ইভিএম-এ ভোট কেন?
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম-এ ১৫০ আসনে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। কাকতালীয় কিনা জানি না, ১৫০ সংখ্যাটা আমাদের এর আগে চিনিয়েছিলেন রকিবুল
এম এ জব্বার
এবারের বিশ্ব তামাক মুক্ত দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল, ঞড়নধপপড়-অ ঞযৎবধঃ ঃড় উবাবষড়ঢ়সবহঃ : তামাক উন্নয়য়ের পথে হুমকি স্বরূপ। তামাকের ব্যবহারে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি ছাড়াও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে বিধায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক নির্ধারিত এবারের প্রতিপাদ্য বিষয়টি সবিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, তামাকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি প্রতিহত করা ছাড়াও আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও পরিবেশের উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব। তামাক উৎপাদন ও ব্যবহার বন্ধ করা গেলে দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র ভেঙ্গে কৃষি, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করা সম্ভব। তামাকের উৎপাদনে কীটনাশক ও সার ব্যবহার করার ফলে পানি বিষাক্ত হয় ও পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হয়। তামাকের উৎপাদনে ৪.৩ মিলিয়ন হেক্টর জমি প্রয়োজন হয় যার ফলে বিশ্বে প্রতি বছর ২% হতে ৪% পর্যন্ত বনায়ন সংকুচিত হচ্ছে।
স্বাস্থ্যগত দিক থেকে বলতে গেলে তামাকের কারনে ক্যান্সার, হার্টের বিভিন্ন রোগ, ষ্ট্রোক, শ্বাস কষ্ট ও পায়ে পঁচন এবং ধূঁয়াবিহীন তামাক জর্দ্দা ও সাদা পাতা ব্যবহারের ফলে খাদ্যনালীতে ক্যান্সারসহ নানা শারীরিক জটিলতা সম্পর্কে এখন আর কারো অজানা নয়। বাংলাদেশে তামাকের ব্যবহার সম্পর্কে বলতে গেলে এখানে ধূমপায়ীর হার শতকরা ৪৩ ভাগ। ধূঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারকারী মহিলার হার ২৮% এবং পুরুষ ২৬% ভাগ। সিগারেটের ব্যবহারকারী পুরুষ ৪৫% এবং মহিলা ১.৫%। বাংলাদেশে প্রতিবছর তামাকের কারণে প্রায় এক লক্ষ লোক মৃত্যুবরণ করে। এছাড়া ৩ থেকে ৪ লক্ষ লাক তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের কারণে অসুখ ও অক্ষমতাজনিত কুফল ভোগ করে।
বৈশ্বিক দৃষ্টিকোন থেকে বলতে গেলে তামাকের কারণে প্রতি বছর ৬০ লক্ষ লোকের মৃত্যু হয়। যার মধ্যে ৬ লক্ষ পরোক্ষ ধূমপান জনিত কারণে মৃত্যুবরণ করে। তামাকের ব্যবহার অনিয়নন্ত্রিত থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বে প্রতি বছর এ সংখ্যা দাঁড়াবে ৮০ লক্ষ। যার শতকরা ৮০ ভাগ নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে হবে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে তামাকে ৫০টির বেশী পদার্থ ক্যানসার সৃষ্টির জন্য দায়ী। এসব কারণে তামাকের ব্যবহার প্রতিরোধ করা জরুরী। তাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এবারে প্রতিপাদ্য বিষয় তামাক কোম্পানীগুলোর আগ্রাসী প্রচারনা এবং প্রমোশনাল কার্যক্রম বন্ধ করে একটি রোগমুক্ত সুস্থ সমাজ গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।
