ইভিএম-এ ভোট কেন?
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম-এ ১৫০ আসনে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। কাকতালীয় কিনা জানি না, ১৫০ সংখ্যাটা আমাদের এর আগে চিনিয়েছিলেন রকিবুল
আবুল কাসেম হায়দার
এক সময় চামড়া শিল্প আমাদের দ্বিতীয় বৃহত্তম রফতানি খাত ছিল। পাটের পরই ছিল চামড়া শিল্প খাত। কিন্তু এখন আমাদের প্রধানতম রফতানি খাত হচ্ছে তৈরি পোশাক শিল্পখাত। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে চামড়া শিল্প বেশ এগিয়ে এসেছে। চামড়ার তৈরি জুতা শিল্প বেশ অগ্রসরমান। ইউরোপসহ পৃথিবীর বহু দেশে জুতা রফতানি বৃদ্ধি পেয়েছে। চামড়ার তৈরি জুতা ছিল এক সময় বিশ্বব্যাপী একমাত্র চাহিদা। কিন্তু বর্তমানে চামড়ার পাশাপাশি চামড়া ছাড়া অন্যান্য দ্রব্য দিয়ে জুতা তৈরির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়াবিহীন জুতার চাহিদাও বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশে জুতা শিল্পে একটি ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। চামড়াবিহীন জুতার চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে এই শিল্প এখন এক নতুন মাত্রা লাভ করতে যাচ্ছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে চামড়াবিহীন জুতা রপ্তানিতে আয় হয়েছে ২১ কোটি ৯১ লাখ ডলার, যা আগের বছরের চেয়ে প্রায় ১৬ শতাংশ বেশি। জুতা রপ্তানির মোট আয়ের ৩০ শতাংশ এসেছে চামড়াবিহীন জুতা থেকে। বিশ্বের ৭৮টি দেশে এসব জুতা রপ্তানি হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি যায় স্পেনে, যা মোট রপ্তানিমূল্যের ২৬ শতাংশ। এ ছাড়া ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, কোরিয়া, ভারত, জার্মানি, ইতালি, জাপানে বেশি রপ্তানি হয় বাংলাদেশের তৈরি চামড়াবিহীন জুতা। উদ্যোক্তারা জানান, কোনো জুতার ৬০ শতাংশের বেশি উপাদান চামড়ার হলে সেটিকে চামড়ার জুতা হিসেবে গণ্য করা হয়। এর কম হলে তা নন-লেদার বা চামড়াবিহীন জুতা হিসেবে স্বীকৃত। ‘বাংলাদেশ ফুটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি রিপোর্ট ২০১৬’ অনুযায়ী, ২০১৫ সালে বিশ্বে চামড়াবিহীন জুতার বাজারের আকার ছিল ৪ হাজার কোটি বা ৪০ বিলিয়ন ডলার। বিপরীতে চামড়া জুতার বাজারের আকার ছিল সাড়ে ৬ হাজার কোটি বা ৬৫ বিলিয়ন ডলার। এ খাতে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় এখনো নগণ্য। অবশ্য চামড়াবিহীন জুতার বড় উৎপাদক দেশ চীনের শ্রমের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের বড় সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বলে দাবি উদ্যোক্তাদের।
উদ্যোক্তারা জানান, বর্তমানে দেশীয় রপ্তানিকারকেরা কেরিফোর, এইচঅ্যান্ডএম, কাপ্পা, পুমা, ফিলা, টিম্বারল্যান্ড, ডাইচম্যান, প্রাইমার্কের মতো বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ডের কাছে জুতা রপ্তানি করছে। সম্প্রতি ওয়ালমার্ট, টার্গেট, টেসকোসহ অনেক ব্র্যান্ড কয়েকটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করছে বলে জানা গেছে। বর্তমানে ‘মজুরি বাড়ায় চীনের ব্যবসার বড় অংশই এখন ভিয়েতনামে যাচ্ছে। আমরা এ সুযোগ পুরোপুরি নিতে পারছি না। চামড়াবিহীন জুতা তৈরিতে আধুনিক প্রযুক্তির অভাব, চামড়া খাতের মতো প্রণোদনা না থাকা এবং দীর্ঘ মেয়াদে অর্থায়নের সুবিধা কম থাকায় এই খাত এখনো পিছিয়ে আছে।’
