Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রমজানে খাদ্যের অপচয় রোধ করুন

| প্রকাশের সময় : ১১ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মুহাম্মদ শফিকুর রহমান
রমজানে মানুষ সারাদিন অভুক্ত থাকে। এত এত খাবার, অথচ একটুও সে মুখে দেয় না। শুধু মাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তার এই অভুক্ত থাকা। অন্য সব ইবাদতে লোক দেখানো ব্যাপারটা থাকে। রোজা ব্যতিক্রম। না বললে বোঝার উপায় নেই। যে কে রোজাদার, কে রোজাদার না। হাদীসে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, রোজাদারকে আল্লাহপাক পুরস্কৃত করবেন। রোজার মহাত্ম্য, মর্যাদা বর্ণনাতীত। তবে জেনে-শুনেই করি বা না জেনেই করি, আমাদের কিছু তৎপরতা সত্যিই দৃষ্টিকটু এবং ইসলাম সন্মত নয়। একদমই নাজায়েজ। ছোট একটা ঘটনার কথা বলি। গেলবার রমজানে এক পরিবারের সাথে ইফতারে বসেছি। এত ইফতার, কমকরে হলেও আঠারো রকম। মানুষ মাত্র পাঁচজন। কে খাবে এত খাবার ভাবছিলাম। অর্ধেকের বেশি খাবার রয়ে গেল। কেউ কেউ একটু মুখে দিয়ে খাবার রেখে দিলেন। গৃহকর্ত্রী বললেন, সব খাবার ফেলে দে। তোরা কেউ খাবি না। কাজের লোকদের মুখগুলো শুকনো। তাকানো যায় না, বাথরুমের নিকটেই রান্নাঘর। উঁকি মেরে দেখলাম। অল্প একটু ছোলা, সামান্য মুড়ি তাদের ইফতারী। জিজ্ঞেস করলাম, তোমাদের মধ্যে কেউ রোজা রেখেছো? দু’ জন বললো রেখেছি। একজন বলল, ম্যাডাম রাখতে দেয় না; যদি কাজ কম করি। এখানে শুধু একটি পারিবারের কথা বলা হল। এ রকম দৃশ্যপট হাজারো পরিবারে। এত খাবার দাবার কেনাকাটা হয় যে, রমজানে পণ্য দ্রব্যের টান পড়ে যায়। বাজারে হুড়াহুড়ি লেগে যায়। ইফতারের সময় বাজারে ঢোকা কঠিন হয়ে পড়ে। অতিরিক্ত ভোজ ইসলামে সম্পূর্ণ নাজায়েজ। পেটের এক ভাগ খাবার, এক ভাগ পানি, এক ভাগ খালি রাখার কথা বলা হয়েছে। রাসূল (সা.) কয়েকটি ভেজা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। যদি ভেজা খেজুর না থাকত, তবে সাধারণ খেজুরই গ্রহণ করতেন। যদি তাও না থাকত, তবে কয়েক ঢোক পানিই হতো তাঁর ইফতার। (তিরমিযি শরীফ)।
রমজানে বেশি খাবার খেলে আল্লাহ কোন হিসাব নেবেন না, এ ধরনের একটা কুসংস্কার প্রচলিত রয়েছে। কিন্তু ইসলাম অতিভোজ কখনোই সমর্থন করে না। এমনও হয়েছে, ঘরে খাবার নেই, রাসূল (সা.) না খেয়ে থেকেছেন। এই অবস্থায় তো আমরা পড়িনি। কম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো। আর খাবারের অপচয় অপরাধ। কোরআনে বলা হয়েছে, তোমরা খাও এবং পান করো এবং কোনো অবস্থাতেই অপচয় করো না, আল্লাহ তায়ালা কখনোই অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না। (সূরা আরাফ, আয়াত ৩১)। অপব্যয়কারী শয়তানের ভাই। আর তোমাদের অর্থ সম্পদ অপ্রয়োজনীয় কাজে