পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার ঃ ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকতেই চালু হয়েছে বেশ কিছু অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন পাবলিক টয়লেট। এ টয়লেটগুলো ব্যবহার কারে ইতোমধ্যে নগরবাসীর মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। গতানুগতিক পাবলিক টয়লেটের কথা মনে আসতেই অনেকের মনে ভেসে উঠে স্যাতস্যাতে নোংরা আবর্জনা পূর্ণ কোন ময়লার বাগাড়ের কথা। ঢাকা শহরের পাবলিক টয়লেটের অভিজ্ঞতা নগরবাসীর কাছে মোটেও সুখকর নয়। আশ-পাশ দিয়ে হেঁটে গেলেই উটকো গন্ধ জানান দেয় এখানে কোথায়ও পাবলিক টয়লেট রয়েছে। এ উটকো গন্ধ থেকে পরিত্রাণ পেতে নগরবাসী এগুলোগে এড়িয়ে চলেন। অনেক সময় দেখা যায়, মহিলা টয়লেট থেকে বের হচ্ছেন পুরুষ। এমনকি মহিলা টয়লেটের বাইরে লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছে পুরুষ, আবার পুরুষ টয়লেট থেকে বের হচ্ছেন মহিলা। পাবলিক টয়লেটগুলোর এই দুর্দশা এবং সেই উটকো গন্ধ ও ময়লা আবর্জনা থেকে নাগরবাসীকে রেহাই দিতেই ঢাকার দুই কর্পোরেশনের বিভিন্ন স্থানে ইতোমধ্যে উদ্বোধন করা হয়েছে বেশ কিছু পাবলিক টয়লেট।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) ফার্মগেট ইন্দ্রিরা রোড এলাকায় চোখে পড়েছে আধুনিক পাবলিক টয়লেট। এই টয়লেটে প্রবেশের মুখে নাকে এলো পারফিউমের ঘ্রাণ। চারিদিকে রঙিন আলোকচ্ছটা। পায়ের জুতা খুলেই এ টয়লেটে প্রবেশ করতে হয়। ভেতরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, কোনো ধরনের ময়লা নেই। মাথার উপরে ঘুরছে সিলিং ফ্যান।
এসব পাবলিক টয়লেটে রয়েছে নারী, পুরুষ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য পৃথক ব্যবস্থা। পৃথক লকার ও হাত ধোয়ার জন্য পৃথক স্থানসহ লিক্যুইড হ্যান্ডওয়াশ, বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা। পাঁচ টাকার রশিদ গ্রহণ করেই সেবা মিলবে এসব টয়লেটে।
গোসলের সু-ব্যবস্থা রয়েছে, এই ক্ষেত্রে খরচা করতে হবে ১০টাকা। শুধুমাত্র ওয়ান টাইম গøাস এক টাকা দিয়ে সংগ্রহ করলেই বিশুদ্ধ পানি খাবার ব্যবস্থা রয়েছে এখানে।
চারিদিকে উন্নত মানের গøাস, সাবান, হ্যান্ডওয়াশ ও উন্নত মানের কমোড। এসব দেখে মনে হবে অভিজাত হোটেলের কোনো টয়লেট। একজন সেবা গ্রহণ করলেই সঙ্গে সঙ্গে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। সেবার মান অক্ষুন্ন রাখার জন্য ১০জন পরিচ্ছন্ন কর্মী শিফটিং ওয়াইজ দায়িত্ব পালন করছেন। সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করার জন্য টয়লেটের প্রবেশদ্বারে রয়েছে সিসি ক্যামেরা। নামাজ ও ওজুর ব্যবস্থাও রয়েছে এখানে। তবে আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল মানুষজন বিনামূল্যে এখান থেকে সেবা গ্রহণ করতে পারবেন। প্রতিবন্ধীদের জন্য রয়েছে উন্নত মানের কমোড। এক সঙ্গে মোট ১০জন সেবা গ্রহণ করতে পারবেন এখানে।
ফার্মগেট ইন্দিরা রোড আধুনিক গণশৌচাগারের কনস্ট্রাকশনের কাজ করছে ইউনিক ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি নামে একটি প্রতিষ্ঠান। কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে প্রধান তত্ত¡াবধায়কের দায়িত্বে রয়েছেন লুকমান হাকিম। তিনি বলেন, পাবলিক টয়লেটিতে পুরুষ, মহিলা ও প্রতিবন্ধীদের আলাদা ব্যবস্থা আছে। টয়লেটটি সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। পরিষ্কারের জন্য সার্বক্ষণিক তিন শিফটে ১০জন কর্মী কাজ করছে। অনেকে টয়লেট ব্যবহার করে খুশি। অনেকে বাথরুমতো ব্যবহার করে, আবার কেউ কেউ দেখতেও আসে।
