Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

দৃষ্টি সবার সুপ্রিম কোর্টে

| প্রকাশের সময় : ৩ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মালেক মল্লিক : প্রায় সবখানে একই আলোচনা সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অপসারণ কার হাতে যাচ্ছে ? সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল না; জাতীয় সংসদ সদস্যের হাতে। ইতোমধ্যে নয়জন আদালতের বন্ধু (অ্যামিকাস কিউরি) ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের মত দেন। একই সঙ্গে সংসদ সদস্যদের হাতে বিচারক অপসারণ ক্ষমতা দিলে ভারসাম্য নষ্ট হবে এবং বিচার বিভাগ ঝুঁকির মধ্যে পড়বে বলে মতামতে উল্লেখ করেন তারা। মামলাটির শুনানিতে প্রধান বিচারপতির, রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা ও আদালতের বন্ধু (অ্যামিকাস কিউরিদের) বিভিন্ন বক্তব্যে সবার নজর কাড়ে। যেন সবার দৃষ্টি ছিল সুপ্রিম কোর্টের দিকে।
এদিকে বিচারকদের শৃঙ্খলা-সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ ডজন খানেক বার সময় নেয়ার পর ক্ষোভ প্রকাশ করেন আপিল বিভাগ। এসময় আদালত ও অ্যাটর্নি জেনারেলের যুক্তি ও পাল্টা উপস্থাপন কালে মধ্যে এক ধরনের ব্যাপক বাকবিতন্ডা রুপ নেয়।
এছাড়াও মূর্তি (ভাস্কর্য) অপসারণ ও পুনঃস্থাপন নিয়ে আইনজীবী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে নিয়ে আলোচনা কেন্দ্রবিন্দু ছিল সুপ্রিম কোর্ট।
সবার দৃষ্টি সুপ্রিমকোর্টের দিকে কিনা জানতে চাইলে ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে রিটের পক্ষের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ ইনকিলাবকে বলেন, নজর থাকাটা স্বাভাবিক বিষয়। কারণ তিনটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে ষোড়শ সংশোধনী। যেটির প্রতি সারা দেশের মানুষ নজর রাখছে বলে আমার মনে হয়। এছাড়াও গেজেট প্রকাশ ও ভাস্কর্য অপসারণ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দিকে নজর রাখছে আইনজীবী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ। তিনি আরো বলেন, ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে আদালতের বন্ধুরা (অ্যামিকাস কিউরি) তাদের মতামত তুলে ধরছেন। আর এখানে ৯জন ওই সংশোধনী বাতিলের পক্ষে মত দেন। আদালত সিদ্ধান্ত নিবেন। তিনি বলেন, গেজেট প্রকাশ নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ বার বার সময় নেয়া ঠিক না। কারণ বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য প্রশাসনিক কাজের স্বাধীনতাও দিতে হবে।
চলতি বছরের শুরু থেকেই গেজেট প্রকাশ বেশ সরগরম ছিল। সর্বশেষ ষোড়শ সংশোধনী ও মূর্তি (ভাস্কর্য) স্থাপন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দিকে উত্তাপ চলে আদালত প্রাঙ্গণে। তবে এটা ব্যতিক্রম কিছু নয়। বিশেষ বিশেষ মামলায় স্বাভাবিকভাবে উত্তেজনা চলে আসে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা পুনরায় সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী পাস করা হয়। এরপর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরের ৫ নভেম্বর নয়জন আইনজীবী রিট করেন। আবেদনের শুনানি শেষে হাইকোর্ট ওই সংশোধনী কেন অবৈধ, বাতিল ও সংবিধান পরিপন্থি  ঘোষণা করা হবে না-তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন।  রুলের ওপর শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ৫ মে আদালত সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারকের মতামতের ভিত্তিতে সংশোধনী অবৈধ বলে রায় দেন। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে পরে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করে। চলতি বছর গত ৮ ফেব্রæয়ারি এই মামলার আপিল শুনানিতে সহায়তার জন্য আদালত ১২ জন সিনিয়র আইনজীবীকে আদালতের বন্ধু (অ্যামিকাস কিউরি) হিসেবে নিয়োগ দেন। গত ৮ মে পেপার বুক থেকে রায় পড়ার মাধ্যমে আপিল শুনানি শুরু হয়। ৯ ও ২১ মে রাষ্ট্রপক্ষের লিখিত যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন।