দরিদ্র জনগোষ্ঠিকে পরিবারের প্রয়োজনীয় খরচ বহন করতে গিয়ে প্রায় সময় অভাবের মধ্যে দিন যাপন করতে হয়। গরীব ধূমপায়ীর আয়ের অংশ তামাকের ব্যবহারে খরচ করার কারণে খাদ্য, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিচর্যা ইত্যাদি প্রয়োজনীয় খাতে ব্যয় নির্বাহের ক্ষেত্রে প্রতিকুলতার সম্মুখীন হতে হয়। পাশাপাশি তামাক ব্যবহারের কারণে অসুস্থ থাকে বিধায় চিকিৎসা খরচ তাদের জন্য একটি বাড়তি বোঝা এবং কর্মস্থলে অনুপস্থিতির কারণে পরিবারের আয়ের উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি হয়। যেহেতু তামাক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে একক কৌশল পুরোপুরি কার্যকর নহে, তাই সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্ক বাণীর পাশাপাশি পর্যায়ক্রমে বেশি হারে কর আরোপের বিষয়টিও কার্যকর রাখতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে তামাকের উপর শতকরা ১০ ভাগ করারোপ করা হলে উন্নত দেশগুলোতে তামাকের ব্যবহার ৪ ভাগ হ্রাস পায়। অপরদিকে মধ্য ও নি¤œ আয়ের দেশগুলোতে তামাকের ব্যবহার হ্রাস প্রায় ৮ ভাগ। অতএব তামাকের উপর বেশি হারে করারোপ করা গেলে দরিদ্র জনগোষ্টি বেশী উপকৃত হবেন, যা পরবর্তীতে তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে সহায়ক হবে।
তামাক কোম্পানীগুলো বেশ কৌশলী। তারা জনগণের শুভাকাক্সক্ষীরূপ ধারণ করে বৃক্ষ রোপন কর্মসূচী, হেলথ্ ক্যাম্পের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সেবা প্রদান, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশেষ করে উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করে। এসব কর্মসূচির আসল উদ্দ্যেশ্য হলো তামাকের বাজার ও বিক্রয় বাড়ানো। সচিত্র সতর্কবাণী ও কর আরোপের পাশাপাশি কোম্পানীগুলোর এসব কর্মসূচি প্রতিহত করা গেলে তামাক বিরোধী আন্দেলন সুফল বয়ে আনবে।
তামাক বিরোধী কার্যক্রমে বাংলাদেশের ভূমিকা বিশ্ব পরিমন্ডলে প্রশংসিত হয়েছে। সরকারের কার্যক্রমের পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠনও সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। এদেশে তামাক বিরোধী আন্দোলনের ইতিহাসে উলেখযোগ্য পদক্ষেপ হলো ২০০৫ সালে প্রণীত আইনের সংশোধনী যা ২০১৩ সালের এপ্রিলে হয়েছে এবং সংশোধনীর পর ২০১৫ সালে বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। সংশোধনী আইনে জরিমানার হার ৫০ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৩০০ টাকা নির্ধারণ করা, ধূঁয়াবিহীন তামাকজাত পদার্থ তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের আওতায় আনা, সিগারেটের প্যাকেটে সতর্কবাণী ৫০% ভাগ পর্যন্ত রাখা ইত্যাদিসহ আরো নানা কল্যাণমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে এবং এ সব গৃহীত পদক্ষেপ বাস্তবায়নে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল ঘধঃরড়হধষ ঞড়নধপপড় ঈড়হঃৎড়ষ ঈবষষ (ঘঞঈঈ) সহ বিভিন্ন ধূমপান বিরোধী সংগঠন কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া, বিভিন্ন গবেষণা, সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিভিন্ন শিক্ষামূলক প্রকাশনা ও তামাক ও তামাকজাত পদার্থের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ ও আইনের বাস্তবায়নসহ জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল এর বিবিধ কাজ উলেখযোগ্য।
