পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টালিন সরকার : দেশের টিভি মিডিয়ায় গত এক দশকে বিপ্লব ঘটে গেছে। তবে এতোদিন টিভিগুলো দর্শক চাহিদার দিকে না তাকিয়ে কোলকাতার বাংলা টিভিগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতার নামে ‘যাচ্ছে তাই’ অনুষ্ঠান প্রচারে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশে গত বছরও সিয়াম সাধনার মাস রমজানে নাটক, বিচিত্রানুষ্ঠান, আনন্দফূর্তি, নাচ-গানের প্রতি অধিক মনোযোগী ছিল ইলেক্টোনিক্স মিডিয়াগুলো। এবার প্রথম মিডিয়াগুলো দেশের দর্শকদের চাহিদার প্রতি সু-নজর দিয়ে রমজান মাসে অনুষ্ঠান সূচিতে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। বলা যায় দেশের টিভি মিডিয়ার অনুষ্ঠান সূচিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটে গেছে। হামদ্ না’ত, কেরাত প্রতিযোগিতা, রমজানের ফজিলত, আলেম-পীর-মাশায়েক-ইসলামী চিন্তাবিদদের চিন্তাশীল বয়ান, পবিত্র কোরআন খতম, কোরআন তেলাওয়াতের প্রতিযোগিতা, ক্ষুদে হাফেজদের প্রতিযোগিতা, ইসলামী চিন্তা-চেতনা নিয়ে নানা রিয়েলিটি শো, ইসলামী ঐতিহ্য সম্বলিত দর্শনীয় স্থান, দেশ বিদেশের ঐতিহাসিক মসজিদ, ইসলামী আকিদা, চিন্তা-চেতনা তুলে ধরে নানান অনুষ্ঠান প্রচার করছে। দেশের ইসলামী চিন্তাবিদ, আলেম-ওলামাদের টিভিতে উপস্থিতি ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। ইসলামী চিন্তাবিদদের মতে রমজানে টিভিগুলোর অনুষ্ঠান সূচির এই পরিবর্তন ইসলামের প্রতি অনুরক্ত হওয়ার বহিঃপ্রকাশ। দর্শকদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে আগামীতে ‘ইসলামী চিন্তা-চেতনা’ নিয়ে অনুষ্ঠান প্রচারে টিভিগুলো আরো উৎসাহী হবে। পাশাপাশি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোও দর্শকদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে এ সব অনুষ্ঠানে পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচারে অগ্রাধিকার দেবেন।
মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতোই সিয়াম সাধনার মাস রমজান এলেই পাল্টে যায় এদেশের মানুষের জীবনধারা। খাদ্যাভ্যাস, আচার-আচরণ, সংস্কৃতি চর্চা, ধর্মীয় অনুশাসন পালন এবং চিন্তা-চেতনায় ঘটে ব্যাপক পরিবর্তন। অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের যাপিত জীবনে সে ঢেউ লেগেছে। মানুষ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে রোজা রাখেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন, তারাবিহ নামাজ পড়েন, কোরআন তেলাওয়াত করেন, ইফতারি ও সাহারী খান। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় সমাজের দানশীল ব্যক্তি ও সমাজসেবকরা শত-হাজার মানুষকে মাসব্যাপী ইফতারি করান; দান খয়রাত করেন। জীবন-যাপনে সঙ্গতি রেখেই সরকার প্রত্যাহিত অফিসের সময়সূচি পরিবর্তন করেছে। দর্শক চাহিদার বদলে এতোদিন রমজানে টিভি মিডিয়াগুলো ‘ঈদ উপলক্ষ্যে’ বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান নিয়ে বেশি মাতামাতি করলেও এবার ঈদের পাশাপাশি ‘রমজানের পবিত্রতা’ নিয়ে অনুষ্ঠানের প্রতি জোর দিয়েছে। রমজান উপলক্ষ্যে টিভি অনুষ্ঠানে আনা হয়েছে ব্যাপক পরিবর্তন। এমনকি যে চ্যানেলে এতোদিন আজান প্রচার করা হতো না সে চ্যানেলে ইসলামী অনুষ্ঠান প্রচার করা হচ্ছে। সাহারী, ইফতার ও রমজানের ফজিলত তুলে ধরে বয়ান প্রচার করা হচ্ছে। টকশোতে ইসলামী চিন্তাবিদদের উপস্থিতি এখন নিত্য ঘটনা। দেশের প্রায় সব চ্যানেলের অনুষ্ঠান সূচিতে এ পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। ইসলামী ধারার ওই সব অনুষ্ঠান দর্শকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ইসলামী চিন্তা-চেতনায় উদ্ধুদ্ধ হতে এবং ইসলামী কিছু শেখার প্রত্যাশায় আবালবৃদ্ধবনিতা দেশী টিভিমুখী হচ্ছেন।
দেশে প্রায় ৪১টি টিভি চ্যানেল। এর মধ্যে প্রায় ৩০টি টিভি চ্যানেল সম্প্রদারে রয়েছে। প্রায় সব চ্যানেলে রমজান উপলক্ষ্যে ইসলামী ধারার কোনো না কোনো অনুষ্ঠান প্রচার করছে। কোনো কোটি টিভি চ্যানেলে রমজান উপলক্ষে ৪ থেকে ৫টি পর্যন্ত ইসলামী চিন্তা চেতনার অনুষ্ঠান প্রচার হচ্ছে। চ্যানেল আই এ রমজানের বিশেষ অনুষ্ঠান ‘রমজানুল মোবারক’ ও ‘কাফেলা’ প্রচার হচ্ছে। রমজানুল মোবারকে থাকে দর্শকদের অংশগ্রহণে রমজানের তৎপর্য নিয়ে আলোচনা। ‘কাফেলায় দেখানো হয় মিশর, তুরস্ক, সউদী আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের ইসলামী দেশগুলোর ঐতিহাসিক নির্দেশনাগুলো। মহানবীর যে সব পাহাড়ের গেছেন, যে সব স্থানে ছিলেন সে সব দর্শনীয় স্থানের সচিত্র প্রতিবেদন প্রচার করা হচ্ছে। এছাড়াও প্রতিরাতে সেহরির আগে এক ঘন্টা বাংলা তর্জমাসহ কোরআন শরীফের এক পাড়া তেলাওয়াত করা হয়। রমজানের ত্রিশ পাড়া কোরআন খতম দেয়া হবে চ্যানেল আই এ। বাংলা ভিশনে ‘পবিত্র কোরআনের আলো’ প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান প্রচার করা হচ্ছে। এ অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী ক্ষুদে হাফেজরা অংশগ্রহণ করেন। তারা কোরআন তেলাওয়াতের প্রতিযোগী। দেশেরবরেণ্য আলেমরা বিচারক হিসেবে উপস্থিত থেকে তাদের তেলাওয়াত শোনেন। শুধু কি তাই! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, জগন্না বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিসহ বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, শিল্পপতি, সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও জাঁদরেল সাবেক আমলা-কূটনীতিকরা বিচারক হিসেবে উপস্থিত থাকছেন। একটি বিষয় সম্পর্কে প্রশ্ন করে সেটা কোরআনের কোথায় কোথায় রয়েছে প্রশ্ন করলে ছোট্ট ছোট্ট হাফেজরা সুমধুর কণ্ঠে পর্যায়ক্রমে মুখস্ত সে সব পাঠ করেন। ৮ থেকে ১২ বছরের শিশু পবিত্র কোরআনের কোন পৃষ্টায় কি সুরা রয়েছে তা মুখস্ত বলে সকলকে অবাক করে দিচ্ছেন। এছাড়াও ‘নবীর দেশে পথিক বেশে’ অনুষ্ঠানে সউদী আরবের বিভিন্ন নিদর্শন নিয়ে সচিত্র প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়। নিউজ টুয়েন্টি ফোরে ‘ইফতার দেশে দেশে’ অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়। ‘লাইলাহা ইল্লালাহ’ অনুষ্ঠানে দেশ-বিদেশের ঐতিহাসিক মসজিদের সচিত্র পরিচিতি ধারাভাষ্যসহ তুলে ধরা হয়। এটিএন এ কোরআন বিষয়ক আলোচনা অনুষ্ঠান ‘ইসলামী সওয়াল জওয়াব’ এবং ‘কোথা সে মুসলমান’ নামে ইসলামী অনুষ্ঠান প্রচারিত হচ্ছে। চ্যানেল টুয়েন্টি ফোর এ ‘রমাদানের সওগাত’ প্রচারিত হয়। বৈশাখী টিভিতে ‘রমজানের স্বাস্থ্য ভাবনা’ ‘লক্ষ প্রাণের সুর’ ‘রমজানের সওগাত’ ‘রমজানে রুপচাদা’ ও রিয়ালেটি শো ‘রমজানে আল কোরআনের ধ্বনি’ প্রচারিত হচ্ছে। চ্যানেল নাইনে রিয়ালেটি শো ‘আলোকিত জ্ঞান-২০১৭’ ও ‘ইসলামী জিজ্ঞাসা’ নামে প্রশ্নোত্তর পর্ব প্রচারিত হচ্ছে। এই প্রশ্নোত্তর পর্বে মেধা যাচাইয়ে ইসলামের ইতিহাস ঐতিহ্যসহ ইসলাম ও নবী রাসুলদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। মেধা যাচাইয়ের জন্য এ অনুষ্ঠান খুবই উপযোগী। এনটিভিতে ‘বরকতময় সেহারী’ এবং ‘পিএইচপি কোরআনের আলো’ প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়। এ অনুষ্ঠানে দেশের ক্ষুদে হাফেজদের কোরআন তেলাওয়াতের প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছেন। এ অনুষ্ঠানেও দেশ বরেণ্য ব্যক্তিত্বদের উপস্থিতি লক্ষ্যনীয়। বরকতময় সেহারি ইসলামী বিষয়ক আলোচনা অনুষ্ঠান খুবই দর্শক প্রিয়তা পেয়েছে। বিজয় টিভিতে রমজান উপলক্ষ্যে ‘ইসলামী গানের আসর’ প্রতিদিন প্রচার করা হয়। এছাড়া ‘মক্কা মদিনা হজ্ব কাফেলা ও রমজানের উপহার’ নামের অনুষ্ঠান প্রচার করা হচ্ছে। এসএ টিভিতে ‘কোরআন তেলাওয়াত ও মোনাজাত’ ‘হামদ-না’ত’ ‘সাহারী মোবারক’ এবং ‘ইসলামী কুইজ’ প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠান হচ্ছে। ডিবিসি টিভিতে ‘আলোকিত রমজান’ নামে ইসলামী অনুষ্ঠান প্রচার হচ্ছে। এশিয়া টিভিতে ইসলামী দর্শনীয় স্থান তুলে ধরে অনুষ্ঠান প্রচার করা হচ্ছে। প্রতিটি অনুষ্ঠান দর্শক প্রিয়তা পাচ্ছে। রমজান উপলক্ষ্যে দেশের টিভি মিডিয়াগুলোর অনুষ্ঠানসূচিতে এই পরিবর্তন খুবই তৎপর্যপূর্ণ। অভিনন্দন জানাতেই হয় দেশের টিভি মিডিয়াগুলোর নীতি নির্ধারক ও অনুষ্ঠান নির্মাতাদের। পবিত্র রমজানে দর্শকদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে তাদের এই উদ্যোগ অভিনন্দনযোগ্য।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।