-টিলারাশির ধ্বংসলীলা চলছে। অথচ পাহাড়, বন-জঙ্গল, বঙ্গোপসাগর, পাহাড়ি খরস্রোতা নদ-নদী, হ্রদ, সবুজ উপত্যকা মিলে চট্টগ্রাম অঞ্চলটি হচ্ছে প্রকৃতির সুনিপূণ হাতে গড়া অপরূপ ঠিকানা ‘প্রাচ্যের রাণী’। যার অনেকটাই এখন মলিন ও লুপ্তপ্রায়। এ ধরনের বিরল ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন অঞ্চলকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ‘পরিবেশ-প্রতিবেশ সঙ্কটাপন্ন এলাকা (ইকোলজিক্যালি ক্রিটিক্যাল)’ হিসেবে সুরক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। তবে বাংলাদেশে সেই উদ্যোগ অনুপস্থিত। ব্রিটিশ আমলে দেড়শ’ বছর পূর্বে বন্দরনগরীর কেন্দ্রস্থলে প্রতিষ্ঠিত চিটাগাং ক্লাবের পাহাড় সুরক্ষায় চা বাগান ও বন সৃজন করা হয়। নগরীর টাইগার পাস পাহাড়ের গভীর বনে তখন বাঘ দৌঁড়ে বেড়াতো। চট্টগ্রামের এসব পাহাড়ের চিহ্ন আজ মুছে যেতে বসেছে।
শুধুই চট্টগ্রাম নয়; পাহাড়, টিলা, পাহাড়ের উপত্যকাসমূহ একের পর এক নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে সিলেট, মৌলভিবাজার এবং কুমিল্লায়ও। আগ্রাসী ভূমিদস্যুরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দিনে এনে দিনে খাওয়া ছিন্নমূল নিরীহ গরিব মানুষকে ঠেলে দিয়েছে, ন্যাড়া ও কেটে-খুঁড়ে দীর্ণ-বিদীর্ণ নাজুক হয়ে থাকা পাহাড়-টিলার গায়ে কিংবা পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসের মধ্যেই। বিনিময়ে ‘ভাড়া’ আর ‘চাঁদা’র নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তার ভাগ চলে যাচ্ছে অসৎশ্রেণীর কর্তা-নেতাদের পকেটেও। মাঝেমধ্যে বিশেষত বর্ষা মৌসুম এলে কোথাও কোনো পাহাড়-টিলা ধসে গিয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটলে কিছুদিন চলে হৈচৈ দৌঁড়-ঝাঁপ। তারপর আবার সবকিছু জাদুর কলকাঠির জোরে ‘ম্যানেজ’ হয়ে যায়। কোনো ‘সমস্যা’ হয় না পাহাড়-খেকো ভূমিদস্যুদের।
এদিকে পরিবেশ-প্রতিবেশ বিশেষজ্ঞ, সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় অভিজ্ঞজনেরা জানান, চট্টগ্রাম অঞ্চলে নির্বিচারে পাহাড়-টিলারাশিকে বিক্ষত-বিক্ষত করে ফেলা হয়েছে। এর জন্য সরাসরি দায়ী অতিলোভী ও অপরিণামদর্শী একশ্রেণীর মানুষের ধ্বংসের কালোহাত। কেননা একটি পাহাড় বা টিলার স্বাভাবিক ‘ভূমিরূপ’ বা গঠন বৈশিষ্ট্য কেটে-খুঁড়ে পরিবর্তন করা হলেই সেখানে পরিবেশগত ভারসাম্য বিপন্ন হয়ে পড়ে। আর সেই ধ্বংসলীলার কারণেই ভারসাম্য হারা পাহাড় তথা প্রকৃতি তার আপন নিয়মের ধারায় উল্টো প্রতিশোধে নিচ্ছে। নির্মম হলেও পাহাড় ধস, ভূমিধস তার অন্যতম এবং স্বাভাবিক নজির। তা আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। সরকারি প্রশাসনের বিভিন্ন সূত্র ও বেসরকারি সংস্থা সূত্রে জানা যায়, বন্দর নগরীসহ সমগ্র বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে বর্তমানে একশ’রও বেশি পাহাড়ে অন্তত ১৮ লাখ মানুষ বিপজ্জনক অবস্থায় বসবাস করছে। এরমধ্যে চট্টগ্রাম