আইনের আওতায় যেখানে ধূমপান নিষিদ্ধ: পাবলিক প্লেসসমূহ: শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, শিশু পার্ক, সরকারী অফিস, আধা-সরকারী অফিস, স্বায়ত্বশাসিত অফিস, বেসরকারী অফিস, গ্রšহগার, লিফট, আচ্ছাদিত কর্মক্ষেত্র, হাসপাতাল ও ক্লিনিক ভবন, আদালত, বিমানবন্দর ভবন, সমুদ্র বন্দর ভবন, নৌ বন্দর ভবন, রেলওয়ে স্টেশন ভবন, বাস টার্মিনাল ভবন, ফেরি, প্রেক্ষাগৃহ, আচ্ছাদিত প্রদর্শনী কেন্দ্র, থিয়েটার হল, বিপনী ভবন, চতুর্দিকে দেয়াল দ্বারা আবদ্ধ রেস্টুরেন্ট, পাবলিক টয়লেট, মেলা বা পাবলিক পরিবহনে আরোহনের জন্য যাত্রীদের অপেক্ষার জন্য নির্দিষ্ট সারি, জনসাধারণ কর্তৃক সম্মিলিতভাবে ব্যবহার্য অন্য কোন স্থান অথবা সরকার বা স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান কর্তৃক, সাধারণ বা বিশেষ আদেশ দ্বারা সময় সময় ঘোষিত অন্য যে কোন বা সকল স্থান। পাবলিক পরিবহন: মোটর গাড়ি, বাস, রেলগাড়ি, ট্রাম, জাহাজ, লঞ্চ, যান্ত্রিক সকল প্রকার জন-যানবাহন, উড়োজাহাজ এবং সরকার গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা নির্দিষ্টকৃত বা ঘোষিত যে কোন যান। সকলে সক্রিয় হলে আইনের বাস্তবায়ন তরান্বিত হবে।
তামাক ও ধূমপান বর্জনের উপকারিতা : বিশ্ব-স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে যাঁরা তিরিশ বছর বয়সের আগেই ধূমপান সম্পূর্নভাবে বর্জন করতে পারে তারা ধূমপানজনিত কারণে অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারে । মোট কথা, একজন ধূমপায়ী যতবেশীই ধূমপান করুক, ধূমপানজনিত কারণে স্বাস্থ্যে এর যতই প্রতিক্রিয়া ঘটুক এবং তার যতই বয়স হোক না কেন ধূমপান বর্জন করার ফলে তার স্বাস্থ্য ভেঙ্গে যাবার ঝুঁকিসমূহ অনেকাংশে কমে আসবে। অর্থৎ বয়সের যে কোন পর্যায়ে ধূমপান বর্জন করলে এর উপকারিতা পাওয়া যায়। (তথ্য সূত্র: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা/বিশ্ব তামাক মুক্ত দিবস-১৯৯৯)। ধূমপান বর্জন করার ফলে স্বাস্থ্যের উন্নতি, খাবারের রুচি বৃদ্ধি, উন্নত ঘ্রান শক্তি, অর্থ অপচয় রোধ, অধিকতর আত্মবিশ্বাস এবং পরিস্কার শ্বাস-প্রশ্বাস ইত্যাদি উপকারিতা লাভ করতে পারেন। ধূমপান বন্ধের ফলে পিতা-মাতাগণ তাদের সন্তানদের জন্যভালো দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেন। এছাড়া, নিজের ধূমপানের কারণে অন্যের ক্ষতি হবার আশংকা থেকে বিরত থাকা যায়। ভালো স্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়া যায় এবং তামাকের যে আসক্তি তা থেকে মুক্ত থাকা যায়।
তামাক বর্জনের অর্থনৈতিক সুফলও কম নয়। জনস্বাস্থ্যের জন্য বিভিন্ন ঝুঁকি ছাড়াও তামাক অর্থনীতিতে বিরাট অপচয় ঘটায়। দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নের পথে ধূমপান ও তামাকের ব্যবহার একটি বিরাট প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করে। ধূমপান বর্জনের ফলে যেমন সিগারেট ক্রয়ের খরচটি বেঁচে গেলে তা দিয়ে পরিবারের পুষ্টি চাহিদা, শিক্ষার খরচসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় খরচ মিটানো সম্ভব হয়।
