Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ব্রিটেনে ঝুলন্ত পার্লামেন্ট

নতুন সরকার গঠনের ঘোষণা থেরেসা মে’র

প্রকাশের সময় : ৯ জুন, ২০১৭, ১১:৫০ পিএম | আপডেট : ৮:৫৪ পিএম, ১০ জুন, ২০১৭

এক নজরে ব্রিটেনের পার্লামেন্ট নির্বাচন
মোট আসন : ৬৫০ ফলাফল : ৬৪৯


কনজারভেটিভ - ৩১৮ (-১২)              

লেবার  - ২৬১ (+২৯)    

এসএনপি  - ৩৫ (-২১)    

লি. ডেম  - ১২ (+৪)    

ডিইউপি  - ১০ (+২)    

অন্যান্য - ১৩ (-২)

 

ইনকিলাব ডেস্ক : ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টির (ডিইউপি) সমর্থন নিয়ে ব্রিটেনে নতুন সরকার গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন কনজারভেটিভ নেত্রী থেরেসা মে। গতকাল রাজপ্রাসাদ বাকিংহ্যাম প্যালেসে রানীর সঙ্গে দেখা করে সরকার গঠনের অনুমতি পাওয়ার পর এ ঘোষণা দেন তিনি। বাকিংহ্যাম প্যালেস থেকে বেরিয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিট-এর বাইরে বক্তব্য রাখেন থেরেসা মে। এ সময় তিনি বলেন, তার সরকারের কাজ হবে যুক্তরাজ্যের বৃহত্তর স্বার্থ সংরক্ষণ করা। থেরেসা মে বলেন, রানীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। এখন আমি একটি সরকার গঠন করবো। এমন একটি সরকার যা এই কঠিন সময়ে আমাদের দেশকে একটি নিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
এর আগে স্বামী ফিলিপি মে-কে নিয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিট থেকে রাজপ্রাসাদের উদ্দেশে বের হওয়ার সময় সংবাদিকদের মুখোমুখি হন থেরেসা মে। এ সময় সাংবাদিকরা তার কাছে জানতে চান, নতুন সরকার শক্তিশালী ও স্থিতিশীল হবে কি? তবে এমন প্রশ্ন এড়িয়ে যান কনজারভেটিভ পার্টির নেত্রী।
নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর পর ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টির (ডিইউপি) সমর্থন নিয়ে সরকার গঠনের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেই রানীর সঙ্গে এ বৈঠকে মিলিত হন থেরেসা মে। এরইমধ্যে ডিইউপি থেকে তাকে ইতিবাচক ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। ফলে ডিউপি-র সঙ্গে জোট করে সরকার গঠনের অনুমতির জন্যই তিনি রাজপ্রাসাদে ছুটে যান।
গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিজয় লাভ করলেও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি থেরেসা মে’র দল কনজারভেটিভ পার্টি। সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে হলে দলটিকে ৩২৬টি আসনে জয় পেতে হতো। কিন্তু ৬৫০টি আসনের মধ্যে ৬৪৯টি আসনের ফলাফলে দলটি পেয়েছে ৩১৮টি আসন। অর্থাৎ, ঝুলন্ত পার্লামেন্ট পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