এরপর গত ২৪ মে এই মামলায় অ্যামিকাস কিউরিদের বক্তব্য প্রদান শুরু হয়, যা ৩০ মে তাদের মতামত দেয়া শেষ হয়। ১২ জন অ্যামিকাস কিউরি মধ্যে ১০ জন আদালতে তাদের মতামত উপস্থাপন করেন। ব্যারিস্টার রফিক-উল হক ও ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ মতামত দেননি। ৯ জন অ্যামিকাস কিউরি ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পক্ষে যুক্তি দেন। শুধু ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি ষোড়শ সংশোধনী রাখার পক্ষে মত দেন।  
প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানিতে অ্যামিকাস কিউরিরা বলেছেন, ষোড়শ সংশোধনী বিচার বিভাগকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এটা বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে খর্ব করেছে। এমামলা শুনানি কালে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও  অ্যামিকাস কিউরিরা বিভিন্ন যুক্তি পাল্টা যুক্তি তুলে ধরেন। তাদের বক্তব্যে আদালত অঙ্গণে এক ধরনের উত্তাপ তৈরি হয়। তাদের এসব যুক্তি সাধারণ আইনজীবীরা কাছে এক ধরনের বিচারিক রসদ দেয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন অ্যাডভোকেট জানালেন, প্রতিদিন আপিলে যেতাম শুধুমাত্র সিনিয়র আইনজীবী ও আপিল বিভাগের বিভিন্ন যুক্তি শুনতে।
গত বৃহস্পতিবার ১১তম কার্যদিবসে রাষ্ট্রপক্ষের চূড়ান্ত যুক্তি শেষে মামলাটি সিএভি রাখেন আপিল বিভাগ। এরপর দেশের সর্বোচ্চ আদালত সিদ্ধান্ত দিবে উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণ ক্ষমতা সংসদের হাতে না, সুপ্রিম কাউন্সিরের হাতে। এ রায়ের দিকে তাকিয়ে আছেন উচ্চ আদালতের বিচারপতি থেকে শুরু করে সাধারণ রিটকারীর আইনজীবীরা।
গেজেট প্রকাশ আপিল বিভাগের ক্ষোভ: নিন্ম আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলা-সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করতে রাষ্ট্রপক্ষ সময় নেয়ার পর গেজেট করায় গত বছর ৮ ডিসেম্বর দুই সচিবকে তলব করেন আদালত। দুই সচিব হাজির হয়ে আদালতে জানান, গেজেট আকারে প্রকাশের প্রয়োজনীয়তা নেই বলে প্রেসিডেন্ট সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। এসব কথা শুনে আদালত বলেন প্রেসিডেন্টকে ভুল বুঝানো হয়েছে। গেজেট প্রকাশের নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য অ্যাটর্নি জেনারেলকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দেন। এইভাবে অন্তত ১২ বার সময় নেয় রাষ্ট্রপক্ষ। ১২ জন গেজেট প্রকাশ নিয়ে শেষবারের মতো সময় দেন  আদালত। গেজেট প্রকাশ নিয়ে বার বার সময় নিয়ে আদালত ক্ষোভ প্রকাশ করে বলে, সুপ্রিম কোর্ট থেকে বঙ্গভবন-গণভবন কত দূর, বিচার বিভাগকে জিম্মি করে রাখা হয়েছে, দেশে কি কোন সরকার আছে ? দেশটা কি আটকে আছে? দেশ কি চলছে না? মরে রাখা দরকার রাষ্ট্রের কাছে ব্যক্তি কিছু নয়, প্রতিষ্ঠানই বড়। আর সময় দেয়া যাবে না। এসময় অ্যাটর্নি জেনারেল ও প্রধান বিচারপতি মধ্যে তীব্র বাক বিতন্ডা রুপ নেয়।
১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর মাসদার হোসেন মামলায় ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায়  হয়। ওই রায়ের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা ছিল। দফার মধ্যে ইতোমধ্যে কয়েক দফা বাস্তবায়ন করেছে সরকার। এরপর ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর বিগত তত্ত¡াবধায়ক সরকার বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক ঘোষণা করেন।
মূতি স্থাপন বিতর্ক: সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে মূর্তি(ভাস্কর্য) স্থাপন ও পূনঃস্থাপন নিয়ে চলে পক্ষে বিপক্ষে তীব্র। সর্বশেষ গত ১৯ মে মূল ভবন থেকে বর্ধিত ভবনের সামনে স্থাপনা করা হয়ে গ্রীক মূতি। গত বছর শেষে দিকে ওই ভাস্কর্য স্থাপন করার পর থেকে শুরু হয় আলোচনা। এটি নিয়ে ইসলামী দলগুলো অপসারণে দাবি তুলে, অপরদিকে বাম সংগঠনগুলো সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণের মূর্তি রাখার পক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে।



 

Show all comments
  • আল আমিন ৩ জুন, ২০১৭, ২:০৬ এএম says : 0
    আমার মনে হচ্ছে, সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অপসারণ সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের হাতে যাচ্ছে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সুপ্রিম কোর্টে


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