পরিবেশের দিক থেকে বিবেচনায় তামাকমুক্ত সমাজ স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ। উন্নত, স্বাস্থ্য ও সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে তামাকমুক্ত সমাজ গড়া প্রয়োজন। ১৯৯৮ সালে টঝ ঝঁৎমবড়হ এবহবৎধষ’ং জবঢ়ড়ৎঃ এ বলা হয় যে, সিগারেট এবং তামাকের বিভিন্ন ব্যবহার আসক্তি সৃষ্টি করে। শারীরিক ও ব্যবহারগত আচরণ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, তামাকাসক্তি হেরোইন এবং কোকেনাসক্তির মতোই। হেরোইন এবং কোকেনের মতোই তামাকের নিকোটিন মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলে। মনোক্রিয়াশীল মাদকের উর মান নির্ণয় করে দেখা গেছে যে হেরোইন, কোকেন, এলকোহল, কেফিন এবং গাঁজার চেয়ে নিকোটিনের প্রভাব অনেক বেশী। মানবদেহে নিকোটিন প্রধানত: উত্তেজক হিসেবে ক্রিয়াশীল থাকে। নিকোটিন ব্যবহারের চরম ফলাফল হিসেবে দেখা যায় এতে হদস্পন্দন বেড়ে যায়, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তনালীর সংকোচন ঘটে। নিকোটিন ব্যবহারের ফলে রক্তে কার্বন মনোক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যাবার দরুন অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায় এবং রক্তে চর্বিযুক্ত এসিড, গ্লোকোস, এবং অন্যান্য হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায়। ধমনি শক্ত হয়ে যায় এবং রক্ত জমাট বেঁধে উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে হার্ট এটাক ও স্ট্রোক এর ঝুঁকি বাড়ায়। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের উপসর্গ দেখা দেয়। নিকোটিনের সবচেয়ে মারাত্মক ফলাফল হলো এর উপর উবঢ়বহফবহপু অর্থাৎ নির্ভরশীল হয়ে পড়া।একবার কেউ ধূমপানে অভ্যস্থ হয়ে পড়লে দৈহিক ও মানসিকভাবে এ বদঅভ্যাস থেকে মুক্তি পাওয়া কষ্টকর হয়ে পড়ে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণা থেকে দেখা গেছে যে, ধূমপান গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুর স্বাস্থ্যগত ক্ষতি সাধন করে। মায়ের ধূমপান গর্ভাবস্থায় শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করে যার ফলে শিশুর গড়পড়তা ওজন ২০০ গ্রাম কমে যেতে পারে এবং কম ওজনের শিশু জম্মদানের ঝুঁকি দ্বিগুণ করে দেয়। তাছাড়া, গবেষণায় আরো দেখা যায় যে, মায়ের ধূমপানের ফলে উচ্চ হারে ভ্রন ও সদ্যজাত শিশুর মৃত্যু ঘটে। ধূমপানের ফলে ঝঁফফবহ ওহভধহঃ উববধঃয ঝুহফৎড়সব-ঝউঝ অর্থাৎ হঠাৎ শিশু মৃত্যুর লক্ষণ এর সম্ভাবনা দেখা যায়। শিশু জন্মাবার পর তার চার পাশে মা-বাবা’র নিয়মিত ধূমপান শিশুদের শ্বাস-প্রশ্বাস তন্ত্রে প্রদাহ সৃষ্টি করে। তামাক বর্জনের উপকারিতার মধ্যে রয়েছে: হাত ও পায়ের তাপমাত্রা বেড়ে স্বাভাবিক হবে। রক্তে কার্বন মনোক্সাইড এর মাত্রা স্বাভাবিক পর্যায়ে নেমে আসবে। হদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে আসে এবং রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়। ফুসফুসের কার্যক্ষমতা ৩০ ভাগ পর্যন্ত বেড়ে যায়। ফুসফুসের কাজের ক্ষমতা স্বাভাবিক হয়। স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ায় ঝুঁকি কমে আসবে। শরীরের কয়েকটি অঙ্গ যেমন-মূত্রথলি, বৃক্ক এবং অগ্নাশয়ের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি হ্রাস পায়।
