Inqilab Logo

রোববার, ১৬ জুন ২০২৪, ০২ আষাঢ় ১৪৩১, ০৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

চালের দর ও বিদ্যুৎ সঙ্কট

সিনিয়র রাজনীতিবিদদের অভিমত : উত্তরাঞ্চলের রাজনীতিতে ডিসাইডিং ফ্যাক্টর

| প্রকাশের সময় : ৩০ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মহসিন রাজু, বগুড়া থেকে : অসহনীয় বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও উর্ধ্বমুখী চালের বাজার উত্তরাঞ্চলের তৃণমূল রাজনীতিতে ডিসাইডিং ফ্যাক্টর হতে পারে বলে আশঙ্কা ক্ষমতাসীন মহাজোটের সিনিয়র অনেক রাজনীতিকের। অপরদিকে বিরোধী রাজনীতির শিবিরের অনেকেই মনে করেন, মাঠ রাজনীতির দখলের খেলায় তারা পিছিয়ে থাকলেও বিদ্যুৎ সঙ্কট, চালের বাজারের রেকর্ড উর্ধ্বমূখীতা আগামি নির্বাচনে জনমতের প্রতিফলন শেষ পর্যন্ত সরকারের বিপক্ষেই যাবে বলে মনে করেন তারা।
গত এক সপ্তাহ ধরে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা পর্যায়ের রাজনীতির অঙ্গনের সিনিয়র পর্যায়ের নেতাদের সাথে কথা বলে ধারণা পাওয়া গেছে, বিদ্যুৎ সঙ্কট ও চালের বাজার দরকে ঘিরে সৃষ্ট পরিস্থিতি ক্রমশ সরকারি দল ও জোটের বিপক্ষেই চলে যাচ্ছে। বগুড়ায় ১৯৭৩ সালের জাতীয় সংসদের নির্বাচিত সংসদ সদস্য বর্তমানে প্রায় স্বেচ্ছায় রাজনৈতিক কর্মকান্ড থেকে নির্বাসনে যাওয়া প্রবীণ রাজনীতিবিদ ইনকিলাবকে বলেন, ‘মাঠ পর্যায়ের রাজনীতি বা সোজা কথায় রাজপথ দখলের রাজনীতিতে বিএনপি কাক্সিক্ষত সাফল্য দেখোতে পারেনি এটা সত্য। এছাড়াও জন জীবনের দৈনন্দিন বিভিন্ন সমস্যাকে ইস্যু করতে পারেনি বিএনপি। মূলত সে কারনেই মহাজোট সরকার আজও রাষ্ট্র ক্ষমতার স্বাদ নিষকন্টক ভাবে ভোগ করতে পারছে। তবে আগামি নির্বাচনের আগে যে ভাবে চালের দাম বাড়তে শুরু করেছে, সেই সাথে বিদ্যুৎ সঙ্কট ও বিভ্রাটে মানুষ নাকাল হচ্ছে তাতে সরকারের প্রতি মানুষের আস্থার সঙ্কট ক্রমশ বড় হয়ে উঠছে।’
বৃহত্তর রংপুরের একাধিক সিনিয়র রাজনীতিবিদ যাদের অনেকেই এক সময় আওয়ামী লীগ পরে বিএনপি বর্তমানে জাতীয় পার্টির সাথে সংশ্লিষ্ট তারা তাদের অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে বলেন, রংপুর অঞ্চলের মানুষ এক অর্থে মঙ্গার অভিশাপ থেকে মুক্তিলাভ করেছে। তবে এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষের কাছে ‘চালের বাজার পরিস্থিতি’ ভোটের রাজনীতিতে বড় ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে। ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ রংপুর অঞ্চলের মানুষের দুর্গতির চিত্র বিশেষ করে ‘বাসন্তীর জাল পরা’ ছবি দেশী/বিদেশী মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচার ওই সময়ে ক্ষমতাসীন দলের জনপ্রিয়তা হ্রাসে বিরাট ভ‚মিকা রাখে। বর্তমানে চালের বাজার দর ক্রমশ সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে, দ্রæত তা কমাতে না পারলে রংপুর অঞ্চলে আওয়ামী লীগেরতো বটেই এমনকি মহাজোটের বড় শরিক জাতীয় পার্টির জনপ্রিয়তাকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দেবে।
