Inqilab Logo

বুধবার ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১, ০৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বনানী থেকে বিমানবন্দর দৃষ্টি নন্দন সবুজে ঘেরা সড়ক

| প্রকাশের সময় : ১ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম


সায়ীদ আবদুল মালিক : রাজধানীতে দেশের প্রথম প্রযুক্তি সম্পন্ন ডিজিটাল সবুজে ঘেরা সড়ক তৈরি করছে সরকার। বনানী থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত আধুনিক সকল প্রকার সুবিধাসম্পন্ন এ সড়কটির দৈর্ঘ্য ৬ কিলোমিটার। কোন প্রকার দেব-দেবীর মূর্তি কিংবা চেনা-অচেনা কোন বিতর্কিত ম্যুরাল ছাড়াই একটি সড়ক কত সুন্দর করে সাজানো যায় বনানী থেকে বিমানবন্দর সড়কটি নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাসই করা যাবে না।
বিশেষ সুবিধাসম্পন্ন এ রাস্তাটির পাশ দিয়ে চলাচলের সময় সার্বিক দৃশ্য দেখে কোনভাবেই এটি যে ঢাকা শহরের কোন একটি রাস্তা তা চিনতে পথিককে ভাবিয়ে তুলবে। বিমানবন্দর থেকে নেমে বাংলাদেশ সম্পর্কে বিদেশীদের সুন্দর ধারণা দিতে রাজধানীর বনানী থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত বিস্তৃত চিরচেনা সড়কের বাইরে এ সড়কটি নির্মাণ করছে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর। সড়কটির আধুনিকায়নের কাজ করছে ভিনাইল ওয়ার্ল্ড নামের একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান।
নির্মাণ পরবর্তী দশ বছরের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব থাকবে এ প্রতিষ্ঠানটির হাতে। প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৯০ কোটি টাকা। তবে এ জন্য সরকারকে কোন অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে না। নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমে এই অর্থ তুলে নেবে। ২০১৬ সালের জুলাই মাসে শুরু হওয়া এ সড়ক আধুনিকায়ন প্রকল্পের কাজ চলতি বছরের ডিসেম্বরের আগে যে কোন সময় শেষ করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। নির্মাণের পরপরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আধুনিক সুবিধা সংবলিত ডিজিটাল সড়কের দুই পাশের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ডিজিটাল সুবিধাসম্পন্ন এ সড়কের ওপর দিয়ে চলাচলকারী নাগরিকদের সুবিধার্থে ডিজিটাল যাত্রী ছাউনি, ডিজিটাল ডাস্টবিন বক্স, দেশের সকল সংবাদ শিরোনাম জানতে বসানো হবে সড়কের বিভিন্ন স্থানে এলইডি মনিটর। ইন্টারনেটের জন্য ফ্রি-ওয়াই-ফাই সংযোগ, ২৪ ঘণ্টা নিরাপদে চলাচলের জন্য পুরো রাস্তায় বসানো হবে ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা, আধুনিক টয়লেট, অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সুবিধাসহ যাত্রী ছাউনি থাকবে। এছাড়া ছোট শিশুর মায়েদের সুবিধার্থে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার, কৃত্রিম ঝর্ণা, আলোর খেলা, বাহারি মাছের লেক, ক্যাফে ও নামাজের স্থান, সড়কের দুই পাশে ছোট ছোট ফুলের বাগান, থাকবে। এর বাইরে উন্নত বিশ্বের মতো কয়েন দিয়ে হালকা ও ভারি খাবার কেনার ব্যবস্থা, মোবাইল ফোন রিচার্জ ও মোবাইল টপ-আপসহ যে কোন সময় টাকা উত্তোলনের জন্য এটিএম বুথ সেবা প্রদানের ব্যবস্থা থাকবে। বর্তমানে বনানী-বিমানবন্দর সড়কটিতে ১৯৫২ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত আন্দোলন-সংগ্রামের বিভিন্ন ঘটনার ম্যুরাল স্থাপিত রয়েছে। এসব ম্যুরাল অক্ষত রেখেই সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ চলমান রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, কুড়িল, শেওড়া, কাওলা ও বিমানবন্দরসহ কয়েকটি এলাকায় ১২টি যাত্রীছাউনি নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। যাত্রী ছাউনি থাকছে ক্যাফে ও নামাজের স্থানের পাশে। দীর্ঘ এ ছয় কিলোমিটার সড়কে ডিজিটাল প্রযুক্তির পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব গাছ লাগিয়ে সবুজ ঢাকা তৈরি করারও পরিকল্পনা রয়েছে। দেশিসহ বিশ্বের আধুনিক বিভিন্ন জাতের ফুল ও ফলের গাছ লাগানোর কাজ চলছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, সারা বছরই ফুল ও ফলের শোভাবর্ধন করবে এখানে। সৌন্দর্য উপভোগের সুযোগ দিতে স্বল্প আকারের চা-বাগান করা হচ্ছে। এ ছাড়াও সড়কের বিভিন্ন এলাকায় ১২টি কৃত্রিম ঝরণা বসানো হয়েছে।
এ সড়কটি হবে পথচারীবান্ধব। ফুটপাতে প্রতিবন্ধী ও বাচ্চাদের ট্রলি টানার আলাদা লেন থাকবে। চলতে গিয়ে ক্লান্ত পথিক বিশ্রাম নিতে পারবেন। এজন্য বসানো হচ্ছে ১৫০টি গার্ডেন বেঞ্চ। হাঁটার জন্য হচ্ছে আলাদা লেন।
এ ছাড়া সড়কটির পাশে বেশ কয়েক জায়গায় ফুলের ছোট বাগান, কৃত্রিম ঝরণা, আলোর খেলা, বাহারি মাছের লেকসহ নান্দনিক দৃশ্য তৈরির কাজ অনেক দূর এগিয়েছে। সড়কের দুপাশে কয়েকটি  মাউন্টেন ঝরণা বসানো হয়েছে, যা থেকে পাহাড়ি ঝরণার মতো পানি ঝরতে থাকবে। বিমানবন্দর থেকে নিকুঞ্জ পর্যন্ত বাইসাইকেল চালানোর জন্য আলাদা লেন করা হয়েছে। নিকুঞ্জ লেকে করা হচ্ছে শিশুদের পার্ক।
সড়কটির বিভিন্ন জায়গায় এলইডি মনিটর বসানো হবে, যার মাধ্যমে জানা যাবে দেশে কোথায় কী হচ্ছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের ক্রিকেট, ফুটবলসহ বিভিন্ন খেলার খবর ও বিভিন্ন লাইভ অনুষ্ঠান দেখা যাবে। এ ছাড়া আবহাওয়ার খবর জানা যাবে। এ সড়কে বিনামূল্যে ওয়াই-ফাই সংযোগ পাওয়া যাবে। একসঙ্গে প্রায় ৫০০০ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন।
ছয় কিলোমিটার সড়কজুড়েই থাকবে সুপ্রশস্ত দৃষ্টিনন্দন ফুটপাত ওয়াকওয়ে। পুরো ওয়াকওয়ে সারা রাত আলোকিত থাকবে। সাদা এলইডি ফোকাসিং করা লাইটের এমন ব্যবহার এই প্রথম দেশের কোনো সড়কে করা হচ্ছে।
সড়কটির সব কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতে বনানীতে কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি কুড়িলে একটি সাব-কন্ট্রোল রুম ও অভিযোগ কেন্দ্র হবে। সড়কটির দেখভালের দায়িত্বে সার্বক্ষণিক থাকবে ৩০ জন গার্ড। এ জন্যে ভিনাইল ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে সওজের ১০ বছরের চুক্তি হয়েছে। এক হাজার ৫০০ সিসি ক্যামেরায় পুরো সড়ক তদারকির আওতায় থাকবে।
বনানী থেকে বিমানবন্দর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নির্মাণ শ্রমিকরা দিন-রাত কাজ করছেন। লোহার শিকল ঝালাই করে ফুটপাথে বেষ্টনি তৈরি করছে। ফুটপাথের নির্ধারিত স্থানে ইট-পাথরের সুড়কি দিয়ে তৈরি হচ্ছে নানা আলপনা। সড়কের সড়ক বাতি বদলে এলইডি বাতি লাগানো হচ্ছে। হোটেল রেডিসনের সামনে একটি ঝরণা ও ২০০ মিটার হাঁটার রাস্তা নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এখানে রয়েছে একটি ঝরণা। ঝরণার পানিতে খেলছে বিভিন্ন রঙের মাছ।
এ ব্যাপারে জনপথ অধিদপ্তরের ঢাকা সার্কেলের তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ সবুজ উদ্দিন খান বলেন, উন্নত বিশ্বের আদলে সড়কটি তৈরির কাজ চলছে। সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ ¯েøাগানের একটি অংশও বলা যায় একে।
তিনি বলেন, প্রকল্পটিতে ব্যয় হচ্ছে ৯০ কোটি টাকা। নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানটি নির্ধারিত স্থানে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে নিজেদের বিজ্ঞাপন দেবে এবং ১০ বছর দেখাশুনা করবে।
তিনি আরো বলেন, এটি হবে দেশের প্রথম ডিজিটাল-সবুজ সড়ক। বিদেশ থেকে কোনো অতিথি এলে যেন দেশ সম্পর্কে ভালো একটি ধারণা পান।
ভিনাইল ওয়ার্ল্ড গ্রæপের স্বত্বাধিকারী আবেদ মনসুর বলেন, উন্নত বিশ্ব আমাদের দেশকে স্বল্প আয়ের দেশ বা মধ্য আয়ের দেশ বলে জানে। এ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে যে ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলছি, তার ধারণা পাবে। বাংলাদেশ সম্পর্কেও তাদের ধারণা পাল্টে যাবে।