খরচ করবে না। জেনে রাখ, যারা অপব্যয় করে তারা শয়তানের ভাই। আর শয়তান নিজ প্রতি পালকের ঘোর অকৃতজ্ঞ। (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত ২৬,২৭)। রাসূল (সা.) যখন আহার করতেন, আহার শেষে তিনবার আঙ্গুল চেটে খেতেন এবং বলতেন, তোমাদের খানার বাসন থেকে কিছু পড়ে গেলে উঠিয়ে পরিষ্কার করে খেয়ে নাও, তা শয়তানের জন্য ছেড়ে দিও না। (আবু দাউদ-৩৮৪৫)। অথচ, বর্তমানে খাবারের অপচয় রমজানে রীতিমত যেন ফ্যাশন। রেস্তোরাঁ থেকে বস্তা বস্তা খাবার ফেলে দেয়া হচ্ছে, এমন ছবিও সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছে। কত মানুষ এই শহরে অভুক্ত থাকে। পেট ভরে খেতে পায় না। তার খবর কতটুকু আমরা রাখি। গার্মেন্টে যারা কাজ করে তাদের দশজনে আটজন পেটে ক্ষুধা নিয়ে কাজ করে। পেট ভরে খেতে পারে না। গবেষণায় এমন তথ্য পাওয়া যায়। বাসার কাজের লোক, আপনার আমার মতই মানুষ। তারও ক্ষুধা লাগে। তাকে খাবার না দেয়া বা কম দেয়া অন্যায়। নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, হে লোক সব! আল্লাহ তোমাদের ভাইদেরকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন। এতএব, যার অধীনে কোন ভাই থাকে, তাকে তা-ই খাওয়াবে যা সে নিজে খায়, তাকে তা-ই পরাবে, যা সে নিজে পরে এবং তাকে সাধ্যের অধিক কাজ চাপিয়ে দেবে না। তাকে দিয়ে যদি কোনো কষ্টের কাজ করাতে হয়, তাহলে তাকে সাহায্য করবে। (বুখারী ও মুসলিম)। দেখুন না, অধীনস্তদের সাথে রাসূল (সা.) কেমন আচরণ করতেন। প্রায় দশ বছর রাসূল (সা.) এর সাহচার্যে থাকা হযরত আনাস (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) কখনও বলেননি যে, এটা কেন করোনি বা এটা কেন করেছো। রমজানে কাজের লোকদের কাজের বোঝা হালকা করে দিতে হবে। হযরত সালমান ফার্সি (রা.) বর্ণিত, রাসূল পাক (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি রমজান মাসে দাস দাসীদের, কাজের লোকদের কাজের বোঝা হালকা করে দেয়, আল্লাহ তাদের মাফ করে দেন এবং দোযখের আজাব থেকে নাজাত দান করেন। (মেশকাত, বায়হাকি)। অন্য এক হাদীসে রাসূল (সা.) বলেছেন, শ্রমিকের কাজ বা কাজের মেয়াদ শেষ হলেই তার মজুরি পুরোপুরি দিতে হবে। (মুসনাদে আহমাদ)।
না খেয়ে থাকাটাই রোজা নয়। ইসলামী বিধি-বিধান মেনে চলা, নিজেকে সংশোধন করা, নিজের আচরণগুলো যেমনটা রমজানের আগে থাকে সেটার পরিবর্তন করা। নিজেকে জ্বালিয়ে, পুড়িয়ে সঠিক পথে নিয়ে আসা, এটাই রোজা। রোজা রাখলেন বটে। ইফতারীতে খাবারের অপচয় করলেন, কাজের লোকদের খাবার দিলেন না, তাদের কাজ বাড়িয়ে দিলেন, প্রশ্নটা নিজেকেই করতে হবে। এই আচরণগুলো কি একজন রোজাদারের হতে পারে?



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রমজান


আরও
আরও পড়ুন