পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
খাচ্ছি বিষাক্ত খাবার অনুপযোগী মাছ
আবু হেনা মুক্তি : গেল সপ্তাহে বনবিভাগ বিষের বোতল ও বিষ দিয়ে ধরা কয়েক মণ মাছসহ ৭ জেলেকে গ্রেফতার করেছে। পুড়িয়ে দিয়েছে জাল। গত ৩ মাসে কয়েক দফায় বন বিভাগ অবৈধ জাল উদ্ধার করেছে। চলছে কোষ্টগার্ড ও র্যাবের অভিযান। তবুও থেমে নেই বিষ দিয়ে মাছ শিকার। যে কারণে বিশ্বখ্যাত ম্যানগ্রোভ ফরেষ্ট সুন্দরবনের মৎস্য ভান্ডার এখন হুমকির সম্মুখীন। চরমভাবে বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে ম্যানগ্রোভের মৎস্য প্রজনন। সুন্দরবনের অভয়ারণ্যে বিষ প্রয়োগে মাছ শিকার গত একযুগের এক সর্বনাশা প্রাকটিস। সুন্দরবনের ডাকাত, বনবিভাগ, রাজনৈতিক গডফাদার, আর মহাজন নামক দাদন ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে কোনভাবেই যেন ঠেকানো যাচ্ছে না এই সর্বনাশা মৎস্য শিকার। জেলেদের আর মহাজনদের মাধ্যমে বিভিন্ন পর্যায়ে ভাগাভাগি করে লুটে নিচ্ছে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা। স্থানীয় বনবিভাগের কর্মচারী, ষ্টেশন কর্মকর্তা, দাকোপ থানা পুলিশ, নলিয়ান পুলিশ ফাঁড়ি, জেলা ডিবি’র সদস্য এবং র্যাব কোষ্ট গার্ডের সোর্স পরিচয়দানকারী ভদ্রবেশী দুর্বৃত্তরা প্রতি মাসে এই মাসোয়ারা ভাগ বাটোয়ারা করে পকেটস্থ করছে। আর বনবিভাগের কর্তা ব্যক্তিরা ধোয়া তুলশী পাতার মত ছাফাই গাইছেন। তাদের বক্তব্য পর্যাপ্ত সাপোর্ট, নৌযানের অভাব, সোর্স মানি ও ঝুকি ভাতা না থাকায় এবং সর্বপোরি মাষ্টার প্লানের অভাবে সুন্দরবনের অভ্যন্তরে ও অভয়ারন্যে বিষ দিয়ে মাছ শিকার সম্পূর্নরূপে বন্ধ করা যাচ্ছে না। আর মানবাধিকার কর্মী ও পরিবেশবাদীরা বলছেন, বনবিভাগের উদাসীনতার কারণে এ অপরাধ দমন করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার মাছ বিষপ্রয়োগে মারা হচ্ছে। এতে শত শত মাছের প্রজাতি ধ্বংসের পাশাপাশি মৎস্য প্রজনন চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অভ্যন্তরীন মৎস্য ভান্ডার শুন্য হচ্ছে। সরকার হারাচ্ছে কোটি টাকার রাজস্ব। আর আমরা খাচ্ছি বিষাক্ত খাবার অনুপযোগী মাছ। আমিষের চাহিদা পূরণের অফুরন্ত এই ভান্ডারের রক্ষনাবেক্ষন এখন যেন সময়ের দাবি।
সূত্রমতে, ৬ হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট সুন্দরবনের স্থলভাগের পরিমান ৪ হাজার ১৪৩ বর্গকিলোমিটার ও জলভাগের পরিমানে ২ হাজার ৮৭৪ বর্গ কিলোমিটার । সুন্দরবন বন বিভাগ পূর্ব ও পশ্চিম এ দুভাগে বিভক্ত। দু বিভাগে মোট ৪টি রেঞ্জ রয়েছে। সুন্দরবনের মধ্যে ৪ শতাধিক খাল রয়েছে। এসকল খাল নদী পরিদর্শন করার জন্য ৭৬টি ক্যাম্প ও মাত্র ১৭৮ জন বন প্রহরী আছেন। যা প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত কম। সুন্দরবন রক্ষনাবেক্ষনের জন্য পর্যাপ্ত লোকবল ও সরাঞ্জামাদি নেই। তবে বর্তমানে কোষ্টগার্ড ও র্যাব সুন্দরবন সুরক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখছে। আর তাতেও আবার গাত্রদাহ বনবিভাগের। এদিকে সুন্দরবন অসংখ্য নদী নালা ও খাল দ্বারা বেষ্টিত। সুন্দরবন পূর্ব ও পশ্চিম বনবিভাগের