Inqilab Logo

রোববার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

মালয়েশিয়ায় জিটুজি প্লাসে সর্বোচ্চ অভিবাসন ব্যয়

| প্রকাশের সময় : ৩১ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম


টাকা জোগাড় করতে কর্মীদের গলদঘর্ম : প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী নির্বিকার !
শামসুল ইসলাম : মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে আবারো মরণ খেলায় মেতে উঠেছে কতিপয় চিহ্নিত রিক্রুটিং এজেন্সি। মালয়েশিয়ায় জিটুজি প্লাস প্রক্রিয়ায় কর্মী প্রেরণে সর্বোচ্চ অভিবাসন ব্যয় হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। মালয়েশিয়া গমনেচ্ছু কর্মীদের অভিবাসন ব্যয় জোগার করতে গলদঘর্ম পোহাতে হচ্ছে। ভিটেমাটি বিক্রি, চড়া সুদে ঋণ এবং গবাদিপশু বিক্রি করে  মালয়েশিয়ায় যাওয়ার লাখ লাখ টাকা জোগাড় করতে হিমসিম খাচ্ছে কর্মীরা। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্ত হলে মাত্র ৩৭ হাজার টাকায় কর্মী যাওয়ার সুযোগ পাবে। এমন আশার বাণী শুনিয়ে ছিলেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি। শ্রমবাজার নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় মালয়েশিয়া গমনেচ্ছু কর্মীদের কাছ থেকে তিন লাখ টাকা থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। একাধিক দলাল চক্রের হাত বদল হয়ে মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের অভিবাসন ব্যয় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।  পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়াচ্ছে যে এসব দেখার কেউ নেই। সকল বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সি কর্মী প্রেরণের সুযোগ পেলে অভিবাসন ব্যয় একজন কর্মী মাত্র ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় মালয়েশিয়ায় যাওয়ার সুযোগ পেতো। নির্ভরযোগ্য সূত্র এতথ্য জানিয়েছে।  ১২টি সোর্স কান্ট্রির অভিবাসন ব্যয়ের চাইতে বাংলাদেশী কর্মীদের কাছ থেকে চার থেকে পাঁচগুন বেশি অভিবাসন ব্যয় হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। নির্দিষ্ট দশটি রিক্রুটিং এজেন্সি’র মাধ্যমেই অনলাইনের মাধ্যমে কর্মী প্রেরণ শুরু করায় অভিবাসন ব্যয় আকাশ চুম্বি হচ্ছে। অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয় আদায়ের ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে কোনো সময়ে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে যেতে পারে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক জনশক্তি রফতানিকারক এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন।   
 শিগগিরই মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগে দশটি এজেন্সি’র মাধ্যমে বায়ো রিক্রুটিং পদ্ধতি চালু করা হলে একজন কর্মীকে ব্যাংকের মাধ্যমে ১ লাখ ৭৮ হাজার টাকা জমা দিয়ে মালয়েশিয়ায় যেতে হবে। আগামী জুন মাস থেকে প্রতিমাসে কমপক্ষে ১০ হাজার কর্মী মালয়েশিয়ায় যাবে বলে আভাস পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সিকে মালয়েশিয়া থেকে কর্মী নিয়োগের প্রতি চাহিদাপত্র কিনে আনতে তিন হাজার রিংগিট ব্যয় করতে হচ্ছে। বিভিন্ন রিক্রুটিং এজেন্সি’ মালয়েশিয়া থেকে হাজার হাজার কর্মী নিয়োগের অনুমতিপত্র কিনে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে। দশটি রিক্রুটিং এজেন্সি’র কাছে এসব চাহিদাপত্র প্রক্রিয়া করতে  গেলে জনপ্রতি দু’লাখ টাকা করে দাবী করা হচ্ছে। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মাঝে দর কষাকষি হচ্ছে। এতে মালয়েশিয়ার অভিবাসন ব্যয় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।  দীর্ঘ নয় বছর মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানি বন্ধ থাকার পর গত ১০ মার্চ থেকে গুটি কয়েক রিক্রুটিং এজেন্সি’র মাধ্যমে জিটুজি প্লাস প্রক্রিয়ায় কর্মী যাওয়া শুরু হয়। বিএমই’িট’র সূত্র জানায়,  ১০ মার্চ থেকে গত ২৯ মে পর্যন্ত ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সি’র মাধ্যমে ৪ হাজার ১শ’জন কর্মী মালয়েশিয়ায় গেছে ।
মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানির ক্ষেত্রে মালয়েশিয়া সরকার এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি স্বল্প অভিবাসন ব্যয়ের ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে ছিলেন। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিতে দালাল চক্রসহ সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।  অনলাইন (এসপিপিএ) প্রক্রিয়ায় দালাল চক্রের হাত বদল হয়ে একজন কর্মীকে ভিটেমাটি বিক্রি ও ঋণ করে প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা ব্যয় করে মালয়েশিয়ায় যেতে হচ্ছে। মালয়েশিয়ায় শিগগিরই বায়ো রিক্রুটম্যানের মাধ্যমে কর্মী পাঠানো হবে। এ জন্য জনপ্রতি অভিবাসন ব্যয় ১ লাখ ৭৮ হাজার টাকা ধার্য্য করার জন্য দশ রিক্রুটিং এজেন্সির’ পক্ষে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে লিখিত প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এ প্রস্তাব পাশ হলে একজন কর্মী উল্লেখিত টাকা ব্যাংকে জমা দিবেন এবং জেলা কর্মসংস্থান অফিসগুলো তা’ তদারকি করতে পারবে। এদিকে, জিটুজি প্লাস প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়ায় কর্মী যাওয়া শুরুর পর  মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশনে কর্মী নিয়োগের চাহিদাপত্র সত্যায়িত করতে গিয়ে রিক্রুটিং এজেন্সি’র মালিকদের চরম হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। চাহিদাপত্র সত্যায়িত করার আগে সংশ্লিষ্ট কোম্পানী পরিদর্শন করতে গিয়ে রিপোর্ট সন্তোষজন হবার পরেও ঘুষের জন্য ফাইল মাসের পর মাস আটকে রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন জনশক্তি রফতানি কারক ইনকিলাবকে বলেন, কোনো আপত্তি না থাকার পরেও কোম্পানী ভিজিট করার দেড় দু’মাসেও ফাইলে সত্যায়ন দিচ্ছে না।   
মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর থেকে কোতোয়ারার রাজধানী রেষ্টুরেন্টের স্বত্বাধিকারী ও বিএনপি’ মালয়েশিয়া শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সালাহ উদ্দিন টেলিফোনে ইনকিলাবকে বলেন, জিটুজি প্লাস প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশী কর্মীরা অন্যান্য দেশের তুলনায় দশগুণ বেশি টাকা দিয়ে মালয়েশিয়ায় আসছে। এসব কর্মীরা তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা দিয়ে মালয়েশিয়ায় এসে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। তারা কত বছরে এই টাকা তুলতে পারবে তা’ বোধগম্য নয়। এক প্রশ্নের জবাবে কাজী সালাহ উদ্দিন বলেন, নেপালের একজন কর্মী মাত্র ৭০ হাজার টাকা ব্যয় করে মালয়েশিয়ায় আসছে। তিনি বলেন, দশ সিন্ডিকেটের কারণে বাংলাদেশী কর্মীরা শোষণের শিকার হচ্ছে। সকল বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সি জিটুজি প্লাসে কর্মী পাঠানোর সুযোগ পেলে একজন কর্মী অন্যান্য দেশের চেয়ে দশগুণ বেশি টাকা দিয়ে মালয়েশিয়ায় আসতে হতো না। তিনি অবিলম্বে সহনীয় অভিবাসন ব্যয় নির্ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও সকল বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সিকে কর্মী প্রেরণের সুযোগ দেয়ার জন্য জোর দাবী জানান।  তিনি বলেন, জিটুজি প্লাস প্রক্রিয়ায় কর্মী প্রেরনের শুরুতে মাত্র ৩৭ হাজার টাকায় কর্মী পাঠানোর প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলেন বায়রার নেতৃবৃন্দ । বর্তমানে ৬০ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকা ব্যয় করে মালয়েশিয়া থেকে কর্মীর চাহিদা কিনে আনতে হয়। এর পর দশ এজেন্সি কর্মী প্রেরণে প্রক্রিয়া বাবদ কোন হিসেবে দ’ুলাখ টাকা করে দাবী করছে তা’ বোধগম্য নয়। এসব বিষয় দেখার কেউ নেই। রাতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ন সচিব নারায়ণ চন্দ্র বর্মা ইনকিলাবকে বলেন, দশ রিক্রুটিং এজেন্সি’র পক্ষ থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রতি অভিবাসন ব্যয় ১ লাখ ৭৮ হাজার টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব পাওয়া গেছে তবে তা’ অনুমোদন দেয়া হয়নি। অভিবাসন ব্যয় রাড়াতে হলে উভয় দেশের সম্মতিক্রমেই বাড়াতে হবে। তিনি অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয় সর্ম্পকে বলেন, আমরা বুঝতে পারছি জিটুজি প্লাসে কর্মীদের কাছ থেকে উচ্চ হারে অভিবাসন ব্যয় নেয়া হচ্ছে। কিন্ত কর্মীদের কাছ থেকে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাচ্ছি না। এ জন্য কোনো ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মালয়েশিয়ায়

৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