পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
‘চরম ক্ষতির সম্মুখীন হবেন’- বিশেষজ্ঞ মত
অর্থনৈতিক রিপোর্টার : ব্যাংক আমানতে আবগারি শুল্ক বাড়ানোর খবরে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন নিম্ন সুদহার আর নানা কর ও সার্ভিস চার্জে পিষ্ট আমানতকারীরা। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন, ব্যাংকে জমানো টাকার ওপর আবগারি শুল্ক দ্বিগুণ করা হতে পারে।
বর্তমানে ব্যাংকে আমানত রেখে ৫ শতাংশ সুদ পাচ্ছেন গ্রাহক। এই সুদ আয়ের ওপর রয়েছে বার্ষিক ১০ শতাংশ কর। আর টিআইএন না থাকলে কাটা হয় ১৫ শতাংশ। এর পাশাপাশি আমানত ও ঋণ উভয় হিসাব থেকে বছরে একবার আবগারি শুল্ক বা এক্সাইজ ডিউটি কাটা হয়। ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত স্থিতির ওপর কোনো আবগারি শুল্ক নেই। ২০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত স্থিতির ওপর বছরে কর দিতে হয় ১৫০ টাকা। এক লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত স্থিতির জন্য দিতে হয় ৫শ টাকা। ১০ লাখ থেকে এক কোটি পর্যন্ত টাকা থাকলে আবগারি শুল্ক এক হাজার ৫০০ টাকা। এরপর এক কোটি থেকে পাঁচ কোটি পর্যন্ত সাত হাজার ৫০০ টাকা এবং পাঁচ কোটি টাকার বেশি হলে ১৫ হাজার টাকা কর দিতে হয়। অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী বাজেটে প্রতিটি পর্যায়ে এ কর দ্বিগুণ করা হচ্ছে।
বর্তমান ব্যাংক আমানতের সুদহার মূল্যস্ফীতির হারের নিচে রয়েছে। এর ওপর ব্যাংক বিভিন্ন সার্ভিস চার্জ কেটে নেয় গ্রাহকের হিসাব থেকে। এর ওপর সরকারের শুল্ক বৃদ্ধি আমানতকারীদের অনিরাপদ মাধ্যমে সঞ্চয়ে উৎসাহিত করবে- এমন মত শীর্ষ ব্যাংকারদের। এতে একদিকে যেমন তফসিলি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আমানত বঞ্চিত হবে, অন্যদিকে দেশের বিপুল অর্থ ঝুঁকিতে চলে যাবে। ‘ব্যাংকের আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক দ্বিগুণ করা হলে আমানতকারীরা চরম ক্ষতির সম্মুখীন হবেন’ উল্লেখ করে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) মহাপরিচালক তৌফিক আহমদ চৌধূরী বলেন, “তিন মাসের ফিক্সড ডিপোজিটে ব্যাংকগুলো এখন সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ সুদ দেয়। দেশে এ মুহূর্তে মূল্যস্ফীতির হার প্রায় ৬ শতাংশ। ব্যাংকের নমিনাল রেট থেকে মূল্যস্ফীতি বাদ দিলে আমানতের প্রকৃত সুদহার বর্তমানে ঋণাত্মক অবস্থানে রয়েছে।”
“আবগারি শুল্ক বাড়ানো হলে ব্যাংকে টাকা রাখার চেয়ে জমি, ফ্ল্যাট, গহনা কেনাসহ বিভিন্ন ভোগে অর্থ ব্যয়ের প্রবণতা বেড়ে যাবে। এছাড়া বিভিন্ন ভুঁইফোঁড় মাল্টিপারপাস প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করে আমানতকারীদের সর্বস্বান্ত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হবে।”
ব্যাংকারদের সংগঠন এবিবি’র সাবেক চেয়ারম্যান ও মেঘনা ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ নুরুল আমিন বলেন, “নতুন করে আবগারি শুল্ক বাড়ালে মানুষ ব্যাংকে টাকা না রেখে বাড়িতে রাখতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে। নন-ব্যাংকিং চ্যানেলে লেনদেন বেড়ে গিয়ে সামাজিক অস্থিতিশীলতার ঝুঁকি তৈরি হবে।”
এবিবি চেয়ারম্যান ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিস এ খান বলেন, “ব্যাংকিং লেনদেনে আগে থেকেই নানা রকম শুল্ক কার্যকর রয়েছে। এর ওপর হঠাৎ আবগারি শুল্ক দ্বিগুণ করা হলে তার প্রভাব আমানতের ওপর পড়তে পারে। এ রকম সিদ্ধান্ত ওেয়ার আগে সরকারকে আরও ভাবতে হবে।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী, সরকারি ব্যাংকগুলো এখন মেয়াদি আমানত নিচ্ছে সাড়ে ৪ থেকে ৫ শতাংশ সুদহারে। বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকগুলোর বেশিরভাগ সঞ্চয় স্কিমের সুদহার ৫ শতাংশের কাছাকাছি। আবার অনেক ব্যাংকের সুদহার ৫ শতাংশের কম।
গত মার্চে ব্যাংকগুলোর আমানতের গড় সুদহার কমে ৫ দশমিক শূন্য ১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। একই সময়ে গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ। অর্থাৎ এখন ব্যাংকে টাকা রেখে প্রকৃতপক্ষে ক্ষতি হচ্ছে প্রতি ১শ টাকায় ৩৮ পয়সা। দুই বছর আগেও আমানতে গড় সুদহার ছিল ৭ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। পাঁচ বছর আগে ছিল ৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
ব্যাংক আমানতে সুদহারের এমন পরিস্থিতিতে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করে ১১ দশমিক শূন্য ৪ থেকে ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ সুদ পাচ্ছেন গ্রাহক। গত ২১ মে ঢাকা চেম্বারের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সঞ্চয়পত্রে সুদহার কমানোর ঘোষণা দেন। এর পর থেকে সঞ্চয়পত্র বিক্রি ব্যাপক হারে বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি হয়েছে ৪২ হাজার ৯৮ কোটি টাকা। অথচ সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে বাজেটে ১৯ হাজার ৬১০ কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। গত অর্থবছরের মূল বাজেটে ১৫ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও পরে তা বাড়িয়ে ২৮ হাজার কোটি টাকা করা হয়। তবে অর্থবছর শেষে বিক্রি দাঁড়ায় ৩৩ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা।
আমানতের সুদহারের নিম্নমুখী প্রবণতা রোধ করার পরামর্শ দিয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে একটি সার্কুলার জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই সার্কুলারে বলা হয়, আমানতের সুদের অত্যধিক হ্রাস সঞ্চয় প্রবণতাকে ক্ষুণœ করছে এবং সঞ্চয়ের বদলে অপচয়মূলক ভোগ ও অন্যান্য অনুৎপাদনশীল কাজে ব্যবহারের প্রবণতার ঝুঁকি বাড়ছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে সম্পদ ব্যবস্থাপনায় ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হতে পারে, যা বাঞ্ছনীয় নয়। এমন প্রেক্ষাপটে ঋণের সুদ নিম্নগামী ধারায় রাখার জন্য ঋণ ও আমানতের মধ্যকার সুদহারের ব্যবধান (স্প্রেড) কমানোর পরামর্শ দেওয়া হয় ওই সার্কুলারে। তবে এখন পর্যন্ত এই সার্কুলার বাস্তবায়ন হতে দেখা যাচ্ছে না।#
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।