থেরেসা মে হঠাৎ করে সাধারণ নির্বাচন ডাকার আগে সংসদে দলের যত আসন ছিল এই নির্বাচনে আসন সংখ্যা তার চেয়েও কমেছে এবং মিসেস মে-কে তার সিদ্ধান্তের জন্য লজ্জায় পড়তে হয়েছে। পূর্বাভাস অনুযায়ী টোরিরা (কনজারভেটিভ) ৩১৮টি আসন পাচ্ছে, লেবার পার্টি ২৬১ এবং এসএনপি ৩৫ আসন।
এদিকে লেবার নেতা জেরেমি করবিন মিসেস মে-কে পদত্যাগের আহŸান জানিয়েছেন। তবে মিসেস মে বলেছেন, দেশে স্থিতিশীলতার প্রয়োজন এবং তার দল সেই স্থিতিশীলতা ‘নিশ্চিত’ করবে। লেবারের ঝুলিতে যোগ হয়েছে ২৯টি নতুন আসন এবং কনজারভেটিভ ১৩টি আসন হারিয়েছে।
নিকোলা স্টারজেনের স্কটিশ ন্যাশানালিস্ট পার্টি, এসএনপি, খুবই খারাপ ফল করেছে। তারা ২২টি আসন হারিয়েছে। তাদের আসনগুলো গেছে টোরি, লেবার এবং লিবারেল ডেমোক্রাটদের কাছে। পূর্বাভাসে বলা হয়, ভোটের ৪২ শতাংশ পেয়েছে কনজারভেটিভরা, লেবার ৪০ শতাংশ, লিবারেল ডেমোক্রাট ৭ শতাংশ এবং গ্রিন পার্টি পেয়েছে ২ শতাংশ ভোট।
সর্বশেষ খবর অনুযায়ী ভোট দিয়েছে ৬৮.৭ শতাংশ ভোটার- ২০১৫’র তুলনায় এই হার শতকরা ২ ভাগ বেশি। তবে দেশের অনেক জায়গায় দেখা গেছে রাজনীতি আবর্তিত হয়েছে শুধু বড় দুটি দলকে কেন্দ্র করে। কনজারভেটিভ আর লেবার যত ভোট পেয়েছে, ১৯৯০-এর পর শুধু দুটো দলের এত ভোট পাওয়ার এটা রেকর্ড।
ইউনাইটেড কিংডম ইন্ডিপেনডেন্স পাটি (ইউকিপ) পার্টি হারিয়েছে প্রচুর আসন, তবে যেমনটা মনে করা হচ্ছিল তাদের ভোটগুলো পাবে শুধু টোরিরা, সেটা হয়নি। টোরদের পাশাপাশি তাদের ভোট পেয়েছে লেবারও।
উত্তর লন্ডনের ইসলিংটন নর্থ আসন থেকে পুর্ননির্বাচিত হবার পর লেবার নেতা জেরেমি করবিন বলেছেন, মিসেস মে-র ‘ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানোর’ সময় হয়েছে। তার উচিত সরে গিয়ে এমন একটা সরকারকে জায়গা করে দেওয়া যারা ‘দেশের জনগণের সত্যিকার অর্থে প্রতিনিধিত্ব করবে’। তিনি বলেন, তিনি এ পর্যন্ত ঘোষিত ফলাফল নিয়ে ‘খুবই গর্বিত’ এবং তার ভাষায় এটা ‘ভবিষ্যতের আশার প্রতি ভোট’। তিনি বলেছেন, দেশের জনগণ ‘ব্যয়সঙ্কোচ থেকে জনগণ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছি’।
ব্রিটেনের ফিক্সড টার্ম পার্লামেন্ট অ্যাক্ট অনুযায়ী যুক্তরাজ্যে এই গ্রীষ্মের শেষের দিকে আরেকটা নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ব্রেক্সিট নিয়ে যে আলোচনা হতে যাচ্ছে এই ফলাফল তার ওপর কী প্রভাব ফেলতে পারে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। মিসেস মে-র রাজনৈতিক ভবিষ্যত নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলছেন। একজন কনজারভেটিভ মন্ত্রী বিবিসির বিশ্লেষক লরা কুয়েন্সবার্গকে বলেছেন ‘এই ফলাফলের পর ক্ষমতায় থাকা থেরেসা মে-র জন্য কঠিন হবে’।
তবে ব্রেক্সিটপন্থী এমপি স্টিভ বেকার বলেছেন, দলের উচিত থেরেসা মে-কে সমর্থন করা যাতে ‘স্থিতিশীলতা বজায় থাকে’। নিজের নির্বাচনী কেন্দ্র থেকে জেতার পর থেরেসা মে বলেছেন, পুরো চিত্র এখনও পরিস্কার হয়নি এবং ‘এখন দেশের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন স্থিতিশীলতা বজায় রাখা’।
