পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চীন ও ভিয়েতনামের মতো দেশেও সুযোগ আছে উদ্যোগ নেই
মিজানুর রহমান তোতা : দেশের নদ-নদী, খাল-বিল, পুকুর ও জলাশয় প্রায় পানিশূন্য হচ্ছে ক্রমাগতভাবে। নানা জাতের প্রাকৃতিক মাছের দুস্প্রাপ্যতা বাড়ছেই। নিকট অতীতেও হাতের নাগালেই পাওয়া যেত দেশি প্রজাতির সুস্বাদু মাছ আর মাছ। এখন কয়েকটি বাজার ঘুরেও দেশি মাছের দেখা মেলে না। বেশীরভাগই পাওয়া চাষ করা মাছ। তাতে তেমন স্বাদ নেই। তবুও মাছের নামটি অন্তত খাবারের তালিকায় থাকছে কোনরকমে। যে হারে জনসংখ্যা বাড়ছে, তাতে অদূর ভবিষ্যতে তাও কঠিন হবে এমন আশঙ্কা প্রবল। অথচ দেশের বিল-বাওরে চীন ও ভিয়েতনামের মতো ‘কম্পার্টমেন্টাইলাইজেশন’ পদ্ধতিতে লাগসই ও বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে চাহিদা পুরণসহ মৎস্য সেক্টরে বিপ্লব ঘটানোর অফুরন্ত সুযোগ রয়েছে। কিন্তু সুযোগ কাজে লাগানোর উদ্যোগ নেই। এই তথ্য বিল-বাওর উন্নয়ন প্রকল্প ও মৎস্য অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল সূত্র এবং সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের।
সূত্র জানায়, চীন ও ভিয়েতনামে প্রতি হেক্টর জলাশয়ে মাছ উৎপাদন হচ্ছে ১০ মেট্রিক টন। আর বাংলাদেশে উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ১ মেট্রিক টন। মাঠ পর্যায়ের মৎস্য কর্মকর্তারা বলেছেন, লাগসই প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করে পরিকল্পিতভাবে বিল, বাওর ও পুকুরসহ জলাশয়ে মাছ চাষ করা হলে বিরাট বিপ্লব হবে। চীন ও ভিয়েতনামের মতো বিশাল সফলতা না আসলেও প্রতি হেক্টর জলাশয়ে ১০ মেট্রিক টনের স্থলে খুব সহজেই ন্যুনতম ৫ মেট্রিক টন উৎপাদন করা সম্ভব। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, বাংলাদেশে জনসংখ্যার অনুপাতে মাছের মোট চাহিদা রয়েছে ৩০ লাখ মেট্রিক টন। সেখানে উৎপাদন হচ্ছে সবমিলিয়ে প্রায় ২৪ লাখ মেট্রিক টন। ঘাটতি রয়েছে মাত্র ৬ লাখ মেট্রিক টন। শুধুমাত্র দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৬শ’৩টি বাওরে ব্যবস্থাপনাপনা উন্নত করে পরিকল্পিতভাবে মাছ উৎপাদন করে এই ঘাটতির সিংহভাগই পূরণ করা সম্ভব। কিন্তু যথাযথ উদ্যোগের অভাবে তা হচ্ছে না। সূত্রমতে. বিল-বাওরের রুই, কাতলা, মৃগেল বেশ সুস্বাদু। সূত্র জানায়, বিল ও বাওর ছাড়াও যশোর, খুলনা, মাগুরা, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া ও নড়াইলসহ দেশের বিভিন্নস্থানে ছোট-বড় নদ-নদী এবং অসংখ্য খাল-বিল ও পুকুর রয়েছে। উন্মুক্ত এসব জলাশয়ে মাছ চাষ বৃদ্ধির পরিবেশ সৃষ্টি করা হলে মাছ উৎপাদনে অপ্রত্যাশিত ফল পাওয়া যাবে। বর্তমানে শুধু দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলেই ৫হাজার ৪শ’৮৮ হেক্টর জলাশয়ের ৬ শতাধিক বাওর রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ২৪টি বাওর বিল ও বাওর মৎস্য উন্নয়ন এবং ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের আওতাধীন রয়েছে। বাকি বাওরগুলো বিভিন্ন সময়ে প্রভাবশালীদের তদবিরে নামমাত্র মূল্যে ইজারা দেয়া হয়। বাওড় রক্ষা ও পরিচর্যার অভাবে ওই বাওড়গুলো মাছ উৎপাদনে ক্রমেই অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। এমনকি বাওরের জীব-বৈচিত্রও নষ্ট হচ্ছে খুব দ্রæত।
মৎস্য অদিদপ্তর ও বিল ও বাওর উন্নয়ন প্রকল্প দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬০ সালের আগে বিল ও বাওরগুলোতে কোন ব্যবস্থাপনা ছিল না। তখন প্রতি হেক্টর জলাশয়ে খুব সামান্যই মাছ উৎপাদন হত। পরবর্তীতে মৎস্য জলাশয়গুলো বিশেষ করে বিল ও বাওড় ভূমি প্রশাসনের মাধ্যমে ইজারা দেয়ার নিয়ম চালু হয়। একপর্যায়ে মৎস্য বিভাগের বাওড় প্রকল্পের আওতায় আসে। মাঠপর্যায়ের একজন মৎস্য কর্মকর্তা চীন ও ভিয়েতনামের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, সম্ভাবনাময় বাওড়গুলোকে মৎস্য অধিদপ্তর ও বিল ও বাওর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এনে ‘কম্পার্টমেন্টাইলাইজেশন’ পদ্ধতিতে মাছ চাষ করা হলে বর্তমানের চেয়ে উৎপাদন অন্তত ৫ গুণ বৃদ্ধি পাবে। ওই পদ্ধতিটি হচ্ছে বৃহৎ জলাশয়ে লোহা বাঁশ দিয়ে ভাগ ভাগ করে ১০ বছরেও কাঁকড়ায় কাটতে পারে না এমন নেট লাগানো। জলাশয়ের প্রতিটা কম্পার্টমেন্টে সর্বোচ্চ ১১দশমিক ২৮ হেক্টর। পদ্ধতিটাতে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি হয়। এর বাইরে নদ-নদীর গভীর অংশ থেকে অগভীর অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে তৈরি হওয়া বিল-বাওরগুলো এর আওতায় আনা যেতে পারে।
দেশে সর্বমোট কতটি বিল-বাওর আছে তা সর্বশেষ জরিপের ভিত্তিতে নির্ণয় করে অতীত থেকে বর্তমান ব্যবস্থাপনা বিশ্লেষণ করে লাগসই প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মাছ উৎপাদন বৃদ্ধির যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। এই সুযোগ বাস্তবে কাজে লাগানো সম্ভব হলে সারাদেশের যে মাছের ঘাটতি তা পুরণ হবে অনায়াসেই। এর পাশাপাশি দরকার মৎস্যজীবিদের প্রশিক্ষণ দেয়া, বাওড়গুলোর অবকাঠামো উন্নয়ন, চাষ ব্যবস্থাপনা বিস্তৃত করা, মাঠপর্যায়ের মৎস্য কর্মকর্তাদের আন্তরিকতা সৃষ্টি। তাহলে সাদা সোনা চিংড়ির পাশাপাশি রুই, কাতলা, মৃগেল ও সিলভার কার্পসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ রফতানি করে আরো বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হবে বলে সংশ্লিষ্ট মহল থেকে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।