পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রফিকুল ইসলাম সেলিম : আযান হতেই সবাই একসাথে ইফতারি মুখে নিচ্ছেন। একসাথে কাতারবন্দি হচ্ছেন নামাজে। মসজিদে মসজিদে নামাজের পাশাপাশি চলছে সম্মিলিত ইফতারের আয়োজন। অফিস-আদালত, ব্যাংক-বীমা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সর্বত্রই জামায়াতে নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা।
বাদ যায়নি হোটেল, রেস্টুরেন্ট, মার্কেট, বিপণী কেন্দ্র, শপিংমলও। সব জায়গাতেই রয়েছে নামায আদায়ের সুব্যবস্থা। মসজিদগুলোতে মুসল্লিদের উপচেপড়া ভীড়। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সবশ্রেণি পেশা ও বয়সের মানুষের ঢল মসজিদে। ফজর থেকে ইশা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজেই মুসল্লিদের সমান ভিড়। পবিত্র মাহে রমজানে এমন চিত্র বার আউলিয়ার পুণ্যস্মৃতি বিজড়িত চট্টগ্রামের সর্বত্রই। রহমত, মাগফিরাত আর নাজাতের মাস রমজানের শুরু থেকেই পাল্টে যায় দৃশ্যপট। সর্বত্রই এখন ইসলামের সুমহান ভ্রাতৃত্ব, সাম্য ও সহমর্মিতার পরিবেশ। চারিদিকে ইসলামী সংস্কৃতির পবিত্র আবহ সিয়াম সাধনারত মুসলমানদের ঈমানী চেতনাকে যেন আর শানিত করে তুলছে।
বিভিন্ন পর্যায়ে ইফতার মাহফিল আয়োজনের মধ্যদিয়ে মানুষে মানুষে সংযোগের পাশাপাশি সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনেও ভ্রাতৃত্বের পরিবেশ বিরাজ করছে। সুদৃঢ় হচ্ছে সামাজিক, পারিবারিক ও আত্মীয়তার বন্ধন। বেড়েছে দান খয়রাত-তাতে উপকৃত হচ্ছে সমাজে অবহেলিত ও দুস্থরা। রোজার শুরুতেই বদলে গেছে অফিস সময়সূচি। বদলে গেছে মহানগরীর বাসিন্দাদের জীবন যাত্রাও। সেহেরী শেষে নামাজে ফজর-তার পর কিছুটা বিশ্রাম শেষে সকলে ছুটছেন কর্মস্থলে। জোহরের নামাজ আদায় করতে হচ্ছে কর্মস্থলে। আযান হতেই কেউ ছুটছেন পাশের মসজিদে, আবার কেউ অজু সেরে অফিসেই নামায আদায় করছেন। প্রায় প্রতিটি অফিসে এখন নামাযের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অফিসের শীর্ষ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে পিয়ন পর্যন্ত এককাতারে শামিল হচ্ছেন নামাযে। অফিস, আদালত, ব্যাংক-বীমা, হাসপাতালের পাশাপাশি মার্কেট বিপণী কেন্দ্র এবং রেস্টুরেন্টগুলোতেও নামায আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মহানগরীর মসজিদগুলোতেও মুসল্লিদের ভিড়। পাড়া-মহল্লার ছেলে-বুড়ো সবাই ছুটছেন মসজিদে। স্থানীয়রা জানায়, চট্টগ্রামে মূলত পবিত্র শবে বরাতের দিন থেকেই মসজিদমুখি মানুষের ভিড় বেড়ে যায়। যা মাহে রমজানেও অব্যাহত থাকে। মুসল্লিদের ভিড়ে প্রায় প্রতিটি মসজিদ ঠাসা। মুসল্লিদের কাতার মসজিদের বারান্দা ছাড়িয়ে রাস্তা অবধি বিস্তৃত হচ্ছে। বিশেষ করে তারাবিহ নামাজে সবচেয়ে বেশি মুসল্লির ভিড় হচ্ছে মসজিদে। মহানগরীর প্রায় প্রতিটি মসজিদে চলছে খতমে তারাবিহ। তাতে শামিল হচ্ছেন রোজাদাররা। নগরীর ঐতিহাসিক আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ, জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ, আমানত শাহ দরগাহ মসজিদ, লালদীঘি জামে মসজিদ, চকবাজার অলিখাঁ মসজিদ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, মুরাদপুর মসজিদে বেলাল, ধনিয়ালাপাড়া বায়তুশ শরফ জামে মসজিদ, বহদ্দারহাট জামে মসজিদ, আগ্রাবাদ জাম্বুরি ময়দান জামে মসজিদসহ নগরীর প্রতিটি সমজিদে নামাযিদের ভিড়।
