Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চালের দাম বৃদ্ধি

নিম্ন আয়ের মানুষের মানবেতর জীবন-যাপন

| প্রকাশের সময় : ১০ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইখতিয়ার উদ্দিন সাগর
হাফিজ উদ্দিন রিকশা চালিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৫০০ টাকা আয় করেন। সে পরিবার নিয়ে একটি বস্তি এলাকায় থাকে। আগে সংসার চালিয়ে প্রতিদিন কিছু টাকা তাঁর জমা থাকতো। ওই জমার টাকা দিয়ে অসুস্থ সময়ে পরিবারের খরচ চালাতো। কিন্তু বর্তমানে মোটা চালের দাম আগের বছর তুলনায় ৪২ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ায় হাফিসের টাকা এখন আর জমা থাকে না। বরং এখন পরিবারের প্রতিদিনের চাহিদা মেটাতে ধার-দেনাও করতে হয় বলে তিনি জানান। হাফিজ বলেন, চালের দাম এতো বেশি বেড়েছে বাচ্চাদের আগের মতো ঠিক করে খেতে দিতে পারি না। নিজেরাও ঠিক মতো তিন বেলা খায় না। আর অসুস্থ সময়ে তো আরো র্দূভোগের সাথে সময় পার করতে হয়।
হাফিজ উদ্দিনের মতো মানুষেরা গত এক বছর আগেও স্বস্তিতে ছিলেন, কিন্তু এখন তাদের মতো সীমিত আয়ে মানুষেরা বেশি কিছুদিন ধরে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। বিশ্বের মধ্যে মোটা চালের দাম এখন বাংলাদেশেই সবচেয়ে বেশি। বেড়েছে সব ধরনের মাঝারি ও সরু চালের দামও। ফলে স্বস্তিতে নেই সীমিত আয়ের মানুষেরা।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, এক বছর আগে যে মোটা চাল পাওয়া যেত ৩২ টাকা কেজিতে, এখন সেটা বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৪৭ টাকায়। এই হিসাবে, গত এক বছরে মোটা চালের দর ৪২ শতাংশর বেশি বেড়েছে। কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (ক্যাব) হিসাবে, ২০১৫ সালে মোটা চালের গড় দাম ছিল মানভেদে ৩৩ থেকে ৩৫ টাকা। সর্বশেষ মে মাসে গড় দাম ৪৫-৪৬ টাকায় উঠেছে। এখন তা আরও বেশি। এছাড়া রাজধানীর খুচরা বাজারে এখন মাঝারি মানের চাল ৫২-৫৪ টাকা ও সরু চাল ৫৮-৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। যা গত বছরের থেকে কেজিতে ৮-১০ বেশি গুনতে হচ্ছে ক্রেতাদের।
জানা যায়, প্রতিবেশী দেশ ভারতে প্রতি কেজি চালের দাম ৩৫, থাইল্যান্ডে ৩৮ টাকা ও পাকিস্থানে ৩৯ টাকা। এর বাইরে বিশ্বের সর্ববৃহৎ চাল উৎপাদনকারী দেশ চীন ও ইন্দোনেশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র চাল উৎপাদন করলেও তারা তা আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রি করে না। উল্টো তারা কিছু চাল আমদানি করে থাকে। এই হিসেবে সবচেয়ে বেশি দামে বাংলাদেশেই চাল বিক্রি হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের সামনের ফুটপাতে নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে ভাত বিক্রি করেন কয়েকজন মহিলা। ওখানে দীর্ঘদিন ধরেই ভাত খায় নি¤œ আয়ের শ্রমিক আব্দুল মজিদ। জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে ৮ টাকা প্লেট ভাত ছিল, তখন প্রতিদিন সন্ধায় এখান থেকে দেড় প্লেট করে ভাত খেতাম। কিন্তু এখন প্লেট প্রতি ভাতের দাম ১২ টাকা করে নেওয়ায় বেশির ভাগ সময় এক প্লেট ভাত খায়। শুধু আমি নয় আমার মতো যারা এ ভাবে রাস্তা থেকে ভাত কিনে খায় সবাই এখন কম খেয়ে থাকে। তিনি আরো বলেন, আমাদের মতো শ্রমিকের শ্রমের দাম বাড়েনি। কিন্তু প্রতিবছরই সব জিনিসের দাম বাড়ছে। বিশেষ করে চালের দাম তো আকাশছোঁয়া হয়ে যাচ্ছে।
কার্জন হলের ওখানে খাবার ব্যবসায়ী ফরিদা বলেন, মাঝারি ধরনের চাল এক বছর আগে ৪০ টাকা কেজি দরে কিনতেন। এখন ৫৪ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এতে ভাতের খরচ বেড়েছে, তাই আমরাও দাম বাড়েছি। এতে করে এখানে খেতে আসা বেশির বেশিভাগ মানুষ আগের থেকে খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে বলেও তিনি জানান।
পরিবার নিয়ে আজিমপুর এলাকায় বসবাস করে ঢাকা মেডিকেল কলেজের কর্মচারী আমজাদ হোসেন। তাঁর পরিবারের সদস্য ৫ জন। আগে তাঁর চাল বাবদ মাসে যা খরচ হতো, এখন প্রতি মাসে আরো ১৫০০ টাকা বেশি খরচ করতে হচ্ছে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, চালের দামে বেড়ে যাওয়ায় খরচ বেড়েছে। কিন্তু সেই হিসাবে আয় বাড়েনি। আগের মতোই সব খাতের খরচ আছে। তারপরও কিছু কিছু খরচ কমিয়ে চালের জন্য বরাদ্দ বাড়াতে হচ্ছে। এতে কষ্টের সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
সংশ্লিষ্টদের মতে, মোটা চালের দাম ৪৭ টাকা হয়ে যাওয়ায় প্রায় ২ কোটি নিম্নবিত্ত পরিবারের খাদ্যনিরাপত্তায় মারাত্মক হুমকি তৈরি হয়েছে। চাল এখনো খাদ্যতালিকার প্রধান খাদ্য। এর দাম বাড়লে নিম্ন আয়ের মানুষেরা দৈনিক খাদ্যের পরিমাণ ঠিক রাখতে গিয়ে অন্যান্য খরচ কমিয়ে ফেলেন। অথবা অনেক সময় দেনাও করতে হয়। ফলে চালের দাম বাড়লে অবধারিতভাবে একটা প্রভাব পড়ে, সেটা কষ্টের।
খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, চালের দাম বেড়েছে এটা ঠিক। তবে তা কমে আসবে। চাল আমদানি করা হচ্ছে। এর প্রভাব পড়বে। তবে কবে নাগাদ বাজার স্থিতিশীল হবে, সে ব্যাপারে তিনি কিছু বলতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চাল

১১ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