‘যদি পূর্বাভাস সঠিক হয় এবং কনজারভেটিভ পার্টি সবচেয়ে বেশি আসন পায় এবং সম্ভবত সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়ে থাকে, তাহলে আমাদের দায়িত্ব হবে একটা স্থিতিশীল পরিবেশ বজায় রাখা এবং আমরা সেটাই করব,’ তিনি বলেন। বেসরকারি এক টিভি চ্যানেলে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সাবেক অর্থমন্ত্রী জর্জ অসবর্ন বলেন ‘মিসেস মে সম্ভবত ব্রিটেনের ইতিহাসে সবচেয়ে স্বল্প সময় ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন’। মি: অসবর্নকে থেরেসা মে গত বছর বরখাস্ত করেন।
ডিইউপিরএম পি সাইমন হ্যামিল্টন বলেছেন, তার দলের ভোট টোরিদের সরকার গঠনের জন্য ‘খুবই গুরুত্বপূর্ণ’ এবং ‘ইইউ ছাড়ার সময় উত্তর আয়ারল্যান্ডের জন্য ভাল সুযোগসুবিধা চাওয়ার ব্যাপারে তারা দরকষাকষি করবেন’।
কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ এমপি তাদের আসন হারিয়েছেন। যেমন এসএনপির অ্যালেক্স স্যামন্ড হেরে গেছেন এক টোরি প্রার্থীর কাছে এবং লিবডেম নেতা ও সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী নিক ক্লেগ পরাজিত হয়েছেন একজন লেবার প্রার্থীর কাছে।
লিবারেল ডেমোক্রাটরা বলে দিয়েছে কনজারভেটিভ বা লেবার কারো সঙ্গেই তারা কোয়ালিশনে যাবে না।
দোরগোড়ায় এসেও একক সংখ্যগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় ব্রিটেনের সঙ্গে মে’রও ভাগ্য ঝুলে গেলো। ব্রেক্সিটের পরে দেশের স্থিতিশীলতা মজবুত করার কথা বলে গত এপ্রিলে তড়িঘড়ি ভোট এগিয়ে আনার কথা ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। সেই অনুযায়ী দেশের ৪০ হাজারের বেশি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হয়। বৈদ্যুতিক ভোটিং যন্ত্র নয়, এখনও ব্যালট পেপারেই ভোট হয় ব্রিটেনে। এবার প্রায় ৪ কোটি ৭০ লাখ মানুষ ভোট দিয়েছেন। এ বারের নির্বাচনে কোনও দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে কি-না নির্বাচনের পর পরই সে বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। তাদের সে আশঙ্কাই সত্যি হল। এক দিকে লেবার পার্টির কর্পোরেট সংস্থাগুলোর ওপর বেশি কর চাপিয়ে সেই টাকা সামাজিক-সুরক্ষা খাতে খরচের প্রস্তাব।
অন্যদিকে, সরকারি ঋণ কমিয়ে সামাজিক সুরক্ষা খাতে ব্যয়ভার কাটছাঁটের প্রস্তাব নিয়ে এ বারের নির্বাচনের লড়াইয়ে নেমেছিল কনজারভেটিভ পার্টি। ব্রিটেনবাসী থেরেসা মে-র প্রতি আস্থা রাখলেও সমালোচকরা বলছেন, পূর্ণ আস্থা রাখতে পারেননি।
ব্রিটিশ পাউন্ডের দরপতন, বেড়েছে শেয়ার বাজারের সূচক