মহানগরীর লালখান বাজার, খুলশী, বায়েজিদ, পাহাড়তলী, জেলার হাটহাজারী, ফটিকছড়ি, রাঙ্গুনিয়া, রাউজান, মিরসরাই, সীতাকুÐ, চন্দনাইশ, লোহাগাড়া, সাতকানিয়া, বাঁশখালী এবং কক্সবাজার শহরসহ জেলা, তিন পার্বত্য জেলা বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে ক্ষতবিক্ষত পাহাড়-টিলার ধারে-কিনারে অগণিত মানুষ বসবাস করছে। যাদের বেশিরভাগই নিম্নআয়ের ছিন্নমূল মানুষ। তারা অধিকাংশই জানে না পাহাড়-টিলা ধ্বংস করে কৃত্রিমভাবে সমতল করা হলেও তা মনুষ্য বসতির ক্ষেত্রে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ এমনকি প্রাণঘাতি হয়ে উঠতে পারে। এতে করেই জরাজীর্ণ ও বিদীর্ণ করে দেয়া পাহাড়ের কোলে নেমে আসছে ভয়াবহ বিপর্যয়।
কী গুরুত্ব পাহাড়ের
পাহাড়ের গূঢ় তাৎপর্য ও গুরুত্ব সম্পর্কে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান এবং ভূমিকম্প প্রকৌশল গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) পরিচালক অধ্যাপক ড. মোঃ আবদুর রহমান ভূঁইয়া গতকাল ইনকিলাবকে বলেছেন, পাহাড়গুলো পৃথিবীর ভারসাম্য ও স্থিতিস্থাপকতা রক্ষাকারী পিলার হিসেবে কাজ করছে। পাহাড় ধ্বংস বা নির্মূল হলে সেই ভারসাম্য বিনষ্ট হয়। পাহাড় কাটা আইনত নিষিদ্ধ। চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাহাড়গুলোর বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে। এসব পাহাড় পাথুরে নয়; বরং বালুকাময় ও নরম মাটির। তাই বসবাসের ক্ষেত্রেও বিশেষত্ব রক্ষা করতে হবে। পাহাড়ের মাটির গঠন অনুযায়ী বাড়িঘর, স্থাপনা তৈরি করতে হবে। এর ভূমিরূপ ব্যাহত হয় এমনটি করা যাবে না। তিনি বলেন, পাহাড় প্রকৃতিগতভাবে সৃষ্টি। একে ধ্বংস হতে দেয়া হলে যেভাবে পাহাড় ধসে হতাহতের ঘটনা ঘটছে পরিণতি এরচেয়েও ভয়াবহ হতে পারে। পাহাড়ের সাপোর্ট না থাকলে ভূমিকম্পের প্রকোপ এবং এতে ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি বেড়ে যাবে। তাছাড়া বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়বে বিভিন্নভাবে। পাহাড় বা প্রকৃতিকে ‘প্রাকৃতিক’ থাকতে না দিয়ে ধ্বংস করে দিলে সে তো প্রতিশোধ নেবেই। পাহাড়কে পাহাড়ের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী রক্ষা করতেই হবে, এর কোনো বিকল্প নেই এ ব্যাপারে জোরালো তাগিদ দিয়ে ড. আবদুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, এরজন্য সকল সরকারি দপ্তরের সমন্বিত উদ্যোগ অপরিহার্য। আমাদের সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। তাছাড়া পাহাড় কেটে ঝুঁকি নিয়ে বসবাসরত নিম্নআয়ের মানুষদের বিপদ সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। এর দায় আমাদের সকলের।
