Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রাণবন্ত সংসদ

প্রেসিডেন্ট-প্রধানমন্ত্রীসহ উপস্থিত ছিলেন ভিভিআইপিরা

| প্রকাশের সময় : ২ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

পঞ্চায়েত হাবিব : ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ঐক্যমতের সরকারের চতুর্থ ও দেশের ৪৬তম এ বাজেট পেশ উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার সংসদ ভবন এলাকায় ছিল উৎসবের আমেজ আর সংসদের ভিতরে ছিল প্রাণবন্ত। অধিবেশন কক্ষে বসে বাজেট বক্তৃতা প্রত্যক্ষ করেন এবং টেবিল চাপড়ে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের উত্থাপিত বাজেট সমর্থন জানান রওশন এরশাদের নেতৃত্বাধীন বিরোধী দল। যা অধিবেশনের গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে দেয়।
এদিকে বাজেট পেশ উপলক্ষ্যে কানায় কানায় পূর্ণ ছিল অধিবেশন কক্ষ। সংসদ গ্যালারি থেকে ভিআইপি লাউঞ্চ সর্বত্রই ছিল উপচে পড়া ভীড়। সম্পূর্ণ ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিজের জীবনের একাদশতম বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ঘড়ির কাঁটায় ১ টা ৩৫ মিনিটে বাজেট বক্তব্য শুরু করেন অর্থমন্ত্রী। বাজেট বক্তৃতার আগেই জাতীয় সংসদের কেবিনেট কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে বাজেট অনুমোদন করা হয়। প্রেসিডেন্ট এ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ সংসদে নিজ কক্ষে বসে বাজেট উপস্থাপন প্রত্যক্ষ করেন। প্রেসিডেন্টকে সংসদ ভবনে স্বাগত জানান সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া। সংসদ কার্য-উপদেষ্টা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৪৫ ঘন্টা আলোচনার পর আগামী ২৯ জুন ‘২০১৭-১৮’ অর্থ বছরের বাজেট পাস হবে।  
প্রেসিডেন্ট-প্রধানমন্ত্রীসহ উপস্থিত ছিলেন ভিভিআইপিরা
বাজেট অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ, সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীসহ সিনিয়র সদস্যদের প্রায় সবাই অধিবেশনে অংশ নেন। অন্যদিকে ভিআইপি গ্যালারিতে ছিলেন- প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর ফজলে কবীর, পিএসসি চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক, সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক, বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল আবু এসরার, নৌবাহিনীর প্রধান  রিয়ার অ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বিভিন্ন দেশের ক‚টনৈতিকরাও অধিবেশন কক্ষের নির্ধারিত চেয়ারে বসে বাজেট বক্তৃতা প্রত্যক্ষ করেন। তাদের মাঝে অর্থমন্ত্রীর ইংরেজিতে প্রিন্ট করা বাজেট বক্তৃতা সরবরাহ করা হয়। গত সংসদে বিরোধী দল বিএনপি’র পক্ষ থেকে ছায়া বাজেট দেয়া হতো। কিন্তু এবার বিরোধী দলের পক্ষ থেকে এ ধরনের কোন তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি। অধিবেশন কক্ষে শান্তভাবেই তারা প্রত্যক্ষ করেন বাজেট বক্তৃতা।
বাজেট প্রস্তাব অনুমোদন  দিলেন  প্রেসিডেন্ট
প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট এবং ২০১৬-১৭ সালের সংশোধিত বাজেট অনুমোদন দিয়েছেন। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত জাতীয় সংসদে বাজেট প্রস্তাব উত্থাপনের আগে তিনি এই অনুমতি প্রদান করেন। প্রেসিডেন্ট জাতীয় সংসদ ভবনে তাঁর অফিসে এই বাজেটে অনুমোদন করেন। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, অর্থনৈতিক বিভাগের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের  চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
প্রিয় পোশাকে বাজেট পেশ