যুক্তরাজ্যের আগাম নির্বাচনের ফলাফলে ঝুলন্ত পার্লামেন্ট গঠনের সম্ভাবনা উঠে আসায় দেশটির মুদ্রা পাউন্ড স্টার্লিংয়ের দরপতন হয়েছে। তবে বেড়েছে শেয়ার বাজারের সূচক। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হওয়ার ফলে ডলারের বিপরীতে পাউন্ড স্টার্লিংয়ের দাম ১.৭ শতাংশ কমে ১.২৭ ডলারে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থার মধ্যেই শেয়ার বাজারের সূচক ০.৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৫০৮.৪৭।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, পাউন্ডের দরপতনের কারণে শেয়ার বাজারের সূচক বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ হতে পারে। কারণ বেশির ভাগ কোম্পানিরই বিদেশে বড় ধরনের বিনিয়োগ রয়েছে। ফলে পাউন্ডের দরপতন মানেই বিদেশে কোম্পানিগুলোর মুনাফা বৃদ্ধি। কারণ স্থানীয় মুদ্রাকে পাউন্ডে রূপান্তরের ফলে এই মুনাফা আসে।
শেয়ার বাজারের সবচেয়ে বেশি মূল্য বেড়েছে আন্তর্জাতিক কোম্পানি গø্যাক্সোস্মিথক্লাইন ও ডিয়াগেও-এর। এই দুই কোম্পানির শেয়ারের দাম ২ শতাংশের চেয়েও বেশি বেড়েছে। কিন্তু শুধু যুক্তরাজ্যে বাণিজ্য করা কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দরপতন হয়েছে। হাউসবিল্ডার্স-এর শেয়ারের দাম কমেছে ৫ শতাংশ। বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে ভোক্তাদের খরচ করার প্রবণতা কমে যেতে পারে।
থেরেসাকে পদত্যাগের পরার্মশ করবিনের
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’কে পদত্যাগের পরামর্শ দিয়েছেন লেবার নেতা জেরেমি করবিন। তিনি বলেন, জনগণ ব্যয়সঙ্কোচনের রাজনীতি প্রত্যাখান করেছে এবং থেরেসা মে-র পদত্যাগ করা উচিত। গতকাল লন্ডনের ইসলিংটনে নিজের আসনে জেতার পর তিনি একথা বলেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এখন ‘চলে যাওয়া’ উচিত। এই নির্বাচন ডাকা হয়েছিল সরকারকে নতুন ম্যান্ডেট দেয়ার জন্য। ‘ম্যান্ডেট তিনি পেয়েছেন, হারানো আসন, হারানো ভোট, হারানো কর্তৃত্বে। এর পরে তার চলে যাওয়া উচিত যাতে এমন একটি সরকার আসতে পারে যারা সকল নাগরিকের প্রতিনিধিত্ব করে।’
করবিন বলেন, মে’র পদত্যাগের জন্য এটাই যথেষ্ট। সেসময় করবিন দাবি করেন, ১৯৫১ সালের পর থেকে তার আসনে সবেচেয় বেশি ভোট পড়েছে এবং তিনি সর্বোচ্চ সংখ্যক ভোট পেয়েছেন। এরপর হাসিমুখে তিনি বলেন, মে যেটা চেয়েছিলেন সেটা পাননি। রাজনীতি পল্টে গেছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘জনগণ কনজারভেটিভদের যথেষ্ট পেয়েছে। এবং এখন রাজনীতি আগের মতো নেই।’
থেরেসা মে অবশ্য এই বিষয়ে সরাসরি কোনও মন্তব্য করেননি। তিনি বলেন, লন্ডনের এখন স্থিতিশীলতা দরকার। আর আমরা সেটা নিয়েই কাজ করবো। কনজারভেটিভ পার্টিই সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছে এবং সবচেয়ে বেশি আসন নিশ্চিত করেছে। তাই দেশের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা আমাদেরই দায়িত্ব।
কে থেরেসা মে?