বিশিষ্ট আইনজীবী মানবাধিকার সংগঠক অ্যাডভোকেট এএম জিয়া হাবীব আহসান ইনকিলাবকে জানান, পরিবেশ আইনে পাহাড় কাটা-ছাঁটা নিষিদ্ধ। আইন লঙ্ঘনের দায়ে সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত কারাদÐ, এক কোটি টাকা অর্থদÐ, পাহাড় কাটলে হাতেনাতে আটক যন্ত্র-সামগ্রী জব্দ, নিষেধাজ্ঞা, পাহাড়কে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনার বিধি-বিধান রয়েছে। তবে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে সীমিত ও পরিকল্পিতভাবে পাহাড় কাটার সুযোগ রয়েছে। আর সেই সুবাদে পাহাড়খেকো ভূমিগ্রাসীরা কাটছে পাহাড়। দেখা গেছে, কোথাও একটি পাহাড়ের কিছু অংশ কাটার অনুমতি থাকলে তাকে পুঁজি করে আরও ৮-১০টি পাহাড়-টিলা কেটে-ছেঁটে ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে। বিশেষত একশ্রেণির ঠিকাদার তাই করছে। তিনি বলেছেন, পাহাড় কাটা কার্যকরভাবে বন্ধ হচ্ছে না। এর পেছনে পরিবেশ আইনের দুর্বলতা রয়েছে। চট্টগ্রামে পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যালয়টিও নির্মিত হয়েছে পাহাড়কে কেটে-খুঁড়ে। আইনের ফাঁক-ফোঁকড় গলিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছে পাহাড় কেটে ধ্বংস করেও। আইনের প্রয়োগের চেয়ে মহড়া চলে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ এ জে এম গোলাম রাব্বানী ইনকিলাবকে জানান, পাহাড়-টিলারাশি হচ্ছে প্রকৃতির অপার দান। এগুলো দুর্যোগ রোধ ও পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা করে। সেই পাহাড় যখন ধ্বংস করা হয় তখন প্রাকৃতিক প্রতিশোধ নেমে আসে। আমাদের অনেক সুশোভিত পাহাড় নির্মূল করে ফেলা হয়েছে। আর যাতে ধ্বংসলীলা না হয় এরজন্য এখনই সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। অন্যথায় দুর্যোগ-দুর্বিপাক আরও বৃদ্ধি পাবে।
পাহাড় বিশেষজ্ঞরা হতবাক
আন্তর্জাতিক পাহাড় বিশেষজ্ঞরা বিপুল আগ্রহ নিয়ে আসেন বাংলাদেশের পাহাড় দেখতে। ঘুরে যান চট্টগ্রাম, বান্দরবান ও রাঙ্গামাটির পাহাড়ি এলাকা। বিশেষজ্ঞরা কর্মশালাও করেন। তারা বাংলাদেশের পাহাড় ও টিলারাশি এখানে-সেখানে কেটে-খুঁড়ে ধ্বংসের ভয়াবহ চিত্র স্বচক্ষে দেখে রীতিমতো হতবাক হয়ে গেছেন। কয়েক বছর আগের কথা। ‘ইসিমোড’-এর আন্তর্জাতিক পাহাড়-পর্বত বিজ্ঞানী ও গবেষকদের সাথে ইনকিলাবের এই বিশেষ প্রতিনিধির আলাপচারিতার সুযোগ ঘটে। তারা গভীর দুঃখ-পরিতাপের সাথে বলছিলেন, চট্টগ্রাম অঞ্চলে যেখানেই গিয়েছি দেখতে পেয়েছি কী ভয়াবহ প্রক্রিয়ায় নয়নাভিরাম সারি সারি পাহাড় কেটে-খুঁড়ে ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে। পাহাড় থাকছে না আর পাহাড়ের জায়গায়। সেখানে কৃত্রিম সমতলের উপর অপরিকল্পিত ও যথেচ্ছ বাড়িঘর তৈরি করে নিম্নআয়ের মানুষ বসবাস করছে। কিন্তু সেসব বসতি মোটেও টেকসই বলা যাবে না। বরং বসবাসের ক্ষেত্রে এমনকি প্রাণহানির মতো ঝুঁকি সৃষ্টি করে আছে। আমরা মনে করি, পাহাড়-পর্বতকে পাহাড়ের মতোই ‘প্রাকৃতিক’ থাকতে দিন। ধ্বংস নয়; পাহাড়গুলোর পরিকল্পিত সুরক্ষা জরুরি। সরকারি-বেসরকারি সকল মহলকে মিলিতভাবে সেই উদ্যোগ এগিয়ে নিতে হবে।
