পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ আলম জাতীয় সংসদে উত্থাপিত বাজেট প্রস্তাবকে বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ গরীব মারার বাজেট ও সাম্রাজ্যবাদ ও লুটেরা ধনিক শ্রেণির স্বার্থরক্ষার একটি গণবিরোধী দলিল হিসেবে আখ্যায়িত করে তা প্রত্যাখান করেছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার বাজেট সম্পর্কে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সিপিবি নেতারা এক বিবৃতিতে বলেন, এই বাজেটে সমাজতন্ত্রসহ রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতির কোনো প্রতিফলন নেই। শুধু তাই নয়, এই বাজেট মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী আদর্শে প্রণীত হয়েছে। বাজেট প্রস্তাবের ভিত্তি হলো পুঁজিবাদের নয়া উদারবাদী প্রতিক্রিয়াশীল দর্শন।
গত বছরের মূল বাজেটের ১৭.৫ শতাংশ এবং সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ২৬ শতাংশ বড় এই বাজেটের জন্য অর্থসংস্থান করতে ৩৪ শতাংশ বেশি রাজস্ব সংগ্রহের প্রস্তাব করা হয়েছে। ঢালাও ১৫ শতাংশ ভ্যাটসহ পরোক্ষ কর থেকে এই বর্ধিত রাজস্ব আদায়ের যে প্রস্তাব করা হয়েছে, তা সকল পণ্য ও সেবার মূল্যবৃদ্ধি ঘটিয়ে মূল্যস্ফীতির হারকে অসহনীয় পর্যায়ে নিয়ে যাবে। আর এই দুঃসহ ভারের সবটাই বহন করতে হবে গরীব-মধ্যবিত্তসহ সাধারণ নাগরিকদেরকে। অথচ বিত্তবানদের উপর ধার্য্য প্রত্যক্ষ কর একই পর্যায়ে রাখা হয়েছে। অপ্রদর্শিত কালো টাকা বৈধ করার সুযোগ রাখা হয়েছে। এই বাজেটে এভাবে গরিব জনগণের সম্পদ মুষ্ঠিমেয় লুটেরা ধনিকের হাতে প্রবাহিত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বাজেটে কথার ফুলঝুরি ও মিথ্যা আশ্বাসে ভরা। লোক দেখানো মনোতুষ্টির নিস্ফল প্রয়াস চালানো হলেও এ কথা দিবালোকের মতো স্পষ্ট বাজেটের আসল লক্ষ্য হলো জনগণের ট্যাক্সের টাকায় দেশি-বিদেশি লুটপাটকারীদের পকেট ভারী করা।
এবারের বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ স্মরণকালে সর্বোচ্চ। ঘাটতির পরিমাণ ১ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫.৪ শতাংশ। এই বিপুল পরিমাণ বাজেট ঘাটতি মেটানোর জন্য ভবিষ্যত প্রজন্মের কাঁধে বিশাল ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে চার লাখ কোটি টাকার উর্ধ্বে উন্নীত করা হয়েছে। এই অর্থের বেশিরভাগ খরচ হবে আগের ঋণ পরিশোধ, শ্বেতহস্তির মতো বিশাল সিভিল-মিলিটারি প্রশাসনের রক্ষণাবেক্ষণ, বিলাস দ্রব্য আমদানি, অপচয়, দুর্নীতিসহ বিভিন্ন প্রকারের সিস্টেম লস, কর-রেয়াতের নামে ধনিক শ্রেণিকে বিশাল ভর্তুকি প্রদান ইত্যাদি কাজে। এসবই হলো লুটেরা ধনিক শ্রেণির স্বার্থে গৃহীত পদক্ষেপ। এর বাইরে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ এবারও অব্যাহত রাখার মাধ্যমে অর্থনীতিতে লুটপাটের ধারা আরো জোরদার করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ধনীকে আরো ধনী এবং গরিবকে আরো গরিব করা, ধন-বৈষম্য ও শ্রেণি-বৈষম্য বৃদ্ধি করা, সামাজিক অস্থিরতা ও নৈরাজ্য বৃদ্ধি করা হবে এই বাজেটের ফলাফল। এই বাজেট জাতির অর্থনৈতিক-সামাজিক-রাজনৈতিক পরিমন্ডলে নৈরাজ্য, অস্থিতিশীলতা ও নাজুকতা বাড়িয়ে তুলবে।
