দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
উত্তর ঃ ইসলাম ধর্মের তৃতীয় স্তম্ভ হচ্ছে রোজা। সূর্য উদয়ের কিয়ৎকাল পূর্ব থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্তউপবাস থাকা ও সে সঙ্গে সর্বপ্রকার পাপাচার থেকে প্রতিনিবৃত্ত থাকার অঙ্গীকার করে সর্বপ্রকার পানাহার ও পাপাচার থেকে নিবৃত্ত থাকাকেই রোজা বলে। আরবী ‘রমাদান’ থেকে রমজান শব্দের উৎপত্তি, যার অর্থ হল দগ্ধিকরণ, দহন বা জ্বালিয়ে দেওয়া। আরবী ভাষায় এ রোজাকে ‘সওম’ বলা হয়, যার অর্থ হল বিরত থাকা। তাই স্বভাবত পবিত্র রমজান মাসের ত্রিশটি রোজা ধর্মপ্রাণ মুসলিম নর-নারীদের জন্য এক সাধনা। রমজান মাস মুসলিম জাহানের জন্য এক অত্যন্তগুরুত্বপূর্ণ মাস। এ মাসের আগমণের সঙ্গে সঙ্গে মুসলিম সমাজে এক নতুন প্রাণচাঞ্চল্য শুরু হয়ে যায়। বিশিষ্ট মুসলমানেরা এ মাসের প্রতীক্ষায় অধীর আগ্রহে দিন কাটান।
রমজান মাস রহমত, বরকত, সৌভাগ্য, সংযম, আত্মশুদ্ধি, ধৈর্য এবং মানুষের সঙ্গে সহানুভূতি করার মাস। এ মাসের মর্যাদা অত্যন্তবেশী, কারণ প্রায় সমস্ত আসমানী কিতাব এ মাসে নাযিল বা অবতীর্ণ হয়েছিল। হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর ‘ছহিফা’, হযরত দাউদ (আঃ) এর ‘যবুর’, হযরত মুসা (আঃ) এর ‘তৌরাত’, হযরত ইসা (আঃ) এর ‘ইঞ্জিল’ ও সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর নাজিল বা অবতীর্ণ হয় ক্বোরআন। প্রতি রমজানে হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) হযরত জিবরাইল (আঃ)-কে পুরো ক্বোরআন শরীফ পড়ে শোনাতেন। তাই রমজান মাসে বেশি বেশি করে ক্বোরআন শরিফ পাঠ করা অতি পূণ্যের কাজ। এ মাসে নারী জাতি শ্রেষ্ঠা বেহেশতের সম্রাজ্ঞী হযরত ফাতেমা যাহরা (রাঃ আঃ) এর ওফাত হয় এবং এ মাসে তাঁর স্বামী চতুর্থ খলিফা শের-ই-খোদা মহাবীর হযরত আলী (রঃ) শাহাদাত বরণ করেন। পবিত্র হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে ‘পবিত্র রমজান মাসটি পেয়েও যে ব্যক্তি বেহেস্তি হতে পারেনি তার মতো দুর্ভাগ্য আর কারো নেই।’ পবিত্র হাদিস শরীফে আরো বর্ণিত আছে ‘যে ব্যক্তি রোজার মাস পেয়ে তার জীবনের পাপসমূহ মাফ করিয়ে নিতে পারেনি সে ধ্বংস হোক।’
রোজার ফজিলত সম্পর্কে খোদ আল্লাহপাক বলেন, ‘রোজা আমার জন্য এবং আমি নিজে এর প্রতিদান দেব।’ রমজান মাসে রোজা রাখা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য ফরজ বা বাধ্যতামূলক, সে পুরুষ অথবা মহিলা, ধনী বা দরিদ্র, অন্ধ বা বধির যেই হোক। একমাত্র বদ্ধ পাগল ও ছোট ছেলেমেয়ে, অসুস্থ ও আরো কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে রোজা বাধ্যতামূলক নয়। যারা রোজা ভঙ্গ করে এবং রমজান শরিফকে অবহেলা করে তাদের জন্য কঠিন আযাব রয়েছে। কিয়ামতের দিন একদল দোজখি লোককে দোজখ থেকে উদ্ধার করতে গিয়ে দোজখের দারোগা মালিককে তাদের দোজখে নিক্ষিপ্ত