পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নূরুল ইসলাম : নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে দিনের বেলায় ফুটপাতসহ রাস্তা দখল করে দোকান নিয়ে বসছে হকাররা। ঈদকে সামনে রেখে বিক্রি বেড়েছে। গত রোববার থেকে দ্বিগুণ হয়েছে চাঁদা। চাঁদাবাজির অভিযোগে সিটি কর্পোরেশন যে সব চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল তারাই ঈদের দোহাই দিয়ে দ্বিগুণ চাঁদা আদায় করছে বলে সাধারণ হকারদের অভিযোগ। রাজধানীর গুলিস্তান, পল্টন, মতিঝিল, ফার্মগেইট, নিউমার্কেট, মহাখালী, মোহাম্মদপুর, মিরপুর ও জুরাইন এলাকার হকারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ফুটপাতে চাঁদাবাজি বন্ধে পুলিশের কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই। বরং চাঁদাবাজরা তাদের পক্ষে পুলিশকে ব্যবহার করে। গুলিস্তানের কয়েকজন হকার অভিযোগ করে বলেন, চাঁদা না দিলে লাইনম্যানরা পুলিশকে দিয়ে নানাভাবে অত্যাচার করে। মালামাল ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলে। পুলিশের সামনেই মারধর করে।
গুলিস্তান, মতিঝিল ও পল্টন এলাকার চাঁদাবাজি মামলার আসামী লাইনম্যানদের অত্যাচারে সাধারণ হকাররা অতিষ্ঠ। বাংলাদেশ হকার্স ফেডারেশন ও হকার্স লীগের সভাপতি এম এ কাশেম বলেন, ঈদকে সামনে রেখে চাঁদার হার দ্বিগুণ করার কথা আমিও শুনেছি। তিনি বলেন, চিহ্নিত চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে সিটি কর্পোরেশন। তারপরেও তারাই কিভাবে চাঁদাবাজি করছে? পুলিশ ইচ্ছা করলেই চিহ্নিত এসব চাঁদাবাজদের ধরতে পারে।
রাজধানীর ফুটপাতগুলো হকাররা দখল করে ব্যবসা করলেও এর নেপথ্যে সরকারদলীয় প্রভাবশালী নেতা ও পুলিশ। হকাররা জানান, চাঁদা তোলার জন্য পুলিশই ‘লাইনম্যান’ নিয়োগ করে। লাইনম্যানরা চাঁদা তুলে দখলদার নেতা ও পুলিশকে বুঝিয়ে দেয়। এভাবেই চলে আসছে বছরের পর বছর। সরকার পরিবর্তন হলে নেতা বদলায়। বাকী সবই ঠিক থাকে। রাজধানীকে যানজটমুক্ত রাখার জন্য দিনের বেলায় হকারদের ফুটপাতে বসতে না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। সে লক্ষ্যে উচ্ছেদ অভিযানও চলতে থাকে। নিয়ম অনুযায়ি অফিস ছুটির পর হকাররা ফুটপাতে বসতে পারবে। কিন্তু সিটি কর্পোরেশনের অভিযানের মধ্যেই দুপুরের পর ফুটপাত দখল করে হকারদের বসতে দেখা গেছে। রমযানে এসব নিয়মের বালাই নেই। বেলা ১২টার মধ্যেই গুলিস্তান, মতিঝিল ও পল্টনের সব ফুটপাত দখল করে নেয় হকাররা। গতকাল সোমবার দুপুরে গুলিস্তান এলাকা ঘুরে দেখা গেছে ফুটপাতের সাথে রাস্তাও দখল করে নিয়েছে হকাররা। এমনকি রাস্তার উপর ভ্যানগাড়ি নামানো হয়েছে। এতে করে যানবাহন চলাচলের রাস্তা খালি নেই। যানজটে আটকে থাকছ গাড়ি। কিন্তু সেদিকে পুলিশের কোনো নজর নেই।
