Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

কর ব্যবস্থা সহজ করা কঠিন নয় -ফরাসউদ্দিন

| প্রকাশের সময় : ২৫ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম


অর্থনৈতিক রিপোর্টার : নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও কর আদায় প্রক্রিয়াটিকে এখনও জটিল মনে করছেন সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন; একে সহজ করাও কঠিন বলে মনে করছেন না তিনি। গতকাল রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ব্যবসায়ী ও অর্থনৈতিক নীতি গবেষকদের এক অনুষ্ঠানে বক্তব্যে তিনি কর ব্যবস্থা সহজ করতে সরকারকে পরামর্শ দেন। ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশ (আইবিএফবি) এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
ফরাসউদ্দিন বলেন, “কর কম হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ কর আদায় প্রক্রিয়া খুবই জটিল। এটাকে অবশ্যই সহজবোধ্য করতে হবে, বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে হবে এক্ষেত্রে।”
এই ‘সহজ’ কাজটি কীভাবে করতে হবে তাও বাতলে দেন এই গবেষক।
“এ তো কঠিন কিছু নয়। যদি জনগণ, সরকার ও কর আদায় নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিদের নিয়ে সমন্বিত উদ্যোগে নিলে এটা সুন্দরভাবে করা সম্ভব।”
জটিলতার জন্য করদাতাদের অনাগ্রহের প্রেক্ষাপটে অনলাইনে কর আদায়সহ নানা পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। রাজস্ব আদায় বাড়াতে উদ্যোগী অর্থমন্ত্রী এনবিআরকেও এক্ষেত্রে নানা তাগিদ দিয়ে আসছেন।
আইবিএফবি’র দ্বাদশ বার্ষিক সাধারণ সভায় ফরাসউদ্দিন ২০২৫ সালে বাংলাদেশের দ্বিগুণ জিডিপি প্রবৃদ্ধি, বিনিয়োগে ৪০ শতাংশ জিডিপি অনুপাত অর্জন এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ জিডিপির বিপজ্জনক সীমা অতিক্রম করার পূর্বাভাস মাথায় রেখে নীতি প্রণয়নের পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, “সেজন্য সরকারকে তার প্রাথমিক দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। এমন নীতি প্রণয়ন করতে হবে, যা সব বিনিয়োগকারীকে উৎসাহিত করবে, বিশেষ করে বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের। যখন তারা বিনিয়োগে নেমে পড়বে, তখন অন্যরা তাদের অনুসরণ করবে।”
বেসরকারি খাত বাংলাদেশকে প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় সর্বনিম্ন ট্যাক্স জিডিপি অনুপাত হওয়া থেকে মুক্তি দিতে পারে বলে মন্তব্য করেন ফরাসউদ্দিন, যা বর্তমানে বাংলাদেশে ১০ শতাংশের বিপরীতে নেপালে ১৭ শতাংশ ও ভারতে ২৭ শতাংশ।
দ্রæত অগ্রসরমান চীন ও ভারতের অর্থনীতির সঙ্গে মিলে নিজেদের উন্নতি বাড়ানোর পরামর্শ দেন এই অর্থনীতিবিদ। “দুই দশক সময়ে চিন্ডিয়াতে (চীন ও ভারতের সমন্বিত রূপ) পৃথিবীর জিডিপির ৫০ শতাংশ থাকবে। এটা সব ধরনের পূর্বাভাসেই এমনটা মেলে। তার মানে উন্নয়ন, সমৃদ্ধ ও সামাজিক অগ্রগতির জন্য এশিয়ার দিকে তাকান। বাংলাদেশও এ দুটি বড় অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তির চাপে স্যান্ডউইচ হয়ে থাকবে না। ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা তাদের কাছ থেকে সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের ভাগিদার হতে পারি।”
ভারতসহ উন্নয়ন অংশীদার পাঁচ দেশের ৪ হাজার কোটি ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রæতি বাংলাদেশের উপর নির্ভরযোগ্যতার প্রকাশ মনে করেন ফরাসউদ্দিন।
বেসরকারি খাতের সক্রিয়তার উপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, “যখন বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা বলেন, ‘আমরা রাজস্বের ব্যবস্থা করি’, আপনারা সেটা করে থাকেন তা ঠিক, কিন্তু সেটা কি ১৬ কোটি মানুষের জন্য যথেষ্ট?”
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ভারতীয় হাই কমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলাকে উদ্দেশ করে বঙ্গোপসাগরের গভীর পানিতে দুর্লভ ও মূল্যমান প্রাণসম্পদের ব্যবহারে ভারতকে উদ্যোগী ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানান ফরাসউদ্দিন।
তিনি বলেন, “অনেক দেশ কন্টিনেন্টাল শেলফের জীববৈচিত্র্য নিয়ে কাজ করে সেটাকে একচেটিয়া করে নিয়েছে। আমাদের আশা, এক্ষেত্রে ভারত পাশের দেশগুলো ও জাতিসংঘকে সঙ্গে নিয়ে নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে আসবে এবং এক্ষেত্রে সবার সম-অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠা হবে। এটা করতে পারলে ভারত, মিয়ানমার, বাংলাদেশ, চায়না সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে উল্লম্ফন ঘটাতে পারব।”
এর জবাবে শ্রিংলা বলেন, বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞরা মিলে কন্টিনেন্টাল শেলফের অভিগম্যতা নিশ্চিত করার কাজ করছে।
“আমরা ইতোমধ্যে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করেছি, আমাদের বিভিন্ন গ্রæপ সেটা নিয়ে নিবিড়ভাবে কাজ করছে, যাতে আমাদের বøু ইকোনমির সম্পদ সর্বোত্তমভাবে ব্যবহার করতে পারি।”
বাংলাদেশ ভূ-রাজনৈতিকভাবে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ‘ভালো’ অবস্থানে আছে উল্লেখ করে কানেকটিভিটির মাধ্যমে সেটাকে আরও কার্যকরী করার পরামর্শ দেন হাই কমিশনার।
সড়ক-রেল প্রভৃতিতে যোগাযোগ তৈরির পাশাপাশি ইন্টারনেটভিত্তিক যোগাযোগের পথ আরও প্রশস্ত করার সুপারিশ উঠে আসে তার বক্তব্যে।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সদ্য বিদায়ী সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমেদ বলেন, “ভারতের বাজারে সম্পূর্ণ শুল্কমুক্ত প্রবেশের সুবিধা থাকলেও পণ্য সেখানকার ভোক্তাদের কাছে সেভাবে পৌঁছাতে পারছে না। সেক্ষেত্রে আমরা যদি সমন্বিত উদ্যোগ নিই, তাহলে বাণিজ্য ঘাটতি অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব।”
চীন বাংলাদেশে ৫ হাজার কোটি ডলারের বেশি রপ্তানি করলেও সে তুলনায় দেশটিতে বাংলাদেশ থেকে পণ্য সহজে যাওয়ার কোনো প্রক্রিয়া না থাকার কথা বলেন তিনি।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম, বাংলাদেশের সভাপতি হাফিজুর রহমান খান, সাবেক সভাপতি মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী বক্তব্য দেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