চামড়াবিহীন জুতা শিল্পের এখন করণীয় :
১. চামড়ার তৈরি জুতার মূল্য বেশি। চামড়াবিহীন জুতার উৎপাদন খরচ অনেক কম। তাই চামড়াবিহীন জুতার চাহিদা বিশ্বজুড়ে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের গুটি কয়েক কারখানা এই শিল্পের পণ্য উৎপাদন করছে। কিন্তু রফতানির চাহিদা অনেক বেশি। চামড়ার জুতার চেয়ে চামড়াবিহীন জুতার চাহিদা বেশি হওয়াতে এই সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এই সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে। আমাদের দেশের শিল্প বিনিয়োগকারীগণকে চামড়াবিহীন জুতা শিল্প কারখানা স্থাপনে এগিয়ে আসতে হবে।
২. চামড়াবিহীন জুতা শিল্প বৃদ্ধি করতে হলে সরকারকে বেশ কিছু সুবিধা দিতে হবে। অবিলম্বে চামড়াবিহীন জুতা রফতানিতে কমপক্ষে ২৫ শতাংশ হারে ক্যাশ সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা করা দরকার। এই সুবিধা প্রদান করলে নতুন নতুন শিল্প উদ্যোক্তাগণ চামড়াবিহীন জুতা শিল্প স্থাপনে এগিয়ে আসবেন। তখন বিনিয়োগ বাড়বে, বৃদ্ধি পাবে নতুন নতুন কর্মসংস্থান। বেকার যুবক ও যুবতীদের চাকরির ব্যবস্থা হবে।
৩. জুতা শিল্পে বিশেষ করে চামড়াবিহীন জুতা শিল্পে বিনিয়োগকারীগণকে ব্যাংক থেকে কম সুদে ঋণ সুবিধা প্রদানের জন্য সরকারকে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এই জন্য বিশেষ ছাড় দিয়ে এই শিল্পের জন্য মাত্র ৮ শতাংশ হারে ঋণ সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা করা দরকার। এই সুবিধার ফলে নতুন নতুন উদ্যোগক্তা চামড়াবিহীন জুতা শিল্প স্থাপনে এগিয়ে আসবে। আগামীতে এই শিল্পখাত থেকে দ্বিগুণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।
৪. সরকার দেশে একশত বিশেষ শিল্প অঞ্চল স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছেন। এইটি একটি মহতি উদ্যোগ। ইতোমধ্যে ১০টি শিল্প অঞ্চলের কাজ শুরু হয়েছে। এই সকল শিল্প অঞ্চলে চামড়াবিহীন জুতা শিল্প স্থাপনের জন্য কমপক্ষে ১০টি কারখানা স্থাপনের বিশেষ ব্যবস্থা রাখা প্রয়োজন। কারণ অবকাঠামোগত সুবিধার অভাবে আমাদের শিল্প বিকাশ কিছুটা কম। গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সুবিধা শিল্প উদ্যোক্তাগণ ঠিক মতো পেলে শিল্প স্থাপন দ্রæত এগিয়ে যাবে। যার প্রমাণ ইপিজেডসমূহ। দেশের প্রতিটি ইপিজেড অঞ্চলে পর্যাপ্ত পরিমাণ শিল্প স্থাপন হয়েছে। কোন ইপিজেডে কোন একটি ইউনিট খালী নেই যে, যেখানে শিল্প স্থাপিত হয়নি। তাই ১০০টি বিশেষ শিল্প অঞ্চল স্থাপিত হলে দেশে শিল্প বিপ্লব ঘটবে এবং এর সফলতার মুখ দেখতে পাবে।
লেখক : সাবেক সহ সভাপতি এফবিসিসিআই, বিটিএমএ, বিজেএমইএ, প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।