পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রেজাউল করিম রাজু : একদিকে তাপাদহ। অন্যদিকে বিকেলে হঠাৎ আকাশ কালো করে মেঘের আনাগোনা। খানিকক্ষন ঝড়ো হওয়ার পর ঝুপঝাপ বৃষ্টি। ক্ষনিকের শীতলতা। তারপর দিন একই রকম খরতাপ। আবার সামান্য বৃষ্টি। এমনি আবহাওয়া বিরাজ করছে রাজশাহী অঞ্চলে। অন্য বছরের তুলনায় এবার এ অঞ্চলে আগাম বৃষ্টি হলেও গরমের দাপট কমছেনা। তাপমাত্রার পারদ যতটুকু না উঠছে গরম অনুভুত হচ্ছে তার চেয়েও বেশী। আবহওয়া বিদরা বলছেন আবহাওয়ার ভারসাম্যহীনতার কারনেই এমনটি হচ্ছে। গরম পড়ছে আবার বৃষ্টিও হচ্ছে। জলবায়ুর পরিবর্তনের কারনে এখানকার আবহাওয়া এমন ভারসাম্যহীন আচরন করছে। পরিস্থিতি এমন এখানকার বিরাজমান আবহাওয়াকে স্বাভাবিক বলা যাবে আবার অস্বাভাবিক বলা যাবে। পরিবেশ বিদরা বলছেন ফারাক্কা ব্যারেজের কারনে এখানকার প্রধান নদী পদ্মা মরে যাবার সাথে সাথে শাখা অনেক নদনদী খাল বিল শুকিয়ে গেছে। সেখানে পানির বদলে বালিচরের বিস্তৃতি। এসব নদনদী খাল বিলে বর্ষা মওসুমের কটাদিন পানি থাকে তারপর ফের শুকিয়ে যায়। মাইলের পর মাইল জুড়ে পদ্মার বুকে জেগে থাকাচর প্রচন্ড খরতাপে তপ্ত হয়ে উঠছে। গরম বালির বাতাস আবহাওয়াকে আরো উত্তপ্ত করছে। আর এ বছর আগাম বৃষ্টির সাথে অতিরিক্ত গরম আবহাওয়ার ভারসাম্যহীনতার বহি:প্রকাশ।
এমন অবস্থা সর্ম্পকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ইনষ্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক সুলতান উল ইসলাম বলেন ২০১০ সালের পর রাজশাহী অঞ্চলে খরার প্রবনতা অতিমাত্রায় বেড়ে গেছে। আগাম খরা শুরু হয়ে তার সময়কালও দীর্ঘ হচ্ছে। এতে ঋতু বৈচিত্রের পরিবর্তন হয়ে গেছে। যার কারনে আগাম বৃষ্টি দেখা যাচ্ছে। এটি আবহাওয়ার ভারসাম্যহীনতারই লক্ষন।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, এবার গত ৪ মার্চ প্রথম বৃষ্টিপাত হয়। গত ২১ মে পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে ১৮৫ দশমিক ৭ মিলিমিটার। এখন দক্ষিন থেকে উত্তরে জলীয়বাস্প উড়ে যাচ্ছে। এরপর হিমালয়ে ধাক্কা খেয়ে কিছু অংশ রাজশাহী অঞ্চলে ফেরত আসছে। এর প্রভাবে মাঝে মাঝে বৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু স্থানীয় জলবায়ুর প্রভাবে এ অঞ্চলের তাপমাত্রা রুক্ষই থাকছে। ভুমিরুপের ক্রমবর্ধমান পরিবর্তন, পানিহীন পদ্মা, বালিচরের বিস্তৃতি ভ’-গর্ভস্থ পানির অপরিকল্পিত ব্যবহার এবং জনসংখ্যার দ্রæত বৃদ্ধি এ এলাকার ভূ-প্রকৃতির ক্রমাবনতি ঘটিয়ে চলেছে। এ কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের ভবিষ্যৎ লক্ষনগুলো এখনই স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। এ অঞ্চলের জলবায়ুগত পরিবেশের বর্তমান অবস্থা কোনভাবেই অনুকুল নয় বরং দিনকে দিন তা ভয়ংকর রূপ ধারন করছে।
জুন মাস থেকে বৃািষ্টর মৌসুম শুরু হয়। বৃষ্টি হয় সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু এবার গত ৪ মার্চ থেকেই বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। এরপরও তাপমাত্রা ৩৫ থেকে ৩৭ ডিগ্রী সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে। আর বাতাসের আদ্রতা খুবই কমে যাওয়ায় তাপের তীব্রতা অনুবুত হচ্ছে প্রায় ৪০ ডিগ্রীর মত। ফলে আগাম বৃষ্টি তাপমাত্রায় কোনো ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারছে না।
পরিসংখ্যানে দেখা যায় ১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪৫ দশমিক ১ডিগ্রী সেলসিয়াস। এটি এখন পর্যন্ত দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এরপর ২০০৯ সাল পর্যন্ত রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩২ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৯ দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। কিন্তু ২০১০ সাল থেকে রাজশাহীর তাপমাত্রা বিক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। ওই বছর তাপমাত্রার পারদ ওঠে ৪২ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। সে বছর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৬ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এরপর ২০১৩ সালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৪ দশমিক ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস। আর ২০১১ সাল থেকে গেলো বছর পর্যন্ত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস থেকে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করেছে।
এদিকে বরেন্দ্র বহুমুুখি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী গত ১৫ বছরে বরেন্দ্র অঞ্চলে বিশেষ করে রাজশাহীর গোদাগাড়ী ও তানোর, চাপাইনবাবগঞ্জ সদর এবং নওগাঁর পোরশায় বার্ষিক বৃষ্টিপাত অর্ধেকে নেমে এসেছে। ২০০৪ সালে এসব এলাকায় ২ হাজার ৪৫১ দশমিক ৯০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছিল। কিন্তু ২০১৬ সালে সেসব এলাকায় বার্ষিক বৃষ্টিপাত ১ হাজার ১০০ থেকে ২ হাজার মিলিমিটার। এরই মধ্যে এবার মৌসুম শুরুর আগেই বৃষ্টিপাত শুরু হলো। তারপরও কমছেনা গরমের তীব্রতা। অসহনীয় হয়ে উঠছে পরিবেশ। যতই দিন যাচ্ছে ততই বিপর্যয়কর অবস্থার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।