পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশেষ সংবাদদাতা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাটকে কৃষিপণ্য হিসেবে ঘোষণা করে বলেছেন, পাটকে এখন থেকে কৃষিপণ্য হিসেবে বিবেচনা করা হবে। পাট উৎপাদন, বিপণন ও রপ্তানির ক্ষেত্রে কৃষিপণ্য হিসেবে প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধাগুলো এখানে প্রদান করা হবে। তিনি পরিবেশবান্ধব তন্তু হিসেবে পাটের বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করে কৃষকদের স্বার্থ রক্ষার আহবান জানিয়ে বলেন, পাট খাতের মাধ্যমে এখনও বাংলাদেশের বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ রয়েছে।
শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় এ সময় মজুরি কমিশন গঠনেরও ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষার বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছি। সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গতি রক্ষার্থে সরকার শ্রমিকদেরও মজুরি বৃদ্ধির জন্য শিগগিরই মজুরি কমিশন গঠন করতে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল রোববার সকালে রাজধানীতে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন-২০১০’-এর সফল বাস্তবায়নে সম্মাননা প্রদান এবং তিন দিনব্যপী বহুমুখী পাটজাত পণ্য মেলা-২০১৬-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী মুহম্মদ ইমাজউদ্দিন প্রামাণিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মীর্জা আজম এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী এমপি। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব শহিদ উল্লাহ খন্দকার অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্যবৃন্দ, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দপ্তর এবং অধিদপ্তরের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, কূটনৈতিক মিশনের সদস্য, আন্তর্জাতিক সহযোগী সংগঠনের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন-২০১০’-এর সফল বাস্তবায়নে ১৩টি ক্যাটাগরিতে বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এবং আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী সংস্থাসহ পুরস্কৃত করা হয়।
পাট আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের বাংলাদেশ তথা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের পাট রফতানির অর্থ পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হতো। পাকিস্তানের মোট রফতানি আয়ের দুই-তৃতীয়াংশ আসত পাট থেকে। ছয় দফা ঘোষণায় বঙ্গবন্ধু অর্থনৈতিক বৈষম্যের ক্ষেত্রে পাটের এ বিষয়টি তুলে ধরেন। সত্তরের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী পোস্টারে পাট গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু ছিল।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সময় দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই। কারো কাছে হাত পেতে নয়, কারো কাছে ভিক্ষা করে নয়, বিশ্ব সভায় মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে বাংলাদেশ। আমাদের যে সম্পদ আছে, তা কাজে লাগিয়ে আমাদের চলতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন, বিশ্ব ব্যাংকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে দেশের পাটকল বন্ধ করে দিয়েছে বিএনপি। যেখানে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থে ভারতে নতুন নতুন পাটকল গড়ে তোলা হচ্ছিল তখন সেই বিশ্ব ব্যাংকের টাকা খেয়েই বিএনপি এদেশের পাটকলসহ শিল্প কারখানা গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে বন্ধ করে দিতে থাকে। ১৯৯১ সালে পার্লামেন্টে পাটকল বন্ধের কথা তোলা হলে আওয়ামী লীগ এর তীব্র বিরোধিতা করে। ঠিক সেই সময়েই ভারত পাটশিল্পকে গুরুত্ব দিয়ে পাটকল চালু করতে থাকে। কিন্তু সোনালি আঁশের দেশ হলেও আমাদের দেশে বন্ধ হতে থাকে পাটকলগুলো।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ২০০২ সালের ৩০ জুন এশিয়ার সর্ববৃহৎ পাটকল আদমজি মিল বন্ধ করে দেয় বিএনপি। এতে মিলের হাজার হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিক বেকার হয়ে পড়ে।