কিভাবে তামাক বর্জন করবেন- অনেক ধূমপায়ী আছেন যাদের তামাক বর্জনে সদিচ্ছার কোন ঘাটতি নেই। তামাক নেশা সৃষ্টিকারী দ্রব্য বিধায় এটা ছাড়তে কিছুটা সময়ের প্রয়োজন হতে পারে। তামাক ও তামাক-জাতীয় দ্রব্য বর্জনের ব্যাপারে চিকিৎসক বা সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা করুন। তবে নিজের সদিচ্ছা, মানসিক শক্তি এবং দৃঢ়তার মাধ্যমে তামাক বর্জন করা যায়: ১. নিজেকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে- নিজের ইচ্ছা শক্তিকে দৃঢ় করুন, ইচ্ছাশক্তি বাড়ান এবং তামাকজাত দ্রব্য ছাড়ার জন্য একটি তারিখ ঠিক করুন। মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে যে কোন সময় তামাক ছাড়া যায়। ক্যালেন্ডারে একটি তারিখ ও সময় নির্দিষ্ট করে রাখুন এবং সে দিন ক্ষণ থেকে বর্জন শুরু করুন। ২. পাারিপাশ্বিক পরিবেশ যেমন- বাড়ি, অফিস এবং গাড়িতে কোন প্রকার তামাকজাত দ্রব্য রাখা যাবে না। তামাক গ্রহণকারী ব্যক্তিদের আশে-পাশে না যাওয়া ভাল। ৩. প্রেরণা ও সহযোগিতা- যেমন আপনার পরিবার-পরিজন, বন্ধু এবং সহকর্মীদের বলুন তারা যেন প্রতিনিয়ত তামাক ও তামাক জাতীয় দ্রব্য ছাড়ার ব্যাপারে আপনাকে উৎসাহিত করেন। ৪. গ্রæপভিত্তিক পদক্ষেপ- তামাক ছাড়ার ব্যাপারে দলগত পদক্ষেপ অনেক কার্যকর। এক্ষেত্রে গ্রæপভিত্তিক কার্যক্রম উৎসাহ ও প্রেরনা যোগায়। ৫. প্রয়োজনে ডাক্তার, নার্স, ফার্মাসিস্ট, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বা স্বাস্থ্যকর্মীদের পরামর্শ নিতে হবে। ৬. নতুন নতুন কৌশল- ধূমপানের ইচ্ছা হলে সে সময় মনকে অন্যদিকে সরিয়ে নিতে হবে। কারো সাথে কথা বলা, হাঁটা, চলাফেরার মাধ্যমে এটা সম্ভব। ৭. তামাক বর্জনের ক্ষেত্রে মানসিক চাপ কমানোর জন্য ব্যায়াম করা, খেলাধূলা করা, বই পড়া এবং নামাজ, দোয়া, ধ্যান এবং ধর্মীয় কার্যক্রমে আত্মনিয়োগ করুন। এতে মানসিক অস্থিরতা কমে আসবে এবং তামাক ও ধূমপান বর্জনে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে। ৮. প্রচুর পানি ও বিশুদ্ধ তরল খাবার গ্রহণ করুন। ৯. প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। তামাক বর্জনের প্রথম কিছু দিন বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন- মাথা ব্যাথা, বিষন্নতা, ক্লান্তি, হতাশা, কোষ্ঠকাঠিন্য, বিরক্তি, ঘুম না আসা, ক্ষুধামন্দা, অস্থিরতা ইত্যাদি। তবে এ সমস্যাগুলো দৃঢ়ভাবে প্রতিরোধ করে এবং ইচ্ছাশক্তির মাধ্যমে তামাক ও ধূমপান বর্জন করে সুস্থ-সুন্দর ও স্বাস্থ্য-সম্মত জীবন-যাপন করা যায়।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রা-২০৩০এ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অন্যান্য বিষয়সহ স্বাস্থ্যখাতকে সবিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর ঘোষণায় ২০৪০ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশ থেকে তামাক শতভাগ নির্মূল করার আশা ব্যক্ত করা হয়েছে। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয়ের আলোকে তামাকের ব্যবহার বন্ধ করা গেলে তামাক মুক্ত সমাজ গড়ার মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্র অর্জন সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে সকলের অংশগ্রহণ জরুরী।
লেখক : নির্বাহী সচিব, আধূনিক (আমরা ধূমপান নিবারণ করি)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।