থেরেসা মে গত জুলাইতে যখন ক্ষমতা নেন, মার্গারেট থ্যাচারের পর তিনিই হন ব্রিটেনের দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী। তবে মার্গারেট থ্যাচারের মত তাকে নির্বাচন করতে হয়নি। হয়তো সেই দুর্বলতা ঘোচাতে হঠাৎ করে ৮ জুন সাধারণ নির্বাচনের ডাক দেন তিনি। তখন থেকে একজন দক্ষ এবং শক্ত মনের রাজনীতিকের একটি ইমেজ তুলে ধরার চেষ্টা করে গেছেন থেরেসা মে। তবে থেরেসা মে’র শক্ত মানসিকতা নিয়ে কনজারভেটিভ পার্টিতে সবসময় কম-বেশি কথাবার্তা সবসময়ই ছিলো। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যমেরনের মন্ত্রিসভায় তিনি যখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন, তখন আরেক মন্ত্রী তার সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন -‘সাংঘাতিক কঠিন মহিলা’। দলের অনেকে বলেন তিনি ‘অনমনীয়’ ধরনের। থেরেসা মে এখন এসব বিশ্লেষণকে প্রশংসা হিসাবে বিবেচনা করছেন এবং ব্যবহার করার চেষ্টা করছেন। নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি বলার চেষ্টা করে গেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ প্রত্যাহার নিয়ে দেন-দরবারের সময় তিনি শক্ত হাতে ব্রিটেনের স্বার্থরক্ষায় লড়বেন। আর তাতেই ডানপন্থী মিডিয়ার প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠেন তিনি।
লন্ডনের কাছে সাসেক্স কাউন্টির ইস্টবোর্ন শহরে একজন পাদ্রীর ঘরে জন্ম হয় থেরেসা ব্রেইজারের। চার্চের স্কুলে পড়াশোনা শুরু। হাইস্কুলে পড়ার সময় শনিবারে একটি বেকারিতে কাজ করে হাতখরচা চালাতেন। তার স্কুলের কয়েকজন বন্ধু পরে বলেছেন, লম্বা সুশ্রী ফ্যাশনপ্রিয় থেরেসা তখন থেকে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন।
স্কুল শেষে ভর্তি হন অক্সফোর্ড বিশ্বদ্যিালয়ে যে প্রতিষ্ঠানটি ব্রিটেনের রাজনীতিক নেতৃত্ব তৈরির ক্ষেত্রে ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ১৯৭৬ থেরেসা মে’র প্রেম শুরু হয় স্বামী ফিলিপ মে’র সাথে। বয়সে দু বছরের ছোট ফিলিপ মে তখন অক্সফোর্ড ছাত্র সমিতির প্রেসিডেন্ট ছিলেন। কনজারভেটিভ পার্টির সাথে সম্পর্কিত কনজারভেটিভ অ্যাসোসিয়েশনের এক অনুষ্ঠানে তাদের দু’জনের মধ্যে পরিচয় ঘটিয়ে দিয়েছিলেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত বেনজির ভুট্টো। তিনিও তখন অক্সফোর্ডের ছাত্রী।
দু’জনেই পরে বলেছেন - প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়েছিলেন তারা। পরে ১৯৮০ তে বিয়ে করেন। থেরেসা মে অবশ্য বলেছেন, শিশু বয়সে প্রধানমন্ত্রী হতে চাইতেন তিনি, কিন্তু সত্যি সত্যি সেরকম কোনো উচ্চাভিলাষ তার সেভাবে ছিল না।
রাজনীতিতে অভিষেক : অক্সফোর্ড থেকে বেরিয়ে ব্রিটেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বেশ কিছুদিন কাজ করেছেন। কিন্তু রাজনীতিই যে তার গন্তব্য সেটা কখনই ভোলেননি তিনি। প্রথম নির্বাচন করেন দক্ষিণ লন্ডনের মার্টন এলাকায় স্থানীয় সরকারের একজন কাউন্সিলর পদে। প্রায় দশ বছর ধরে কাউন্সিলর ছিলেন। প্রথম এমপি নির্বাচনে দাঁড়ান ১৯৯২ সালে ডারহাম কাউন্টির একটি আসনে। অনেক ভোটে হেরে যান। দু’বছর পর পূর্ব লন্ডনের বার্কিং এলাকায় একটি উপনির্বাচনে আবার দাঁড়ান। আরো খারাপ পরাজয় হয়। দু হাজারেরও কম ভোট পান সেই নির্বাচনে।