‘ইসিমোড’ হচ্ছে (সংক্ষেপে ‘আন্তর্জাতিক পর্বত সংস্থা’) ‘আন্তর্জাতিক সমন্বিত পর্বত উন্নয়ন সংস্থা’। এ সংস্থার সদর দপ্তর বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ নেপালের কাঠমান্ডুতে। হিন্দুকুশ-হিমালয় পাদদেশীয় অঞ্চলে অবস্থিত ৮টি দেশের এটি আন্তঃসরকার প্রতিষ্ঠান। সদস্যভূক্ত ৮ দেশ হচ্ছে আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভূটান, চীন, ভারত, মিয়ানমার, নেপাল ও পাকিস্তান। পাহাড়-পর্বতমালার পরিবেশ-প্রতিবেশ সুরক্ষা, উন্নয়ন, পাহাড়ের বাসিন্দাদের জীবনমান উন্নয়নে সহযোগিতা, জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে চলার দিক-নির্দেশনা ইত্যাদি বিষয়ে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা বিনিময়কে ইসিমোড অগ্রাধিকারমূলক বিবেচনা করে থাকে।
বিশেষজ্ঞ ও পর্যটকরা জানান, পাহাড়-পর্বত ও টিলারাশি সুরক্ষায় এমনকি উন্নয়নে বিশ্বে অতুলনীয় এক নজির স্থাপন করেছে ‘পাহাড়-পর্বতের দেশ’ ও ‘হিমালয় কন্যা’ খ্যাত নেপাল। দেশটিতে পাহাড় রক্ষা সর্বাধিক গুরুত্ব পেয়ে থাকে। বিশেষ করে অনেকগুলো উঁচু পাহাড়-পর্বতের শানুদেশ ও ঢালুতে নেপাল নিবিড় পরিকল্পনা নিয়ে ‘¯েøাপ’ সৃষ্টি করেছে। যা সিঁড়ির ধাপের মতো। নেপালে ¯েøাপ এগ্রিকালচার ল্যান্ড টেকনোলজি বা ‘সল্ট’ হিসেবে পরিচিত। সেখানে বিভিন্ন ধরনের প্রচুর মওসুমি ফল-ফসল, ক্ষেত-খামার এবং বনায়ন করা হয়েছে। এতে করে ¯েøাপের মাটি আলগা হচ্ছে না বা সরছে না। বরং মাটিক্ষয় কার্যকরভাবে রোধ করা সম্ভব হচ্ছে। ¯েøাপ অতিক্রম করে বৃষ্টির পানি নিচের দিকে অপসসারণ হচ্ছে। সল্টের কারণে পাহাড় রক্ষার পাশাপাশি এর সুফল ভোগ করছে প্রান্তিক জনগণ তথা কৃষক। সল্টের সফল অভিজ্ঞতায় নেপালে বর্ষায় পাহাড় ধসের ঘটনা নেই বললেই চলে।
পাহাড় বিশেষজ্ঞরা বলেন, নেপালে পাহাড় সুরক্ষার কৌশল বাংলাদেশের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হতে পারে। এরফলে পাহাড় ও পাহাড়ি উঁচু-নিচু ভূমি সংরক্ষণ সহজতর হবে। তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলেন, আমরা নেপালের মতো পার্বত্য চট্টগ্রামেও দেখেছি যে, পাহাড়-পর্বতের ভূ-গাঠনিক বৈশিষ্ট্যের সাথে খাপ খায় এমনভাবেই উপজাতীয় জনগোষ্ঠি তাদের ঘরবাড়ি নির্মাণ করে থাকে। যা মূলত কাঠ ও বাঁশের তৈরি যথেষ্ট হালকা কাঠামো দ্বারা তৈরি। আবার টং ঘরের আদলে। ফলে ঝড়-বর্ষায়ও এসব ঘর টেকসই এবং নিরাপদ। এগুলো ধসে পড়ে না। তিনটি পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ির অনেকগুলো গভীর প্রত্যন্ত এলাকায় বিভিন্ন সময়ে এই প্রতিনিধির পেশাগত প্রয়োজনে পরিভ্রমণের সুযোগ ঘটে। কিন্তু ব্যাতিক্রম বাদ দিলে কোথাও ঝড়-বর্ষায় কিংবা বৈরী আবহাওয়ায় উপজাতীয় জনগোষ্ঠির বাড়িঘর ধসের কথা শোনা যায় না। তারা নিজেদের লাগসই ও টেকসই কৌশলে বসতি তৈরি করে। কিন্তু পাহাড় কেটে ভারসাম্যহীন অবস্থায় নির্মিত ভারী কাঠামোর অনিরাপদ বাড়িঘর ধসে গিয়ে বিপদের আশঙ্কাই থেকে যায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।