পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শের সাথে বিএনপির বর্তমান কর্মকা-ের মিল নেই বলে অভিযোগ করেছেন জিয়াউর রহমানের ছোট ভাই আহমেদ কামাল। গতকাল এক সভায় তিনি বলেন, আমি বিএনপি করি না। আমি নতুন দল করব। এর নাম হবে ন্যাশনালিস্ট পার্টি। তবে টাইম পরে জানাব। একই সঙ্গে তার অভিযোগ, একটি ‘স্বার্থান্বেষী মহল ও স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের ষড়যন্ত্রে’ খালেদা জিয়াসহ বর্তমান নেতৃত্বকে ভুল পথে পরিচালিত করার অপচেষ্টা হচ্ছে।
দুপুরে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ১/১১ সময়ে দলের ‘সংস্কারপন্থি’ বলে পরিচিতি নেতাদের কয়েকজনকে পাশে বসিয়ে এই আলোচনায় আহমদ কামাল সভাপতিত্ব করেন। তিনি বলেন, বিএনপির বর্তমান নাজুক অবস্থা দেখে কিছু কথা না বলে পারছি না। মাঝে মাঝে দুঃখ হয়, যখন দেখি আমার ভাই শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শ ও নীতির সাথে বিএনপির অনেক কর্মকা-ের এখন মিল নেই। একটি স্বার্থান্বেষী মহল ও স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের শিকার হয়ে বিএনপির নেতৃত্ব ও দলটির চেয়ারপার্সনকে ভুল পথে পরিচালিত করার অপচেষ্টা হচ্ছে। তারা চেয়ারপার্সনকে ভুল পরামর্শ ও তথ্য দিয়ে অন্ধকারে রাখতে চান। মুক্তিযুদ্ধের শহীদের সংখ্যা নিয়ে এখন বিতর্ক সৃষ্টি করা মোটেই সঠিক নয় বলে আমি মনে করি,’ এ মতামত ব্যক্ত করেন জিয়ার ছোট ভাই।
রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সম্মেলন কক্ষে শহীদ জিয়া ও জাতীয়তাবাদী আর্দশ বাস্তবায়ন পরিষদ নামে একটি সংগঠনের উদ্যোগে ‘শহীদ জিয়ার আদর্শ ও বিপন্ন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়। এই সভায় ১/১১ সময়ে ‘সংস্কারপন্থি’ নেতা হিসেবে পরিচিত দলের বহিষ্কৃত যুগ্ম মহাসচিব আশরাফ হোসেন, বিএনপির মুখপাত্র বলে পরিচিত ‘দৈনিক দিনকাল’ পত্রিকার সাবেক ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কাজী সিরাজ প্রমুখ ছিলেন।
অনুষ্ঠানে বেইলি রোড, মগবাজার, ফকিরেরপুল থেকে ৪০/৪৫ জন তরুণ-তরুণীকে দেখা যায়। বিএনপির কোনো পর্যায়ের নেতা-কর্মীকে সেখানে দেখা যায়নি।
গত ৪ মে রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জিয়ার রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছিলেন আহমেদ কামাল।
রাজনীতিতে আসার আগ্রহের ইঙ্গিত দিয়ে আহমেদ কামাল বলেন, আমার ভাইয়ের হাতে গড়া বিএনপিকে এই দুর্দিনে শহীদ জিয়ার আদর্শ বাস্তবায়িত এবং দলকে সঠিক পথে সুসংগঠিত করার জন্য একজন সহযোদ্ধা হিসাবে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত আপনাদের পাশে আছি এবং থাকব। আমি কোনো ক্ষমতার লোভে রাজনীতি করতে চাই না। দেশের এই দুর্দিনে বিএনপির পাশে থেকে দেশের মানুষের সেবা করতে চাই।
তবে আলোচনা সভার শেষে কয়েকটি ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা আহমেদ কামালকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমি নতুন দল করব। তবে টাইম পরে জানাব।
বিএনপির কাউন্সিল নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া আছে কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমি বিএনপি করি না। আমি নতুন দল করব। এর নাম হবে ন্যাশনালিস্ট পার্টি। এ সময়ে আশরফ হোসেন ও কাজী সিরাজ তার দুই পাশে বসেছিলেন।
তবে পরে তিনি গণমাধ্যমের কয়েকজন সাংবাদিককে বলেন, আমি যা বলেছি, লিখিত বলেছি, সেটাই আমার বক্তব্য। লিখিত বক্তব্যে কোনো নতুন দল গঠনের কথা লেখা নেই।