এসব মৌলিক নেতিবাচক চরিত্রকে আড়াল করার জন্য বাজেটে কিছু চটকদার ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তাবও করা হয়েছে। কয়েকটি মেগা প্রজেক্টের জন্য বড় আকারের পৃথক থোক বরাদ্দ রাখা হলেও স্থানীয় সরকারের জন্য বাজেটের কমপক্ষে ৩৩ শতাংশ থোক বরাদ্দ রাখা হয়নি। শিক্ষা-স্বাস্থ্য-কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাজেট বরাদ্দ পর্যাপ্ত পরিমানে বৃদ্ধির দাবি অগ্রাহ্য করা হয়েছে। সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দেয়ার জন্য কিছু প্রতীকী পদক্ষেপের ছিটেফোঁটা যুক্ত করা হয়েছে। বাজেট ও সম্পূরক বাজেটের মধ্যে বিপুল পার্থক্য একথাই প্রতিষ্ঠা করেছে যে বাজেট প্রস্তাব নিছক একটি কথার কথা মাত্র। বাজেটকে অনির্ভরযোগ্য ও অবাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাবে পরিণত করা হয়েছে। বাজেটের তথ্য-ভিত্তির বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে। তাই, প্রস্তাবিত জনকল্যাণমূলক পদক্ষেপগুলো সম্পর্কে সরকারের আন্তরিকতা ও সেসব বাস্তবায়নে তার সক্ষমতা-যোগ্যতাও মানুষের মনে প্রশ্নবিদ্ধ।
সাধারণ মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে বাজেটে কোনো উদ্যোগ নেই: ন্যাপ
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের ২০১৭-১৮ সালের প্রস্তাবিত বাজেটকে ধনিক ও লুটেরা শ্রেনীর স্বার্থ রক্ষার বাজেট হিসাবে অভিহিত করে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি(বাংলাদেশ ন্যাপ) চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেছেন, বাজেট প্রস্তাবনার ভিত্তি পুঁজিবাদের নতুন দর্শন। প্রস্তাবিত বাজেটে প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির যুক্তি উপস্থাপন করে দরিদ্র জনগণের সম্পদ অল্প কিছু লুটেরা-ধনিকের হাতে নিয়ন্ত্রন কারার প্রস্তাব করা হয়েছে। ঘোষিত বাজেট কথার ফুলঝুরি ও অসত্য আশ্বাসে পরিপূর্ণ। বাজেটে জনগনের মনোতুষ্টির নিস্ফল ও ব্যর্থ চেষ্টা চালানো হলেও, দিবালোকের মতো স্পষ্ট যে বাজেটের আসল লক্ষ্য হলো জনগণের ট্যাক্সের টাকায় সরকারের অনুসারী-অনুরাগী, দেশী-বিদেশী লুটপাটকারীদের পকেট ভারি করা।
নেতৃদ্বয় বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে শুধু গাণিতিক হিসাবই প্রধান্য পেয়েছে। আগামী অর্থবছরের জন্য ধার্যকৃত ৭ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন বিশ্বাস যোগ্য নয়। বাজেটের যে গাণিতিক হিসাব রয়েছে, তা থেকে এবারের বাজেটও ভিন্ন কিছু নয়। এই বাজেট হচ্ছে সরকারের টাকা আয়ের বাজেট। সরকার টাকা আয় করবে আর সরকারই ভোগ করবে। বেসরকারি বিনিয়োগের কোনো ক্ষেত্র তৈরি হবে না। শিল্পের উন্নয়নে কোনো উদ্যোগ নেই। এক পোশাক শিল্পের উপরেই বাজেটে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এতে অন্য শিল্প গুরুত্বহীন হয়ে পড়ছে।
নেতৃদ্বয বলেন, বিশাল বাজেটের জন্য সাধারণ মানুষের পকেট কেটে টাকা আদায় করা হবে। কিন্তু সাধারণ মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে বাজেটে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই।
এমপি-মন্ত্রীদের লুটপাটের বাজেট ঘোষণা: এনডিপি
২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরীক দল ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা ও প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা এক বিবৃতিতে বলেছেন, ভোটারবিহীন সরকার আগামী একাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে এমপি-মন্ত্রীদের লুটপাটের বাজেট ঘোষণা করেছে। এই বাজেটে দারিদ্র বিমোচনের কোন দিকনির্দেশনা নেই।
এনডিপির পক্ষ থেকে এই বাজেটকে প্রত্যাখান করে নেতৃবৃন্দ বলেন, বাজেট নয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করুন। সহায়ক সরকারের অধীনে সকল রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে সেই পরিবেশ সৃষ্টি করুন। গণতন্ত্র হত্যা করে মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে উন্নয়নের নামে যে লুটপাট শুরু করেছেন সেই লুটপাট বন্ধ না করলে আসামীর কাঠগড়ায় আপনাদের একদিন দাঁড়াতেই হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।