পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সেলিম আহমেদ, সাভার : আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে নিত্যনতুন যন্ত্রপাতির আবিষ্কারের ফলে মানুষের প্রতিটি কাজ হচ্ছে সহজ থেকে সহজতর। বিদ্যুৎচালিত যন্ত্রের ব্যবহারের ফলে স্বল্প খরচ ও স্বল্প সময়ে অধিক উৎপাদনের কারণে গ্রাম বাংলার আহবমান ঐতিহ্য ‘ঘানি’ শিল্প আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। ফলে অনেকেই বাধ্য হয়ে অন্য পেশায় ঝুঁকে পড়ছে। যারা আছেন তারা তাদের ঐতিয্যবাহী বাপ-দাদার এ পেশাকে কোন রকম আকঁড়ে ধরে রেখেছেন।
এক সময় ঘানি শিল্পে সরিষা দিয়ে গরুর সাহায্যে তেল বের করা হতো। গৃহস্থরা খাঁটি সরিষার তেল দিয়ে তরি-তরকারিসহ সব ধরণের রান্নার কাজে ব্যবহার করতো। এক কথায় ঘানির সরিষার তেল ছাড়া সে সময় রান্না-বান্নাতে যেন গৃহিনীরা আর অন্যকিছু চিন্তাই করতো না। অন্যদিকে ঘানির সরিষার খৈল মাছের ঘের, পানের বরজ ও বিভিন্ন ক্ষেতে ব্যবহার করা হতো। সে সময় ঘানির সরিষার তেলের বিকল্প যেন আর কিছুই ছিল না।
সরজমিনে সাভার নামা বাজার গিয়ে দেখা গেছে, ঘানির সঙ্গে একটি করে গরু চোখ বেঁধে লাগিয়ে দেয়া হয়। পরে গরুটি দিনভর চরকীর মতো নিজমনে ঘুরতে থাকে। তখন ঘানির নল দিয়ে টিপটিপ করে তেল বের হতে থাকে। একসময় গৃহস্থরা সেই তেল মাটির পাতিলে করে বাঁশের চোঙ্গ দিয়ে মেপে বাজারে বিক্রি করতো এ যেন সত্যিই গ্রাম বাংলার ঐহিত্যের অহংকার। কিন্তু বর্তমান ডিজিটাল যুগে সেই তেল ডিজিটাল মাপক যন্ত্র দিয়ে মেপে বিক্রি করা হচ্ছে। কালের বিবর্তণে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঘানিশিল্প আজ প্রায় বিলুপ্ত। বৈদ্যুতিক যন্ত্রের শব্দে হারিয়ে যেতে বসেছে আদিকালের ঘানিশিল্পের সেই ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দ।
আধুনিক সভ্যতার ক্রমবিকাশে তেলের ঘানি শিল্পের পরিবর্তে যন্ত্রচালিত তেলের কল চালু হওয়ায় এবং গৃহস্থরা খাঁটি সরিষার তেলের বিকল্প যেমন সয়াবিন, পামওয়েল, কলের সরিষা তেল ব্যবহার করায় ঘানির সরিষা তেলের চাহিদা দিনে দিনে কমতে থাকায় এ শিল্প বিলুপ্তির পথে। আবার সরিষার আবাদ কমে যাওয়ায় এবং সরিষার দাম বেশি হওয়ায় ঘানির তেলের দামও বেশি।
সাভার দক্ষিণ নামাবাজার এলাকার রুবেল এন্ট্ররপ্রাইজের মালিক মো: আসাদ আলী জানান, খুব কষ্ট করে বাপ-দাদার এ পেশাটি ধরে রেখেছি। তার প্রতিষ্ঠানে দুটি ঘানি রয়েছে। দৈনিক দুটি ঘানি থেকে ১২ কেজি সরিষার তৈল উৎপাদন হয়। তবে বর্তমান বাজারমূল্যে কোনরকম খেয়েপরে পেশাটি ধরে রেখেছেন তিনি। তার পরিবারের আর কেউ এ পেশার সাথে জড়িত নয়। সকলেই অণ্য পেশা বেছে নিয়েছে।
আসাদ আলী আরো জানান, একসময় নামা বাজারে অশংখ্য ঘানি ছিল, কিন্তু কালের বির্বতে সব হারিয়ে গেছে। বর্তমানে তিনিসহ আব্দুস সামাদ, মঈন ও মমিন তাদের বাপ-দাদার এ ব্যবসা ধরে রেখেছেন।
তবে অনেকের মতে এখনও খাঁটি সরিষার তেল বলতে ঘানির তেলকেই বুঝিয়ে থাকেন। ঘানির তেলের এই ব্যাপক চাহিদার পরও আধুনিক প্রযুক্তির প্রসারের কারণে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী ঘানিশিল্প।
বাপ-দাদার পেশার ঐতিহ্য হিসেবে এখনো অনেক কষ্টে তারা টিকিয়ে রেখেছেন ঘানিগুলো। প্রতিটি ঘানির একটি বিশেষ আকৃতির ছিদ্রের ভেতর দিয়ে তেল পড়ে এবং তা একটি ড্রামে সংরক্ষণ করা হয়। প্রতিটি ঘানিতে একবারে সর্বোচ্চ ৫ কেজি সরিষা ভাঙ্গা সম্ভব হয়। দৈনিক এক মন শরিষা থেকে তেল হয় ১২ কেজি। প্রতিকেজি তেল বিক্রি হয় ২২০টাকা দরে।
ঘানির মালিক আসাদ আলী আরো বলেন, অন্যান্য তেলের থেকে ঘানিভাঙ্গা তেলের দাম বেশি। এই তেলের চাহিদাও বেশি। রাজধানী ঢাকার মিরপুর, উত্তরা, পুরান ঢাকা, গাজিপুরসহ নানা দূর দূরান্ত থেকে মানুষ এখানে ছুটে আসেন ঘানির তেল কিনতে। অনেকে অগ্রীম অর্ডার দিয়ে রাখে। বিদেশেও তার এখান থেকে তেল নিয়ে যায় অনেক প্রবাশী। তবে আচারের জন্য ঘানির তেল বেশী ব্যবহার হয়।
তবে ঘানি শিল্পে লোকসানের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এব্যবসায় এখন আর লাভ নেই। ঘানির গরু বিক্রিতেই যা লাভ। আর ২/১ বছরের মধ্যে এ পেশা একেবারে বিলুপ্ত হয়ে যাবে বলে তিনি ধারনা করছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।