সরকারের সমালোচনা করে আহমেদ কামাল বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে, কিন্তু গণতন্ত্রের লেশমাত্র দেশে কোথাও নেই। মানুষের স্বাধীনভাবে কথা বলার অধিকার নাই। বিরোধী দলের বাকস্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণভাবে মিটিং-মিছিল করা, এমনকি গণতন্ত্রের ভাষায় কথা বলার অধিকারও হরণ করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং দলীয় ক্যাডার বাহিনী দিয়ে বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলার পাঁয়তারা করছে। তারা (সরকার) সংবিধানের দোহাই দিয়ে ভোটারবিহীন প্রহসনের নির্বাচন করে অনৈতিকভাবে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রেখেছে। সর্বস্তরের দুর্নীতি, অনিয়ম দেশকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
‘বিএনপির নেতা-কর্মীদের মিথ্যা মামলা, হামলা, গুম, হত্যার ভয় দেখিয়ে নিশ্চিহ্ন করে ফেলতে চাচ্ছে’ অভিযোগ করে তিনি বলেন, আমি সরকারকে স্পষ্ট করে বলতে চাই, এসব অন্যায়-অত্যাচার বন্ধ করে সকল নেতা-কর্মীদের মিথ্যা মামলা তুলে নিয়ে নিঃশর্ত মুক্তি দিন। নইলে এটাও সত্য যেকোনো গণবিচ্ছিন্ন সরকার হামলা, মামলা দিয়ে সাধারণ মানুষ ও গণতন্ত্র অতীতে রুখতে পারেনি, ভবিষ্যতেও পারবে না। একদিন না একদিন দেশের জনগণ রুখে দাঁড়াবে।
অসুস্থ হওয়ার কারণে স্পষ্টভাবে কথা বলতে পারছিলেন না আহমেদ কামাল। তিনি বলেন, নতুন প্রজন্মসহ দেশের সর্বস্তরের জনগণ এখন এমন একটা স্বাধীন গণতন্ত্রের দেশ দেখতে চায়, যেখানে যে দলই সরকার গঠন করুক না কেন তাদের সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে সুশাসনের জন্য একটি কল্যাণমুখী সরকার গঠন করতে হবে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বাস্তবায়ন করতে হবে। এজন্য সব দলের সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে সমাধানের পথ বের করার আহ্বানও রাখেন আহমেদ কামাল।
সরকারকে সব দলের সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। সকল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে।
তিনি বলেন, অবস্থার পরিবর্তন আনতে হলে সবাইকে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। নতুন প্রজন্ম থেকে শুরু করে শহীদ জিয়ার আদর্শে বিএনপির ও জাতীয়তাবাদী আদর্শের সকল নেতা-কর্মীসহ আপমার মেহনতি মানুষ, কৃষক, শ্রমিক, বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজ, সকলকে একসাথে মিলে শহীদ জিয়ার মূল আদর্শ ও নীতিকে আবার জনগনের মাঝে ফিরিয়ে আনতে হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ জিয়াকে বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখতে হবে। একে অপরের প্রতি কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি ও নোংরা রাজনীতি থেকে সকল দলকে বেরিয়ে আসতে হবে।
দলের বর্তমান নেতৃত্বের সমালোচনা করে আহমেদ কামাল বলেন, একটি স্বার্থান্বেষী মহল ও স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে বিএনপির নেতৃত্ব ও বিএনপির চেয়ারপার্সনকে ভুল পথে পরিচালিত করার অপচেষ্টা করছে। তারা চেয়ারপারসনকে ভুল পরামর্শ ও তথ্য দিয়ে অন্ধকারে রাখতে চান। এই চক্রের ভুলের কারণে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শে বিশ্বাসী বিএনপির ত্যাগী প্রবীণ নেতৃবৃন্দ থেকে শুরু করে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মাশুল দিতে হচ্ছে। মাথায় শত শত মিথ্যা মামলা নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে, গ্রেফতার, হত্যা, গুম হওয়ার ভয়ে বাসাবাড়িতে ঘুমাতে পারছে না। তারা যাযাবর জীবনযাপন করছে। এসব ত্যাগী নেতা-কর্মীদের পাশে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে এবং তাদেরকে আবার সঠিক নির্দেশনা দিয়ে পুনরায় উজ্জীবিত করতে হবে।