হবার কারণ জিজ্ঞেস করবেন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এবং মালিক উত্তর দিবেন রোজাকে অবহেলা করার জন্য তাদের এ শাস্তি। এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন যারা রমজান শরিফের উপযুক্ত মর্যাদা দেয় না তাদের জিম্মা আমি নিব না। এতে প্রতীয়মান হয় যে, এমন কোন গোনাহ নেই যার জন্য নবী করিম (সাঃ) সুপারিশ করবেন না, একমাত্র রোজার গাফিলতি ব্যতীত।
রমজান মাসের বিশেষ ও প্রধান কাজ হল রোজা পালন করা। রমজান মাসের রোজা পালনের দ্বারা মানুষের দৈহিক ও আত্মিক উৎকর্ষ সাধন হয়ে থাকে। রমজান মাসের রোজাদারদের জন্য একটি বিশেষ আমল হচ্ছে তারাবীর নামাজ। এ নামাজ পড়া সুন্নত। যে ব্যক্তি কোন কারণবশত রোজা রাখেননি তার জন্যও এ নামজ পড়া সুন্নত। না পড়লে গোনাহ হবে। নবী করিম (সাঃ) এরশাদ করেন ‘আল্লাহতায়ালা তোমাদের জন্য মাহে রমজানের রোজা ফরজ করেছেন আর আমি সুন্নত হিসেবে তারাবীর নামাজকে বিধিবদ্ধ করলাম।’ রোজা হচ্ছে ঢালস্বরূপ, সুতরাং অশ্লীলতা করবে না। কেউ যদি ঝগড়া করতে চায় তবে বলবে ‘আমি রোজাদার’। একমাত্র এ রমজান মাসে ‘বিতির’-এর নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা হয়। আল্লাহপাক রোজার পূর্বক্ষণে ‘সাহরী’ নামক খানাকে পুণ্যময় করেছেন। আর ‘ইফতার’ সম্পর্কে নবী (সাঃ) বলেন, তোমরা যখন ইফতার কর তখন খেজুর দ্বারা ইফতার কর, কেননা এতে বরকত নিহিত আছে। খেজুর পাওয়া না গেলে পানি দ্বারা ইফতার কর কেননা ইহা পাক। মহানবী (সাঃ) বর্ণনা করেন এটি এমন একটি মাস যার প্রথম দশদিন আল্লাহর রহমত অবতীর্ণ হয়, দ্বিতীয় দশদিনে মাগফেরাত ও তৃতীয় দশদিনে দোজখ থেকে মুক্তি দেয়া হয়। রহমত, মাগফেরাত ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির এমন সুবর্ণ সুযোগ অন্য কোন মাসে পাওয়া যায় না। আল্লাহপাক মাহে রমজানকে এত মহিমান্বিত করেছেন যে এর প্রতিটি মুহূর্ত অত্যন্তগুরুত্বপূর্ণ। এ মাসের নফল ইবাদতগুলো অন্য মাসের ফরজের সমান।
রমজান মাসের আরো একটি বিশেষ ইবাদত হল ‘এতেকাফ’। রমজানের শেষ দশদিনে এতেকাফ করা বিশেষ পূণ্যের কাজ। রসুলুল্লাহ (সাঃ) রমজানের শেষ দশ দিনে এতেকাফ করেছেন। রমজানের আরো একটিু বিশেষ অঙ্গ হল ‘ফিতরা’ প্রদান করা। নিজের এবং নিজের নাবালক সন্তানদের পক্ষ থেকে ‘ফিতরা’ আদায় করা অবশ্য কর্তব্য। বস্তুত রমজান মাস মানুষের সঙ্গে সহানুভূতির মাস, সংযমের মাস, রহমতের মাস, সৌভাগ্যের মাস। আল্লাহতায়ালা এ মাসে সুবেহ-সাদেক বা সূর্যোদয়ের পূর্ব থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত উপবাস থাকার নির্দেশ এ জন্য দিয়েছেন যাতে বিত্তশালীরা গরিবদের ক্ষুধার কষ্ট যন্ত্রণা প্রত্যক্ষভাবে উপলব্ধি করতে পারে এবং এতে বিত্তশালীদের মধ্যে মানবতাবোধ জাগ্রত হয়।
উত্তর দিচ্ছেন ঃ আফতাব চৌধুরী
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।