পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
৩ থেকে ৪ দিনের মধ্যে দেশজুড়ে বর্ষণের সম্ভাবনা : সুস্পষ্ট লঘুচাপে সাগর উত্তাল : বন্দরে ৩নং সঙ্কেত
শফিউল আলম : দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুমালা ইতোমধ্যে দেশের অর্ধেক জায়গায় বিস্তার লাভ করেছে। এরফলে পঞ্জিকার হিসাবে ঋতুচক্রে বর্ষা মৌসুম দরজায় কড়া নাড়ছে। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুমালা তথা বর্ষাবায়ু ছড়িয়ে পড়লেও গতকাল (শনিবার) পর্যন্ত দেশের কোনো অঞ্চলে সক্রিয় হয়নি। এতে করে অসহনীয় ভ্যাপসা গরমে দেশের প্রায় সর্বত্র হাঁসফাঁস অবস্থা বিরাজ করছে। তবে মৌসুমী বায়ু ধীরে ধীরে সক্রিয় হওয়ার আলামত শুরু হয় গত সন্ধা থেকে। বাতাসে আর্দ্রতার পরিমান বেশি থাকায় মানুষ মাত্রাতিরিক্ত হারে ঘামাচ্ছে আর হাঁপাচ্ছে। দ্রæত কাহিল হয়ে পড়ছেন বিশেষত রোজাদাররা। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল দিনাজপুরে ৩৭.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় ঢাকায় সর্বোচ্চ ও সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল ৩৩.৯ ও ২৬.৬ ডিগ্রি সে.। তবে বর্তমানে তাপদাহের এ অবস্থাকে জ্যৈষ্ঠের ‘স্বাভাবিক’ গরম বলছে আবহাওয়া বিভাগ। মাঝেমধ্যে আকাশে মেঘের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। কিন্ত প্রত্যাশিত বৃষ্টির দেখা নেই। বরং মেঘ-ভাঙা রোদে জ্যৈষ্ঠের শেষ দিকে এসেও গরমের তেজ যেন আরও বেড়েই চলেছে। বিক্ষিপ্তভাবে কোথাও কোথাও দমকা হওয়ার সাথে বৃষ্টি ঝরছে বজ্রবৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু তাতে গরমের কষ্ট লাঘব হচ্ছে না। সাময়িক বৃষ্টি থামলেই ফের ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ মানুষ। গরমের সাথে পাল্লা দিয়ে বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও লোডশেডিংয়ের যাতনায় মাহে রমজানে জনদুর্ভোগ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এদিকে গতকাল আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ সূত্র জানায়, বর্ষারোহী দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুমালা আগামী দুই দিনের মধ্যে সারাদেশে বিস্তৃত হতে পারে। ক্রমশ বর্ষার আবহ সৃষ্টি হচ্ছে। আগামী ৩ থেকে ৪ দিনের মধ্যে দেশজুড়ে কম-বেশি বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি গত সন্ধায় ঘনীভূত হয়ে সুস্পষ্ট লঘু চাপে পরিণত হয়েছে। এটি আরো ঘুনীভূত মৌসুমী নি¤œচাপে পরিণত হতে পারে। এর প্রভাবে বাংলাদেশ ও আশপাশ অঞ্চলে এ সপ্তাহের শেষ দিকে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। সুস্পষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে সাগর কিছুটা উত্তাল থাকায় গতকাল থেকে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৩নং স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে।
জ্যেষ্ঠের শেষ সপ্তাহে এসেও তাপদাহের দাপট কমছে না। বর্ষার মৌসুমি বায়ুর আগমন সত্তে¡ও সক্রিয় না হওয়ার কারণে দেশের আবহাওয়ামÐলে দীর্ঘদিনের বিরাজমান ভ্যাপসা গরম ও গুমোট ভাব কাটছেই না। মাঝেমাঝে মেঘ-ভাঙা রোদ বাদে সকাল-সন্ধ্যা সূর্যের প্রখর তেজ। আর এতেই অসহনীয় ভ্যাপসা গরম। ঘরে-বাইরে সবখানেই অস্থিরতায় হাঁসফাঁস। বাসাবাড়িতে ফ্যানের বাতাসও তপ্ত। ঘেমে-নেয়ে মানুষ একাকার। তীর্যক সূর্যের দহনে দিনমান অতিবাহিত হচ্ছে। দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার সাথে রাতের সর্বনি¤œ তাপমাত্রাও বেশ উঁচুতে। বিশেষ করে রোজা পালনকালে মানুষ ঘামে দুর্বল হয়ে পড়ছে। গরমে যখন মানুষের পানির চাহিদা বেড়েই চলেছে, তখন প্রায় সর্বত্র পানির সঙ্কট চলছে। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কারণে গভীর-অগভীর অনেক নলকুপে পানি উঠছে না। এ অবস্থায় বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট বেড়ে গেছে।