আহমেদ কামালের বক্তব্যের পরপরই ‘প্রেসিডেন্ট জিয়া, প্রেসিডেন্ট জিয়া, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ’, ‘আহমেদ কামাল ভাই এগিয়ে চলো, আমরা আছি তোমার সাথে’ ইত্যাদি স্লোগান দেয়া হয়।
বিএনপির বহিষ্কৃৃত যুগ্ম মহাসচিব আশরাফ হোসেন বলেন, দেশে বর্তমানে কোনো গণতন্ত্র নেই। এদেশের মালিক কে? জনগণের মালিকানা তো এখানে নেই। এখানে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ Ñ এই দুটি রাজনৈতিক দল আছে। মালিকানা দুই পরিবারের। যদি ভোটের অধিকার পান, তাহলে দুই পরিবারের এক পরিবারকেই ভোট দিতে হবে। এটা কিন্তু গণতন্ত্র বলে না। এই দুই পরিবারের যারা এখনো শিশু-কিশোর তারাও নেতা হয়ে আছেন। যেমন একের পর এক আসবে। বেঁচে থাকলে নেতা। আর এর মধ্যে যদি আল্লাহ নিয়ে যান, তা হলে তো কথা নেই। এই ব্যবস্থা তো কোনোভাবেই গণতন্ত্র হতে পারে না। এটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নয়।
জিয়াউর রহমান দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। আমরা সকলে সমবেতভাবে আমাদেরকে গণতন্ত্র চর্চা করতে হবে এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে যাতে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এদেশে চালু থাকে, সেজন্য আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে বলে আহ্বান জানান আশরাফ।
বিএনপির বর্তমান নেতৃত্বের কঠোরভাষায় সমালোচনা করেন কাজী সিরাজ বলেন, বিএনপি ৪ দল বা ২০ দল গঠনের পর থেকে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের গণতান্ত্রিক চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সেইভাবে নেই। বিএনপির ঘোষণাপত্রে জিয়াউর রহমান শুরুই করেছিলেনÑ‘ঐতিহাসিক মুক্তি সংগ্রামের সোনালি ফসল বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব আমাদের পবিত্র আমানত এবং অলঙ্ঘনীয় অধিকার। প্রাণের চেয়ে প্রিয় মাতৃভূমির এই স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুদৃঢ় ও সুরক্ষা করাই হচ্ছে প্রাণের ও সময়ের অমোঘ দাবি।
জামায়াতে ইসলামীকে সঙ্গে নিয়ে যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রত্যক্ষ বিরোধিতা করেছেন, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা চায়নি, যারা এখনো বলে একাত্তর সালে কোনো মুক্তিযুদ্ধ হয়নি, গ-গোল হয়েছিল, তাদের নিয়ে আপনি বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী দলের যে ঘোষণাপত্র রয়েছে, সেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করবেন। কখনো হবে না। অসম্ভব। জাতীয়তাবাদী দর্শন থেকে সরে গিয়ে অনেকটাই বিএনপি ইসলামী জাতীয়তাবাদের দিকে ঝুঁকে পড়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অনেক লোক যারা বিএনপির পক্ষে ছিল, বিএনপিকে ভোট দিত, তারা এই একটিমাত্র কারণে আদর্শিক বিচ্যুতির কারণে বিএনপির সঙ্গে নেই। যদি বিএনপিকে আবার কোমর সোজা করে দাঁড়াতে হয়, তাহলে জিয়াউর রহমানের দর্শন ও আদর্শ আবার ধারণ করতে হবে। একে নিয়ে এগুতে হবে।
আহমেদ কামালের আত্মীয় এস ইসলাম ডন পরিচালনায় অনুষ্ঠানে ন্যাশনাল কংগ্রেস-এর সভাপতি শেখ শহীদ-উজ-জামান, জাতীয় স্বাধীনতা পার্টির নেতা মহাসচিব মিজানুর রহমান মিজু, সাবেক সহকারি এটর্নি জেনারেল হোসনে আরা আহসান, কলামিস্ট আবু মহিন মুসা, অধ্যাপক মাহবুব হাসান, অধ্যাপক এমএম ইসলাম, এনামুল হক আখন্দ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।