পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নূরুল ইসলাম : যানজট এখন রাজধানীর রাজপথের নিত্য ঘটনা। সকাল থেকে সন্ধ্যা আবার সন্ধ্যা থেকে রাত। যানবাহনের ভিড়ে রাস্তা বন্ধ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা। ভয়াবহ এ যানজটের কাছে ট্রাফিক পুলিশও অসহায়। ট্রাফিক পুলিশের ভাষ্যমতে, ঈদকে কেন্দ্র করে ঢাকার রাজপথে ফিটনেসবিহীন গাড়ির সংখ্যা বেড়েছে। যে সব গাড়ি চলার যোগ্য নয়, সেগুলোও চলছে। রাজধানীতে চলাচলরত এরকম লক্কর-ঝক্কর মার্কা যানবাহনের প্রকৃত সংখ্যা কতো তার সঠিক হিসাব বিআরটিএ-তে নাই। ২০১৫ সালের হাইকোর্ট যখন ফিটনেসবিহীন মোটরযান চলাচল বন্ধের জন্য সরকারকে নির্দেশ দেন তখন রাজধানীতে এর সংখ্যা ছিল দেড় লাখ। হাইকোর্টের নির্দেশের পর ফিটনেসবিহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে বিআরটিএ। মাসখানেক এই অভিযানে গতি থাকলেও পরবর্তীতে তা ঝিমিয়ে পড়ে। অভিযান শুরু হলে লক্কর-ঝক্কর মার্কা গাড়ি চলাচল আপনা আপনি বন্ধ হয়ে যায়। মাস খানেক আগেও বিআরটিএ-এর অভিযানেও নগরীতে বাসের কৃত্রিম সঙ্কট তৈরী করেছিল বাস মালিকরা।
পরিবহন শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ব্যবসার সুবিধা নিতে কতিপয় মালিক আগে থেকে রমযানকে টার্গেট করে রেখেছিল। তারাই সুযোগ বুঝে ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় নামিয়েছে। এসব গাড়িই রাজধানীর গলার কাঁটার মতো প্রতিনিয়ত ভয়াবহ যানজট সৃষ্টি করে চলেছে। আইনের তোয়াক্কা না করে প্রশাসনের নাকের ডগায় চলাচলের অযোগ্য এসব গাড়ি দিয়ে চুটিয়ে ব্যবসা করছে এক শ্রেণীর পরিবহন মালিক। সেবা তো তো দুরের কথা যাত্রীরা সামান্যতম নিরাপদ নয় এসব ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহনে। প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। সাথে ভোগান্তিতো আছেই। এরকমের ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন রাস্তায় চলাচলের কারণে শুধু দুর্ভোগই নয়, ক্ষতির মুখে পড়ছে ঢাকার পরিবেশ, নষ্ট হচ্ছে সৌন্দর্যও। ভুক্তভোগী যাত্রীদের অভিযোগ, ট্রাফিক পুলিশের সামনেই অবাধে ফিটনেসবিহীন যানবাহন চললেও নেওয়া হচ্ছে না যথাযথ ব্যবস্থা।
বিআরটিএ-এর একজন দাবি করেছেন, ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে। সাপ্তাহিক ছুৃটি বাদে প্রতিদিনই অভিযান চলছে। ফিটনেসবিহীন ত্রæটিপূর্ণ গাড়ি ধরা হচ্ছে। জরিমানা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সারাদেশে পরিবহন সেক্টরে একটা বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজ করছে। রাজধানীর অবস্থা আরও খারাপ। ঢাকার যানজটের প্রধান উৎস এ ধরণের সব গাড়িরই যে ফিটনেস নেই তা কিন্তু নয়। অভিযানে নামলে দেখা যাবে যে গাড়িকে আমরা আনফিট বলছি তারও ফিটনেস সার্টিফিকেট আছে। তার অর্থ হলো, এগুলোকে না দেখেই ফিটনেস দেয়া হয়েছে। পরিবহন সেক্টরের এই বিশৃঙ্খলা দুর করার জন্য বাস রুট ফ্রাঞ্চাইস (বিআরএফ) পদ্ধতির বিকল্প নেই। এই পদ্ধতিতে সীমিত সংখ্যক বাস কোম্পানীর তত্বাবধানে সীমিত সংখ্যক বাস রুট চালু করলে যাত্রী সেবার মানও বাড়বে, বিশৃঙ্খলাও দুর হবে।
বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে প্রায় দেড় লাখ ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচলরত ছিল। বিভিন্ন সংবাদপত্র ও মিডিয়াতে এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশিত ও প্রচারিত হওয়ার পর দেশের সব ধরনের সড়কে ফিটনেসবিহীন মোটরযান চলাচল বন্ধের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে আদালত দেশের প্রায় ১৯ লাখ গাড়িচালকের ‘ভুয়া’ লাইসেন্স জব্দ ও তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতেও সরকারকে নির্দেশ দেন। হাইকোর্টের এই আদেশের পর নড়েচড়ে বসে বিআরটিএ ও পুলিশ প্রশাসন। শুরু হয় অভিযান। ভূয়া লাইসেন্সও জব্দ করা হয়। এসময় লক্কর-ঝক্কর মার্কা বহু গাড়ি রাস্তা থেকে উধাও হয়ে যায়। অভিযানে আটক হয় খুবই সামান্য। বিআরটিএ এর কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন ওই অভিযানের পর গাড়ির ফিটনেস করানোর প্রবণতা অনেকাংশে বেড়ে যায়। মাস দুয়েক এই প্রবণতা অব্যাহত ছিল।
সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানী সব এলাকাতেই লক্কর-ঝক্কর মার্কা বাস ও মিনিবাস চলাচল করছে। গাবতলী থেকে যাত্রাবাড়ী রুটে চলাচলকারী ‘৮ নম্বর’ বাসের অবস্থা সবারই জানা। এছাড়া শিকড় পরিবহনের বাসগুলোও চলাচলের অযোগ্য। এসব বাসের কোনটির গøাস ভাঙা, কোনোটির লুকিংগøাস নেই, কোনোটির সামনে ও পেছনের বাম্পার খোলা, কোনোটির জানালার কাঁচ অর্ধভাঙ্গা হয়ে ঝুলে আছে, কোনোটির বডি দুমড়ানো-মুচড়ানো। সদরঘাট টু গাজীপুর রুটের ‘সুপ্রভাত পরিবহনের’ একাধিক বাসের এরক অবস্থা দেখা গেছে। যাত্রীঠাসা কোনো কোনো বাসের পেছনের সীটে বসা যাত্রীদের পা বাইরে থেকে দেখা যায়।
যাত্রাবাড়ী থেকে গাজীপুর রুটেরও একই অবস্থা। ডাইরেক্ট বা বিরতিহীন লেখা অনেক বাসের ভিতরে সীট আলগা। বডি ভেঙ্গে বাঁকা হয়ে আছে। সামনে পেছনে বাম্পার নেই। পরিবহন মালিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিআরটিএ’র অভিযান যখন জোরদার ছিল তখন এসব গাড়ি ঢাকার আশপাশে পাঠানো হয়। অভিযান বন্ধের পর এগুলো ধীরে ধীরে রাজধানীতে প্রবেশ করে। শুধু যাত্রাবাড়ী-গাজীপুর রুটের বাস নয়, রাজধানীর প্রায় সব রুটের বেশিরভাগ কোম্পানির বাসের অবস্থা একই রকম। উত্তরা টু আজিমপুর রুটের ‘ফাল্গুন’ পরিবহন, আব্দুল্লাপুর টু যাত্রাবাড়ী রুটের ‘সালসাবিল’-‘অনাবিল’-‘তুরাগ’ পরিবহন, গাবতলী টু যাত্রাবাড়ী এবং গাবতলী টু সদরঘাট রুটের অধিকাংশ কোম্পানির বেশিরভাগ গাড়িই লক্কর-ঝক্কর মার্কা। এতে ভোগান্তি, শঙ্কা আর বিড়ম্বনা নিয়েই পথ চলতে হচ্ছে রাজধানীবাসীকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, রাস্তায় চলাচল করার যোগ্য প্রমাণের পর বিআরটিএ থেকে ফিটনেস সার্টিফিকেট পাওয়ার নিয়ম। গাড়িতে রক্ষিত কাগজপত্র, গাড়ির ধোঁয়া নির্গমণ ও কাঠামোগত (বডি কনফিগারেশন) অবস্থার ভিত্তিতে রাস্তায় চলাচল করা গাড়ির ফিটনেস নির্ধারণ করা হয়। যে সমস্ত গাড়ি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ফি জমা দিয়ে বিআরটিএ’র কাছ থেকে সার্টিফিকেট নেয়নি সেগুলোকেই ফিটনেসবিহীন গাড়ি বা ফিটনেস খেলাপি গাড়ি হিসেবে গণ্য করা হয়। কিন্তু বাস্তবে এসব নিয়ম কমই মানা হয়। গাড়ি না দেখেই ঘুষের বিনিময়ে ফিটনেস সার্টিফিকেট দেয় বিআরটিএ’র এক শ্রেণীর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা। এমন অভিযোগ বহুদিনের পুরনো। ঢাকার বাইরে কেরানীগঞ্জ ইকিুরিয়া বিআরটিএ-তে গাড়ি না দেখেই ফিটনেস সার্টিফিকেট দেয়া হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।