জনসাধারণের ভোগান্তির কথা চিন্তা করেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। নগরীতে প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখের বেশি মানুষের বসবাস। অথচ পাবলিক টয়লেটের সংখ্যা মাত্র ৬৯টি। অর্থাৎ প্রতি সোয়া দুই লাখ মানুষের জন্য মাত্র একটি পাবলিক টয়লেট ব্যবহার করছেন। এসব পাবলিক টয়লেটের মধ্যে ৯১ শতাংশই ব্যবহার অনুপযোগী মানুষ যেতে ভয় পান। নেতিবাচক অভিজ্ঞতা থেকে নগরবাসীকে মুক্তি দিতেই এ আধুনিক পাবলিক টয়লেট।
ফার্মগেটের ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতাল সংলগ্ন পার্কসহ মহাখালীর ওয়াসা পাম্প সংলগ্ন স্থান এবং শ্যামলী শিশু পার্কে আধুনিক টয়লেটগুলো ইতোমধ্যে উদ্বোধন করা হয়েছে।
টয়লেটের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এসব পাবলিক টয়লেটগুলোতে বিশেষ করে সকালের দিকে চাপটা বেশি থাকে। এছাড়া দুপুর এবং সন্ধ্যায়ও কিছুটা চাপ থাকে।
আধুনিক ফিটিংস এবং উন্নত সুবিধার কারণে এসব টয়লেটে সেবা গ্রহণকারীরাও অনেক খুশি। তবে এই সেবা কতদিন চলমান থাকবে তা নিয়েও ব্যবহারকারীদের মধ্যে রছেয়ে ব্যপক শঙ্কা।
শ্যামলী শিশু পার্কে আধুনিক টয়লেট ব্যবহারকারী মিজানুর রহমান বলেন, বর্তমানে অধুনিকভাবে নির্মীত পাবলিক টয়লেটগুলোতে যে সব আধুনিক সুযোগ সুবিধা রয়েছে, তা আমাদের অনেকের বাসা-বাড়িতেও নেই। তবে এই সেবা কতদিন থাকে সেটাই এখন দেখার বিষয়।
নগরীরর স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন, ঢাকা ওয়াসা এবং ওয়াটার এইড যৌথভাবে এ টয়লেটগুলো নির্মাণ করে যাচ্ছে।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে (ডিএনসিসি) আরও ১২টি আধুনিক পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করবে বলে জানা গেছে। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে দু›টি আধুনিক পাবলিক টয়লেট উদ্বোধন করা হয়েছে।
শুধু উত্তর সিটি কর্পোরেশন নয় দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনেও ১০০টি আধুনিক টয়লেট নির্মাণ করা কাজ হাতে নিয়েছে। ইতোমধ্যেই সায়েদাবাদ, পল্টন এলাকায় ৮টি পাবলিক টয়লেট সর্ব সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। ২০১৭ সালের মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ১০০টি উন্নতমানের আধুনিক পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করার ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। স্থান ও মানুষের ব্যবহারের কথা চিন্তা করেই এসব টয়লেটের ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। ৫০ লাখ টাকা থেকে শুরু করে কোটি টাকা পর্যন্ত খরচা করে এসব টয়লেট নির্মাণ করা হচ্ছে।
সেবার মান অক্ষুন্ন রাখতেও নেয়া হয়েছে পরিকল্পনা। আধুনিক টয়লেটগুলোর মান নিশ্চিত করতে কমিউনিটি ভিত্তিক কিছু কর্মসূচিও গ্রহণ করা হবে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল বলেন, পাবলিক টয়লেটের বিষয়ে নগরবাসীর নেতিবাচক অভিজ্ঞতা রয়েছে। আমরা এ ধারণার পরিবর্তন করতে চাই। ইতোমধেই ৮টি আধুনিক টয়লেট উদ্বোধন করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ১০০টি আধুনিক পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হবে। সেবার মান নিশ্চিত করতে কমিউনিটি ভিত্তিক কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। যাতে করে এসব টয়লেটগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা যায়। তিনি আরও বলেন, আমার বিশ্বাস অভিজ্ঞতার পরিবর্তন করতে পারলেই এসব টয়লেট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকবে। কারণ টয়লেটের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা দেখেই নোংরা করতে বিবেকে বাঁধা দেবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।