 

Show all comments
  • কিরন ১ জুন, ২০১৭, ৩:০১ এএম says : 0
    খুব ভালো উদ্যোগ।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad ১ জুন, ২০১৭, ১১:৫৫ এএম says : 0
    Excellent!
    Total Reply(0) Reply
  • Aryan Rahman ১ জুন, ২০১৭, ১:০৩ পিএম says : 0
    Koto din thakbe ei sundor?
    Total Reply(0) Reply
  • shajahanmiah ১ জুন, ২০১৭, ৪:৩৫ পিএম says : 0
    সব কিছু ঠিক আছে তবে প্রধান কাজ হওয়া উচিত ছিল বিমান বন্দরের সামনে থেকে ভিক্ষুক মুক্ত করা । ভিক্ষুক মুক্ত করতে পারলেই বিদেশিরা বুঝবে আমরা ফকিরের জাতি নয় ।
    Total Reply(0) Reply
  • salam ৫ জুন, ২০১৭, ১০:২৪ এএম says : 0
    We should not show in excess what we are not
    Total Reply(0) Reply
  • mannan ৫ জুন, ২০১৭, ১০:২৫ এএম says : 0
    We should not show what we are not
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিমানবন্দর

২৪ নভেম্বর, ২০২২
৪ জানুয়ারি, ২০২২
২২ ডিসেম্বর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