১৯৮২ তে প্রথমবার এমপি নির্বাচন করেন : অপ্রত্যাশিত সাফল্য আসে ১৯৯৭ সালের নির্বাচনে। টনি বেøয়ারের নেতৃত্বে লেবার পার্টি যখন ব্যাপকভাবে জিতে ক্ষমতায় আসে, কনজারভেটিভ পার্টির সেই ক্রান্তিকালে লন্ডনের কাছে মেইডেনহেড এলাকা থেকে আশাতীতভাবে জিতে যান থেরেসা মে। তখন থেকে সেই সিটে তিনি বার বার জয় পেয়ে আসছেন।
দু’বছর পর ১৯৯৯ তে দলের ছায়া সরকারে জায়গা করে নেন তিনি। ২০০২ তে তিনিই প্রথম নারী যিনি কনজারভেটিভ পার্টির চেয়ারম্যান হন। সে সময় আরো বেশি নারীকে যেন মনোনয়ন দেয়া হয়, তার জন্য দলের ভেতর লড়েছেন তিনি। তবে পরপর তিন দফা হেরে ‘নটিং হিল সেট’ নামে কনজারভেটিভ পার্টির যে ক’জন নেতা শেষ পর্যন্ত দলকে ক্ষমতায় নিয়ে আসেন - যাদের নেতৃত্বে ছিলেন ডেভিড ক্যামেরন এবং জর্জ অজবর্ন - তাদের মধ্যে জায়গা পাননি থেরেসা মে। তবে ২০০৯ সালে কনজারভেটিভদের নেতৃত্বে কোয়ালিশন সরকারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান থেরেসা মে। অনেক বাঘা বাঘা রাজনীতিক যখন এই মন্ত্রণালয়ে এসে হিমশিম খেয়েছেন, সেখানে থেরেসা মে শক্ত হাতে সামলেছেন তার দায়িত্ব।
শক্ত ব্যক্তিত্ব : তার স্পষ্টভাষী অনমনীয় স্টাইলের কারণে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাসহ মন্ত্রিসভার অন্য সদস্যদের সাথে ঠোকাঠুকি লাগলেও সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা পান তিনি। কোয়ালিশন সরকারের শরীক দল লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির তৎকালীন মন্ত্রী ডেভিড ল তার আত্মজীবনীতে লিখেছেন- ‘অভিবাসন ইস্যুতে তার (থেরেসা মে) সাথে জর্জ অজবর্নের (অর্থমন্ত্রী) হরহামেশা ঝগড়া হতো .. এমনকী প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরন এবং থেরেসা মে পরস্পরকে সন্দেহের চোখে দেখতেন। আমি ভাবতাম তিনি দু বছরের বেশি টিকবেন না’।
সামাজিক অর্থনৈতিক নীতি নিয়ে কনজারভেটিভ পার্টির কট্টর অংশের সাথে তার বিরোধ হয়েছে। একবার এক দলীয় সম্মেলনে থেরেসা মে বলেছিলেন, মানুষ এখনও তাদের ‘নাস্টি পার্টি’ অর্থাৎ স্বার্থপর হৃদয়হীন দল হিসাবে দেখে। এ ধরনের কথা পছন্দ করেননি দলের অনেকে। পুলিশকে সন্দেহবশত তল্লাশির অধিকার দেওয়ার বিরোধিতা করেছেন তিনি। ব্রিটেনে মুসলিম সমাজে শরীয়া আইনের প্রচলনের বিরুদ্ধাচরণ করেছেন। ডেভিড ক্যামেরন সরকারের সময় কল্যাণভাতা অতিমাত্রায় কমানোর বিরোধিতা করেছেন। অর্থাৎ দলের ভেতরে সবসময় পালে হাওয়া লাগিয়ে চলেননি থেরেসা মে। ৮ জুনের নির্বাচনের আগে তার সেই স্বাধীনচেতা সাহসী শক্ত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের বিষয়টি ভোটারদের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন তিনি।
জেরেমি করবিনের পরিচিতি