জানা গেছে, গুলিস্তানে ফুটপাত আছে ৩০টি। এসব ফুটপাতে হকারদের দোকান আছে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার। এর মধ্যে ২ হাজার ৫০২ জন সিটি কর্পোরেশনের তালিকাভুক্ত। বাকিরা তালিকাভুক্ত নয় এবং বেশিরভাগই রাস্তা দখল করে দোকান বসায়। এই সাড়ে ৪ হাজার দোকান থেকে প্রতিদিন গড়ে দেড়শ’ টাকা করে চাঁদা তোলা হতো। গত রোববার থেকে তা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। আগে প্রতিদিন এই চাঁদার পরিমাণ ছিল কমপক্ষে ৬ লাখ টাকা। দ্বিগুণ হওয়ার পর মাস শেষে চাঁদার পরিমাণ হবে প্রায় ৪ কোটি টাকা।
গুলিস্তান এলাকার হকারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরও রমযানের শুরুতে ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশে গুলিস্তানের রাস্তা থেকে হকারদের উচ্ছেদ করা হয়েছিল। এবার হয়েছে তার উল্টোটা। এবার রমযানে হকাররা বেপরোয়াভাবে ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে ফেলেছে। বাড়তি হিসাবে এবার ভ্যানগাড়ি নামানো হয়েছে। এতে করে দিনে রাতে যানজটের ভোগান্তি লেগেই আছে।
হকারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গুলিস্তান এলাকার ফুটপাতে আগে যেসব দোকান থেকে দিনে দেড়শ’ টাকা করে চাঁদা নেয়া হতো, এখন তা তিনশ’ টাকা হয়েছে। দুশ’ টাকার চাঁদা হয়েছে ৫শ’ টাকা। এভাবে প্রতিদিন কয়েক লাখ টাকা চাঁদা তুলছে লাইনম্যান নামধারী চিহ্নিত চাঁদাবাজরা। অথচ লাইনম্যানদের বেশিরভাগই চাঁদাবাজি মামলার আসামী। গুলিস্তান এলাকার এই চাঁদার বড় অংশ যায় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা, মতিঝিল থানা ও সার্জেন্ট আহাদ পুলিশ বক্সের কর্মকর্তাদের পকেটে। অথচ যারা সরাসরি এই চাঁদা তোলে তারা সব সময় থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে। জানা গেছে, গুলিস্তান সুন্দরবন স্কোয়ারের উত্তর পাশের ফুটপাত থেকে চাঁদা তোলে মোটা জজ, বাবুল, আমীর হোসেন, ভোলা ও কানা সিরাজ। গুলিস্তানের সবচেয়ে ব্যস্ততম এলাকা বলে এখানকার দর একটু বেশি। হকাররা জানান, এখানে ফুটপাতের দোকানগুলোর চাঁদা আগে ছিল দেড়শ’ টাকা। এখন হয়েছে তিনশ’। বঙ্গভবনের পার্কের সামনে সার্জেন্ট আহাদ পুলিশ বক্সের সাথের ফুটপাতের দোকান থেকে চাঁদা তোলে লম্বা হারুন ও তার শ্যালক দেলোয়ার। গুলিস্তান ট্রেড সেন্টারের (গুলিস্তান সিনেমা হল) পূর্ব পাশের ফুটপাত ও রাস্তার দোকান থেকে চাঁদা তোলে সরদার বাবুল। গুলিস্তান হলের (এখন নেই) উত্তর পাশের ফুটপাত থেকে চাঁদা তোলে খোরশেদ ও হাসান। রাজধানী হোটেলের সামনের ফুটপাত ও রাস্তার দোকান থেকে চাঁদা তোলে হিন্দু বাবুল ও রব। জাতীয় গ্রন্থভবনের সামনের রাস্তা ও ফুটপাতের দোকান থেকে চাঁদা তোলে সুলতান ও লিপু। রমনা ভবনের পশ্চিম পার্শ্বের রাস্তা ও ফুটপাতের দোকান থেকে চাঁদা তোলে মনির ও তরিক আলী। পূর্ণিমা ¯œাকসের সামনের রাস্তা ও ফুটপাতের দোকান থেকে চাঁদা তোলে আখতার ও জাহাঙ্গীর। বেলতলা বেল্টের গলির রাস্তা ও ফুটপাত থেকে চাঁদা তোলে কালা নবী, বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের সোনালী ব্যাংকের সামনের রাস্তা ও ফুটপাতের দোকান থেকে চাঁদা তোলে সাবেক সর্দার ছালাম। জিপিও’র দক্ষিণের রাস্তার দোকান থেকে চাঁদা তোলে শহীদ ও দাড়িওয়ালা সালাম। মাওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামের সামনের ফুটপাত থেকে চাঁদা তোলে আলী মিয়া। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটের ফুটপাতের দোকান থেকে চাঁদা তোলে কাদের ও খলিল। বায়তুল মোকাররম মসজিদের পশ্চিম দিকের মিনারের কাছের ফুটপাতের দোকান থেকে চাঁদা তোলে কোটন, জাহাঙ্গীর ও নসু। বায়তুল মোকাররম মসজিদের স্বর্ণের মার্কেটের সামনের রাস্তা ও ফুটপাতের দোকান থেকে চাঁদা তোলে ছিন্নমূল হকার্স লীগের সাবেক সভাপতি চাটগাইয়া হারুন। জাতীয় মসজিদের উত্তর গেটের ফুটপাত থেকে চাঁদা তোলে সাজু। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সামনের ফুটপাতের দোকান থেকে চাঁদা তোলে কবির হোসেন, ফুলবাড়ীয়া টিএন্ডটির সামনের ফুটপাত থেকে চাঁদা তোলে ঘাউরা বাবুল, গুলিস্তান ট্রেড সেন্টারের পশ্চিমের রাস্তা ও ফুটপাতের দোকান থেকে চাঁদা তোলে বিমল।
হকাররা জানায়, পুলিশের সাথে সরাসরি যোগাযোগ বলে এসব চিহ্নিত চাঁদাবাজরা কাউকে ভয়ও করে না। বরং এরা নিজেদেরকে ‘পুলিশ’ মনে করে। সে কারনে কথায় কথায় হকারদেরকে লাঠিপেটা করে, অপমান করে, মালামাল কেড়ে নেয়। দোকান তুলে দেয়ার হুমকী দেয়।
অন্যদিকে, জুরাইন আলম মার্কেটের সামনে সড়ক ও জনপথের জায়গা দখল করে দোকান বসিয়ে চাঁদাবাজি চলছে। স্থানীয় এমপির ভাগ্নে মাসুক ইতোমধ্যে চৌকি বসিয়ে হকারদের কাছে থেকে টাকা আদায় করছে। গত বছর ঈদে জুরাইনের সড়ক ও জনপথের জায়গা খালি করে দেয়ার জন্য নোটিশ করা হয়েছিল। কিন্তু এক বছরেও তা কার্যকর হয়নি। স্থানীয় হকারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, জুরাইন আলম মার্কেট, হাবিবুল্লা মার্কেট ও সেতু মার্কেটের সামনে সরকারি জায়গা দখল করে হকারদের বসিয়ে বহুদিন ধরেই চাঁদাবাজি করছে একটি সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটে রয়েছেন খায়রুল, আলমগীর, লিয়াকত, মোশাররফ ও ননী হাজী। ঈদকে সামনে রেখে এরা আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে। নাম প্রকাশ না করে এক হকার বলেন, আমরা গরীব মানুষ। ঈদ এলে কিছু রোজগার হয়। কিন্তু চাঁদাবাজদের কারণে আমরা অতিষ্ঠ। তারা আমাদের কষ্টের টাকা নিয়ে যাচ্ছে। হকাররা জানায়, গত বছর চাঁদাবাজির মাধ্যমে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার সময় খায়রুলকে জনতা ‘গণধোলাই’ দিয়েছিল। গণধোলাইয়ের পর খায়রুল কিছুদিন নিস্ক্রিয় থাকলেও পরে এমপির দোহাই দিয়ে আবার সক্রিয় হয়ে ওঠে। এবার ঈদকে সামনে রেখে আবার তৎপর হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।