Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

যে কারনে মৃত্যুদন্ড থেকে যাবজ্জীবন ঐশীর

| প্রকাশের সময় : ৬ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মালেক মল্লিক : পুলিশ দম্পতি (মাহফুজুর রহমান ও স্বপ্না রহমান) হত্যা মামলায় বিচারিক আদালতে মৃত্যুদন্ড হলেও কয়েকটি বিশেষ কারণে হাইকোর্ট যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন নিহত পুলিশ দম্পতির মেয়ে ঐশী রহমানকে। এসময় আদালত বলেছেন, সামাজিক অবক্ষয় বিবেচনায় নিয়ে কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে নিন্ম আদালতে ঐশীকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছিল। একটা মেয়ে তার বাবা-মাকে নিজের হাতে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করার সাহস দেখিয়েছে। কিন্তু সাজা নির্ধারণ ও বিচারের ক্ষেত্রে এ ধরনের আবেগ প্রদর্শনের সুযোগ নেই। তরে রায়ের পর রাষ্ট্রপক্ষের কৌশলী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জহিরুল হক জহির কিছুটা হলেও সন্তুষ্ট প্রকাশ করেলেও আসামীপক্ষের আইনজীবী সুজিত চাটার্জী আপিল করার ঘোষণা দিয়েছেন।
পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী স্বপ্না রহমান হত্যা মামলায় তাদেরই সস্তান ঐশী রহমানকে বিচারিক আদালতে দেয়া মৃত্যুদন্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেন। একই সঙ্গে ২০ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। গতকাল সোমবার বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের বেঞ্চ এ রায় দেন। রায়ের পূর্বে মুহুতে মৃত্যুদন্ড থেকে যাবজ্জীবন দেয়ার ব্যাখ্যার কিছু পর্যবেক্ষন দেন।
এর আগে গত ৭ মে এ মামলায় শুনানি শেষে হাইকোর্ট আদালত যেকোনোদিন রায়ের জন্য অপেক্ষমান রাখার আদেশ দিয়েছিলেন। নিহত দম্পতি’র মেয়ে ঐশী রহমানের ফাঁসির রায় অনুমোদনের জন্য নিম্ন আদালত থেকে পাঠানো ডেথ রেফারেন্স ও ঐশীর আপিলের ওপর এ রায় দিলেন আদালত।
দন্ড কমানোর কারণ সম্পর্কে ব্যাখ্যায় আদালত বলেন, মূলত কয়েকটি কারণে ঐশীর মৃত্যুদন্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন দেয়া হয়েছে। আদালত বলেন, মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামি জোড়া খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে সুস্পষ্ঠ উদ্দেশ্য ছাড়া এবং মানষিকভাবে বিচ্যুতির কারণেই। এ আসামি অ্যাজমাসহ নানা রোগে আক্রান্ত। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী তার দাদি ও মামা অনেক আগ থেকেই মানষিকভাবে বিপর্যস্ত ছিল। তার পরিবারে মানষিক বিপর্যস্তের ইতিহাস রয়েছে। ঘটনার সময় তার বয়স ছিল ১৯ বছর। সে এ ঘটনার সময় সাবালত্ব পাওয়ার মুহুর্তে ছিল। তার বিরুদ্ধে অতীতে ফৌজদারি অপরাধের নজির নেই। সে ঘটনার দুইদিন পরই স্বেচ্ছায় থানায় আত্মসমর্পন করে। উদ্ভুত পারিপার্শিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে সাজা কমানো হয়।
তার পিতা পুলিশে ও মা ডেসটিনিতে চাকরিরত ছিলেন। জীবন জীবিকা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। ঐশীকে পর্যাপ্ত সময় দিতে পারেনি। তারা যখন উপলব্দি করছিল ঠিক সেসময় তার জীবন আশক্তিতে ও উচ্ছনে চলে গেছে।
আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে মৃত্যুদন্ডকে নিরুৎসাহীত করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে মৃত্যুদন্ড কমানোর কোনো গাইডলাইন নেই। এমনকি তা বিলপ্ত করার পরিবেশ আসেনি। শিক্ষার হার বেড়েছে। জনসংখ্যাও বেড়েছে। ফলে অপরাধের প্রবনতাও বাড়ছে। এ অবস্থায় মৃত্যুদন্ড রহিত করা যুক্তি সংগত নয়। নারী হিসেবে ১৯ বছর বয়সে এ ধরণের অপরাধ করেছে। রায়ে বলা হয়, তবে সন্তানদের জন্য বাবা-মা ও অভিবাবকই হলেন প্রাথমিক শিক্ষক। এটা হিসেবে তাদের জন্য ভাল পরিবেশ ও সময় দেয়া প্রয়োজন।
আর এই সব বিষয় আমলে নিয়ে আদালত তাঁর মৃত্যদন্ডের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেন
এর আগে গত ৭ মে এ মামলায় শুনানি শেষে হাইকোর্ট আদালত যেকোনোদিন রায়ের জন্য অপেক্ষমান রাখার আদেশ দিয়েছিলেন। নিহত দম্পতি’র মেয়ে ঐশী রহমানের ফাঁসির রায় অনুমোদনের জন্য নিম্ন আদালত থেকে পাঠানো ডেথ রেফারেন্স ও ঐশীর আপিলের ওপর এ রায় দিলেন আদালত।
এর আগে গত ১০ এপ্রিল বিচারকের খাসকামরায় এ মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ঐশী রহমানের বক্তব্য শোনেন দুই বিচারপতি। কারাগার থেকে ঐশীকে হাইকোর্টে হাজির করার পর তার বক্তব্য শোনা হয়। আদালতে ঐশীর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকটে আফজাল এইচ খান ও সুজিত চাটার্জী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জহিরুল হক জহির ও সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল আতিকুল ইসলাম সেলিম।
রাজধানীর চামেলীবাগে ২০১৩ সালের ১৬ আগস্ট অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ও তাঁর স্ত্রীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরদিন ১৭ আগস্ট নিহত মাহফুজুর রহমানের ভাই মশিউর রহমান বাদী হয়ে পল্টন থানায় হত্যা মামলা করেন। ওই দিনই নিহত দম্পতির মেয়ে ঐশী রহমান পল্টন থানায় আত্মসমর্পণ করে তাঁর বাবা-মাকে নিজেই খুন করার কথা স্বীকার করেন।
এ মামলায় ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর ঢাকার একটি আদালত ঐশীকে মৃত্যুদন্ড দিয়ে রায় ঘোষনা করে। হত্যাকান্ডে সহযোগিতার দায়ে ঐশীর এক বন্ধু মিজানুর রহমানকে দুই বছরের কারাদন্ড দেওয়া হয়। অভিযোগ প্রমানিত না হওয়ায় ঐশীর আরেক বন্ধু আসাদুজ্জামান জনিকে খালাস দেওয়া হয়। এ রায়ের কপি ওই বছরের ১৯ নভেম্বর হাইকোর্টে পৌছে। এরপর প্রধান বিচারপতির নির্দেশে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন দ্রুত মামলার পেপারবুক প্রস্তুত করে। এরপর শুনানির জন্য গতবছর ৩০ নভেম্বর কার্যতালিকায় আসে। তবে এরই মধ্যে আরো তিনটি আলোচিত মামলা এ আদালতে শুনানি হওয়ায় ঐশীর মামলা পরে শুনানি হয়। গত ১২ মার্চ থেকে শুরু হয়ে ৭ মে পর্যন্ত মোট ১৩ কার্যদিবস শুনানি হয় এ মামলায়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মৃত্যুদন্ড


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