একজন বামপন্থী রাজনীতিক হিসাবে যিনি ৩০ বছর সংসদের পেছনের আসনে থেকে গেছেন, বিতর্কিত নানা ইস্যু সমর্থন করেছেন, বিবেকের তাড়নায় হরহামেশা দলের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন, সেই জেরেমি করবিন ২০১৫ সালে দলের নেতা নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে বিস্ময় তৈরি করেন। নেতৃত্বের নির্বাচনে অংশ নিতে লেবার পার্টির বামপন্থী অংশটি করবিনকে রাজি করিয়েছিলেন। তবে ঘুণাক্ষরেও কেউ ভাবেননি, তিনি নির্বাচিত হবেন। বেটিং কোম্পানিগুলো বলেছিলো তার সম্ভাবনা ২০০র মধ্যে ১। কিন্তু স্বল্পভাষী, দাড়িওয়ালা ৬৬ বছরের এই এমপির ব্যক্তিত্বে এমন অজানা কিছু ছিল যা লেবার পার্টির সদস্যদের আকর্ষণ করেছিলো। অন্য তিন চৌকশ, কমবয়সী, কেরিয়ার রাজনীতিকের বদলে তারা করবিনকে বিপুল ভোটে নেতা নির্বাচিত করে ফেলেন। টনি বেøয়ার এবং গর্ডন ব্রাউনের নেতৃত্বের সময়ে লেবার পার্টির প্রতি নিরাসক্ত হয়ে পড়েছিলেন যারা তাদেরকে আবার উদ্বেলিত করতে সমর্থ হন জেরেমি করবিন। দলে দলে লেবার পার্টিতে নাম লেখাতে থাকেন হাজার হাজার মানুষ, বিশেষ করে তরুণ যুবকরা। যে বামধারার রাজনীতিকে লেবার পার্টি থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলেন টনি বেøয়ার, জেরেমি করবিনের নির্বাচনে তার পুনরুত্থানের সম্ভাবনা তৈরি হয়। উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন লেবার পার্টির এমপিদের সিংহভাগ। তারা বলতে থাকেন করবিন আবার লেবার পার্টিকে অতীতে নিয়ে যাচ্ছেন এবং তাতে দলের ক্ষমতায় ফিরে আসার সমস্ত সম্ভাবনা ধূলিসাৎ হয়ে যাচ্ছে। ছায়া সরকার থেকে একের পর এক লেবার এমপি পদত্যাগ করেন। খোলাখুলি বিদ্রোহ শুরু করেন নেতার বিরুদ্ধে।
চাপের মধ্যে কয়েক মাসের মধ্যে আবার নেতা নির্বাচন ডাকেন জেরেমি করবিন। আবার বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন। নেতৃত্ব নেয়ার দু বছর না যেতেই সাধারণ নির্বাচনের মুখোমুখি হতে হয়েছে তাকে।
সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম জেরেমি বার্নার্ড করবিনের। উইল্টশায়ার কাউন্টির কিংটন সেন্ট মাইকেল নামে ছবির মত এক গ্রামে ছেলেবেলা কাটে তার। চার ভাইয়ের সবচেয়ে ছোট ছিলেন তিনি। মা ছিলেন শিক্ষক, বাবা ছিলেন প্রকৌশলী। কিন্তু দু’জনেই যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনের কর্মী ছিলেন। বাড়িতে রাজনীতি নিয়ে নিয়মিত আলোচনা বিতর্ক হতো। জেরেমি করবিনের বড় ভাই পিয়েরস একজন কড়া বামপন্থী। স্কুল ছাড়ার প্রায় পরপরই পোশাক শ্রমিকদের ইউনিয়নের সাথে যুক্ত হন জেরেমি করবিন। পরে ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ইলেকট্রিকাল ইউনিয়নে এবং ন্যাশনাল ইউনিয়ন অব পাবলিক এমপ্লয়িজের সাথে যুক্ত হন। কিন্তু তার আসল উৎসাহ ছিলো লেবার পার্টি। ১৯৭৪ সালে লেবার পার্টির পক্ষ থেকে উত্তর লন্ডনের হ্যারিংগে কাউন্সিলের নির্বাচিত হন তিনি। ঐ একই বছর সহকর্মী নারী কাউন্সিলর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জেন চ্যাপম্যানের সাথে তার বিয়ে হয়।
মিস চ্যাপম্যান বলেছিলেন, মি করবিনের ‘সততা’ এবং ‘নৈতিকতায়’ আকৃষ্ট হয়ে তাকে বিয়ে করেন তিনি। কিন্তু রাজনীতির প্রতি তার আসক্তিতে হতাশ হয়ে পড়েননি মিস চ্যাপম্যান। ‘রাজনীতি আমাদের জীবন হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। প্রতি সন্ধ্যাতেই জেরেমি বাইরে থাকতো’।