বস্ত্র ও পাট খাতের গত কয়েক বছরের উন্নতি ও সমৃদ্ধির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বিশ্বাস করি, পাটের এখনো সেই অর্থনৈতিক সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা বিশ্বের সবচেয়ে উন্নতমানের পাট উৎপাদন করি। তিনি বলেন, জাতিসংঘ ২০০৯ সালকে ‘আন্তর্জাতিক প্রাকৃতিক তন্তুবর্ষ’ ঘোষণা করে। আমাদের সরকার পরিবেশবান্ধব পাটের ব্যবহার ও চাহিদা বৃদ্ধির জন্য ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন-২০১০’ প্রণয়ন করে। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন জোরদার হওয়ায় পরিবেশবান্ধব পণ্য হিসেবে পাটের ব্যাপক চাহিদা বৃদ্ধির সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন বাস্তবায়নের জন্য দেশব্যাপী বিশেষ অভিযান পরিচালনার ফলে আইনটির প্রায় শতভাগ বাস্তবায়ন নিশ্চিত হয়েছে। পাটের ব্যবহার বেড়েছে। উল্লেখিত সময়ে আমাদের অভ্যন্তরীণ বাজারে বছরে পাটের ব্যাগের চাহিদা ১০ কোটি থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৭০ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি পাটকলসমূহে কর্মচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে।
তিনি বলেন, শুধু রপ্তানি নয়, আমাদের দেশের ভেতর যে বড় বাজার রয়েছে। সেটিকেই আমাদের ধরতে হবে। বন্ধ পাটকলসমূহ পুনরায় চালু করায় ব্যাপক কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পরিবেশবান্ধব পাটপণ্যকে বহুমুখী করার বিষয়টিকে আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছি। জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টারের মাধ্যমে (জেডিপিসি) এ লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। বহুমুখী পাটপণ্যের উদ্যোক্তাগণ দৃষ্টিনন্দন পাটপণ্য উৎপাদন করছেন, যার অধিকাংশই বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। বহুমুখী পাটপণ্যকে দেশে জনপ্রিয় করতে নানা রকম উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, পাটের বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করায় পাট থেকে ১০০ ধরনের পণ্য তৈরি হচ্ছে। পাটের চা স্বাস্থ্যকর, পাটশাক খেতে সুস্বাদু, পাটের শাড়ি, স্যান্ডেল, গাড়ির সান রুফ, কার্পেট, ব্যাগ প্রভৃতি এখন পাট থেকে তৈরি হচ্ছে।
‘জুট জিও টেক্সটাইল’ আমরা সফলভাবে উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছি দেশে ও বিদেশে এর ব্যাপক চাহিদা থাকায় জুট জিও টেক্সটাইল আমাদের পাটের সম্ভাবনাকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাটের বহুমুখী ব্যবহার এবং পাটের উন্নত চাষাবাদের জন্য আমাদের গবেষকরা কাজ করছেন। আমাদের বিজ্ঞানী মরহুম ড. মাকসুদুল আলমের নেতৃত্বে পাটের জিন রহস্য উন্মোচিত হয়েছে। ফলে পাটের উন্নত চাষাবাদের নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। পাট আমাদের নিজস্ব পণ্য হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করে এ দেশের মানুষের সার্বিক উন্নয়নে সরকার বদ্ধপরিকর। আমাদের সরকার ব্যবসাবান্ধব সরকার। বাংলাদেশের ব্যবসা ও শিল্পে সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করে ব্যবসায়ীদের সার্বিক সহযোগিতা প্রদান আমাদের লক্ষ্য। আমরা বিশ্বাস করি সরকারি-বেসরকারি পূর্ণ সহযোগিতার মাধ্যমে আমাদের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, শান্তিময়, উন্নত-সমৃদ্ধ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলাই সরকারের লক্ষ্য বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত ফিজির মানুষের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ১ মিলিয়ন ডলার সহায়তা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফিজিতে সাম্প্রতিক ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য নগদ এক মিলিয়ন ডলার (প্রায় আট কোটি টাকা) সহায়তা প্রদান করেছেন। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের (পিএমও) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়েছে।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের এই দ্বীপ রাষ্ট্রে ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে ‘মানবিক বিপর্যয়’ দেখা দিয়েছে। ফিজির জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অফিসের তথ্যমতে, ভয়াবহতার দিক দিয়ে ঘূর্ণিঝড় উইনস্টন দক্ষিণ গোলার্ধের জন্য একটি রেকর্ড, এতে ফিজির ৪২ জন মানুষ নিহত হন এবং শত-সহস্র মানুষ গৃহহীন হয়েছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এর আগেও ২০১৫ সালে ২৫ এপ্রিল নেপালের ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর নগদ অর্থ ও খাদ্য সহায়তা প্রদান করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।