বাজেট অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অফ হোয়াইট সিল্ক শাড়ি পরে অধিবেশন কক্ষে ঢোকার সময় তার পিছু পিছু প্রিয় পোশাক ধূসর রঙ্গের পাঞ্জাবীর ওপর কালো মুজিব কোট পরে প্রবেশ করেন অর্থমন্ত্রী। এ সময়ে অর্থমন্ত্রীর সম্বল ছিল একটি কালো সুটকেস। মুখে ছিল উচ্ছা¡স। বাজেট বক্তৃতার প্রথম ও দ্বিতীয় অংশ অর্থমন্ত্রী পড়ে শোনান। এছাড়া তৃতীয় অংশের কিছু অংশ ডিজিটাল পদ্ধতিতে উপস্থাপন করা হয়। বক্তৃতার চতুর্থ অংশের পুরোটাই স্ক্রিনের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়। শারীরিক কারণে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বসেই বাজেট বক্তৃতা করেন। অধিবেশনের শুরুতে অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করে স্পিকার বলেন, আপনি বাজেট উত্থাপনের অনুমতি চাইতে পারেন। এসময় অর্থমন্ত্রী প্রথমে নিজের আসনে বসে অনুমতি চাওয়া শুরু করেন। এদিকে আগে থেকেই অর্থমন্ত্রীর আসনের ওপরে রাখা ছিল পানি ভর্তি ফ্লাক্স ও গøাস।
অর্থ বিল উত্থাপন
বাজেট বক্তৃতা শেষে অর্থ মন্ত্রী অর্থ বিল- ২০১৭ সংসদে উত্থাপন করেন। সরকারের আর্থিক প্রস্তাবাবলী কার্যকরণ এবং কতিপয় আইন সংশোধনের লক্ষ্যে বিলটি উত্থাপন করা হয়। বিলটি আগামী ২৯ জুন পাস হবে।
খসড়া বাজেট অনুমোদন
বাজেট বক্তৃতার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সংসদ ভবনের কেবিনেট কক্ষে মন্ত্রী পরিষদের বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন দেয়া হয়। প্রতি বছর বাজেট উত্থাপনের আগে রেওয়াজ অনুযায়ি এই বৈঠকটি সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত হয়। মন্ত্রীপরিষদে অনুমোদন পাওয়ার পর বাজেট বিলে স্বাক্ষর করেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ।   
বিরোধী দলের উপস্থিতি
নবম জাতীয় সংসদে মহাজোট সরকারের পাঁচটি বাজেট বিরোধী দল বর্জন করলেও এবারের চিত্র ছিল ভিন্ন। রওশন এরশাদের নেতৃত্বাধীন বিরোধী দলীয় সদস্যরা বাজেট উত্থাপনের সময় উপস্থিত ছিলেন। এর আগে ২০০৯-১০, ২০১০-১১, ২০১১-১২ ও ২০১২-১৩ অর্থ বছরের বাজেট অধিবেশন বর্জন করে তৎকালীন বিরোধী দল বিএনপি। আর সর্বশেষ ২০১৩-১৪ অর্থ বছরের বাজেট উত্থাপনের আগে বিরোধী দল অধিবেশনে যোগ দিলেও বাজেট উত্থাপনের দিন তারা অধিবেশন কক্ষে যাননি। তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে বসে তারা বাজেট বক্তৃতা শোনেন।
মুহিতের একাদশতম বাজেট
গতকালের বাজেট নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ১১ বারের মতো বাজেট প্রস্তাব পেশ করলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের টানা দ্বিতীয় মেয়াদের চতুর্থ বাজেট এটি। বর্তমান অর্থমন্ত্রী এর আগে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের (২০১৬-১৭), (২০১৫-২০১৬), (২০১৪-১৫), (২০১৩-১৪), (২০১২-২০১৩), (২০১১-২০১২), (২০১০-২০১১), ও (২০০৯-২০১০) এবং হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির সরকারের আমলে ১৯৮২-৮৩ ও ১৯৮৩-৮৪ অর্থবছরে দু’টি বাজেট পেশ করেছিলেন। বয়সে প্রবীণ হলেও গতকাল বাজেট পেশকালে অর্থমন্ত্রীকে কর্মে নবীন ও তেজদীপ্ত মনে হয়েছে। উৎফুল্ল ও হাস্যোজ্জল অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতকালে মাঝেমাঝেই হাস্যরসের মাধ্যমে অধিবেশন কক্ষে উপস্থিত সবাইকে মাতিয়ে রেখেছিলেন।  
সংসদ সচিবালয়ে নিরাপত্তা বেষ্টনি
বাজেট পেশ উপলক্ষে গতকাল সংসদ ভবন এলাকায় ছিল উৎসবের আমেজ। নেয়া হয়েছিল বাড়তি নিরাপত্তা। এদিকে অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতার পরে আমন্ত্রিত অতিথিরা যাতে নির্বিঘেœ বের হতে পারেন সেজন্য সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার পিজিয়ন হলের গেটটিও খোলা রাখা হয়েছিল। আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থাও করা হয়েছিল আলাদাভাবে। তাদের আগমন উপলক্ষে সংসদ ভবন ও আশপাশের এলাকায় সকাল থেকেই নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়। একমাত্র বৈধ পাশ ছাড়া আর কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি সংসদ ভবন এলাকায়। এমনকি দর্শক গ্যালারীতে পাস ইস্যুতেও ছিল কড়াকড়ি। র‌্যাব-পুলিশসহ গোয়েন্দা সংস্থার বিপুল সংখ্যক সদস্য পুরো ভবনে নিরাপত্তা ঘেরাটোপ গড়ে তোলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সংসদ

১৬ জানুয়ারি, ২০২৩
৫ জানুয়ারি, ২০২৩
৫ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