অসহনীয় ঘাম ও ভ্যাপসা গরমের কারণে ডিহাইড্রেশনে শরীর দ্রæতই কাহিল হয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় আয়-রোজগারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে দিনে এনে দিনে খাওয়া দিনমজুর ও নিম্নআয়ের শ্রমিক-কর্মজীবীরা। সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া, ভাইরাস জ্বর, পেটের পীড়াসহ মৌসুমি রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু-বৃদ্ধসহ অনেকেই। চিকিসৎকরা এ সময়ে ইফতারের পর থেকে সাহরীর সময় পর্যন্ত বেশি করে ঘন ঘন বিশুদ্ধ পানি পানের পরামর্শ দিয়েছেন। তবে কড়া সতর্ক করেছেন, রাস্তাঘাটের দূষিত পানীয় বা ফল-ফলারি খেয়ে মারাত্মক বিপদ ঘটতে পারে।
এদিকে আবহাওয়া বিভাগ জানায়, পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন ভারতের উত্তর অন্ধ্র প্রদেশ এবং দক্ষিণ উড়িষ্যা উপকূলের উত্তর বঙ্গোপসাগরে এলাকায় একটি লঘুচাপের সৃষ্টি হয়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু বরিশাল, ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগ পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছে। আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের অনেক জায়গায়, ঢাকা, খুলনা, রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, নোয়াখালী, রংপুর, দিনাজপুর ও সৈয়দপুর অঞ্চলসমূহের উপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা কিছু কিছু অঞ্চলের উপর থেকে প্রশমিত হতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে। পরবর্তী ৭২ ঘণ্টায় দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু সারাদেশে বিস্তার লাভ করতে পারে এবং বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে।
আবহাওয়ার সতর্কবার্তায় বলা হয়, ভারতের উত্তর অন্ধ্র প্রদেশ ও দক্ষিণ উড়িষ্যা উপকূলের অদূরে পশ্চিম মধ্য-বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় একটি লঘুচাপ তৈরি হয়েছে। এটি আরও ঘনীভূত হতে পারে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা তৈরি হচ্ছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৩নং স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
মৌসুমি নি¤œচাপ হচ্ছে : বর্ষণের সম্ভাবনা
সর্বশেষ গতকাল সন্ধ্যায় আবহাওয়া বিভাগ জানায়, ভারতের উত্তর অন্ধ্র প্রদেশ-দক্ষিণ উড়িষ্যা উপকূলের অদূরে পশ্চিম মধ্য-বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপ হিসেবে পশ্চিম মধ্য-বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে মৌসুমি নি¤œচাপে পরিণত হতে পারে। এর প্রভাবে প্রচুর মেঘমালা তৈরি হয়েছে এবং ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সাথে দেশের বিভিন্ন এলাকাভেদে তাপমাত্রা ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সে. পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুমালা বরিশাল, ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগ পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছে। এ অবস্থায় ধীরে ধীরে সক্রিয় হতে শুরু করেছে প্রত্যাশিত মৌসুমি বায়ু আর বর্ষণ। এরআগে একটি লঘুচাপ থেকে নি¤œচাপ হয়ে পরবর্তীতে গত ৩০ মে ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’য় পরিণত হয়। তবে এটি বর্ষার বর্ষণবাহী মৌসুমি নি¤œচাপে পরিণত হতে পারে।
আজ (রোববার) সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে জানা গেছে, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। ঢাকা, ময়মনসিংহ, ফেনী, সিলেট, রাজশাহী, পাবনা, সৈয়দপুর, কুষ্টিয়া ও ভোলা অঞ্চলসমূহের উপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তবে তা প্রশমিত হতে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সে. হ্রাস পেতে পারে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় আবহাওয়ার সামান্য পরিবর্তন হতে পারে। গত সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ঈশ্বরদীতে ৩৭ ডিগ্রি সে.। এ সময় ঢাকায় সর্বোচ্চ ও সর্বনি¤œ তাপমাত্রা যথাক্রমে ৩৬ (তাপপ্রবাহ) এবং ২৬.৬ ডিগ্রি সে., চট্টগ্রামে ৩৫.৭ ও ২৬.৪ ডিগ্রি সে.। এ সময়ে দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয় শ্রীমঙ্গলে ৪৭ মিলিমিটার।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।