অনেক মসজিদে সম্মিলিত ইফতারের আয়োজন করা হচ্ছে। আছরের নামাযের পর মুসল্লিরা মসজিদে অবস্থান করে কোরআন তিলাওয়াতের পাশাপাশি দোয়া-দরূদ পাঠ করছেন-অপেক্ষা করছেন ইফতারির জন্য। মসজিদে মসজিদে ইফতারিতে শরিক হতে দূর-দূরান্ত থেকেও অনেকে আসছেন। ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সবশ্রেণি পেশার মানুষ এক কাতারে বসে ইফতার সারছেন। অধিক সওয়াবের আশায় অনেকে বাসায় ইফতার রেখে মসজিদে গিয়ে ইফতার সারছেন। ধনাঢ্য ব্যক্তিরা মসজিদে ইফতারির আয়োজনে সহযোগিতা করছেন। পাড়া-মহল্লার মসজিদেও সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ইফতারের আয়োজন চলছে। বাসা-বাড়ি থেকে তৈরী করা ইফতার সামগ্রী পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে মসজিদে মসজিদে। প্রতিবেশিদের বাসা-বাড়িতে ইফতারি পাঠানোর রেওয়াজও এখানে দীর্ঘদিনের। প্রতিবেশীর বাসায় ইফতারি পাঠানোর পাশাপাশি বাসা-বাড়িতেই চলছে ইফতার মাহফিল। তাতে শরিক হচ্ছেন নিকট আত্মীয় ও প্রতিবেশিরা। এতে মানুষে মানুষে সম্প্রতি বাড়ছে-সুদৃঢ় হচ্ছে সামাজিক বন্ধন।
বড় বড় রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, সামাজিক, পেশাজীবী ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের আয়োজনেও চলছে ইফতার মাহফিল। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মতো বড় রাজনৈতিক দলগুলো তাদের তৃণমূলকে সুসংগঠিত করতে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করছে। আবার একদলের ইফতার মাহফিলে অন্যদলের নেতাদের দাওয়াত করে এনে আপ্যায়নের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনেও সমঝোতা আর সৌহাদ্যের পরিবেশ সৃষ্টি করছে। ইফতার মাহফিলগুলোতে মাহে রমজানের তাৎপর্য আলোচনার পাশাপাশি দোয়াও মিলাদ মাহফিল এবং বিশেষ মোনাজাতে মহান আল্লাহর রহমত কামনা করা হচ্ছে।
মহানগরীর হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোতেও বাহারি ইফতারের আয়োজন চলছে। পাঁচ তারকা হোটেল থেকে শুরু করে পাড়ার চায়ের দোকানেও মিলছে ইফতার সামগ্রী। হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোর সাজ-সজ্জাতেও ইসলামী সংস্কৃতির আবহ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। তারকা হোটেলগুলোর প্রবেশ পথ ও লবিতে ইসলামী ক্যালিওগ্রাফি শোভা পাচ্ছে। উৎকীর্ণ করা হয়েছে মহাগ্রন্থ আল কোরআনের বিভিন্ন আয়াত। পশ্চিমা মিউজিকের বদলে বাজছে কোরআন তিলাওয়াত, ইসলামী সঙ্গীত। মার্কেটগুলোতে ‘আহলান সাহলান’ স্বাগত মাহে রমাদান খচিত ব্যানার ফেস্টুন শোভা পাচ্ছে। ঈদ বাজারের পোশাক আশাকেও ইসলামী সংস্কৃতিকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।
মাহে রমজানে বেড়েছে দান-খয়রাত। রোজার আগে থেকেই ধনাঢ্য ব্যক্তিরা দুস্থ ও হতদরিদ্রদের মাঝে ইফতার ও সেহেরি সামগ্রী বিতরণ করছেন। দেয়া হচ্ছে যাকাত, ফিতরাও। বিভিন্ন এলাকা থেকে মসজিদ ও এতিমখানার জন্য সাহায্য নিতে নগরীতে আসছেন অনেকে। নগরবাসীও তাদের বিমুখ করছেন না। বাসাবাড়িতে দান-খয়রাত চলছে। মহিলারা রান্নাবান্নার পাশাপাশি নামায, তিলাওয়াতসহ নানা ইবাদত বন্দেগী করছেন। রোজায় স্কুল ছুটি এ সুযোগে ছেলে-মেয়েদের কোরআন শিক্ষায় আরও মনোযোগী হয়েছেন অভিভাবকরা। বাসাবাড়িতে হাফেজ কিংবা আরবি শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। শিশুদের কোরআন শিক্ষার পাশাপাশি বাড়ির মুরুব্বিদের মাগফিরাত কামনায় তারা খতমে কোরআন ও দোয়া মাহফিল করছেন। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া প্রায় প্রতিটি বাসাবাড়িতে চলছে ইসলামী অনুশাসনের চর্চা। সিয়াম সাধনার মাস মাহে রমজানকে ঘিরে মানুষের জীবনযাত্রায় যে পরিবর্তন এসেছে তা পুরোপুরি ইসলামী সংস্কৃতির আবহকে ফুটিয়ে তুলছে। শুধু মসজিদ নয়, বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে মানুষের কর্মস্থল, ব্যবসা-বাণিজ্য, রাজনীতিক, সামাজিক ও পারিবারিক জীবনেও পরিপূর্ণ ইসলামী ভাবধারা ফুটে উঠছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।