Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভ্যাট-কর পুনর্বিবেচনা করা হোক

| প্রকাশের সময় : ১৪ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইফতেখার আহমেদ টিপু
নির্বাচন সামনে রেখে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য অর্থমন্ত্রী ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার মেগা বাজেটের প্রস্তাব করেছেন। দেশবাসীকে উন্নয়নের চমক দেখাতে প্রস্তাবিত বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাবদ ১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বিশাল বাজেটের সিংহভাগ অর্থাৎ ২ লাখ ৩৪ হাজার ১৩ কোটি টাকা ব্যয় হবে অনুন্নয়ন খাতে। বাজেটে নানা খাতে ভ্যাট ও ট্যাক্স বাড়িয়ে আয় দেখানো হয়েছে ২ লাখ ৯৩ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা। আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হওয়ায় এ বাজেটে ১ লাখ ৬ হাজার ৭৭২ কোটি টাকার ঘাটতি দেখানো হয়েছে।
বর্তমান অর্থমন্ত্রীর এটি ১১তম এবং টানা নবম বাজেট উপস্থাপন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের এই বাজেটের আকার দাঁড়িয়েছে চার লাখ ২৬৬ কোটি টাকা, যা দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ বাজেট। অর্থমন্ত্রী এবারের বাজেটকে ‘বেস্ট বাজেট’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। পূর্ববর্তী অর্থাৎ ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল তিন লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা, পরে তা কমে দাঁড়ায় তিন লাখ ১৭ হাজার ১৮০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে বর্তমান বাজেটে ব্যয় বেড়েছে পূর্ববর্তী বাজেটের তুলনায় প্রায় ১৭ শতাংশ এবং সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ২৬ শতাংশ। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ৫৯ হাজার ১৩ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৩৮ শতাংশ বেশি। বরাবরের মতো এবারও বাজেটে আয়ের প্রধান উৎস ধরা হয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআরের আয়কে। লক্ষ্য দুই লাখ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। অন্যান্য উৎসের সব আয় ধরেও বাজেটে ঘাটতি থেকে যাচ্ছে এক লাখ কোটি টাকার বেশি। ঘাটতি মেটানো হবে ব্যাংকিং খাত থেকে নেওয়া ঋণ, সঞ্চয়পত্র বিক্রি এবং বৈদেশিক সহায়তা ও অনুদান থেকে। বাজেটে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। বরাবরের মতো এবারও সরকারি দল ও শরিকদের পক্ষ থেকে উপস্থাপিত বাজেটকে গণমুখী এবং বিরোধী দলগুলোর পক্ষ থেকে গণবিরোধী বাজেট হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
উন্নয়ন বাজেট বা এডিপিতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে যোগাযোগ ও অবকাঠামো উন্নয়নে। পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল, পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ আটটি মেগা প্রকল্পে বড় বরাদ্দ থাকছে। বাড়ছে সামাজিক নিরাপত্তা নেটের আওতাও। এডিপিতে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ রয়েছে যোগাযোগ ও পরিবহন খাতে। এই খাতে বরাদ্দ ৪১ হাজার ৫৩ কোটি টাকা। এর পরই রয়েছে বিদ্যুৎ, শিক্ষা এবং বিজ্ঞান ও তথ্য-প্রযুক্তি খাত। বাজেট নিয়ে এর আগে বিভিন্ন আলোচনায় ১৫ শতাংশ ভ্যাট আদায়ের বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছিল। ব্যবসায়ীরা ভ্যাটের হার কমানোর দাবি জানিয়ে আসছিলেন। অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরাও মনে করছেন, এতে দ্রব্যমূল্য অনেক বেড়ে যেতে পারে। উপস্থাপিত বাজেটে ১৫ শতাংশ ভ্যাটেরই প্রস্তাব করা হয়েছে। তার ওপর আছে ব্যাংকে আবগারি শুল্ক বাড়ানোর বিষয়টি, যা সাধারণ মানুষের কপালেও দুশ্চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে।
তবে শিক্ষা খাতে বাড়তি ব্যয় দেশকে এগিয়ে নেওয়ার পথ দেখাবে। বর্তমান সরকারের উন্নয়নবান্ধব পরিচিতি প্রস্তাবিত বাজেটের মাধ্যমে আরও শক্তিশালী হবে। কিন্তু উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন খাতে ঢালাওভাবে ব্যয় বৃদ্ধি করতে গিয়ে সরকার যেভাবে ভ্যাট ও অন্যান্য কর বৃদ্ধির পথ বেছে নিয়েছে তাতে নির্বাচনী বাজেটের ইমেজ বজায় থাকবে কিনা সংশয় রয়েছে। সরকারের স্কন্ধে যখন পরবর্তী নির্বাচন নিঃশ্বাস ফেলছে ঠিক সেই সময়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট এবং ব্যাংকে টাকা রাখলে করের বোঝা চাপানো কতটুকু যৌক্তিক তা বাজেট পাসের আগে ভেবে দেখতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, প্রস্তাবিত বাজেটে ভ্যাট ও করের যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তা প্রান্তিক মানুষের ওপর চাপবে না। মধ্যবিত্ত ও বিত্তবানদের কাছ থেকে তা আদায় হবে। আক্ষরিক হিসেবে বক্তব্যটি যদি মেনে নেওয়া হয়, সে ক্ষেত্রেও তা সরকারের জন্য কতটা ইতিবাচক হবে তা ভেবে দেখার বিষয়। কারণ দেশে মধ্যবিত্তের ভিত ক্রমান্বয়ে জোরদার হচ্ছে। দেশ যখন মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার পথে, তখন মধ্যবিত্তদের ওপর ভোগান্তি সৃষ্টির কর ও ভ্যাট প্রস্তাবের পরিণতি নিয়ে পূর্বাপর ভেবে দেখা উচিত। প্রস্তাবিত বাজেট ভালো কি মন্দ তা এর বাস্তবায়নের সঙ্গে সম্পর্কিত। এটি কল্যাণকর হবে না জনভোগান্তির কারণ ঘটাবে, তাও বাস্তবায়ন ক্ষেত্রের মুনশিয়ানার ওপর অনেকাংশে নির্ভর করছে।
লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক নবরাজ



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভ্যাট-কর
আরও পড়ুন