কয়েকটি এলাকাকে অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্যগুলো হচ্ছে পূর্ব বনবিভাগের নীলকমল, হীরন পয়েন্ট, কটকা, কচিখালী এলাকার অংশ বিশেষ। কিন্তু সুন্দরবনের কটকার অভয়ারণ্য এলাকার এফজি আফজাল, বি এম মনিরুজ্জামান -২১৪, বি এম দেলোয়ার- ২২৮ ও বি এম হানিফ- ৩২৮ বিভিন্ন জেলেদের কাছ থেকে প্রতি গোনে নির্দিষ্ট মাসোয়ারা আদায় করছে। এই চক্রটি চোরা মাছ শিকারীদেরকে অভয়ারণ্যে মাছ ধরার ব্যবস্থা করে দেয়ায় মাছের প্রজনন আশংকাজনক হারে কমে যাচ্ছে। এছাড়া পশ্চিম বনবিভাগের ঝাপসি, ভদ্রা, হাডড়া, চাইলোবগী, নিষেনখালী, সাহেবখালী, বোটবুড়নিয়া, পাটকোষ্টা, হংশরাজ, পাঠাকাঠা, ভোমরখালী, আইড়ো শিবসা, সাচানাংলা সহ প্রভৃতি স্থানে বিষপ্রয়োগে মাছ ধরা চলছে। এসব এলাকার মধ্যে বেশকিছু নদী ও খাল অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এখানে প্রজনননের কারণে মাছ ধরা সম্পূর্ন নিষেধ। কিন্তু অসাধু মৎস্য শিকারীরা সুন্দরবনে বিভিন্ন খাল ও নদ নদীতে বিষ প্রয়োগ করে অবাধে নানা প্রজাতির মাছ শিকারের নামে সর্বনাশা কারবার চালাচ্ছে। এতে করে একদিকে যেমন বনের গহীনে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও মাছের পোনা ধ্বংস হচ্ছে অন্যদিকে বিষ প্রয়োগ করে শিকার করা মাছ খেয়ে জনসাধারন পেটের পীড়াসহ নানান জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এ ছাড়া বিষ প্রয়োগকৃত পানি পান করে বাঘ, হরিণসহ বনের নানা প্রাণীও বিভিন্নভাবে রোগাক্রান্ত হয়ে পড়েছে। বন বিভাগ মাঝে মধ্যে এসব মৎস্য দস্যুদের আটক করলেও বিষ প্রয়োগ করে মাছ শিকার কোন ভাবেই রোধ করা যাচ্ছে না। পূর্ব ও পশ্চিম বনবিভাগে গত একযুগ ধরে চলছে সর্বনাশা এই মাছ শিকার। এর সাথে এক শ্রেনীর মাঠ পর্যায়ের অসাধু বনকর্মচারী ও বনদস্যু বাহিনীগুলো সাপ্তাহিক চুক্তি ভিত্তিক উৎকোচ গ্রহন করে এই কর্মকান্ডের সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে আসছে। তবে র্যাবের অভিযানের কারণে ডাকাতদের তৎপরতা অনেকাংশে কমে গেছে। প্রতিবছর পূর্ব ও পশ্চিম বনবিভাগ থেকে কোটি কোটি টাকার মাছ বিষ দিয়ে মারা হয়।
অনুসন্ধানে উপকুলীয় অঞ্চলের মানুষেরা জানায়, একটি চক্র প্রতিবছর বেশ কয়েকটি গ্রæপ তৈরী করে তাদেরকে লাখ লাখ টাকা দাদন দিয়ে বিষ প্রয়োগে মাছ ধরায়। এই সিন্ডিকেটটি কয়েক বছর যাবৎ কতিপয় অসাধু বনকর্মকর্তা ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার সদস্য এবং স্থানীয় কতিপয় হলুদ সাংবাদিকদের ম্যানেজ করে এই ব্যবসা করে আসছে।
বিশেষজ্ঞ মহলের আশংকা এ ভাবে চলতে থাকলে খুব শিগগিরিই সুন্দরবন অঞ্চল মৎস্য ও প্রাণী শুন্য হয়ে যাবার পাশাপাশি এ প্রক্রিয়ার ধরা বিষাক্ত মাছ খেয়ে বিপুল সংখ্যক লোক নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বা হবে। বন বিভাগসহ সাধারন জেলেদের একাধিক সূত্র জানায়, মাছ ধরার নামে এক শ্রেনীর জেলে নামধারী দুর্বৃত্তরা কেউ পাশ পারমিট নিয়ে আবার কেউ পাশ বিহীন বনের গহিনে প্রবেশ করে অবাধে বিষ প্রয়োগ করে থাকে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।