মিস চ্যাপম্যান এক সাক্ষাৎকারে বলেন, পাঁচ বছরের বিবাহিত জীবনে একদিনও তাকে রেস্তোরাঁয় খেতে নিয়ে যাননি জেরেমি করবিন। বিয়ে টেকেনি বেশিদিন কিন্তু তারা যোগাযোগ রেখেছেন। নিজের সাদাসিধে জীবনযাপন নিয়ে জেরেমি করবিন ২০১৫ সালে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমি বেশি টাকা পয়সা খরচ করি না, খুব সাধারণ জীবন আমার। আমার কোনো গাড়ি নেই। সাইকেলে যাতায়াত করি। আমি উচ্চশিক্ষায় যাইনি কখনো, ফলে যাদের উচ্চশিক্ষা নেই, তাদের প্রতি নিচু চোখে তাকাইনি। আবার যাদের উঁচু ডিগ্রি রয়েছে তাদের প্রতি আমি বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকিনি। আমাদের রাস্তাগুলো যারা ঝাড় দিচ্ছেন, তাদের অনেকেই এই সমাজের অত্যন্ত মেধাবী লোকজন’। ১৯৮৭ তে চিলির একজন রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী ক্লডিয়া ব্রাশিটাকে দ্বিতীয়বারের মত বিয়ে করেন করবিন। এই বিয়ে থেকেই তিনটি ছেলে। এক ছেলে লেবার পার্টিতে। এই বিয়েও টেকেনি। ১৯৯৯ তে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। পরে ২০১২ সালে মেক্সিকোর একজন মানবাধিকার আইনজীবীকে বিয়ে করেন মি. করবিন।
১৯৮৩ তে লন্ডনের ইজলিংটন এলাকা থেকে লেবার পার্টির হয়ে প্রথম এমপি নির্বাচিত হন মি. করবিন। তখন থেকে বারবারই তিনি সেখানকার এমপি। টনি বেøয়ারও উত্তর লন্ডনের একই এলাকার বাসিন্দা। একই সময়ে দু’জন সংসদে ঢোকেন। কিন্তু রাজনীতি তাদের ব্যবধান বিশাল।
টনি বেøয়ারের অবাধ বাণিজ্য নীতির ঘোর বিরোধী ছিলেন জেরেমি করবিন। সে জন্য বার বার সরকারের আনা বিভিন্ন প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন তিনি। দলের নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করেছেন। ৭০ এবং ৮০র দশকে লেবার পার্টিতে যখন অর্ন্তকলহ চরমে ওঠে, মি করবিন তখন দলের বামপন্থী অংশের সাথে ছিলেন। লেবার পার্টির প্রয়াত বাম নেতা টনি বেনের শিষ্য ছিলেন তিনি। টনি বেনের গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রের ধারণায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। দু’জনেই বিশ্বাস করতেন রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা সরকারের হাতে থাকতে হবে। একতরফা পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের সমর্থক ছিলেন তারা। অভিন্ন আয়ারল্যান্ডের সপক্ষে প্রকাশ্যে কথা বলেছেন।
ফিলিস্তিনীদের স্বশাসনের পক্ষে কথা বলেছেন সবসময়। শান্তি আলোচনায় হামাসকে অন্তর্ভুক্ত করতে বলেছেন। একসময় আইআরএ’র সাথে মীমাংসা আলোচনার কথা বলেছেন। ৮ জুনের নির্বাচনী প্রচারণায় প্রতিদ্বন্দি কনজারভেটিভ এবং দক্ষিণপন্থী মিডিয়া এই সব প্রশ্ন তুলে তাকে ঘায়েল করার চেষ্টা করেছে। তবে সেসব অগ্রাহ্য করে জেরেমি করবিন ক্রমাগত শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো, রেলখাতের রাষ্ট্রীয়করণ এবং সামাজিক-অর্থনৈতিক বৈষম্য কমানোর কথা বলে গেছেন। বহু মানুষ তার এই সব বার্তায় আকৃষ্ট হয়েছে। সূত্র : এএফপি, বিবিসি ও রয়টার্স।



 

Show all comments
  • ফাহাদ ১০ জুন, ২০১৭, ২:৪১ এএম says : 0
    থেরেসা মে ও তার দল ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টিকে অভিনন্দন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যুক্তরাজ্যে নির্বাচন
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