চালের উদ্বৃত্ব অঞ্চল বগুড়া, নওগাঁ, জয়পুরহাট, দিনাজপুরের চাউলকল মালিকদের সাথে আলোচনা করে ধারণা পাওয়া গেছে, সরকার ধানের উৎপাদন ও মজুদ সম্পর্কে হয় নিজেরা ইচ্ছে করে অন্ধকারে আছে নয়তো কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রণালয় তাদেরকে অন্ধকারে রেখেছে। ফলে ধান চালের বাজার পরিস্থিতি ক্রমশ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। অন্তত ১০ জন বৃহত্তম অটোরাইস মিলের মালিক ইনকিলাবকে জানান, এবার বোরো ধানের বাজার প্রতিমন ১১শ’ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। কিন্তু তারপরও কৃষকের মুখে হাসি নেই। কারণ গতবার বিঘা প্রতি ধানের ফলন ছিল গড়ে ২০ মন তাই ৭/৮শ’ টাকা মন দরে ধান বিক্রি করেও কৃষক কিছু টাকা পেয়েছে কিন্তু এবার গড়ে সেই ফলন ৭/৮ মনে নেমে আসায় ১১শ’ টাকা মন দরের ধানও কোনো কাজে আসছে না। মিল মালিকরা গত বছর ৪০ কেজি ধান থেকে চাল পেয়েছিল গড়ে ২৬ কেজি। এবার ধানের মান এতটাই নিম্ন যে গড়ে ৪০ কেজি ধানের বিপরীতে চাল মিলছে ২২/২৩ কেজি।
বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বগুড়া, নওগাঁ ও জয়পুরহাট জেলাকে নিয়ে গঠিত বগুড়া অঞ্চলে বিদ্যুতের দৈনিক চাহিদা ১৯০ মেগাওয়াট । এর মধ্যে বগুড়ায় ১৪৫ মেগাওয়াট , জয়পুরহাটে ১৫ এবং নওগাঁ জেলায় ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু ন্যাশনাল গ্রীড থেকে সরবরাহ আসে এর অর্ধেক। ফলে প্রতিদিনই যে লোডশেডিং হয় তাতে স্বাভাবিক ভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং শিল্প কারখানায় উৎপাদন ব্যহত হয় মারাত্মক ভাবে। শিল্প ও বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট অনেকের সাথে বিদ্যুৎ সঙ্কট নিয়ে কথা বললে তারা হতাশা প্রকাশ করে বলেন, বিদ্যুৎ সঙ্কটের প্রশ্ন এলেই সরকার এক সময় হাওয়া ভবন, খাম্বা মামুনের দুর্নিতীর গল্পের পুরোনো গল্পের কাসুন্দি ঘাটতো। তারপর শুরু হল বিদ্যুৎ উৎপাদনের রমরমা গাল গল্প ও সেলিব্রেশন। কিন্তু দিন যতই যাচ্ছে ঘনিয়ে আসছে জাতীয় সংসদের আরেকটি নির্বাচন। বিদ্যুৎ নিয়ে লুকোচুরি কিংবা ফাঁকিবাজী সব উন্মোচিত হয়ে যাচ্ছে। বিদ্যুতের লোডশেডিং বা বিভ্রাট উত্তরের জনমানষে বিরক্তি বা রোষই বাড়াচ্ছে। যা আগামি নির্বাচনে উত্তরাঞ্চলের ৭২টি সংসদীয় আসনের জন্য হবে ডিসাইডিং ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে বলে জানান ভুক্তভোগীরা।



 

Show all comments
  • সালাহউদ্দিন সুলতান ৩০ মে, ২০১৭, ১০:১৬ এএম says : 0
    ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য জনগনের ভোটের কোন প্রয়োজন আছে কি? 2014 সনের 5 জানুয়িারি তার উৎকৃষ্ট উদহারন। 2019 সনেও 2014 সনের 5 জানুয়িারি মত কেউ ক্ষমতায় গেলে প্রতিবাদ করার মত কোন দল কি বাংলাদেশে আছে?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিদ্যুৎ

১৪ নভেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