Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০৯ জুলাই ২০২৪, ২৫ আষাঢ় ১৪৩১, ০২ মুহাররম ১৪৪৬ হিজরী

দুর্নীতির অর্থ জোগান দিতেই এ বাজেট -বিএনপি

| প্রকাশের সময় : ২ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম


বাজেট জনকল্যাণের হবে না: রাজনৈতিক স্বার্থেই এ বাজেট -মির্জা ফখরুল ইসলাম
রাজনৈতিক প্রতারণা শেষে সরকার অর্থনৈতিক প্রতারণায় নেমেছে -আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী


স্টাফ রিপোর্টার : বর্তমান সরকারের দেয়া বাজেট জনকল্যাণে নয়, রাজনৈতিক স্বার্থে দেয়া হয়েছে; এ বাজেট বাস্তবায়ন অসম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে অনির্বাচিত সরকার যে বাজেট দিচ্ছে তার কোন দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতা নেই। এ বাজেটে জনগণের কল্যাণ কতটুকু হবে সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচে শহীদ জিয়াউর রহমানের ৩৬ তম শাহাদাৎবার্ষিকী উপলক্ষে মহিলা দল আয়োজিত দোয়া মাহফিল ও দুস্থদের মাঝে বস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। বিএনপি মহাসচিব যখন বাজেট নিয়ে এ বক্তব্য দিয়েছেন তখনও জাতীয় সংসদে বাজেট উত্থাপিত হয়নি।
চার লাখ কোটি টাকার বাজেট বাস্তবায়ন কেবল এটা শুধু কঠিন নয়, অসম্ভব ব্যাপার বলেও মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে ‘অনির্বাচিত’ সরকার যে বাজেট দিচ্ছে তার কোন দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতা নেই। এ বাজেট জনকল্যাণে নয়, রাজনৈতিক স্বার্থে দেয়া হয়েছে। এ বাজেট বাস্তবায়ন অসম্ভব।
ফখরুল বলেন, স্বাস্থ্যখাতের অবস্থা ভালো না, শিক্ষা খাতের অবস্থা ভালো না। সেগুলোর জন্য আমরা দেখতে চাই, ওইসব খাতে কী রকম বরাদ্দ হচ্ছে? এখন পর্যন্ত ওইসব খাতের অবস্থা ভালো নয়। সেই কারণে আমরা মনে করি এই বাজেটটি জনগণের কল্যাণে খুব একটা কিছু করতে পারবে না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, পত্র-পত্রিকায় আমরা দেখেছি, অর্থনীতিবিদরা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলো তারা এই বাজেটের যে বিশাল একটা অবয়ব, যেটা এই সরকার বরাবরই বড় অবয়ব দিচ্ছে, বড় একটা বাজেট দিচ্ছে, যেটা সব সময় বলা হচ্ছেৃ ইট ইজ হাইলি অ্যামবিশাস।
তিনি বলেন, এবার বলা হচ্ছে যে, ঝুঁকি নিয়ে দেয়া হচ্ছে। অর্থমন্ত্রী নিজেই বলছেন যে শেষ বাজেট ঝুঁকি নিয়ে দিচ্ছেন। ভালো কথা। যারা বাজেট দিচ্ছে, তাদের সেই বৈধ্তা আছে কি না। বৈধতা  নেই বলেই আজকে আর্থিক ক্ষেত্রে যত সংকট সৃষ্টি হচ্ছে।
অতীতের বাজেট বাস্তবায়নের পরিসংখ্যান তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আপনারা লক্ষ্য করেছেন, ব্যাংকিং সিস্টেম, শেয়ার মার্কেট এবং এডিবির (বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি) যে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া, সেটাও কিন্তু চূড়ান্তভাবে হচ্ছে না। তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে আমরা পত্রিকায় দেখেছি, গতবছরের বাজেটের ৫৫ পার্সেন্ট থেকে ৬০ পার্সেন্ট এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি। তাহলে এই বড় বাজেট দেয়ার যুক্তিটা কী থাকতে পারে?
১৫ শতাংশ ভ্যাটেরও সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই বাজেটের লক্ষ্যটা কী? লক্ষ্যটা এমন হতো জনগণের কল্যাণের জন্য, তাদের আয় বৃদ্ধির জন্য তাহলে একটা কথা ছিল। আমরা দেখছি যে, ভ্যাটের (মূল্য সংযোজন কর) মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষের পকেট কেটে নেয়া হচ্ছে এবং অনুৎপাদক খাতে ব্যয় বেশি হচ্ছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, একই সঙ্গে পাওয়ার প্ল্যান্টের ক্ষেত্রে দুর্নীতি চরম পর্যায় চলে গেছে। কোনো জবাবদিহিতা নেই। কোনো টেন্ডার হয় না- এই বিষয়গুলো রয়েছে। সেজন্য আমরা মনে করি, আমাদের দেশের আর্থিক যে নিয়ন্ত্রণ বা আর্থিক যে ব্যবস্থাপনা যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক নূরে আরা সাফাসহ অন্যান্য নেতারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।   
এদিকে, গতকাল জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বাজেট ঘোষণার পরপরই এ ঘোষিত বাজেটকে ‘দুর্নীতির অর্থ জোগান দিতেই লুটপাটের এ বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে’ বলে দাবি করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। গতকাল বিকালে বনানীর হোটেল সেরিনায় নিজ কার্যালয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
আমির খসরু মাহমুদ বলেন, রাজনৈতিক প্রতারণা শেষে সরকার অর্থনৈতিক প্রতারণায় নেমেছে। সাধারণ মানুষকে নিঃস্ব করে দুর্নীতির অর্থের জোগান দিতে লুটপাটের বাজেট দেয়া হয়েছে। রাজনৈতিক লুটপাটের অর্থনীতির মডেল অনুসারে এ বাজেট দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বিভিন্নভাবে আর্থিক খাতের যে লুটপাট হয়েছে জনগণের পকেট কেটে সেই ঘাটতি মেটাতে এ বাজেট দেয়া হয়েছে।
আবগারি শুল্ক বাড়ানো প্রসঙ্গে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী খসরু বলেন, সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা যখন কমে যাচ্ছে তখন আবগারি শুল্ক বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। এটা অর্থনীতির কোনো সূত্রে মেলে না। এটা অমানবিক।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাজেট গণবিরোধী, এ ধরনের শব্দ আমি ব্যবহার করছি না। এটা জনগণের পক্ষে যাবে না।
বাজেট নিয়ে দলের পক্ষ থেকে কখন আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হবে- এ প্রসঙ্গে স্পষ্ট করে কিছু না বললেও তিনি জানান, আমরা পয়েন্ট টু পয়েন্ট ধরে বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাব।
এর আগে গতকাল সকালে বাজেট ঘোষণার আগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, নির্বাচন সামনে রেখে অনির্বাচিত সরকার যে বাজেট দিচ্ছে তার কোনো দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতা নেই। এ বাজেট জনকল্যাণে নয়, রাজনৈতিক স্বার্থে দেয়া হয়েছে। এ বাজেট বাস্তবায়ন অসম্ভব।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাজেট


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